‘রাতের অন্ধকারে’, ১৯৫৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই বাংলা ছবির নাম কজন শুনেছেন বা মনে রেখেছেন? অভিনয় করেছিলেন ছবি বিশ্বাস, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রাবতী দেবী, রাজলক্ষ্মী দেবী আর অতিথি শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেন বম্বের অভিনেত্রী সবিতা চ্যাটার্জি। ছবিতে একটি ক্যাবারে নাচ ছিল, সেই উপলক্ষ্যে এই প্রথমবার বাংলা ছবিতে অভিনয় করতে এলেন হেলেন। হেলেনের সেই আইটেম ডান্সে জীবনে প্রথম বাংলা ছবিতে সুর দিলেন ভি বালসারা। গানের বেসটা বাংলায় রেখে নানা ভাষায় গানটি লিখেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। নানারকম সাজে সেজে হেলেন এই গানে নাচ করবেন। চিনে ভাষায় গানের কথা লিখতে গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির হলেন বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের এক চিনে জুতোর দোকানে। চিনে দোকানদারকে বললেন “সাহেব বল তো ‘আই লাভ ইউ’ কথাটা চিনে ভাষায় কী হবে?” সাহেব বাঁধানো দাঁতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বললেন “সিন আই দ উ আই নি”। চমৎকার ছন্দ পেলেন পুলক। গান লিখে ফেললেন “সিন আই দ্য/ উ আই নি/ চিনে ভাষা জানো কী?/ শোনো তবে ইংরেজিতে তোমায় বলেছি/ ও মাই ডার্লিং আই লভ দি”।
আরও পড়ুন: ‘আমাকে চেষ্টা করে কাঁদতে হবে না’
হেলেনের জন্য বানানো এই গান গাইবেন কে? ভি বালসারা বললেন “আশা ভোঁসলে হলে চলবে কি?” আশা! সবাই চমকে উঠলেন? কলকাতার ছবিতে আশা কী গাইবেন? বালসারা বললেন “আমার সঙ্গে ভালো পরিচয় আছে। আমি ওঁকে কলকাতায় নিয়ে আসতে পারি।” তাই হল। এই ক্যাবারে গান ছাড়াও বালসারা আশার জন্য আরেকটি রোম্যান্টিক গানের সুর করলেন। এই ছবিতেই আশা (Asha Bhosle) গাইলেন ‘এ হাওয়ায় এ হাওয়ায় কী সুরভি ঝরে’।

আশা কলকাতায় এলেন। বাংলা তখন আশা একদমই বলতে পারেননা। ভি বালসারা আর পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় আশাকে বাংলা গান তোলাতে ক্লান্ত হয়ে গেলেন। সেই প্রথম বাংলা গান গাইছেন আশা— এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। গান তোলা শেষে আশা ভোঁসলের আবদারে গীতিকার, সুরকার ও গায়িকা তিনজনেই চৌরঙ্গীতে হাঁটতে বেরোলেন। কথা ছিল আশা ‘মহারাষ্ট্র নিবাসে’ উঠবেন। কিন্তু পছন্দ না হওয়ায় আশা উঠলেন গ্র্যান্ড হোটেলে। তখন প্লেব্যাক সিঙ্গারের ছবি পত্রপত্রিকায় অত বেরত না। তাই চৌরঙ্গীর রাস্তায় আশা ভোঁসলে হেঁটে বেড়ালেও তাঁকে কেউ চিনতে পারেনি। হোটেলে ফিরে পুলককে আশা জিজ্ঞেস করলেন “সুধীন দাশগুপ্ত ভদ্রলোক যিনি বম্বেতে গুরু দত্তর ইউনিটে কাজ করেন তিনি কেমন সুর করেন?” পুলক বললেন “সুধীন আমার বন্ধু। খুব ভালো সুর করে।” আশা বললেন “সুধীনবাবু আমায় বাংলা আধুনিক গান গাইবার প্রস্তাব দিয়েছেন। বম্বে ফিরে তাহলে ওঁর সঙ্গে বসব।”
