ছাতিম-গন্ধ অবধারিতভাবে নিয়ে আসে দশমীর পরের বিষাদ। আনন্দ-উৎসবের সমাপনের ইঙ্গিত বহন করে আনে সেই উগ্র মধুর ঘ্রাণ। যে ঘ্রাণ পাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে, সেই গন্ধই দীর্ঘ ক্ষণ স্থায়ী হলে প্রাণ ছটফট করে।
আসলে এ গন্ধ বার বার মনে করিয়ে দেয়, উল্লাস ক্ষণস্থায়ী, এক সঙ্গে বড় বেশি আনন্দ-প্রাপ্তি বেশি ক্ষণের নয়। তা অল্পস্থায়ী হওয়াই বাঞ্ছনীয়। জীবনের প্রাত্যহিকতায় যতটুকু বরাদ্দ, তাকে গ্রহণ করে জীবন যাপন করাই শ্রেয়। শারদ-উৎসবের আনন্দই হোক বা অন্য কোনও ব্যক্তিগত আনন্দ, যা অল্প সময়ে অতিরিক্ত সুখ সরবরাহ করে আমাদের, তাকে ওই কিছু ক্ষণ জীবনে স্থান দেওয়াই শ্রেয়। তার রেশ জোর করে নিত্য দিনে প্রবেশ করিয়ে, সেই জবরদস্তির আনন্দে মেতে থাকা আসলে নিজেকে ভুলে থাকার নামান্তর। নিজের থেকে পালিয়ে বেড়ানোর অজুহাত।
নিজের জীবনের উদ্দেশ্য অনুধাবন করে সেই অনুযায়ী নিজেকে চালিত করতে আমরা বেশির ভাগ মানুষই অক্ষম। কিন্তু তা না পারলেও জীবনের নিত্যদিনের কিছু কাজ খুঁজে, নিজেকে সেই কাজের অভ্যাসে নিয়োগ জীবনকে অন্তত তার ন্যূনতম সার্থকতা দেয়। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ, সেই কাজকে ফাঁকি দিয়ে কেবল আনন্দের উপকরণ খুঁজি। সেই নিত্য আনন্দের খোঁজ আমাদের আরও অসহিষ্ণু করে। কারণ আমরা এ কথা বুঝতে অস্বীকার করি যে, জীবন সর্বদা অপরিসীম আনন্দের সম্ভার নিয়ে উপস্থিত থাকে না। বরং, জীবনের প্রাত্যহিকতাকে যদি আমরা খোলা মনে স্বীকার করতে পারি, কেবল তা হলেই জীবন সদা আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে। যে আনন্দে উগ্রতা কম, বরং স্বস্তি বেশি। সেই স্বস্তি বজায় রাখাই যে আনন্দের উৎস, এই গূঢ় সত্য যে বুঝতে পারে, তার জীবনই সর্বদা আনন্দময় হয়ে ওঠে। কারণ, তার জীবনে অসম্ভব সমস্ত প্রত্যাশা থাকে না। ফলে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার বেদনাও অপেক্ষাকৃত কম থাকে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, আমাদের যোগ্যতা যতটুকু, তার চেয়ে চাহিদা এবং জীবন থেকে প্রত্যাশা অনেক বেশি। সামঞ্জস্য রেখে চাহিদার সুঅভ্যাসে অভ্যস্ত না হওয়ায় আমাদের আশাভঙ্গও বেশি। ফলে জীবনে যে কোনও আনন্দের উপকরণকে আমরা আঁকড়ে ধরি এবং চেষ্টা করি সেই আনন্দ যেন বহু দিন ধরে আমাদের পুলকিত করে রাখে।
কিন্তু সে তো হওয়ার নয়। ফলে সে আনন্দেরও এক দিন ইতি ঘটে। আমাদের হতাশা, মন খারাপ আরও বেড়ে যায়। আর তাই বাঙালি জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসবের পর ছাতিম-গন্ধ যেন প্রাত্যহিকতায় ফিরে যাওয়ার চেতাবনি হয়ে আসে।
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।
 
								 
								 
								 
											 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								