Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

জীবন থেকে জীবনে: তৃতীয় পর্যায় – পর্ব-২৪

শঙ্করলাল ভট্টাচার্য

নভেম্বর ২৭, ২০২৪

Shankarlal Bhattacharya_Kalamkari_EP_Ravi Shankar_ 24_27.11.2024_AG
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

‘রাগ-অনুরাগ’-এর সূত্রে যে কত-কত জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছি তা এখন ভাবলে নিজেরই অবাক লাগে। এক-একটা ট্রিপ এক-একটা নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন শিহরণ। এক-একটা ট্রিপের এক-এক মেজাজ, এক-এক প্রাপ্তি। বলতে দ্বিধা নেই যে, ইংল্যান্ডে গিয়ে আমার চোখ খুলে গিয়েছিল। লন্ডন-প্রবাসের জীবন আমার মগজে বিস্ফোরণের মতন কাজ করল। (Ravi Shankar)

আরও পড়ুন: জীবন থেকে জীবনে: তৃতীয় পর্যায় – পর্ব-২৩

লন্ডন-প্রবাসের জীবন আমার মগজে বিস্ফোরণের মতন কাজ করল। একটা চৈতন্যের স্বাধীনতা পেয়েছিলাম ওই থেকে। পাশ্চাত্য দেশকে এত ডিটেল বইয়ের মাধ্যমে জানি যে, পাশ্চাত্যে প্রবাস আমি সয়ে নিতে পারি নিশ্বাস গ্রহণের মতন। বোম্বাই, দিল্লিতেও আমি ততখানি সহজ, সাবলীল নই, যতখানি লন্ডন কিংবা প্যারিসে। তবে ‘রাগ-অনুরাগ’ সিরিয়াল শেষ হতে সেটিকে আনন্দ পাবলিশার্সের জন্য বই-আকারে দাঁড় করাতে যেখানে যেতে হল আমায়, রবুদার সঙ্গে সেই জায়গাটিও আমার স্বপ্নের জগৎ। (Ravi Shankar)

Ravi Shankar
দক্ষিণেশ্বর মন্দির থেকে পুজো দিয়ে বেরোচ্ছেন পন্ডিত রবিশঙ্কর, সঙ্গে আমি ও ইন্দ্রাণী

প্রথমবার সেখানে যাই বাবা ও মায়ের সঙ্গে। পরে মা ও দিদির সঙ্গে ওই জায়গাটির প্রতিটি মূর্ছনা, সমগ্র পরিবেশ আমাকে বিভোর করে, আপ্লুত করে। এবার সেখানে গেলাম রবুদা, কমলাদির সঙ্গে। নিয়ে গেলাম ইন্দ্রাণীকেও। ছিলাম পাঁচ দিন; যেন পাঁচ দিনের স্বর্গবাস। জায়গাটি, তাহলে বলি, দার্জিলিং! (Ravi Shankar)

পাশ্চাত্য দেশকে এত ডিটেল বইয়ের মাধ্যমে জানি যে, পাশ্চাত্যে প্রবাস আমি সয়ে নিতে পারি নিশ্বাস গ্রহণের মতন।

‘রাগ-অনুরাগ’ দেশ’-এ প্রকাশিত হচ্ছিল যখন, তখন বিতর্কের তো অন্ত ছিল না। রবুদাও তখন আমেরিকায়। আমায় বলেছিলেন, যে যা আপত্তি তুলছে নোট করে রেখো। বই করার সময়ে প্রয়োজন মতন সংশোধন করে নেওয়া যাবে’খন। বিতর্কের মধ্যে জড়িয়ে পড়লেন নামজাদা এবং গুণী সরাদিয়া রাধুবাবু (রাধিকামোহন মৈত্র) এবং সেতারি মণিলাল নাগ। অনেক অপরিচিত পত্রলেখকও তাঁদের মন্তব্য রাখলেন। (Ravi Shankar)