‘রাতের অন্ধকারে’-র রেকর্ডিং সেরে আশা ফিরে গেলেন বম্বে। এরপর সুধীন দাশগুপ্তর সুরে প্রথম আধুনিক বাংলা গান গাইলেন আশা। দুটি গান রেকর্ডের দু’পিঠে। ‘নাচ ময়ূরী নাচ রে’ এবং ‘আকাশে আজ রঙের খেলা’। গানের কথা লিখেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।

লতা মঙ্গেশকরের জমানা তখন রমরম করছে বম্বেতে। বাংলা গানেও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী আর সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে লতা হিট। লতার থেকে আলাদা গায়কি তৈরি করতেই গীতা দত্তর ঢংয়ে গাইতে শুরু করলেন আশা। গীতার তখন ঘরে-বাইরে সমস্যা। লতা যত এগোচ্ছেন গীতা তত ফুরিয়ে যাচ্ছেন। আর গীতার বিকল্প যেন হয়ে উঠছেন আশা। গীতা সরে না গেলে লতা-আশা দুই বোনের উত্থান এত সহজ হত না বলাই বাহুল্য।
পরবর্তীকালে আশা ভোঁসলে আর রাহুল দেব বর্মণ জুটি হয়ে গেলেন। ভারতীয় সংগীতের ধারাটাই বদলে দিলেন আর ডি। কিন্তু খুব মিষ্টি শ্রুতিমধুর বাংলা গানে আশাকে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন সুধীন দাশগুপ্ত-ই। সুধীন কিন্তু তাঁর সংগীত পরিচালনায় লতাকে সেভাবে জায়গা দেননি। আশার মধ্যেই তিনি খুঁজে পেতেন ভার্সেটাইল কণ্ঠের জাদু। সুধীন-আশা জুটি নিয়ে সেভাবে চর্চা হয় না, আশা মানে আজকাল শুধুই যেন আর ডি বর্মণ। কিন্তু বাংলা ছায়াছবি ও আধুনিক গানে সুধীন-আশা জুটির অবদান অনস্বীকার্য। ‘কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে’, ‘সাগর ডাকে আয়’, ‘মন মেতেছে মন ময়ূরীর কী খেলা’ বা ‘কেন সর্বনাশের নেশা ধরিয়ে’— সুধীন দত্তের সুরে আশার এসব গান কী ভোলা যায়!
মান্না দের সুরে আশা গেয়েছিলেন ‘যখন আকাশটা কালো হয় বাতাস নীরব থাকে’ আর ‘আমি খাতার পাতায় চেয়েছিলাম একটি তোমার সই গো’।
মিষ্টি সুরে আশার গলায় এসব স্নিগ্ধ গান তখন মন ভরাতো, রেডিওর ‘অনুরোধের আসর’-এ, যা ভোলার নয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাঁর সুরারোপে আশাকে দিয়ে খুব বেশি না গাওয়ালেও ‘মন নিয়ে’ ছবিতে দারুণ কতগুলি গান গাইয়েছিলেন। ‘দীপ জ্বেলে ঐ তারা একই কথা বলে যায়’ আশার গলায় এক শিরশিরানি আবহ তৈরি করে। এই ছবিতেই আশাকে দিয়ে ক্লাসিকাল গাওয়ালেন হেমন্ত, নায়িকা সুপ্রিয়া দেবীর লিপে ‘একলই বিরল নিরল শয়নে সখী রজনী পোহাবে কেমনে?”
