Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ভূমধ্যসাগর: গ্রাম থেকে জাপানি ভাষায়

বাংলালাইভ

মার্চ ২৯, ২০২৪

Sabir Sekh-article-from-vumadhyasagor
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

সাবির শেখ

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার একটি প্রান্তিক গ্রামে এক কৃষক পরিবারে আমার জন্ম। গ্রামের নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশে সহজ সরল মানুষদের মধ্যে বেড়ে উঠেছি। আমাদের গ্রামে প্রায় সব পরিবারই চাষবাসের কাজে যুক্ত। যাদের হয়ত নিজেদের জমি নেই তারাও ক্ষেতমজুরি করেন। তা ছাড়া যারা দুচার ঘর চাকরি পেয়েছে তারা শহরে চলে গেছেন, চাষের কাজ আর করেন না। তাই গ্রামের বেশি মানুষ কৃষিকাজে সঙ্গেই যুক্ত। আমার বাবাও কৃষক। আমাদের জমির পরিমাণ খুবই সামান্য তবুও হাতের পাশে যতটুকু আছে তা কৃষিকাজের উপযুক্ত। আমাদের বসতবাড়িটি কৃষিজমির কাছে তাই ছোটবেলা থেকে চাষের মাঠের সঙ্গে আমার এক নিবিড় নাড়ির যোগ রয়েছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ঘরের জানলা খুলে দিলে পূর্ব দিগন্তে রাঙানো রবির কিরণ স্পর্শিত ধান গাছেরা সুপ্রভাত জানিয়ে যায় আজও। ছেলেবেলায় সেই ধান পেকে গেলে বিকেলের পড়ন্ত রোদে সোনায় পরিণত হওয়া ধানখেত মুগ্ধ করে রাখত। রোজ দেখেও পুরোনো হত না। সকালে সূর্যের আলো ক্ষেতের আলে হীরের মত চিকচিক করে ওঠা নাম-না-জানা কত ফুল শিশিরের কণা পাখির ডাক। কালো আখের জমি, আলুর সাদা রঙের ফুল- এরা যেন আমার আজন্ম সাথী। এখানেই ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছি আমি। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় পার করে কলেজ শুরুর শিক্ষার জন্য তৈরি করেছি নিজেকে। এরপর অবশ্য বুঝতে পারি যে ছেলেবেলায় বাবার কাজটাকে, চাষ করে ফসল ফলানোকে, যতটা সহজ মনে হয়েছিল সেই ধারণা আস্তে আস্তে ভেঙে যাচ্ছিল। গ্রামের পুরনো পদ্ধতিতে কৃষিকাজ খুব পরিশ্রমের ব্যাপার। যাই হোক গ্রামের চাষের জমিগুলি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এগুলো ছোট ছোট টুকরো। এইগুলি সাধারণত দুই ফসলী, তার মধ্যে ধান আর আলুর চাষ হয় বেশি। আগে এই জমিতে চাষ হতো বিভিন্ন ফসল, যেমন ধান আলু ছোলা মুগ কালোকলাই সরষে পেঁয়াজ প্রভৃতি, কিন্তু বর্তমানে বাজারের জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া আর ফসলের ঠিকমতো দাম না পাওয়া— এই পরিস্থিতির চাপে অন্যান্য ফসল কমে গিয়ে বেশি করে কেবল ধানই হয়।

Agriculture
অন্যান্য ফসল কমে গিয়ে বেশি করে কেবল ধানই উৎপাদন হয়

আমি এখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। জাপানি ভাষা-সাহিত্য ও নিপ্পন অর্থাৎ জাপানের সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির যোগ— এই আমার বিষয়। কিন্তু আমি কিন্তু কখনোই আমার গ্রাম থেকে, পরিবার থেকে মনে মনে একটুও দূরে থাকি না। এখানে হোস্টেলে থাকি, কয়েকদিন ছুটি হলেই বাড়ি চলে যাই। বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজে হাত লাগাতে আমার এখনও ছোটবেলার মতই ভালো লাগে। বরং যেমন যেমন বড় হচ্ছি, চাষের অনেককিছু সমস্যা বুঝতে পারছি। কতো কষ্ট করে আমার বাবা আর অন্যরা ফসল ফলান সেইসব দেখছি। এই সমস্যাগুলোর কথা আমার আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে যাতে গ্রামের থেকে দূরে যারা থাকেন তাঁরা আমাদের সমস্যাগুলি ভালো করে বুঝতে পারেন।

আরও পড়ুন- ভূমধ্যসাগর: সিমসাং বনাম সোমেশ্বরী

কৃষিকাজ খুবই ঘনিষ্ঠভাবে প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত। কখনো পরপর বছরে অনাবৃষ্টি বা অসময়ে শিলাবৃষ্টি হলে, কখনো অতিরিক্ত বৃষ্টি কিংবা বন্যার জন্য ক্ষেত জলে ডুবে থাকলে ফসল ভালোমত হয় না। ঠিক সময়ে বৃষ্টি না হলে মাঠে বীজ ছড়ানো যায় না, কিংবা বীজ থেকে ধানের চারা পুষ্ট হয় না। ধানে শীষ ধরবার পর ক্ষেত জলে ডুবে গেলে নষ্ট হয়। ধানের শীষ পচে যায়। আলুর গাছ বা মাটির তলায় আলু পচে যায়। অন্যদিকে অনাবৃষ্টিতে ফুল শুকিয়ে যায় হয়তো। কৃষকরা এই সময়ের হিসেব খুব ভালোভাবে জানেন বলে সাধারণত ফসল স্বাভাবিক হয়। তবু খরা বা অতিবৃষ্টি কিংবা অসময়ের বৃষ্টির মত প্রাকৃতিক সমস্যার কোন সমাধান নেই কারণ প্রকৃতি মায়ের কাছে মানুষ চিরকাল অসহায়। আজকাল অবশ্য কৃষিকাজের জন্য বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে, তাছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সাবমারসিবল পাম্পের ব্যবহার বেশ বেড়েছে, কিন্তু গ্রামের সমস্ত কৃষিজমির পক্ষে তা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া সাবমারসিবল পাম্প মাটির তলা থেকে অবিশ্রান্ত যে জল টেনে তোলে তার ফলে মাটির নিচে জল কমে আসছে। বর্ষাকালে যেমন নদীতে অনেক জল ভরে যেত তেমনি আমাদের এখানে কাঁকুড়ে বালি-মাটি দিয়ে অনেক জল তাড়াতাড়ি মাটির নিচে চলে যেত। সেই জল বীরভূমে এত এত কাঁদর বা ছোট নদী দিয়ে বেরিয়ে আসত।  

Bhumadhyasagar

আমাদের চাষের ক্ষেতে বেশি উৎপাদনের জন্য প্রচুর যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু এইসব ট্রাক্টর, পাম্প বা অন্যান্য বড় যন্ত্র ব্যবহারের জন্য হয় প্রচুর তেল অথবা বিদ্যুৎ দরকার হয়। তার জন্য অনেক ভাড়া লাগে। সেই টাকা যোগাড় করা, বীজধান, রাসায়নিক সার— সব কিছুরই দাম অনেক বেশি। মোটামুটি চাষীকেও তাই ব্যাংক থেকে লোন নিতে হয়। সেই দুশ্চিন্তা আমার বাবার মত মানুষদের মাথায় বোঝা হয়ে থাকে। তাছাড়া আগে যেভাবে হাল দিয়ে জমি চাষ হত, তাতে মাটির অনেক ভেতরে পর্যন্ত খোঁড়া হয়ে যেত বলে নিচের মাটি ওপরে উঠে এসে সূর্যের আলো পেত। বড়রা বলেন বলদ দিয়ে চাষ করলে আলাদা করে বেশি সার মাঠে দেবার দরকার হত না। হাতে করে কাটলে যদিও সময় বেশি লাগে কিন্তু ধানগাছ গোড়া পর্যন্ত কেটে নেওয়া হত। কাজেই ধান ঝাড়ার পরে বাকি খড় বা পোয়ালটা পশুখাদ্য হত অথবা ঘর ছাওয়ার কাজে লাগতো। ট্রাক্টর দিয়ে যে জমি চাষ করা হয়, বয়স্ক কৃষকরা দেখান যে সে জমির গভীর অংশ বছরের পর বছর না উলটানোয় তলার মাটি একদম শক্ত হয়ে গেছে। দুই তিন বছর পর থেকে ধানের ফলন কমেছে, প্রতিবছর বেশি বেশি ইউরিয়া পটাশ সার দিতে হয়। এইভাবে চাষের খরচ প্রত্যেক বছর বাড়ছে। তাছাড়া আমাদের গ্রামে অনেকে থাকেন যারা জমি না থাকলেও অন্যের জমিতে ক্ষেতমজুরি করেন। ধান কাটা থেকে ঝাড়া, আরো নানারকম কাজে এমনকি গ্রামের মেয়েরাও অংশ নিতে পারে। যন্ত্রের সাহায্যে মাটি খোঁড়া চারা লাগানো বীজ ফেলা অথবা ফসল কাটা হলে গ্রামের অনেক লোক আর কাজ পায় না। তখন মানুষকে বাধ্য হয়ে বাইরে কাজ খুঁজতে যেতে হয়।

Traditional_cultivation
ঐতিহ্যবাহী লাঙল চাষের বদলে বাড়ছে ট্রাক্টরের ব্যবহার

আমাদের গ্রামদেশে চাষের কাজ জানা মানুষ অনেক, কাজেই বেশি মানুষ কাজ করতে পারেন এইভাবে চাষের কাজ করা আমাদের দেশের পক্ষে সুবিধাজনক। যন্ত্র সকলের থাকে না, চড়া হারে টাকা দিয়ে ঘণ্টাপিছু ভাড়া করতে হয়। এইসব কাজ করে নিলে স্থানীয় মানুষরা বেশি বেশি করে আর নিজেদের এলাকায় কাজ পায় না, তখন তারা দূর দেশে কাজ করতে চলে যায়। গ্রামে চাষবাসের জন্য খেতমজুর বা লোকজন পাওয়া যায় না। চাষবাসকে সম্মানের কাজ মনে না করায় গ্রামের যেসব ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শেখার জন্য শহরে যায় তারা বেশিরভাগজনই আর গ্রামে ফিরে আসে না। বাইরে চাকরির চেষ্টা করে। অথচ চাষের কাজ প্রায় সারা বছর ধরেই চলতে থাকে, যেমন জমি তৈরি করা, গোবর সার দেওয়া, বীজ ফেলা, নিড়ানি, জলসেচ, জমি ও ফসলের যত্ন নেওয়া; ফসল কেটে আঁটি করা, ধান ঝাড়া, অবশিষ্ট খড় গো-খাদ্যের জন্য পালই করে সঞ্চয় করা, আবার পরের ফসলটি চাষ করার জন্য জমি তৈরি করা— এইভাবেই সারা বছর ধরে কাজ চলতে থাকে কিন্তু নানা কারণে গ্রামের মানুষরা ক্রমাগত শহরে চলে যাবার ফলে গ্রামে চাষ করার উপযুক্ত মানুষ পাওয়া খুব সমস্যা হয়। যারা গ্রামে পড়ে থাকে তারা সবচেয়ে ছোট দুর্বল অবস্থার মাঝারি ও প্রান্তিক চাষীদের ঘরের ছেলেমেয়ে। ফলে মেধা, স্বাস্থ্য, সামাজিক অবস্থা সবদিক দিয়েই গ্রাম ধীরে ধীরে আরো পিছিয়ে পড়তে থাকে।

