আজ রঙের উৎসব। কালও। দেশজুড়ে চলবে রং মেশানো আর মাখানোর খেলা। হাওয়ায় উড়বে ফাগ-আবির-গুলাল! রাগারাগি, মান-অভিমান, মন কষাকষি, প্রতিবেশীর মুখদর্শন না-করা, সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে এই দু’দিনের রঙখেলায়। পুরাণে কথিত আছে, কৃষ্ণর নাকি প্রচণ্ড হিংসে ছিল রাধার ফর্সা রঙের ওপর। তাই তিনি নাকি সুযোগ পেলেই রাধাকে যে কোনও গাঢ় রং মাখিয়ে কালো করে দিতেন। সুতরাং বাঁদুরে রং মাখিয়ে ভূত বানানোর প্রথা হাজার হাজার বছরের পুরনো। এই দু’টো দিন কোনও রঙের উপর চলবে না কোনও নিষেধাজ্ঞা। রং খেলা, রং মাখানো, রং ছোড়া সব চলবে। কিন্তু দিনের শেষে সেই রং তোলা নিয়ে মাথাব্যথাও চলবে! কারণ পরের দিন আপিস-ইশকুল! প্রজেক্ট মিটিঙে বাঁদুরে রঙে গাল রাঙিয়ে ঢুকলে তো ইম্প্রেশনটা মোটেই ভালো জমবে না! কিন্তু সেই ভয়ে রং খেলা হবে না? তাও কী হয়?
বিশিষ্ট বিউটি কনসালট্যান্ট মনীষা শর্মা তাই জানাচ্ছেন, রঙ খেলার আগে-পরে আপনি যদি কিছু বেসিক সাবধানতা অবলম্বন করেন, তাহলে রঙ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। সেগুলো কী? চলুন জেনে নিই তাঁর কাছ থেকেই।
রঙ খেলতে যাবার আগে সারা মুখে-গায়ে ভালো করে তেল মেখে নিন। চামড়া তৈলাক্ত থাকলে রঙ গাঢ় হয়ে বসবেনা। তুলতে সুবিধে হবে। চুলেও এই ভাবে তেল লাগাতে পারেন। চুল তেলতেলে থাকলে কোনও রঙ চুলের গোড়া অবধি পৌঁছতে পারবে না। রং খেলার পর চুল ধুতেও সুবিধে হবে। যাঁদের মুখে অ্যাকনে বা ব্রণ আছে, তাঁরাও নির্ভয়ে রঙ খেলুন। তবে অবশ্যই খেলার আগে বেশি করে সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে নিন মুখে আর গায়ের খোলা অংশে। রঙ আর কোনও ভাবেই ক্ষতি করতে পারবে না।
মনীষার মতে, “দোলের রঙ পিম্পলযুক্ত ত্বকের বিশেষ ক্ষতি করে না। এতদিন যারা ব্রণ আছে বলে দোল খেলতে ভয় পেতেন, তাঁরাও নির্ভয়ে খেলুন। যদি তেল পছন্দ না করেন, তাহলে তেলের পরিবর্তে বেশি পরিমাণে ময়শ্চারাইজারও লাগাতে পারেন। যদিও তৈলাক্ত ও ব্রণযুক্ত ত্বকে তেল বা ময়শ্চারাইজার লাগাতে সাধারণত বারণ করা হয়, কিন্তু এই একটা দিনের ক্ষেত্রে রং তোলার সময়ে আপনার অনেক সুবিধে হবে।”
মনীষা আরও জানালেন, মুখ থেকে রং তুলতে অযথা ঘষাঘষি করবেন না। প্রথমে ঠান্ডা জলে বারবার ধুয়ে রং তোলার চেষ্টা করুন। গোড়াতেই সাবান ব্যবহার করবেন না। জল দিয়ে রঙের গাঢ় ভাবটাকে হাল্কা করুন। সম্ভব হলে মুখে একটু দুধ লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এরপর যে কোনও ফেশওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে ভালো ভাবে স্নান করে নিন। চুল থেকে রং তুলতেও মাইল্ড হার্বাল জাতীয় শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। দ্রুত রং ওঠানোর জন্য কেমিক্যালযুক্ত হার্ড শ্যাম্পু লাগাবেন না। রঙের থেকে এই শ্যাম্পু আপনার চুলের বেশি ক্ষতি করবে। আর এখন তো মানুষ অনেক সচেতন। অনেকেই আয়ুর্বেদিক রং, ফুলের আবির বেশি ব্যবহার করেন। ফলে সরাসরি ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কম।
দোলের দিন বাচ্চাদের ঘরে আটকে রাখার প্রশ্নই নেই। বেলা হতে না হতে হইহই করে আবির-পিচকারি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে খুদের দল। ওরা বেশিক্ষণ ধরে খেলে, রংও লাগে বেশি। কিন্তু পরেরদিন পরীক্ষা বা স্কুলের ভয়ে রং দ্রুত ওঠানোর জন্য অতিরিক্ত ঘষাঘষি করবেন না। মনে রাখবেন, বাচ্চাদের ত্বক খুব নরম। কাজেই এই ঘষাঘষিতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। দোলের দিন চোখে রঙ ঢুকে যাওয়া একটা প্রধান সমস্যা। তবে ভয়ের কিছু নেই। বার বার ঠান্ডা জলে চোখ ধুয়ে দিন। তারপর হাল্কা কোনও রিফ্রেশিং আইড্রপ দিতে পারেন।
দোল খেলার পর বেশ কিছুদিন আমাদের ত্বক খসখসে হয়ে থাকে। ত্বকের কোমল ভাবটা চলে যায়। এর থেকে মুক্তির উপায় কী? মনীষা জানাচ্ছেন, দোলের পর অন্তত একটা ফেশিয়াল সকলের জন্য মাস্ট। যাঁরা ত্বকের ব্যপারে একটু বেশি সচেতন তাঁরা একটি ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। দই, ব্যসন ও মধু মিশিয়ে সপ্তাহে দুদিন লাগান, একমাসে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। যাঁদের ত্বক শুষ্ক এবং স্বাভাবিক, তাঁরা দইয়ের পরিবর্তে দুধ ব্যবহার করবেন। রঙ খেলার পর গোলাপজল দিয়ে মুখ ধুলে ত্বক নরম হবে এগুলো কিন্তু ভ্রান্ত ধারনা। শুধুমাত্র সুগন্ধ ছাড়া এর আর কোনও উপকারিতা নেই। অনেকক্ষণ রং খেললে অনেকের চুল খসখসে হয়ে যায়। মাথায় আগে দই বা ডিম লাগিয়ে সপ্তাহে দু’দিন শ্যাম্পু করুন। দই ও ডিমের প্রোটিন এক্ষেত্রে চুলকে পুষ্টি যোগায়। তাই কিছুদিনের মধ্যেই চুল চকচক করবে।
কস্তুরী ইতিহাসে এমএ পাশ দিয়েছেন। চাকরিও করেছেন বেশ কিছু কাল। এখন ফ্রিলান্স লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রিকায়। বেশ কিছু বছর আনন্দবাজার পত্রিকার "উৎসব" পত্রিকায় নিয়মিত লিখেছেন। গান শুনতে আর সিনেমা দেখতে ভারী ভালবাসেন।