রবীন্দ্রসংগীত আশা প্লেব্যাক করেছিলেন হেমন্তর হাত ধরেই। ‘মন নিয়ে’ ছবিতেই হেমন্ত-আশা ডুয়েট গাইলেন উত্তম-সুপ্রিয়ার লিপে ‘আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি’। তরুণ মজুমদারের ‘কুহেলি’তেও হেমন্তর সংগীতায়োজনে আশা গাইলেন ‘মেঘের কোলে রোদ উঠেছে’। আশির দশকে তরুণ মজুমদারের ‘খেলার পুতুল’, ‘আগমন’ ছবিতেও আশা গেয়েছিলেন মন-ছোঁয়া গান হেমন্তের সুরে। আশার সবথেকে প্রিয় গায়ক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাই আশা নিজের ছেলের নাম রাখেন হেমন্ত। সুশীল মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘ কালো’ ছবিতে পবিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সুরে প্রণব রায়ের কথায় আশা গাইলেন দুটি গান ‘আমি আপন করিয়া চাহিনি’ ও ‘মধু বনে বাঁশি বাজে’। ১৯৭০ সালে সুচিত্রা সেনের লিপে দুটি গান আশা ভোঁসলের ক্যাবারে ইমেজ ভেঙে আশাকে করে তোলে প্রকৃত সাধিকা। আবার সুচিত্রার লিপেই ‘ফরিয়াদ’ ছবিতে ১৯৭১-এ তুখোড় ক্যাবারে গাইলেন আশা। ‘আজ দুজনে মন্দ হলে মন্দ কী, দেখো ময়ূরকণ্ঠী রাত যে আলোয় ঝিলমিলে…’
আশা-আর ডি জুটির বাংলা ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক উত্তমকুমারের ‘রাজকুমারী’ ছবিতে। রাহুল দেব বর্মণের সেই প্রথম বাংলা ছবিতে সংগীত পরিচালনা। ‘রাজকুমারী’ দিয়েই আরডি-আশা জুটির বাংলা ছবিতে প্রবেশ। রাহুল দেব বর্মণকে বিয়ে করে আশা হলেন বাংলার বধূ। বাংলা তাঁর প্রাণ। অন্যদিকে আশা-আর ডি জুটি একের পর এক হিট দিতে থাকলেন আশির দশকে— কী ছবির গানে, কী পুজোর গানে। সেই সময় বাংলা গানে উত্থান হল আরেক গীতিকার-সুরকার স্বপন চক্রবর্তীর। আরডি-স্বপন-আশা সুপারহিট ট্রায়ো তখন, যাতেই হাত দিচ্ছে সোনা ফলছে। স্বপন চক্রবর্তী বেশিরভাগ সুর করেছেন বীরেশ চট্টোপাধ্যায়ের ছবিতে। আর প্রায় সব ছবিতেই তাঁর সুরে গেয়েছেন আশা ভোঁসলে— ‘মোহনার দিকে’, ‘সুরের আকাশে’ বা ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’।

বীরেশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায় “স্বপনদা আর রাহুল দেব বর্মণের বম্বের ফ্ল্যাট ছিল কাছাকাছি। দুজনে লুঙ্গি গেঞ্জি পরে যাতায়াত করতেন। আর ডি বর্মণের সঙ্গে কাজ করতে করতে স্বপন চক্রবর্তী এককভাবে মিউজিক ডিরেক্টর হন আমার পর পর ছবিতে। আমার প্রথম ছবি ‘মোহনার দিকে’-তে স্বপনদা আশাজিকে দিয়ে যেক’টি গান গাওয়ালেন সবগুলোই মারকাটারি হিট। অপর্ণা সেনের লিপে ছিল আশাজির গাওয়া ‘আছে গৌর নিতাই মথুরাতে’, ‘এই রাতে একটুখানি কাছে’। আরেক নায়িকা সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের লিপে ‘কে যেন আবির ছড়িয়ে দিল’, ‘বন্ধ মনের দুয়ার দিয়েছি খুলে’ বা ‘রামধনু রং নিয়ে আমি খেলাঘর বেঁধেছি’।