জীবন থেকে জীবনে: তৃতীয় পর্যায় – পর্ব-২২ : শঙ্করলাল ভট্টাচার্য

‘নিউ দিল্লী’ পত্রিকায় নীলাক্ষর প্রবন্ধ তো ছিলই। কাজেই ঠিক হল বইতে প্রয়োজন মতন সংশোধন ছাড়া একটা পরিশিষ্টও যোগ করা হবে। এ ছাড়া রবুদা বইয়ের জন্য একটা ভূমিকা লিখবেন। অনুলেখক হিসেবে আমারও একটা ভূমিকা থাকবে বইয়ে। রবুদা কলকাতায় এলে আমরা প্রাথমিক আলোচনা সেরে নিলাম। রবুদাই বললেন, আমার হাতে সপ্তাহখানেক সময় আছে। চলো, শহরের বাইরে কোথাও গিয়ে কাজটা সেরে নিই। (Ravi Shankar)

কলকাতায় ভিজিটরের ভিড়ে কাজ করা সম্ভব না। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাবেন? রবুদা বললেন, শহর থেকে দু-তিনশো’ মাইলের মধ্যে কোনও নিরিবিলি জায়গায় যেতে চাই। কমলার শরীর ভালো না। ওরও একটু রেস্ট হবে।

রবুদা বললেন, শহর থেকে দু-তিনশো’ মাইলের মধ্যে কোনও নিরিবিলি জায়গায় যেতে চাই। কমলার শরীর ভালো না।

আমি দু-তিনশো মাইল হিসেব করেই বললাম, তাহলে দার্জিলিং গেলে হয়। নিরিবিলি এবং সুন্দরও। রবুদা তৎক্ষণাৎ বললেন, একসেলেন্ট। প্রায়ই ভাবি দার্জিলিং ঘুরে আসি। সময়ের টানাপোড়েনে যাওয়া হয় না। দার্জিলিং-এর নামে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন কমলাদিও। শহরের ঘিঞ্জি ভাব ওঁর শরীরকে ক্লান্ত করে। অনবরতই তো এ শহর ও-শহর করছেন। বললেন, দার্জিলিং-এর নাম শুনলেই আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। যখন দাদা উদয়শঙ্করের ট্রুপে নাচ শিখতাম আলমোড়ায়। আহা! কী সুখের দিন সেসব। (Ravi Shankar)

দার্জিলিং-এর নাম শুনলেই আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। যখন দাদা উদয়শঙ্করের ট্রুপে নাচ শিখতাম আলমোড়ায়।

আমি অপিসে এসে অরূপবাবুকে বলতেই উনি বললেন, Done! ওঁর সেই স্বভাবসিদ্ধ Done! সঙ্গে সঙ্গে প্রদ্যোতকে (বুডডু) ডেকে বললেন দার্জিলিং-এর তিনটে প্লেন টিকিট আর ওখানকার সেরা হোটেলে পাঁচ দিনের জন্য তিনটে সিট বুক করে দাও। (Ravi Shankar)

আপনাদের চারজনেরই ব্যবস্থা হবে। আমার বন্ধু শান্তনু আছে দার্জিলিং-এ। গ্রেট ফেলা; ও সব করে দেবে।

আমার ভয়ংকর লোভ হল ইন্দ্রাণীর কথা বলি, কিন্তু লজ্জা করল। বেরিয়ে এসে বুডডুকে বললাম। ভাই, তিনটের জায়গায় চারটে টিকিট আর সিট করে দেবে? বুডডু বলল, আর কে যাবে? তারপরেই সবজান্তার হাসি হেসে বলল, আপনার স্ত্রী তো? ওকে, তাই হবে। করে দেব। বললাম কিন্তু অরূপবাবুকে বলে নিয়ো। বুডডু বলল, সে যাকে যা বলার আমি বলব। আপনাদের চারজনেরই ব্যবস্থা হবে। আমার বন্ধু শান্তনু আছে দার্জিলিং-এ। গ্রেট ফেলা; ও সব করে দেবে। (Ravi Shankar)

