
বাংলা চলচ্চিত্রের শুরু থেকে আজ অবধি অধিকাংশ ছবির গল্পেরই মুখ্য উপজীব্য ‘প্রেম’। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই ‘প্রেম’ এর নানা রূপান্তর আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ছবির গল্পের চরিত্রদের আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই প্রেম কখনও নিরুচ্চার আবার কখনও বা সোচ্চার। ধনীর সন্তানের প্রেমে বাহুল্য বেশি। কখনও বিলিতি হুড-খোলা গাড়িতে কখনও গ্র্যান্ড পিয়ানোয় বসে গানে গানে জমে ওঠে প্রেম। তুলনামূলকভাবে কম সঙ্গতিসম্পন্ন হলে নায়ক-নায়িকার কপালে জুটত গঙ্গার ঘাট অথবা স্টুডিওর পটে আঁকা বাগান। তবে প্রেক্ষাপট যাইই হোক, বাংলা সিনেমায় প্রেমের জোয়ারে ভাঁটা পড়েনি কখনও। বিবাহ-পূর্ব এবং বিবাহ-পরবর্তী― এই দুই ঘরানার প্রেমই নানা রকমফেরে দেখা গেছে বাংলা সিনেমার গল্পে। উদ্দাম উত্তাল রোমান্স থেকে শুরু করে ঘরোয়া সাংসারিক প্রেম, বাদ পড়েনি কিছুই।

রাত করে বাড়ি ফেরা প্রেমিকের ক্লান্ত অবসন্ন মুখ জানলা দিয়ে দেখেই নিজের মনের মধ্যে প্রেমের প্রদীপখানি এলআইসি-র প্রতীকের মতো সযত্নে জ্বালিয়ে রাখে প্রেমিকা। ব্যাকগ্রাউন্ডে অবশ্যই উভয়েরই একান্নবর্তী পরিবার– বিশেষত প্রেমিকের। এই ধরনের গল্প সমৃদ্ধ ছবির উদ্ভব সেই গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে হলেও তার রেশ ছিল সেই সত্তর দশকের গোড়া অবধি (নতুন দিনের আলো’ বা ‘সংসার’- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত)। তবে নাটকীয়তা আনার জন্য অধিকাংশ ছবিতেই হয় ছেলেটা বা মেয়েটাকে ধনীর দুলাল বা দুলালী হিসেবে দেখানো হতো। সেই ছবির আবশ্যিক শর্তই হত মেয়েটিকে বা ছেলেটিকে প্রোলেতারিয়েত শ্রেণির প্রতিনিধি করে দেখানো। আর ছেলেদের অতিরিক্ত যোগ্যতা হত মদ্যপান বা ধূমপান না করা এবং চিত্রনাট্যকারের দাক্ষিণ্য থাকলে নিজ অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে একটি সর্বংসহা নিবেদিতপ্রাণ প্রেমিকার উপস্থিতি। সেই নীরব প্রেমিকা সারাদিন হত্যে দিয়ে নায়কের বাড়িতে পড়ে থাকলেও শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান নায়ক ন্যাকা সেজে তাকে বোন বলে ভাবত। নরেশ মিত্র পরিচালিত ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’(১৯৫৪) ছবিতে অবশ্য এই সূত্রের একটু রকমফের হয়েছিল। ধনী নায়ক উত্তমকুমার নিষ্পাপ চোখে ছবির নায়িকা গরীব ঘরের মেয়ে সুচিত্রা সেনকে বোন হিসেবে দেখে। তারপর ঘটনাচক্রে নায়িকা আত্মহত্যা করাতে নায়কের টনক নড়ে এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে নায়িকার বোন সাবিত্রী চট্টোপাধায়কে বিবাহ করে এবং মৃত প্রেমিকার স্মৃতিতে মন্দির নির্মাণ করে শাজাহান হবার প্রচেষ্টা করেন।