আর ডি বর্মণ-আশা ভোঁসলের বড় হিট আমার ‘একান্ত আপন’ ছবিতে। ‘তোলো ছিন্ন বীণা’ গানটার যে সুর আর ডি বর্মণের আমায় ওঁর বম্বের বাড়িতে প্রথম শোনালেন সেই সুর আমার পছন্দ হয়নি। উনি আমার মুখ দেখে বুঝলেন। পরদিন স্বপনদাকেও ডেকে আনলেন। আবার বারকয়েক সুর করলেন আর ডি। শেষমেশ আমার এত পছন্দ হল যা বলার নয়। আশাজির কণ্ঠে এই গান তো সুপার ডুপার হিট। আশাজির গাওয়া ‘খেলব হোলি রং দেব না’ আজও দোলের দিনে সবার প্রথমে গেয়ে ওঠে মানুষ। এগুলোই তো আশা-আরডি ম্যাজিক। ‘একান্ত আপন’-এ ভিক্টর-অপর্ণার ফুলসজ্জার পর গান ভাবলাম এস পি বালসুব্রমণিয়াম-আশা ভোঁসলের ডুয়েট ‘না না কাছে এসো না মায়াবি এই রাতে’… দুরন্ত গাইলেন দুজনে। কিন্তু ছবিতে গান বসানোর সময় মনে হল ভিক্টর-অপর্ণার গল্পের চরিত্র ও সময় অনুযায়ী গানটা যেন হালকা হয়ে যায়। তাই ওখানে ব্যবহার করা হল হৈমন্তী শুক্লার কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত। ‘না না কাছে এসো না’ গানটা ব্যবহার করে দিলাম ছবির একদম শুরুতে টাইটেল কার্ড দেখানোর সময়। এইসব গানের রেকর্ডিং বম্বেতেই করেছিলেন আশাজি। শুধু ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’-এর রেকর্ডিং করতে কলকাতায় এলেন। স্বপন চক্রবর্তীর মিউজিক।
আমার প্রথম ছবি ‘মোহনার দিকে’-তে স্বপনদা আশাজিকে দিয়ে যেক’টি গান গাওয়ালেন সবগুলোই মারকাটারি হিট। অপর্ণা সেনের লিপে ছিল আশাজির গাওয়া ‘আছে গৌর নিতাই মথুরাতে’, ‘এই রাতে একটুখানি কাছে’। আরেক নায়িকা সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের লিপে ‘কে যেন আবির ছড়িয়ে দিল’, ‘বন্ধ মনের দুয়ার দিয়েছি খুলে’ বা ‘রামধনু রং নিয়ে আমি খেলাঘর বেঁধেছি’।
রাহুল দেব বর্মণ আমার কেবলমাত্র ‘একান্ত আপন’ ছবিতেই মিউজিক করেন। বলতেন খুব শেষদিকে, “বীরু তোমায় এত বড় হিট দিলাম তুমি আমাকে আর পরে নিলে না।” আসলে কলকাতার প্রযোজকদের থেকে শেষদিকে অনেকটাই বঞ্চিত হন রাহুল দেব বর্মণ। আমারও আফসোস ওঁর সঙ্গে পরে আর কাজ করা হল না। স্বপনদাও টলিউডে অন্যদের থেকে প্রাপ্য মর্যাদা পাননি।”

নচিকেতা ঘোষ, বাপ্পি লাহিড়ি, অজয় দাস, শ্যামল মিত্র, কানু ভট্টাচার্য, মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি সুরকারদের সুরেও পরের পর হিট গান গেয়েছেন আশা ভোঁসলে। লতাজির থেকেও আশাজির বাংলা প্লেব্যাক বহুগুণে বেশি।
তবে এত মিউজিক ডিরেক্টরের মধ্যে আর একজনের নাম বিশেষ করে বলা প্রয়োজন, তিনি বীরেশ্বর সরকার। বিখ্যাত বি সরকার জহুরির কর্ণধার যিনি। একাধারে তিনি গীতিকার, সুরকার, প্রযোজক। তাঁর ‘মাদার’, ‘রাজনর্তকী’— হাতেগোনা ক’টি ছবিতে আশা ভোঁসলে গাইলেও এই বি সরকার পরিবার আজও আশাজির আপনজন। আশা এবং লতা, দুই বোনই নিজের বৌদি ভাবতেন বীরেশ্বর সরকারের স্ত্রী সতী সরকারকে। বীরেশ্বর সরকারের ছেলেমেয়েদের বিয়েতে তাঁদের কলকাতার বাড়িতে এসে আশাজি ছিলেন। এমনকী, বীরেশ্বর সরকার অসুস্থ হলে তাঁর সমস্ত চিকিৎসা আশাজির নির্দেশে বম্বেতেই করা হয়েছিল। বোনের মতো আশা দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর বীরেশ্বরদার সকল চিকিৎসা করিয়েছিলেন। কলকাতার একমাত্র এই পরিবারের সঙ্গেই আশার সম্পর্ক অটুট। আর কোনও বাঙালি সুরকারের সঙ্গে আশা বা লতার এতখানি পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, যা শেষ অবধি টিকেছিল। কলকাতাতে এসেই আশা মিষ্টি দই থেকে চচ্চড়ি পাত পেড়ে খেতে বসে যেতেন।