হোটেল থেকে পাহাড়ের দৃশ্য

পরের দিন চার-চারটে প্লেন টিকিট হাতে নিয়ে বুডডু বলল, শান্তদা আপনাদের বাগডোগরায় রিসিভ করবে। আপনাদের জায়গা করা হয়েছে উইন্ডারমিয়র হোটেলে। এভারেস্টের চেয়েও ভাল, নিরিবিলি জায়গা। দ্য বেস্ট প্লেস ইন দার্জিলিং। (Ravi Shankar)

এভারেস্টের চেয়েও ভাল, নিরিবিলি জায়গা। দ্য বেস্ট প্লেস ইন দার্জিলিং।

দুপুরের ফ্লাইট। আমাদের সি-অফ করে দিয়ে গেলেন ভূদেবশঙ্কর, ঝর্ণাদি, রবীনদা। কলকাতায় তখন প্রচণ্ড গরম, কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের হাতে শীতের পোশাক। কমলাদি রীতিমতন একসাইটেড। এত-এত পাহাড়ে গেছেন, কিন্তু কী করে? কী করে দার্জিলিংটাই তাঁর অদেখা? প্লেনে আমাদের সামনের দুটো সিট ছিল ওঁদের। কিন্তু প্লেনটা আকাশে একটু সুস্থির হতেই রবুদা ওঁর সিটের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের তিনজনের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। (Ravi Shankar)

আমাদের সি-অফ করে দিয়ে গেলেন ভূদেবশঙ্কর, ঝর্ণাদি, রবীনদা। কলকাতায় তখন প্রচণ্ড গরম, কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের হাতে শীতের পোশাক।

যতদূর মনে পড়ে ওঁর কথার বিষয় ছিল বিভিন্ন দেশের পাহাড়ি শহর। এমন ভঙ্গিতে উনি স্পেন, তুরস্ক, জাপান, সুইজারল্যান্ড, আমেরিকা, কী ব্রাজিলের গল্প করছিলেন যেন ওসব পাহাড় পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেই আছে। একবার আলমোড়ার পাহাড় ও ওঁর দাদার ইস্কুলের কথা উঠল। এয়ার-হোসটেস্ খাদ্য পরিবেশন করে আমাদের এই আড্ডাটা মুলতুবি রাখতে বাধ্য করল। বাগডোগরা এয়ারপোর্টে যে কত শত লোক জড়ো হয়েছিল রবিশঙ্করকে দেখতে ও অটোগ্রাফ সংগ্রহ করতে, সেটাই একটা দেখার ব্যাপার ছিল। অনেকে ফুলের বোকে নিয়ে এসেছিল। (Ravi Shankar)

আগের পর্ব পড়তে: [] , [], [৩], [], [], [], [], [] , [], [১০], [১১], [১২], [১৩]

আমি ভাবছিলাম এরা খবর পেল কী করে? তার মধ্যে এক ভদ্রমহিলা ছিলেন। বড়ো কোনো সংগীতজ্ঞের আত্মীয়া। আর সেই ভিড় ফুঁড়ে এক সময়ে বেরিয়ে এল পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর বয়সের একটি দুর্দান্ত স্মার্ট যুবক। জিন্সের কম্বিনেশন পরা, চোখে গগল্স, নাকের নীচে ‘মাচো’ গোঁফ। এসে ধরল আমাকেই: আপনি শঙ্করবাবু? বললাম হ্যাঁ। ও বলল, আমি শান্তনু বিশ্বাস। এরপর আমাদের দার্জিলিং থাকা, ভ্রমণ সমস্ত কিছু সম্পূর্ণ ভার নিয়ে নিল শান্তনু। প্রথমে আমাদের নিয়ে তুলল একটা মার্সিডিস বেন্জ ১৯০ ডি গাড়িতে। কী জানি ২২০ এস এল-ও হতে পারে। ভেতরে গড়ের মাঠের মতন জায়গা। পাহাড়ে চড়ার মতন যন্ত্রই বটে। (Ravi Shankar)