নায়ক-নায়িকা দুজনেই ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধি হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ছিল অনিবার্য। এই সূত্রের সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হলে প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’ ছবিটি। ব্যর্থ প্রেমের গল্প হলেও এই কাহিনি বাঙালি দর্শকমনে এক চিরকালীন প্রেমকাহিনি বলে স্থান লাভ করেছে। অথচ শরৎচন্দ্রের লেখা মূল কাহিনিতে নায়ক-নায়িকার মধ্যে সেই ছোটবেলা থেকেই মতান্তর। এমনকি নায়ক দেবদাস মধ্যে মধ্যে নায়িকা পার্বতীর গায়ে হাতও তুলেছে। তবু নায়িকা তার প্রেমিকের প্রতি একনিষ্ঠ থেকেছে। কুলীন ব্রাহ্মণ না হওয়ায় তার অন্যত্র বিয়ে হলেও সে দেবদাসকে ভুলতে পারেনা। মনের দুঃখে নায়ক সুরাসক্ত হয়ে পড়ে এবং অনতিবিলম্বে আরেকটি নারী তার বেপথু জীবনে উপস্থিত হয়ে তাকে ভালবেসে ফেলে। দেবদাস এই প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে চন্দ্রমুখীকে ঠিক ভাল না বাসলেও তার প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ বোধ করে। কিন্তু কাহিনির শেষে সুনীতি বজায় রাখতে দেবদাস-পার্বতীর মৃত্যু ঘটে। এই ঘোর অবাস্তব কাহিনিটি বাঙালি দর্শকের মনে এত গভীরভাবে দাগ কেটেছে যে বড়ুয়ার আগে পরে মিলিয়ে মোট চার বার একই গল্প নিয়ে ছবি তৈরি হয়েছে। প্রেমে শুধু নয়, জীবন যুদ্ধেও চূড়ান্ত ব্যর্থ দেবদাস বাঙালি মানসে প্রেমিকের আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন।
সেকালের ‘মুক্তি’ (১৯৩৭) ছবিটি প্রমথেশ-কাননবালার বিবাহ পূর্ব প্রেম এবং বিবাহোত্তর ঝামেলার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে। এই ছবিতে নায়ক নায়িকা দুজনেই উচ্চবিত্ত। সোসাইটি গার্ল চিত্রা (কানন) কিছুটা খামখেয়ালী শিল্পী প্রশান্তকে (প্রমথেশ) ভালবাসলেও তার মানসিকতার সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নিতে পারে না। চিত্রা অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এলে ঠিক কী হত তা বলা যায় না। সমসাময়িক ‘শেষ উত্তর’ (১৯৪২) ছবিতে কিন্তু ধনী এবং খামখেয়ালী নায়কের (প্রমথেশ) খামখেয়ালীপনাকে গানে-মানে-অভিমানে চমৎকারভাবে সামাল দিয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে (কাননবালা) তাকে যে শুধু প্রেমের জালে আবদ্ধ করে তাই নয়, তার বাগদত্তাকে হটিয়ে নায়কের জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। আবার বড়লোক নায়িকা এবং গরিব নায়কের গল্পে কিছুটা রকমফের আমরা দেখেছি বিমল রায়ের ‘উদয়ের পথে’ (১৯৪৪) ছবিটিতে। সেখানে ধনী নায়িকার (বিনতা রায়) সঙ্গে টক্কর দিতে দরিদ্র নায়কের (রাধামোহন ভট্টাচার্য) হাতিয়ার তার শিক্ষার অহঙ্কার। সংঘর্ষ তো অনিবার্য। কিন্তু সব রাগের নদী-ই শেষে অনুরাগ সাগরে এসে মিশে গেল। নায়িকাও বিদ্রোহিনী হয়ে বাড়ির বিরুদ্ধে গিয়ে ধন-দৌলত পায়ে ঠেলে শেষমেশ নায়কের হাত ধরে। ছবি বাম্পার হিট। অবশ্য পূর্ব উল্লেখিত ‘দেবদাস’ ‘মুক্তি’ বা ‘শেষ উত্তর’ ও ছিল বাম্পার হিট। এবং সেই সুবাদেই এই আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
ব্যর্থ প্রেমের গল্প হলেও এই কাহিনি বাঙালি দর্শকমনে এক চিরকালীন প্রেমকাহিনি বলে স্থান লাভ করেছে। অথচ শরৎচন্দ্রের লেখা মূল কাহিনিতে নায়ক-নায়িকার মধ্যে সেই ছোটবেলা থেকেই মতান্তর।
উপরে আলোচিত সব কয়টি ছবিতেই প্রেম ছিল কেমন যেন নিরুচ্চার, কেমন যেন রসকষহীন। আবেগ ভরে নায়িকার হাতটি অবধি ধরতে সাহস পেত না নায়ক। বস্তুত সেই সময়ের অধিকাংশ ছবিতেই প্রেম প্রধান উপজীব্য হলেও তাতে প্যাশন ছিল না। তার প্রধান কারণ বোধ করি নায়ক নায়িকাদের চেহারার মধ্যে ছিল রোমান্টিকতার অভাব। নায়কদের তো একেবারেই ছিল না। দু-একজন নায়িকাকে সামান্য ব্যতিক্রম ধরা গেলেও অভিনয়ে যথোচিত প্যাশনের ছিল অভাব। এখনকার ছেলেমেয়েরা কল্পনাও করতে পারবে না যে এত নিস্পৃহভাবে ভালবাসার কথা বলা যায়! সেই কারণেই ছবিগুলি তেমন বাণিজ্যিক সাফল্য পেত না- কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে।

এই অবস্থাটা চলেছিল প্রায় পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি অবধি। যতদিন না উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেন নামক দুই স্বপ্নলোকের তারা এসে আপামর বাঙালিকে প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আর কাছাকাছি সময়ে মনুষ্যরূপী দেবতা হিসেবে হাজির হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বসন্ত চৌধুরী, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায় বা সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া চৌধুরী, মাধবী মুখোপাধ্যায় বা অপর্ণা সেন-এর মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। পর্দায় এঁদের দাপট এতটাই ছিল যে ঘোর অবাস্তব কাহিনিগুলোকেও দর্শকেরা সত্যি বলে ধরে নিতেন এবং মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করতেন। এঁদের মধ্যে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে সবার সেরা ছিলেন উত্তমকুমার। রোমান্টিক প্রেমিকের রোল মডেল হিসেবে তিনি বাঙালি হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন লাভ করে আছেন। তার ধার-কাছে আর কোনো নায়ক নেই। অভিনয়ে প্রেমের ভ্যারিয়েশন দেখিয়েছিলেন বটে উত্তমকুমার। কি বিবাহ-পূর্ব বা কি বিবাহোত্তর – দুই ধরনের প্রেমেই তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সুদর্শন চেহারার সঙ্গে অমন মারকাটারি হাসি! মনে মনে তাবৎ বাঙালি রমণীকূল উত্তমকুমারে নিমজ্জিত ছিলেন।

ছবিতে বিবাহ পূর্ব প্রেমটি উত্তমকুমার চুটিয়ে করে গেছেন সুচিত্রা সেন-এর সঙ্গেই। ছবির শেষ দৃশ্যে সুচিত্রার অমন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে এসে উত্তমের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ার ফর্মুলা ছিল পরিচালকের ট্রাম্প কার্ড। গল্প বা ছবির অবাস্তবতা আর যাবতীয় দুর্বলতা ঢাকা পড়ে যেত ঐ প্যাশনের আড়ালে। তবে পর্দায় এদের প্রেমের মূল অস্ত্র ছিল নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় বা বিনয় (—-) কৃত চিত্রনাট্যের টক-ঝাল-মিষ্টি সব সংলাপ এবং হেমন্ত-সন্ধ্যা জুটির অনবদ্য সব গান। এই জুটির প্রথম হিট ছবি ‘অগ্নিপরীক্ষা -র কথাই ধরা যাক। কৈশোরেই বিবাহিত – নায়ক-নায়িকা যৌবনে এসে নতুন করে পরিচিত হয় এবং দর্শকদের দুলিয়ে চুটিয়ে প্রেম করার পর নায়িকা জানতে পারে সে তার প্রেমিকেরই পূর্ব বিবাহিতা স্ত্রী! তবে অগ্নিপরীক্ষাকে ঠিক সেই অর্থে বিবাহোত্তর প্রেম বলা যাবে না। বিবাহোত্তর প্রেম উত্তমকুমারের সঙ্গে ছবিতে জমিয়ে প্রেম করেছেন মাধবী চক্রবর্তী (মুখোপাধ্যায়) – ‘শঙ্খবেলা’ (১৯৬৬) এবং ছদ্মবেশী’ (১৯৭১) ছবিতে। বিবাহিত স্ত্রীর মধ্যেও এমন আগুনে প্যাশনই তো ছেলেরা খোঁজে।
গাড়ি চালাতে চালাতে যখন পাশের সিট থেকে নব-বিবাহিতা স্ত্রীর ‘আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব’(শঙ্খবেলা- লতা মঙ্গেসকার) গানটি শোনা যায় তখন তাকে স্ত্রী অপেক্ষা প্রেমিকাই বেশি মনে হয়। আর একই ছবিতে তোপচাচির লেকে নৌকাবিহারে যখন উত্তম-মাধবী-র দ্বৈতসঙ্গীত শোনা যায় কে প্রথম কাছে এসেছি’ (মান্না-লতা) তখন তাদের কি প্রণয়ী-যুগল ছাড়া অন্য কিছু মনে হয়! অমন গনগনে প্রেমের দৃশ্য এবং গান তখনকার ছবিতে তো বটেই এখনকার বাংলা ছবিতেও অকল্পনীয়। অথচ কোথাও ভালগার মনে হয়নি। ছদ্মবেশী’-তে অবশ্য নবপরিণীতা বধূ মাধবী অবস্থাবিপাকে বাধ্য হয়েছিলেন প্রেমিকাসদৃশ ব্যবহার করতে। তাই নিয়েই ছবির যত মজা। বাংলা ছবির গানে ‘প্রেম’ শব্দটি এই প্রথম এত সোচ্চারে ব্যবহৃত হলো – ‘বাঁচাও কে আছো মরেছি যে প্রেম করে’, তার শরীরী আশ্লেষ পূর্ণতা পেলো ‘মৌচাক’ (১৯৭৫) ছবিতে ‘বেশ করেছি প্রেম। করেছি, করবোই তো’(আশা ভোঁশলে) গানটির মধ্যে। অথচ উত্তম সুচিত্রার সেরা সময়ের প্রেমের গানগুলো কেমন যেন মিনমিনে ছিল – ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়) বা ‘তুমি যে আমার’ (গীতা দত্ত) জাতীয়।
‘শুধু একটি বছর’ (১৯৬৬) ছবিটিকে উত্তমের বিবাহোত্তর প্রেমের আর একটি নিদর্শন বলা যাবে। সম্পত্তি হাতে পাবার জন্য সুপ্রিয়া এক বছরের জন্য উত্তমকে চুক্তিবদ্ধ বিয়ে করেছিল ঠিকই তবে হৃদয়ে তার প্রেমের আগমন ঘটে ‘চুক্তি শেষ হয়ে যাবার কিছু আগেই। তবে উত্তম-সুপ্রিয়া-র জমাটি প্রেমের ছবি ছিল ‘চিরদিনের’(১৯৬৯) এবং‘বিলম্বিত লয়’। দুটি ছবিতেই ছিল প্রেমের জন্য প্রেম― ঘটনাচক্রে প্রেম নয়। যেমনটি হয়েছিল ‘জীবন মৃত্যু’ (১৯৬৭) বা ‘তিন অধ্যায়’ (১৯৬৮) ছবিতে।‘চিরদিনের’ ছবিতে সুপ্রিয়ার অমন বিলোল চাউনি তখনকার তরুণদের বুকে কাঁপন লাগিয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে পর্দায় উত্তম-সুপ্রিয়ার প্রেম উত্তম-সুচিত্রার প্রেমের থেকেও অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। ‘জীবন মৃত্যু’ ছবির ‘কোনো কথা না বলে (মান্না-সন্ধ্যা) গানের দৃশ্য়ে গায়িকা সুপ্রিয়ার সঙ্গে তবলচি উত্তমের দৃষ্টিবিনিময় সেই দৃশ্যকে সম্পূর্ণ অন্য মাত্রা দিয়েছিল।
উত্তম-সুচিত্রার কথায় ফিরে আসি। পর্দায় উত্তম-সুচিত্রা জুটির বিবাহপূর্ব প্রেমের সেরা তিনটি নিদর্শন – ১) চাওয়া পাওয়া’, ২)‘সপ্তপদী’(১৯৬১), ৩) হারানো সুর (১৯৫৭)। এদের মধ্যে সেরা অবশ্যই ‘চাওয়া পাওয়া’ কারণ এর গল্প অনেকটাই বাস্তব ঘেঁষা। স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে প্রাথমিক অপছন্দের বেড়া ডিঙ্গিয়ে প্রেমে পড়া এবং অবস্থা বিপাকে নায়কের যে প্রেমের স্বীকৃতি দিতে চূড়ান্ত দ্বিধা। সপ্তপদী’ ছবিটি উত্তম-সুচিত্রার চিরকালীন প্রেম-গাথা হিসেবে বাঙালির মনে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
‘হারানো সুর’ ছবিতে জুটির বিবাহ পূর্ব প্রেম অবস্থা বিপাকে বিয়ের পরেও একই থেকে গিয়েছিল কারণ সাময়িক স্মৃতিভ্রষ্ট প্রেমিক হঠাত্ই স্মৃতি ফিরে পেয়ে মাঝের কিছুদিনের কথা বিস্মৃত হয়েছিল। তবে যে প্রেমিকের ভূমিকায় অভিনয় করে উত্তমকুমার সেরা অভিনেতার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সেই ‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গী’ (১৯৬৭) ছবির নায়িকা ছিলেন তনুজা। এই জুটির আরেকটি হিট এবং মনমাতানো গানের ছবি ছিল ‘দেয়া নেয়া (১৯৬৩)। উত্তমকুমার ছাড়া বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের আর যে নায়কটি প্রেমিক হিসেবে বাঙালির মননে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং রোমান্টিক জুটি হিসেবে সবচেয়ে সফল এবং হিট ছিল সৌমিত্র-অপর্ণা এবং সৌমিত্র-তনুজা জুটি।
সোমনাথ রায় 'এখন সত্যজিৎ' পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে পুরনো বাংলা ছবি নিয়ে গবেষণা করেন। বাংলা ছবির পাবলিসিটি মেটিরিয়ালস নিয়ে একটি আর্কাইভ তৈরি করেছেন। 'হাসি গল্পে সত্যজিৎ' 'A Monograph on Hiralal Sen', 'সিনেমা ধাঁধা' ইত্যাদি একাধিক সিনেমা সম্বন্ধীয় বইয়ের লেখক। এছাড়া তিনি পুরনো ছবির ফিল্ম বুকলেটের সংগ্রাহক।
2 Responses
Khub bhalo lekha hoyeychey
Khub valo laglo ar purano chhobi gulo chokher samne veshe uthlo .