Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

এমন একজন বিখ্যাত সাহিত্যিককে কাঁঠালতলায় বসে সিগারেট টানতে দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম

বিভাস রায়চৌধুরী

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০

sunil Gangopadhyay
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

বাংলার দিকপাল সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৮৭তম জন্মদিন আজ। রাজ্য সরকার ঘোষিত লকডাউনও পড়েছে আজকের দিনেই। এই দুঃসময়ে তবু বিভিন্ন ফেসবুক, ইউটিউব লাইভ অনুষ্ঠানে রাজ্য জুড়ে পালিত হচ্ছে বাঙালির প্রিয় এই কবি ও সাহিত্যিকের জন্মদিন। উঠে আসছে বাংলাভাষাপ্রেমী, অসাম্প্রদায়িক এই লেখকের নানা রচনার কথা, স্মৃতির কথা। তিনি যে বাংলা ভাষার মস্ত বড় একজন কবি ছোটগল্পকার ঔপন্যাসিক এবং সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তাঁর অবদান রয়েছে, একথা সকলেরই জানা। এই প্রতিবেদনে আমরা অন্য সুনীলের কথা বলব।

[the_ad id=”270085″]

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যেসব ছদ্মনামে নানা রচনা লিখেছেন তার একটি হল নীললোহিত। বাঙালির প্রিয় চরিত্র এই নীললোহিত। নীললোহিতের বয়স সাতাশের বেশি বাড়ে না। সে কোনও চাকরি করতে কিংবা কোনও দায় দায়িত্ব পালন করতে চায় না। দিকশূন্যপুর বলে নীললোহিতের একটা প্রিয় জায়গা আছে যেখানে সে অনেক দুঃখী চরিত্রকে রেখে আসে। সংসার থেকে দূরে সেইসব মানুষেরা এক ধরনের সাম্যবাদী জীবন যাপন করে মনের খুশিতে।

Sunil Gangopadhyay Pather Panchali Bangaon
পথের পাঁচালি সেবাসমিতির অনুষ্ঠানে সুনীলদা

নীললোহিত সত্তাটি এক বাউণ্ডুলে, কবিসত্তা। মাঝে মাঝে তার সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দেখা হয়ে যায় কোনও কোনও রচনায়। আসলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই নীললোহিত। তাঁর নানা সাক্ষাৎকারে আমরা জেনেছি, তিনি স্বপ্ন দেখতেন নাবিক হবেন। হতে চাইতেন এই কারণেই, যে বিশ্বভ্রমণ করতে পারবেন। পরবর্তীকালে খ্যাতনামা কবি সাহিত্যিক হিসেবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ঘুরেছেন। তাঁর একটি কবিতায় আছে—

“আমার পায়ের তলায় সর্ষে / আমি বাধ্য হয়েই ভ্রমণকারী।“

দুই বাংলার আনাচে-কানাচেও ঘুরে বেড়িয়েছেন। তরুণ বয়সে যেমন, প্রবীণ বয়সেও তেমন। আকাশছোঁয়া খ্যাতি অর্জন করলেও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সব সময় মানুষের নাগালের মধ্যেই থাকতেন। সকলের জন্য তাঁর দরজা ছিল খোলা। নতুন কবিতা চর্চাকারী, সাহিত্য চর্চাকারীদের প্রতি যেমন, তেমনই সাহিত্য-সংস্কৃতি থেকে কিছু দূরে থাকা সাধারণ মানুষের প্রতিও তাঁর ছিল একই রকম ভালবাসা। তাই তিনি বেরিয়ে পড়তেন কখনও কোনও গ্রামীণ পাঠাগারের আমন্ত্রণে বা কোনও লিটল ম্যাগাজিন-এর অনুষ্ঠানে বা কোনও কবির আহ্বানে যেমন, তেমনই সমাজকর্মীদের আহ্বানেও। আন্তরিক এবং সহজ ব্যবহারে সেইসব মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব অটুট রেখেছেন সারা জীবন। অজস্র সুনীল স্মৃতিধন্য মানুষ এভাবেই ছড়িয়ে রয়েছেন দুই বাংলায়।

সমিতির এক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সুনীলদা

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিধন্য সীমান্ত শহর বনগাঁয় ‘পথের পাঁচালি সেবাসমিতি’ নামক একটি সংগঠনের সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যুক্ত ছিলেন সভাপতি হিসেবে। আমরা অল্প বয়স থেকেই পথের পাঁচালি-র প্রধান সংগঠক কবি জগন্নাথ লালাকে জানতাম। তিনি এই অঞ্চলের ছেলেমেয়েদেরকে পথের পাঁচালি-র নানা কাজকর্মে যুক্ত করে দূর দূর গ্রামে নিয়ে যেতেন। গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামে লাইব্রেরি গড়ে তোলা ইত্যাদি নানা রকম গঠনমূলক কাজকর্ম‌ করা হত। সবটাই স্বেচ্ছাসেবা।
এই জগন্নাথ লালা ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পরম ভক্ত এবং ভাইয়ের মতন। অত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতি বছর এক দু’বার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পথের পাঁচালি-তে আসতেন নিয়ম করে। তাঁর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব ছিল এই সংগঠনের চালিকা শক্তি। এখানে যখন তাঁকে প্রথম দেখেছি, তাঁর সহজ ব্যবহারে আমরা সবাই অবাক।

[the_ad id=”270088″]

ততদিনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের‌ অনেক উপন্যাস, ছোট গল্প, কাকাবাবু পড়া হয়ে গেছে। সর্বোপরি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা কত অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেছি। এমন একজন বিখ্যাত সাহিত্যিককে পথের পাঁচালির কাঁঠালতলায় বসে সিগারেট টানতে দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম আমরা! তিনি কম কথা বলতেন। আমারও ভীরু স্বভাব। তাঁর সঙ্গে অনেক কথা বলা হয়নি। পরবর্তীতে কবিতা লেখার জন্য তাঁর স্নেহ পেয়েছি। তাঁর হাত থেকে কৃত্তিবাস পুরস্কার গ্রহণ করে ধন্য হয়েছি।। কলকাতা মহানগরের সুনীল পরিমণ্ডলে অবশ্য তেমন মেশামেশি করা হয়নি। দেশ পত্রিকার অফিসে, কৃত্তিবাসের অনুষ্ঠানে কিংবা বইমেলায় হঠাৎ হঠাৎ তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে।

Sunil Gangopadhyay
আর্সেনিক কবলিত গ্রামে নলকূপ উদ্বোধনে সুনীলদা

এই অসাধারণ মানুষটিকে দেখেছি পথের পাঁচালির অনুষ্ঠানে বা কার্যক্রমে যোগ দেওয়ার জন্য দূর গ্রামের আলপথ ধরে হেঁটে যেতে। গ্রামের মানুষ ‘সুনীলদা সুনীলদা’ বলছেন। তিনিও সকলের খোঁজ খবর নিচ্ছেন আপনজনের মতো। তাঁর সঙ্গে প্রায় প্রতিবারই থাকতেন স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। বনগাঁ শহর থেকে কিছুটা দূরে নতিডাঙ্গা, খড়ের মাঠ, মাটিহারা, সুটিয়া, সুন্দরপুর এইসব গ্রামে সুনীল গিয়েছেন। বক্তৃতায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মানুষকে। আর্সেনিক-মুক্ত নলকূপের উদ্বোধন করেছেন।

[the_ad id=”270086″]

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘গড়বন্দীপুরের কাহিনী’ পড়ে আমার মনে হয়েছে বনগাঁর এই পথের পাঁচালি পটভূমি হিসেবে সেখানে আছে। এই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে আমার তখন মনে হয়েছে এই-ই হচ্ছে নীললোহিত। বাইরে থেকে হয়তো তাঁর বয়স বেড়েছে কিন্তু তাঁর অন্তরে থাকা নীললোহিতের বয়স বাড়েনি। নতুন নতুন মানুষের গন্ধ নেওয়ার জন্য, মানুষের দুঃখের পাশে কষ্টের পাশে অতি ব্যস্ত সময়ের মাঝেও কিছু সময় বের করে আন্তরিকভাবে মিলেমিশে থেকেছেন। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানি, যে এই সমস্ত বিদ্যুতের আলো না-পৌঁছানো, কাঁচা রাস্তাঘাটের গ্রামের মানুষের কাছে সুনীল ছিলেন বড় গর্বের আত্মীয়। বড় নীরবে এইসব কাজ করেছেন সুনীল। হয়তো নগরজীবনের বাইরে এভাবেই পেয়েছেন হারানো জন্মভূমিকে। কবি সুনীল কবেই বড় মায়ায় লিখেছিলেন—

বিষণ্ণ আলোয় এই বাংলাদেশ…/ এ আমার‌ই সাড়ে তিন হাত ভূমি…!

কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক বিভাস রায়চৌধুরী দীর্ঘদিন কবিতার প্রকাশনা ও চর্চার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। 'কবিতা আশ্রম' পত্রিকার মুখ্য পরিকল্পক। পেয়েছেন কৃত্তিবাস পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ওঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম নষ্ট প্রজন্মের ভাসান (১৯৯৬)। এর পরে কবি পাঁচটি উপন্যাস সহ কুড়িটিরও বেশি কবিতা গদ্য ও প্রবন্ধের বই লিখেছেন।

Picture of বিভাস রায়চৌধুরী

বিভাস রায়চৌধুরী

কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক বিভাস রায়চৌধুরী দীর্ঘদিন কবিতার প্রকাশনা ও চর্চার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। 'কবিতা আশ্রম' পত্রিকার মুখ্য পরিকল্পক। পেয়েছেন কৃত্তিবাস পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ওঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম নষ্ট প্রজন্মের ভাসান (১৯৯৬)। এর পরে কবি পাঁচটি উপন্যাস সহ কুড়িটিরও বেশি কবিতা গদ্য ও প্রবন্ধের বই লিখেছেন।
Picture of বিভাস রায়চৌধুরী

বিভাস রায়চৌধুরী

কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক বিভাস রায়চৌধুরী দীর্ঘদিন কবিতার প্রকাশনা ও চর্চার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। 'কবিতা আশ্রম' পত্রিকার মুখ্য পরিকল্পক। পেয়েছেন কৃত্তিবাস পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ওঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম নষ্ট প্রজন্মের ভাসান (১৯৯৬)। এর পরে কবি পাঁচটি উপন্যাস সহ কুড়িটিরও বেশি কবিতা গদ্য ও প্রবন্ধের বই লিখেছেন।

10 Responses

  1. খুউব সুন্দর ও প্রয়োজনীয় স্মৃতিচারণ বিভাসদা। এসব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যত বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যাবে, মানুষ আরও নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে সাহিত্য অঙ্গনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস