সুমনের গানের একটি জনপ্রিয় লাইন, কেউ যদি বেশি খাও খাওয়ার হিসেব নাও, কেন না অনেক লোক ভাল করে খায় না। এ রকম কথা সচরাচর একটা নৈতিকতার ব্যাপার বলেই ধরা হয়, অসাম্যের বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাম্যবাদী না হোক, নিদেনপক্ষে মানবতাবাদী একটা প্রতিবাদ। কিন্তু যদি সেই আদর্শের কথা ছেড়েও দিই, তা হলেও খাবার হিসেব নেওয়ার একটা যুক্তি থাকে। সেটা একেবারে বাঁচা-মরার যুক্তি। আমেরিকার জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সেটাই বলেছেন। একশো চল্লিশটি দেশ নিয়ে খুব বড় একটি সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা যা বলেছেন, তার মোদ্দা কথা হল, গরিব দেশের মানুষের খাওয়াদাওয়া এবং পুষ্টির মান যদি বাড়াতে হয়, তবে পৃথিবীর প্রকৃতি ও পরিবেশের স্বার্থে ধনী দেশগুলির সম্পন্ন মানুষদের নিজেদের খাবারদাবারের হিসেব কষতে হবে, খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। এই সিদ্ধান্তের অর্থ বোঝার জন্য আগে দু-একটা ব্যাপার বুঝে নেওয়া দরকার।
আমরা কী খাই, কী ভাবে খাই, আমাদের খাবার কোথা থেকে আসে, খাবার নষ্ট করি কি না, এই সব কিছু নিয়েই হয়তো আমরা ভাবি। অনেকে বেশিই ভাবি। কিন্তু সেই ভাবনার বেশির ভাগটাই, হয়তো সবটাই নিজেকে নিয়ে, বড়জোর নিজের প্রিয়জনকে নিয়ে। কী খেলে শরীর ভাল থাকবে, খরচ কম হবে, খেতে ভাল লাগবে, এই সবই তো ভাবি আমরা। সেটা স্বাভাবিকও বটে। আপরুচি খানা কথাটা তো সকলেই জানি।
কিন্তু এই ভাবনা আজ আর যথেষ্ট নয়। শুধু এইটুকু ভেবে থেমে গেলে আমাদের বিপদ বাড়বে। খুব বড় রকমের বিপদ সেটা। সত্যি বলতে কী, সে হল একেবারে জীবনমরণ সমস্যা। সমস্যাটা বিশেষ করে ভবিষ্যতের, মানে আমাদের পরের প্রজন্মগুলির। এখন যারা ছোট, বা এখনও যারা জন্মায়নি, তাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, ভবিষ্যৎ বলে কিছু আদৌ থাকবে কি না, পৃথিবী নামক গ্রহটাই তাদের বসবাসের উপযোগী থাকবে কি না, সেই প্রশ্নগুলোই আমাদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।
সহজ করে বললে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এই যে, আমাদের খাওয়াদাওয়ার ওপর পৃথিবীর পরিবেশ নির্ভর করে। কতটা নির্ভর করে সেটা নানা ভাবে মাপা যায়। একটা প্রচলিত এবং কার্যকর মাপ হল কার্বন ফুটপ্রিন্ট। আমরা যা করি, তার অনেক কিছুর ফলেই বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ বাড়ে (বা কমে)। যেমন, আমরা যদি গাড়ি বা স্কুটারে তেল পুড়িয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাই, তা হলে কার্বন নিঃসরণ বাড়ে, আর যদি বাড়িতে বা বাগানে গাছ লাগাই তা হলে কার্বন নিঃসরণ কমে। কোনও একটা কাজের ফলে কার্বনের মাত্রা যতটা বাড়ে (বা কমে), সেটাই হল সেই কাজের কার্বন পদচিহ্ন। যদি সেই মাত্রা কমে, তা হলে ওই পদচিহ্নের মাপটা নেগেটিভ বা ঋণাত্মক হবে। একটা মানুষের বা একটা দেশের কার্বন পদচিহ্নও মাপা যায়— একটা সময়ের মধ্যে, যেমন এক বছরে— সেই মানুষের বা দেশের সমস্ত কাজের ফলে কার্বনের মাত্রা কতটা বেড়েছে বা কমেছে, সেটাই তার বার্ষিক কার্বন ফুটপ্রিন্ট।
এর পাশাপাশি আর একটা জিনিসও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হল পৃথিবীর জলসম্পদ— নদী ও সমুদ্রের জল, জমাট বরফ, আর ভূগর্ভস্থ জল। আমরা সেই জল নানা ভাবে ব্যবহার করি। তার একটা হল খাওয়াদাওয়ার চাহিদা মেটানো। কী ভাবে সেই চাহিদা মেটাচ্ছি, তার ওপরে জলের ব্যবহার নির্ভর করে, সুতরাং জলসম্পদের কতটা ক্ষয় হচ্ছে নির্ভর করে সেটাও। কার্বন ফুটপ্রিন্ট যেমন আমরা বায়ুমণ্ডলে কতটা কার্বন বাড়াচ্ছি সেটা মাপে, তেমনই পৃথিবীর জলসম্পদ কে কতটা কতটা কমাচ্ছি তার হিসেবও মূল্যবান।
এ বার, খাওয়াদাওয়ার একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। বিফ, পর্ক, মাটন ইত্যাদি রেড মিট-এর বদলে কেউ যদি চিকেন খায়, তা হলে এক দিকে জলের ব্যবহার কমে, অন্য দিকে কমে কার্বন নিঃসরণ। আবার তরিতরকারি খেলে দু-দিকেই লাভ হয় আরও বেশি। সুতরাং খাওয়াদাওয়ার অভ্যেসের সঙ্গে পরিবেশের গভীর সম্পর্ক। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। এ রকম আরও হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যায়। যেমন, সফ্ট ড্রিংকসের বোতল খুলে যখন গলায় ঢালি, তখন আমরা ভেবেও দেখি না, ওই এক বোতল পানীয় তৈরি করার জন্য কতগুণ জল খরচ করা হয়েছে, কতটা কার্বন বাতাসে ছাড়া হয়েছে।
এই পর্যন্ত আমাদের খুব পরিচিত কথা। কিন্তু জনস হপকিন্সের গবেষকরা এই পরিচিত কথাটাকেই একটা অন্য মাত্রা দিয়েছেন। ‘গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জ’ নামক জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধে তাঁরা দেখিয়েছেন, দরিদ্র দুনিয়ার মানুষকে স্বাভাবিক পুষ্টিতে পৌঁছনোর জন্যই খাওয়াদাওয়ার পরিমাণ অনেকটা বাড়াতে হবে, তার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের গুণমানও অনেকটা উন্নত করতে হবে, যেমন মাছমাংস বেশি খেতে হবে। তার ফলে পরিবেশের কিছুটা বাড়তি ক্ষতি হবেই, কার্বন নিঃসরণ বাড়বে, জলের ব্যবহার বাড়বে। সেই ক্ষতিপূরণের সদুপায় হল ধনী দেশগুলিতে মাংস ইত্যাদি খাওয়ার মাত্রা কমানো, যাতে তাদের দিক থেকে পরিবেশের ওপর চাপটা কমে। সোজা কথা হল, যারা অনেক বেশি খায়, এবং বেহিসেবি খায়, তারা একটু হিসেব করে খেলে যারা একেবারে খেতে পায় না বা কম খায় তাদের খাওয়াদাওয়া বাড়িয়েও পৃথিবীটাকে সুস্থ রাখা তুলনায় সহজ হতে পারে।
পৃথিবীর মানুষ সত্যিই এ সব কথায় কান দেবে কি না, সেটা একেবারেই অন্য প্রশ্ন। গরিব দুনিয়ার মানুষ বাড়তি খাবারটা পাবে কোথা থেকে, অন্য প্রশ্ন সেটাও। গবেষকরা কেবল পৃথিবী নামক গ্রহের দিক থেকে কথাটা বলেছেন।
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।