সেই ভিড় ফুঁড়ে এক সময়ে বেরিয়ে এল পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর বয়সের একটি দুর্দান্ত স্মার্ট যুবক। জিন্সের কম্বিনেশন পরা, চোখে গগল্স, নাকের নীচে ‘মাচো’ গোঁফ।

রবুদা গাড়িতে চড়েই বললেন, যাক, এ গাড়িতে তাহলে গান গাইতে গাইতে যাওয়া যাবে। ইন্দ্রাণীর গানও শুনব এবার। শান্তনু বলল, তার আগে আপনাদের লাঞ্চ খাইয়ে নেব শিলিগুড়ির ওই হোটেলটায়। গাড়ির থেকে তখনই নজরে পড়েছে এক মস্ত আধুনিক হোটেল। রবুদা তখন বললেন, তা’ ঠিক। না খেলে গান আসবে কী করে? খাবার আগে সবাই একটা একটা করে সফ্ট ড্রিংক নিলাম। না, সবাই নয়। আমি, আর বোধহয় শান্তনুও, বিয়ার নিয়েছিলাম। রবুদা বললেন, আমরা অরূপের সুখ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে টোস্ট করি আসো। ছেলেটা কখনও-কখনও রাগাচ্ছে আমাকে, কখনও ভালোবাসছে, আমরা এবার ওকে ভালোবাসা দেখাব। ও-কে! টু অরূপ্ হেলথ অ্যান্ড হ্যাপিনেস! চিয়র্স। (Ravi Shankar)

দু’বছর আগে গিয়েছিলাম দার্জিলিং, পেলাম স্মৃতির স্পর্শ

আমরা গান গাইতে গাইতেই ঢুকলাম দার্জিলিং-এ। রবুদা গাইলেন এক-একটা রাগের লক্ষণরূপ। সরগম করে ও সেই মতন সহজ লিরিকের কথার বহরে। বার দুয়েক রবীন্দ্রসংগীত গাইল ইন্দ্রাণী। কার্শিয়াং-এ নেমে চা খেলাম আমরা। সেখানে একটা সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে পাহাড় দেখতে লাগলাম আমরা। রবুদা শান্তনুকে বললেন, শান্তনু, আমাকে টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয় দেখাবে তো? শান্তনু বিগলিত হয়ে বলল, নিশ্চয়ই। আপনি যখন যেখানে যা কিছু দেখতে চান, করতে চান, আমাকে বলবেন। তখন রবুদা বললেন, আচ্ছা, আচ্ছা বলব’খন। আগে লেখার কাজটা করে নিই। যে-জন্য আসা। তারপর সব দেখে নেব। (Ravi Shankar)

তখন রবুদা বললেন, আচ্ছা, আচ্ছা বলব’খন। আগে লেখার কাজটা করে নিই। যে-জন্য আসা। তারপর সব দেখে নেব।

উইন্ডরমিয়র হোটেলের একটা দু-কামরার কটেজে আমরা উঠেছিলাম। ডাবল-বেডেড রুম, মুখোমুখি বসানো। সামনে প্রশস্ত বাগান, বাগানের প্রান্তে দাঁড়ালে নীচে ম্যাল দেখা যায়। খুব নিরিবিলি কটেজ। বিলকুল সাহেবি কায়দায় বানানো। লোডশেডিং হলে আমি রবুদা লম্বা লম্বা মোমবাতি জ্বেলে কাজ করতাম। কাজ করতাম সকালে আর বিকেলে। আর বাকি সময় আমরা মিলেমিশে আড্ডা দিতাম, সুযোগ বুঝে একবার করে অরূপের বদান্যতার ঘটা করে প্রশংসা করতাম। শান্তনু আসত, ও-ও তখন আমাদের দলের অবিচ্ছেদ্য একজন। আমরা তখন পাঁচজনের একটা পরিবার। (Ravi Shankar)

লোডশেডিং হলে আমি রবুদা লম্বা লম্বা মোমবাতি জ্বেলে কাজ করতাম। কাজ করতাম সকালে আর বিকেলে।

উইন্ডরমিয়রের খাওয়ার ঘটা ছিল বটে। সম্পূর্ণ বিলিতি কায়দায় কত যে খাওয়া-সে আর কে খেয়ে পারে? পুরো লাঞ্চ কিংবা পুরো ডিনার খাওয়া যেন দারা সিং-এর কাজ। খাবার হজমের জন্য রবুদা প্রতিটি মিলের সময় গোটাকয়েক করে জোক বলতেন। সেই গল্পের মাঝখানে ডাইনিং হলের অন্য সিট থেকে উঠে এসে কেউ না কেউ জিজ্ঞেস করত, আর ইউ রাভিশঙ্কর? রবুদা তখন ধরা পড়ে যাওয়া চোরের মতো হাসিহাসি মুখ করে বলতেন, ইয়েস! (Ravi Shankar)

ডাইনিং হলটাও ছিল ভারি চমৎকার। চতুর্দিকে কাচের শার্সি দেওয়া টানা জানালা। সর্বক্ষণ দেখতে পাচ্ছি পাহাড় আর নীল আকাশ। রাতের বেলায় পাহাড়ের বদলে দেখা যেত পাহাড়ের গায়ে জোনাকির মতন জ্বলে-থাকা আলোর বিন্দু। আমরা ডিনারের আগে আধ ঘণ্টা গল্প বানানোর খেলা খেলতাম পাঁচজনে মিলে। কখনও-কখনও ভূতের গল্প শোনাতাম আমি। তাতে বেধড়ক ভয় পেয়ে যেত ইন্দ্রাণী। একদিন পরশুরামের গল্পের একটা সিন অভিনয় করে দেখালেন রবুদা। বেঁকিয়ে চুরিয়ে বুড়ি ঝিদের মতন হেঁটে মেয়েলি গলার সংলাপ বলে সে এক অদ্ভুত দৃশ্য! ইন্দ্রাণী আজও এই নকশার কথা সবাইকে গল্প করে বলে। (Ravi Shankar)

উইন্ডরমিয়রের খাওয়ার ঘটা ছিল বটে। সম্পূর্ণ বিলিতি কায়দায় কত যে খাওয়া-সে আর কে খেয়ে পারে?

ডিনার খেয়ে কটেজে ফেরার সময়ে ভীষণ-ভীষণ ভৌতিক দৃশ্য বর্ণনা করতাম আমি। আর কটেজের দরজা খোলার আগে বলতাম, এবার একটা মৃত মহিলা পাওয়া যাবে দূরের সোফায় বসা অবস্থায়। আমাদের এই ভূতের গল্পের কথা জেনে গিয়েছিল কটেজের দারোয়ান। সেও একদিন বলে বসল, হাঁ বাবু, এই কটেজে এক মেমসাহেব মারা গিয়েছিল! সেই কথা শোনার পর ইন্দ্রাণী এত ভয় পেয়েছিল সে, তারপর দু-দিন আমরা আর ভূতের গল্প করিনি।

ডিনার খেয়ে কটেজে ফেরার সময়ে ভীষণ-ভীষণ ভৌতিক দৃশ্য বর্ণনা করতাম আমি। আর কটেজের দরজা খোলার আগে বলতাম, এবার একটা মৃত মহিলা পাওয়া যাবে দূরের সোফায় বসা অবস্থায়।

বিকেলে আমরা কাজ করতাম সাতটা অবধি। ট্রিপের শেষ দু’দিন গল্পের পরিবর্তে রবুদা আমাদের সেতার বাজিয়ে গান শোনালেন। গান শোনালেন কমলাদিও। আর রবুদা ওই সময় ইন্দ্রাণীকে চার-পাঁচখানা স্বরচিত গান শিখিয়ে দেন। রাগভিত্তিক, অতি চমৎকার বন্দেজের গান। রবুদা, কমলাদি ও ইন্দ্রাণীর ওই গানের ক্লাস আমি টেপ করে নিয়েছিলাম। (Ravi Shankar)

ট্রিপের শেষ দু’দিন গল্পের পরিবর্তে রবুদা আমাদের সেতার বাজিয়ে গান শোনালেন। গান শোনালেন কমলাদিও। আর রবুদা ওই সময় ইন্দ্রাণীকে চার-পাঁচখানা স্বরচিত গান শিখিয়ে দেন।

রবুদা ইন্দ্রাণীকে বলেছিলেন, এ গান তুমি হাতছাড়া করবে না। শুধু নিজের জন্য রাখবে, আর ভাল করে শিখে নেবে। মনে আছে, রবুদা একদিন তিলক শ্যামে বাঁধা ওঁর গানটা পুরো মুডের ওপর গাইলেন। তারপর খাম্বাজ ঠুংরি। সেরকম ভাল গান আমি খুব বেশি শুনিনি। কী শিক্ষিত, মার্জিত ভাব! কী গভীর স্পর্শের অলংকার! কী কান্না সে গানে। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। রবুদা নিজেও খুব ইমোশন্যাল হয়ে গিয়েছিলেন।

Sankarlal Bhattacharya Author

শংকরলাল ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট, কলকাতায়। ইংরেজি সাহিত্যে স্বর্ণপদক পাওয়া ছাত্র শংকরলাল সাংবাদিকতার পাঠ নিতে যান প্যারিসে। তৎপরে কালি-কলমের জীবনে প্রবেশ। সাংবাদিকতা করেছেন আনন্দবাজার গোষ্ঠীতে। লিখেছেন একশো ত্রিশের ওপর বই। গল্প উপন্যাস ছাড়াও রবিশংকরের আত্মজীবনী 'রাগ অনুরাগ', বিলায়েৎ খানের স্মৃতিকথা 'কোমল গান্ধার', হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিমালা 'আমার গানের স্বরলিপি'-র সহলেখক। অনুবাদ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে সত্যজিৎ রায়ের চিত্রনাট্য পর্যন্ত।

Picture of শঙ্করলাল ভট্টাচার্য

শঙ্করলাল ভট্টাচার্য

শংকরলাল ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট, কলকাতায়। ইংরেজি সাহিত্যে স্বর্ণপদক পাওয়া ছাত্র শংকরলাল সাংবাদিকতার পাঠ নিতে যান প্যারিসে। তৎপরে কালি-কলমের জীবনে প্রবেশ। সাংবাদিকতা করেছেন আনন্দবাজার গোষ্ঠীতে। লিখেছেন একশো ত্রিশের ওপর বই। গল্প উপন্যাস ছাড়াও রবিশংকরের আত্মজীবনী 'রাগ অনুরাগ', বিলায়েৎ খানের স্মৃতিকথা 'কোমল গান্ধার', হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিমালা 'আমার গানের স্বরলিপি'-র সহলেখক। অনুবাদ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে সত্যজিৎ রায়ের চিত্রনাট্য পর্যন্ত।
Picture of শঙ্করলাল ভট্টাচার্য

শঙ্করলাল ভট্টাচার্য

শংকরলাল ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট, কলকাতায়। ইংরেজি সাহিত্যে স্বর্ণপদক পাওয়া ছাত্র শংকরলাল সাংবাদিকতার পাঠ নিতে যান প্যারিসে। তৎপরে কালি-কলমের জীবনে প্রবেশ। সাংবাদিকতা করেছেন আনন্দবাজার গোষ্ঠীতে। লিখেছেন একশো ত্রিশের ওপর বই। গল্প উপন্যাস ছাড়াও রবিশংকরের আত্মজীবনী 'রাগ অনুরাগ', বিলায়েৎ খানের স্মৃতিকথা 'কোমল গান্ধার', হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিমালা 'আমার গানের স্বরলিপি'-র সহলেখক। অনুবাদ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে সত্যজিৎ রায়ের চিত্রনাট্য পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com