নব্বই দশকে আর আশা ভোঁসলের গান আমরা বাংলা ছবিতে পাই না সেভাবে। সলিল দত্তর ‘আবিষ্কার’, প্রভাত রায়ের ‘শ্বেত পাথরের থালা’ বা চিরঞ্জিতের ‘ভয়’, অঞ্জন চৌধুরীর ‘আসল নকল’— খুব নির্বাচিত ছবিতেই তিনি গাইতেন। ‘আসল নকল’-এর গান ‘তুমি রাজারকুমার, আজ দুয়ারে আমার’ অনেক বছর আগেই রেকর্ড করেন আশাজি। ছবি রিলিজ করে বহু পরে ১৯৯৮ সালে কাস্টিং পাল্টে।
২০০২ সালে শক্তি সামন্তর শেষ ছবি বাংলা ‘দেবদাস’-এ চন্দ্রমুখী ইন্দ্রাণী হালদারের লিপে প্লেব্যাক করেন আশা। বাবুল বোসের সুরে মুকুল দত্তর কথায় ‘মন নিয়ে সবাই আসে আমার এই আসরে, ভালবাসা কিনতে আসে রসের বাজারে’ আর ‘তুলসীতলার থেকে বেলোয়াড়ি আলোয় আসতে আমার অনেক সময় লেগেছে’। বাঈজি চন্দ্রমুখীর বেদনা আশার গলায় দারুণ ফুটে ওঠে। কিন্তু ইন্দ্রাণী হালদার জমাতে পারেননি মুজরো গান। ঠিক একই সময়ে সঞ্জয় লীলা বনশালীর দেবদাস রিলিজ করে। কবিতা কৃষ্ণমূর্তির গানে কত্থকের ময়ূরী হয়ে ওঠেন চন্দ্রমুখী মাধুরী দীক্ষিত। তার পাশে ইন্দ্রাণীর নাচ যেন মনে হল আশার গানে বাঈজি চন্দ্রমুখী রবীন্দ্রনৃত্য করছেন। দুর্বল পরিচালনা দুর্বল কোরিওগ্রাফিতে ছবি সুপার ফ্লপ। আশার এসব গানও মুছে গেল চিরতরে। আশা এরপর আর বাংলা ছবিতে উল্লেখযোগ্য প্লেব্যাক কিছু করেননি।

এক যুগ পর আর ডি বর্মণকেই তর্পণ করে আশা গাইলেন নতুন পুজোর গান, সে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ও করলেন আশা। গানের সুরে জড়িয়ে থাকল আর.ডির সুর মুর্চ্ছনা। বহু যুগ পর হিট পুজোর গান দিলেন আশা ভোঁসলে। সারা গান জুড়েই স্বামী, প্রেমিক আর.ডি র স্মৃতির পরশ রাখলেন আশা।
‘দিনগুলো ভোলা গেল না…
আজ এখনো
স্মৃতিগুলো মোছা হল না…
মন রাঙানোর…
তখনও এখনও এ মন ভরানো
তোমার গানের সুরে
যখন তখন গেয়ে ওঠে মন
থাকো না যতই দূরে
এসো ওগো ফিরে এসো
যদি আমায় ভালোবাসো
আজও আছি তোমারই জেনো।
*ছবি সৌজন্য: Asha Bhosle Official page, Facebook
*তথ্যঋণ- ‘কথায় কথায় রাত হয়ে যায়’ – পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়
*বাইট: বীরেশ চট্টোপাধ্যায় ও সতী সরকার
বর্তমান সময়ে বাংলা ছায়াছবি ও বিনোদন জগতের লেখালিখিতে জনপ্রিয় নাম শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন বাংলা ছবি সংক্রান্ত গবেষণায় ব্রতী রয়েছেন শুভদীপ। তিনি নিয়মিত সাংবাদিকতা করেন। একাধিক সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল ও পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা। শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'সুরের জাদুকর হেমন্ত' এই সময়ের বেস্টসেলার বই। লতা মঙ্গেশকরের বাংলা গান তৈরির গল্প নিয়ে শুভদীপের লেখা 'গানে গল্পে বাঙালির লতা' বইটি প্রকাশের পথে।
One Response
শ্যামল মিত্রের সুরে অমানুষ ছবির গান “জানিনা আজ যে আপন কাল সে কেন পর হয়ে যায়” কথা সুর ও অসাধারণ গায়কির এক ত্রিবেণী সঙ্গম! এছাড়াও মনে পড়ছে রাহুল দেব বর্মনের শেষ দিকের একটি অনব দ্য সৃষ্টি “হায় রে কালা! একি জ্বালা, বাঁশি শুনে আর রইতে পারি না”।