(Exhibition)
“CRAFTING VISIONS: THE ART OF GOURI BHANJA”
Gallery- “Aakar Prakar”: Curated by Debdutta Gupta
19th July-16th August, 2025
শ্রীমতী গৌরী ভঞ্জের শিল্প ও উত্তরাধিকার
গৌরী ভঞ্জ (1907-1998) — ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এক উজ্জ্বল নাম। তিনি কেবল আচার্য নন্দলাল বসু এবং সুধীরাদেবীর বড় মেয়েই নন, বিশ্বভারতীর আশ্রমিক হিসেবে, রবীন্দ্রনাথ অবনীন্দ্রনাথ এবং স্থপতি সুরেন করেরও স্নেহধন্য। এঁরা সকলেই অনুরাগী ছিলেন তাঁর শিল্প দক্ষতা ও বোধের। কারুশিল্পী সুকুমারীদেবীর অবসরের পর তিনিই বিশ্বভারতীর কারুশিল্প শাখাকে নতুনভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। (Exhibition)








জলরং, আল্পনা, বাটিক, চামড়ার কাজ, কাঠখোদাই কিংবা বয়নশিল্প— প্রতিটি মাধ্যমেই তাঁর সমান স্বাচ্ছন্দ্য। নৃত্য ও উৎসবসজ্জার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অপরিহার্য। শান্তিনিকেতনের উৎসবসংস্কৃতির বহু দিকেই তাঁর পরিকল্পনা ও হাতের ছোঁয়া এক স্থায়ী চিহ্ন রেখে গেছে। (Exhibition)
বর্তমান প্রদর্শনীতে তাঁর কাজগুলির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এই বহুমাত্রিকতা। একদিকে মঞ্চ উপস্থাপনা, ফুল, প্রান্তর কিংবা দিগন্তের মতো বিষয়ে একের পর এক আঁকা ছবি— অন্যদিকে নিখুঁত আঙ্গিকে চামড়ার কাজ, আল্পনা ও বাটিকের নকশায় স্বাতন্ত্র্য। শিল্পকে তিনি কখনই কেবল নান্দনিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি; জীবনের পরিসর ও আনন্দ-অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে তাকে করে গেছেন সবার কাছে অংশগ্রহণমূলক এক আয়োজন। (Exhibition)
সংবিধান প্রসঙ্গেও তাঁর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নন্দলাল বসুর নেতৃত্বে কলাভবনের যে চিত্রীদল ভারতীয় সংবিধানের পাতাগুলির অলঙ্করণে নিযুক্ত হয়েছিলেন, কলাভবনের স্নাতক হিসেবে তাতেও সক্রিয় সহযোগ ছিল গৌরীর। (Exhibition)








ভারতীয় শিল্পধারার ঐতিহ্যকে আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের সংবিধানে রূপায়িত করার যে ঐতিহাসিক প্রয়াস, তার ভেতরেও তাঁর অবদান রয়ে গেছে। এ যেন তাঁর শিল্প-চিন্তার এক বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ। (Exhibition)
প্রদর্শনীর ছবিগুলি দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, তিনি নিজেও যেন এক স্বয়ং উৎসব। এত কাজ করার পরেও কত ছবি যে এঁকে গেছেন! প্রকৃতি কিংবা অবয়ব— সবটুকু নিয়েই যেন তাঁর চোখে সেই আসল শান্তিনিকেতনের নির্যাস, যার মূল সুর ছিল নিয়ত উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা। (Exhibition)
“গৌরী ভঞ্জের প্রদর্শনী কেবল শিল্পদর্শনের অভিজ্ঞতা নয়, বরং শান্তিনিকেতন শিল্পধারার ধারাবাহিকতা, কারুশিল্পের প্রসার এবং নব নির্মাণের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।”
কলকাতার দর্শকদের কাছে এ এক বিরল সুযোগ— গৌরী ভঞ্জের সৃজন ও জীবনযাপনকে এত কাছ থেকে অনুধাবন করা। মানুষটি তো এই সেদিনও ছিলেন আশ্রমিকদের সকলের প্রিয় “গৌরীদি”। এখানেই পড়েছে তাঁর শেষ নিঃশ্বাস। প্রদর্শনীর সামনে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট বোঝা যায়, কীভাবে তিনি অনায়াসে নির্মাণ করেছেন উত্তরাধিকার ও পরম্পরা, যা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। গৌরী ভঞ্জের প্রদর্শনী কেবল শিল্পদর্শনের অভিজ্ঞতা নয়, বরং শান্তিনিকেতন শিল্পধারার ধারাবাহিকতা, কারুশিল্পের প্রসার এবং নব নির্মাণের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। (Exhibition)
চিত্রী পার্থপ্রতিম দেব
চিত্র প্রদর্শনী : “Play FORMS”
Emami Arts, Kolkata: Gallery: 2: 27th June—9th August, 2025








কাছের মানুষ যখন চিত্রী হন, তখন তাঁর কাজের মধ্যে ধরা পড়ে আর এক অচেনা মানুষের হাবভাব এবং বিচিত্র সব ভাবনা। পার্থদার আঁকা এবং installations-গুলির সামনে দাঁড়িয়ে, আবার সেই একই কথা মনে এল আমার। ছবিগুলি দেখে বোঝা যায় যে, কীভাবে তিনি দেখছেন তাঁর চারপাশ এবং মানুষজনদের। নাগরিক মনন এবং সরলভাবে জটিলতাকে দেখা। আর সে সবই ফুটিয়ে তুলেছেন নাগাড়ে, একের পর এক ক্যানভাসে। অনেক সময় ধরে দেখেছি তাঁর বিভিন্ন রকম মোচড় এবং অভিযান ছোট-বড় নানা পরিসরে। হয়তো এ জন্যই প্রদর্শনীর এমন এক শিরোনাম— খেলার রকমফের যা আসলে যুদ্ধেরই প্রস্তুতি ও নির্মাণ। (Exhibition)
খুব আনন্দ হল দেখে যে, পার্থদা আবার এক নতুন পথের সন্ধানে নেমেছেন, চেনা পথের আঙ্গিককে বেশ সবলে দাবড়ে রেখেই; কোনও শিল্পীর কাজ ধারাবাহিকভাবে দেখে যাওয়ার এটাই সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। বাঁকগুলি বড় চমৎকারভাবে চেনা যায়। ফলে আমাদের মতো আনাড়িদেরও এঁরা দেখতে শেখান। টেনে আনেন, শিল্পচর্যার একেবারে অন্দরে। (Gallery)
চিত্রী অরুণিমা চৌধুরী
প্রদর্শনী -‘আরণ্যক’
Emami Arts – Kolkata:Gallery -1: 27th June- 9th August








অরুণিমাদির কাজ আগে না-দেখার যে হাতকামড়ানো আফসোস ছিল, তার কিছুটা উপশম হয়েছিল প্রদর্শনী শুরুর আগেই, তাঁর করা লম্বা স্ক্রোলগুলি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বলে। তখন থেকেই তাল ঠুকছি এই প্রদর্শনীটি দেখার প্রতীক্ষায়। (Exhibition)
স্ক্রোল ছাড়াও দেওয়ালজোড়া প্রতিটি ছবিই যেন জীবনের আলাদা আলাদা পাঠ। কোমল আবেশেও এক অমোঘ তীব্রতা, এবং দর্শককে ছবির সামনে স্থির দাঁড় করিয়ে রাখবার এক অদৃশ্য ক্ষমতাও! অরণ্য না বলে একে অরণ্যানী বা অরণ্য-নিমজ্জনই বলা ভাল। মা-বাঘ যেমন শাবকদের সুরক্ষা দেয়, অরুণিমাদির শিল্পীমনও তেমনি আঁকড়ে রেখেছে অরণ্যপ্রাণকে। জঙ্গুলে পথ মিশে গেছে মনের অতল গহনে। অন্ধকারও যেন আলোমাখা— গাঢ় বাদামী, জলপাই সবুজ, মরচে রঙের এক নিবিড় অভিলাষ। গিজগিজে গাছপালা, অগণিত মানুষের ভিড়ের সঙ্গেই পাশাপাশি রয়েছে বিস্ময়ভরা আয়ত চোখের চাহনি; আছে, উমনোঝুমনো চুলের বুনো রমণীর অনাবিল লাবণ্য। নারী ও অরণ্য যেন নিজস্ব টানেই একাকার হয়ে জড়িয়ে আছে প্রকৃতির পূর্ণতায়। (Exhibition)
আরও পড়ুন: সঞ্জীত চৌধুরীর প্রদর্শনী – এক হারিয়ে যাওয়া সময়ের আখ্যান
ফ্রেমবন্দী হোক বা স্ক্রোল— সর্বত্র সমান তীব্রতা এবং নিপুণ আয়োজন। মনে পড়ে যায় শিল্পীর অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা। রেখা, রঙ, সুতোর ফোঁড়ে জড়িয়ে আছে কত কিছুই, এক সফল যুথতায়। তাই তাঁর কাজ শুধু শৈলী নয়, হয়ে উঠেছে ছবি— স্বতন্ত্র, নিবিড়, আত্মস্থ এক সম্মোহ। (Exhibition)
কিছু ফুল, কয়েকটা পাতা কুড়িয়ে নিলাম; আর পথ হারিয়ে ঘুরে বেড়ালাম এই মহারণ্যে। এমন প্রদর্শনী তো অবশ্যই বিরল, এমনকি বারংবার দেখার জন্য জীবনটাও যেন বাড়িয়ে নেওয়া যায় বেশ কিছুটা। কারণ এ শুধু দৃশ্য-উল্লাস নয়, অরণ্যানীর এক সংবেদী প্রার্থনা। (Exhibition)
ছবি সৌজন্য- লেখক
ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত
আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।