Traditional irrigation of bengal

এরপর আমরা মূল্যবৃদ্ধির কথায় আসতে পারি। মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব কীভাবে গ্রামের কৃষিব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে দেখা যাক। কোন কোন ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে? গ্রামে বাইরে থেকে আসা কৃষিমজুরের মজুরি বেড়েছে, ফসলের বীজের দাম বেড়েছে অনেক। যেখানে বিগত কয়েক বছরে আলুর বীজের দাম ছিল প্রতি কুইন্টাল ২০০০ টাকা তা এখন দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এবার, এক কুইন্টাল আলুর ফলন নির্ভর করে জমির ঊর্বরা শক্তির উপরে। আমাদের গ্রামে, যেহেতু আমি আমার গ্রাম সম্পর্কেই বলছি, বিঘা প্রতি ফলন হয় চল্লিশ বস্তা। আলুর দাম ওঠানামা করে প্রতিদিন। যদি আলু পচে যায়, আলুর গায়ে দাগ ধরে তাহলে দাম অনেক কমে যাবে। এ বছরে আমার বাবা আর আরো অনেকে উচ্চ ফলনশীল আলু পোখরাজ বা কোবরাজ করেছিলেন। যেহেতু জমি থেকে আলু তোলার পর সেখানে ধান চাষ হবে সেজন্য জমি থেকে কাঁচা আলু তুলতে হবে। কাঁচা আলু রেখে দেওয়া যাবে না, কাজেই কিনতে আসা পাইকারদের কাছে তা তাড়াতাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে দেখা গেছে ব্যাগ (পঞ্চাশ কিলো) প্রতি আলুর দাম পাওয়া যায় সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা মাত্র, কখনো হয়ত তার চেয়েও কম। আবার এই আলুই কৃষকদের হাত থেকে বিক্রি হবার পর তার দাম অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া চাষের আনুষঙ্গিক খরচ, যেমন রাসায়নিক সার জলসেচ এসকল খরচ অনেক বেড়ে গেছে। বিগত চার পাঁচ বছর আগে যেখানে জলসেচের খরচ ছিল বিঘাপ্রতি আটশ’ টাকা, এখন তা প্রায় আঠেরোশ’ টাকা।

মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব কীভাবে গ্রামের কৃষিব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে দেখা যাক। কোন কোন ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে? গ্রামে বাইরে থেকে আসা কৃষিমজুরের মজুরি বেড়েছে, ফসলের বীজের দাম বেড়েছে অনেক। যেখানে বিগত কয়েক বছরে আলুর বীজের দাম ছিল প্রতি কুইন্টাল ২০০০ টাকা তা এখন দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কৃষকের চাষের প্রতি ভালোবাসা ও যত্ন নেওয়া। এটা চাষের ক্ষেত্রে অমূল্য। শ্রাবণমাসের অঝোর বৃষ্টিতে অথবা অঘ্রাণের ঠান্ডায় যে একজন চাষী চাষের ক্ষেতে চলে যান, আশ্বিনমাসে ধানে ‘থোড়’ আসার সময়ে তিনি যেভাবে প্রতিদিন ক্ষেতটাকে স্নেহের ও আশার চোখে দেখেন, তা কোনো মূল্য দিয়েই হিসেব হবে না। এটা তাঁর কতোকালের অভ্যস্ত ভালোবাসা ও যত্ন। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে সেই কষ্ট ও কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক। পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ বাকি সদস্যদের ঠিকমতো খাওয়া পরার অর্থের সংকুলান হচ্ছে না। সমস্ত জমি কেবল ধানচাষ হবার ফলে গ্রামে আর অন্য কোনো সবজি, পুকুর বা নিচু জমির ছোট মাছ, গুগলি, নানারকমের শাক— এইসব পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাবার কিছুই আর পাওয়া যায় না। সমস্ত খাবারই কিনতে হয়। রাসায়নিক সার আর কীটনাশক ভরা শাকসবজি খেয়ে অসুস্থ হলে চিকিৎসাও ব্যয়সাধ্য।

Potato farming
জমি থেকে কাঁচা আলু তুলে ফেলতে হয়

চাষের খরচ প্রতিবছরই বাড়বার দরুণ প্রায় ক্ষেত্রেই চাষিকে লোন নিতে হয় ব্যাংকের কাছে কিংবা গ্রামের মহাজনদের কাছে। ঋণের টাকা বা বীজধান নিয়ে চাষ করে চাষের লাভ হচ্ছে না, বাড়ছে জীবনধারণের অর্থাভাব। ফলে বাড়ছে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা।

শ্রাবণমাসের অঝোর বৃষ্টিতে অথবা অঘ্রাণের ঠান্ডায় যে একজন চাষী চাষের ক্ষেতে চলে যান, আশ্বিনমাসে ধানে ‘থোড়’ আসার সময়ে তিনি যেভাবে প্রতিদিন ক্ষেতটাকে স্নেহের ও আশার চোখে দেখেন, তা কোনো মূল্য দিয়েই হিসেব হবে না। এটা তাঁর কতোকালের অভ্যস্ত ভালোবাসা ও যত্ন। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে সেই কষ্ট ও কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক। 

শহরের অনেক বাবুরা বলেন ঋণ মকুব করতে, কিন্তু ঋণ মকুব করলেই তো আর সব সংকট থেকে উদ্ধার পাওয়া গেল না, কারণ কৃষির জন্য প্রয়োজন মূলধন ও উন্নততর যন্ত্রপাতির ব্যবহার, যা বর্তমানে সাধারণ কৃষকের সাধ্যের বাইরে। অনেকে আবার বলবেন যে ধান ও আলু সঞ্চয় করে রেখে বাজারে দাম বাড়লে বিক্রি করতে কিন্তু আজকের ফসলবীজে আগেকার চেয়ে ফলন বেশি হয়। এদিকে, পোকা ধরে যাওয়া বা পচে যাওয়া আটকানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং সাধ্য অধিকাংশ চাষীর নেই। আবার যারা আড়তে ধান সঞ্চয় করেন, সঠিক দাম না পেলে তাদের লাভের বদলে বিপরীত হয়। আলুর ক্ষেত্রে হিমঘরের সংখ্যার পরিমাণ যথেষ্ট নয়। বর্তমান রাজ্য সরকার এইসব অসুবিধার কথা ভেবে ‘কিষাণ মান্ডি’ করেছেন, যেখানে চাষী ফসল বিক্রি করলে তার ব্যাংকের পাসবইয়ে টাকা দেবার কথা বলা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে ‘কিষাণ মান্ডি’র সংখ্যা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া গ্রাম থেকে ফসল তুলে বেশ কিছুদূরের ‘কিষান মান্ডি’তে পৌঁছানোর জন্য কৃষককে গরুর গাড়ি বা অন্য যানবাহনের সাহায্য নিতে হয় যা খরচসাপেক্ষ। আর সবচেয়ে বিপদের কথা হল রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কগুলি গিরগিটির মত ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টায়। কৃষক ফসল বিক্রি করে সময়মতো তার দাম হাতে পান না। অভাব আর অনিশ্চিত প্রত্যাশার ওপর নির্ভর করেই জীবন চলে। অনেক ক্ষেত্রে টাকা পেতে বছর গড়িয়ে যায়, ফলে কৃষকের হাতে টাকা পৌছাতে দেরি হয়।
এই হল আমার গ্রামে আমাদের জীবিকার কথা কিন্তু তবুও গ্রামে আমার সবচেয়ে আনন্দ আমার বাড়ি নিয়ে। মা বাবা দাদা আমি আর বোন এই নিয়ে আমাদের সংসার। আব্বু আর মা অনেক কষ্ট করেও আমাদের ভাইবোনদের পড়তে পাঠিয়েছেন। আমার ছোটবোনও বিশ্বভারতীতে পড়ে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে। সে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। প্রথমে আব্বু বোনকে আরো পড়াতে রাজি ছিলেন না। আমার এম এ পড়াতেও তাঁর বেশি ইচ্ছা ছিল না। ভাবতেন, এই তো বেশ পাস করেছ। এবার কাজকর্ম করো। আমি আর এতো টাকা খরচ করতে পারব না। গ্রামের পাঁচজন, নিজেদের সংসার ও আত্মীয়স্বজন সকলকে নিয়ে আমরা খুব খুশি থাকি।

*বানান অপরিবর্তিত
*ছবি সৌজন্য- Wikipedia, Wikimedia Commons, Rawpixel 
*বিশেষ কৃতজ্ঞতা ভূমধ্যসাগর পত্রিকা

Banglalive.com Logo

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Picture of বাংলালাইভ

বাংলালাইভ

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।
Picture of বাংলালাইভ

বাংলালাইভ

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস