১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত ছাত্র ছাত্রী ভয়ঙ্কর স্লোগান (Bangladesh student movement) দিয়ে মিছিল বের করেছে। তারা কি বাধ্য হচ্ছে এমন স্লোগান দিতে? এতই রাগ যে নিজেদের রাজাকার বলতে হচ্ছে? তারা চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করছে। নানা রকম কোটার বিরোধিতা পৃথিবীর নানা দেশে মানুষ করেই। এ নতুন কিছু নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনিরাও কোটার সুবিধে পাবে, এ একটু বাড়াবাড়িই। অনেক মুক্তিযোদ্ধার পরিবারেই মোল্লাতন্ত্রকে সমর্থন করার লোক পাওয়া যায়। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তাদের পরিবারে রাজাকার থিকথিক করছে, তা তো সত্যি নয়। কোটার বিরোধিতা করা মানে তো রাজাকারি করা নয়। তবে যে কোটা অবশ্যই থাকা দরকার, তা নারী কোটা। নারীকে আদিকাল থেকে কুৎসিত পুরুষতান্ত্রিক প্ল্যান অনুযায়ী শিক্ষা এবং স্বনির্ভরতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, সে কারণে নারীর জন্য কোটাটা জরুরি।
২
ছাত্র ছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনের ওপর হামলা করেছে সরকারি দলের ছাত্রলীগ। লাঠি বাঁশ লোহার রড দিয়ে মিছিলের নিরস্ত্র ছাত্র ছাত্রীকে ইচ্ছে মতো মেরেছে। প্রচুর আহত, প্রচুর হাসপাতালে। একনায়িকাতন্ত্র চলছে বাংলাদেশে। একনায়িকা ঘোষণা করেছেন, যদি তুমি মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতি না হও, তুমি রাজাকারের নাতিপুতি। যারা মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতি নয়, তারা এখন বলছে, “ওকে ঠিক আছে, যা বলছো তাই, আমরা রাজাকারের নাতিপুতি”। রাজাকারের নাতিপুতির মিছিলে জড়ো হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। গণজাগরণ শুরু হয়েছে একনায়িকাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। একপরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে।

বঙ্গবন্ধুকে ভাঙিয়েে, মুক্তিযুদ্ধকে ভাঙিয়ে আর কতদিন! মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ছিটেফোঁটাও তো অবশিষ্ট নেই। একনায়িকাই দেশকে গভীর ইসলামতান্ত্রিক বানিয়েছে। হাতে গোনা ক’টা জিহাদিকে প্রাণে মারলেই কি জিহাদের মৃত্যু হয়? জিহাদিরা সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জিহাদিরা লীগের ভেতর, জিহাদিরা লীগের বাইরে।
যে কোনও আন্দোলনকে (Bangladesh student movement) মেরে তক্তা বানিয়ে দেয় দেশের সরকার। এই আন্দোলনের পরিণতিও হয়তো তাই হবে। গণতন্ত্র রয়ে যাবে স্বপ্ন হয়ে। স্বৈরাচারই হয়ে উঠবে রিয়্যালিটি। ওই আধা-বাংলার কপাল তো দেশভাগের পর থেকেই নষ্ট। একে আর কতই বা শুশ্রুষা করা সম্ভব!
৩
যারা বাংলাদেশে মিছিল করছে, সবাই রাজাকারের বাচ্চা, আর যারা ওই রাজাকারের বাচ্চাদের পেটাচ্ছে, তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক? যুদ্ধের ৫২ বছর পর কি রাজাকারের পক্ষের আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের এমন সাদা কালোয় ভাগ করা যায়? আমার তো মনে হয় এরা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। একাকার হয়ে সাদা নয়, কালো নয়, ধূসর রঙ ধারণ করেছে। রাজাকার-পক্ষ চায় তার এলাকায় পাঁচটা মসজিদ বানাতে, দুটো মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে, স্ত্রী কন্যাদের বোরখা বা হিজাব পরাতে, চায় দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বহাল রাখতে আর সময় পেলেই ফিলিস্তিনিদের জন্য কেঁদে বুক ভাসাতে। মুক্তিযোদ্ধা-পক্ষও চায় তার এলাকায় পাঁচটা মসজিদ বানাতে, দুটো মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে, স্ত্রী কন্যাদের বোরখা বা হিজাব পরাতে, চায় দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখতে আর সময় পেলেই ফিলিস্তিনিদের জন্য কেঁদে বুক ভাসাতে।
আরও পড়ুন: অনালোচিত ’৭১: বাংলাদেশের সমর্থনে প্রকাশ যে ‘হাংরি’ লিফলেটের
আমি তো একটুও আলাদা করতে পারি না রাজাকারের আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের।
বিএনপি, জামাতে ইসলামি,আওয়ামি লীগ, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি এবং আরও সব পার্টিকেও আমি খুব একটা আলাদা করতে পারি না। তাদের আদর্শ মোর অর লেস এক। যে কেউ সরকার গঠন করলে একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, ধর্ম ব্যবসা, নারী অবদমন, মসজিদ মাদ্রাসা, ওয়াজ মাহফিল, প্রতারণার কিছু হেরফের হবে না।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশক পর আর দুই দলে কামড়াকামড়ি খামচাখামচি করে লাভ নেই। তার চেয়ে সর্ব দল মিলে কী করে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া দুর্নীতি বন্ধ করা যায়, কী করে সুশিক্ষা আর সুস্বাস্থ্যের মাধ্যমে মানুষের সুসভ্য জীবন যাপনের পথ মসৃণ করা যায়, কী করে সর্বক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করা যায়, কী করে ধর্মীয় রাজনীতি এবং ধর্ম ব্যবসা চিরতরে বন্ধ করা যায়, এবং সবরকম সংখ্যালঘুর নিরাপত্তার ব্যবস্থা পাকা করা যায়, — তা নিয়ে মাথা ঘামালে বরং কাজের কাজ কিছু হবে।

৪
বাংলাদেশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কোটাবিরোধী আর কোটাসমর্থকদের মধ্যে নয়, যুদ্ধটা হচ্ছে সরকার আর সরকারবিরোধীর মধ্যে। সরকার বলতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, এবং লীগপন্থী লোক। সরকারবিরোধী বলতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, এবং লীগপন্থী লোকের বাইরে যারা আছে, সবাই। এই পক্ষে বিএনপি, জামাতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টির লোক তো আছেই, কোনও পার্টি করে না, এমন লোকও আছে। একশ রকম ইসলামী সংগঠনের লোক আছে, শিল্পী সাহিত্যিক আছে, নাটক সিনেমার লোক আছে, ধর্মান্ধ আছে, জিহাদি আছে, বুদ্ধিজীবী আছে, প্রগতিশীল আছে। এরা বিরাট দল। এদের বাইরে কিছু লোক আছে যারা কোনও পক্ষই নিচ্ছে না।
এই আন্দোলন শাহবাগ আন্দোলনের চেয়ে কিছু কম বিশাল নয়। এটি সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। কিন্তু সরকারের যে সশস্ত্র সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ছাত্র বাহিনী আছে, তাতে মনে হয় না, সরকারের পতন হবে শীঘ্র। এই সরকারের পেছনে তো আবার কিছু শক্তিশালী দেশ আছে। তারা অবশ্য মনে করে হাসিনা সরকার মৌলবাদীদের দমন করছে, তাদের জানা উচিত এই সরকারের আমলেই মৌলবাদের উত্থান হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অনেকে বলে, এই সরকারের পতন হলে দেশের সর্বনাশ হবে, কারণ ভাল কেউ নেই দেশ চালাবার। এই জুজুর ভয় দেখিয়ে কিন্তু অনন্তকাল গদিতে বসে থাকা যায়। কেউ না থাকলে খালি জায়গায় কেউ না কেউ বসবে, সে ভাল না হলে তাকে দূর করে নতুন কাউকে নির্বাচন করতে হবে। এভাবেই তো গণতন্ত্র চলে। গণতন্ত্র কখনও এভাবে চলে না, যে, এর চেয়ে ভাল কেউ নেই , সুতরাং এ যতই মন্দ হোক, একেই বসিয়ে রাখতে হবে ক্ষমতায়।
কোটা সংস্কারের দরকার নিশ্চয়ই আছে। ছাত্রছাত্রীরা শান্তিপূর্ণভাবে কোটা সংস্কারের আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে, এবং সফল হতে পারে। কয়েক বছর আগে এক জিহাদি ছাত্র মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ধারালো ছুরি দিয়ে খুন করতে চেয়েছিল। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন শিক্ষক। যদি কোটাসংস্কার আন্দোলনে সেই খুনী জিহাদি ছাত্রের সমর্থকদের সংখ্যাই বেশি হয়, তবে এই আন্দোলন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সমর্থন হারাবে।
এই সরকার অনেক আগেই যোগ্যতা হারিয়েছে ক্ষমতায় থাকার। যখন হেফাজতে ইসলামীর মতো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে জমি দিল মাদ্রাসা বানিয়ে মানুষকে ধর্মান্ধ করার জন্য, যখন মাদ্রাসার ডিগ্রিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সমতুল্য করে শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বনাশ করলো, ওয়াজিদের অনুমতি দিল নারীবিদ্বেষী ওয়াজ করে জনগণকে নারীবিদ্বেষী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, যখন মদিনা সনদে দেশ চালাবার আগ্রহ প্রকাশ করলো, যখন একের পর এক সরকারের লোকেরা হাজার-কোটি টাকা চুরি করে পালিয়ে গেল, হাসিনা সরকারের পিওনও যখন ৪০০ কোটি টাকা নিয়ে হাওয়া হয়ে গেল, তখনই তো প্রধানমন্ত্রী তার যোগ্যতা হারিয়েছে ক্ষমতায় থাকার। অতি সামান্য দুর্নীতি ধরা পড়লে সভ্য দেশে মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীরা পদত্যাগ করে। কিন্তু আমাদের কোনও মন্ত্রীকে তো টেনে হিঁচড়েও গদি থেকে নামানো যায় না। ওপরতলার লোকেরা গদির লোভে, টাকার লোভে, দুর্নীতির লোভে অমানুষ হয়ে গেছে। অমানুষদের শাসনে দেশের লোক কী করে মানুষ হবে!

শুনেছি এ পর্যন্ত ৬ জন ছাত্র মারা গেছে। অধিকারের দাবি নিয়ে যে ছাত্র ছাত্রীরা মিছিল করেছিল, তাদের কেন মরতে হয়? হাসিনা সরকার হয়তো জবাব দেবে, ‘ওরা রাজাকারের নাতিপুতি ছিল, তাই আমার সুযোগ্য সন্তানেরা ওদের মেরেছে।’ কিন্তু সরকারের জানা উচিত, কাউকে তো নয়ই, এমনকী রাজাকারের নাতিপুতিদেরও বিনা বিচারে মেরে ফেলার অধিকার সরকারের নেই, সরকারের কোনও ছাত্রবাহিনীর নেই।
৫
যেভাবে মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রায় সব অনলাইন বইয়ের দোকান থেকে, যেভাবে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়েে আর না প্রবেশ করার জন্য, তাতে মনে হয় কোটাসংস্কার আন্দোলনকারীরা নিজেদের বাকস্বাধীনতা চাইলেও অন্যের বাকস্বাধীনতা একেবারেই চায় না। যেহেতু মুহম্মদ জাফর ইকবাল রাজাকারদের মুখ দেখতে চান না, সুতরাং তাঁকে স্বাভাবিক জীবন আর যাপন করতে দেওয়া হবে না। মুহম্মদ জাফর ইকবাল কিন্তু বলেননি ছাত্র মাত্রই রাজাকার। যে ছাত্ররা নিজেদের রাজাকার বলে মিছিল করেছে, তাদেরই শুধু রাজাকার বলেছেন তিনি। ছাত্ররা গর্ব করে নিজেদের রাজাকার বলেছে, নাকি তারা প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে শ্লেষ করে নিজেদের রাজাকার বলেছে — এ এখনও অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়। যদি নিজেদের রাজাকার পরিচয় নিয়ে গর্ব হয় কারও, তাহলে আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ মনে হচ্ছে চলে গেছে বাকস্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তির হাতে। হয়তো ছাত্রদের মুখোশ পরে আছে কয়েক হাজার গোলাম আযম।

কোটা সংস্কারের দরকার নিশ্চয়ই আছে। ছাত্রছাত্রীরা শান্তিপূর্ণভাবে কোটা সংস্কারের আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে, এবং সফল হতে পারে। কয়েক বছর আগে এক জিহাদি ছাত্র মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ধারালো ছুরি দিয়ে খুন করতে চেয়েছিল। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন শিক্ষক। যদি কোটাসংস্কার আন্দোলনে সেই খুনী জিহাদি ছাত্রের সমর্থকদের সংখ্যাই বেশি হয়, তবে এই আন্দোলন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সমর্থন হারাবে।
৬
হাসিনা সরকারকে স্বৈরাচারী সরকার বলে আখ্যা দিচ্ছে আজ প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী এবং একই সঙ্গে মৌলবাদী কট্টরপন্থী লোকেরা। যারা চুরি ডাকাতি দুর্নীতি এবং নানা রকম সুযোগ সুবিধে পেয়ে এসেছে এই সরকারের কাছ থেকে, তারাই সমর্থন করছে সরকারকে। হাসিনা সরকার কঠোর হাতে দমন করছে দেশ জুড়ে ফুঁসে ওঠা হাসিনাবিরোধী জনতার ঢলকে। বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোটার সমাধান আদালত দেবে। কিন্তু হাসিনার পায়ের তলার মাটি যে সরে গেছে অনেকটাই, সেটার সমাধান কে দেবে?
৭
যদি কোটা সংস্কার করতে গিয়ে কাউকে লাথি মারতে হয় , তাহলে নারীকে লাথি মারলে সবচেয়ে সুবিধে। নারী তো অবলা, কিছু বলবে না। ইতিহাসের শুরু থেকে মুখ বুজে নির্যাতন সইছে কে? নারী। নারীকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বনির্ভরতা, এবং স্বাধীনতা থেকে শতাব্দির পর শতাব্দি বঞ্চিত করা হয়েছে, এবং এখনও হচ্ছে। হচ্ছে নারীর লিঙ্গদোষের কারণে। নারীর লিঙ্গ পারফেক্ট নয়, নারীর লিঙ্গ অসম্পূর্ণ। পুরুষেরা নানা রকম কমেডি করেছে এই লিঙ্গ নিয়ে। বাংলাদেশের কোটাসংস্কার আন্দোলনে নারীর সমানাধিকারে বিশ্বাস করার লোক প্রায় ছিলই না বলতে গেলে। ধার্মিক এবং ধর্মান্ধ লোকের আধিক্য ছিল দৃষ্টিকটুরকম। তারা তো নিশ্চয়ই কেউ চায়নি নারীকোটা। এমনকী কিছু মগজধোলাই হওয়া পুরুষতন্ত্রবিশ্বাসী নারীও নারীকোটার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে।
৮
মিনিমাম একশো লোক না মরলে, মিনিমাম একশো কোটি টাকার গাড়ি বাড়ি পাবলিক প্রোপার্টি আগুনে না পুড়লে সরকার কারও কোনও দাবি মেনে নেয় না। এখন কি নারীরা তাদের প্রাপ্য সংরক্ষণের জন্য রাস্তায় নেমে বুক পেতে দাঁড়াবে নিহত হওয়ার জন্য? অবিবেচকের মতো গাড়িবাড়ি পাবলিক প্রোপার্টি পোড়াবে? তাহলে কি পুনর্বিবেচনা করা হবে সংরক্ষণ সংস্কার? তার চেয়ে ভাল সরকার বসুক নারীবাদীদের সঙ্গে আলোচনায়। নারীবাদীরা বলুক কেন সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য নারীর সংরক্ষণ জরুরি। নারীকে হাজার বছর ধরে বঞ্চিত করেছে নারীবিদ্বেষী ধর্ম এবং পুরুষতন্ত্র। পাপ মোচনের জন্য হলেও তো সমাজকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে নারীর জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। সংরক্ষণ না হলে নারীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা পিছিয়ে পড়বে আর নারীর সমানাধিকারের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে। অসভ্য সমাজের জন্য নারীর সমানাধিকার না থাকা চমৎকার বটে, কিন্তু সভ্য সমাজের জন্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
ছবি সৌজন্য: ফেসবুক
____________________________________________________
পড়ুন:
- সব ধর্মের সব জাতের পুরুষই নারীহত্যা করে
- শাস্তি দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হয় কি?
- ভ্যালেন্টাইন’স ডে
- ধর্ষণহীন দিন
- নারী দিবসে
- রোজায় আমি কী ভাবছি,
- বাঁধ ভেঙে দাও
- টাঙ্গাইল শাড়ির জি আই বাংলাদেশের প্রাপ্য কেন?
- তারকাময় রাজনীতি ভাল নয়
- ধর্মানুভূতি নয়, এ ধূর্তদের কৌশল
- লিঙ্গসূত্র (১)
- লিঙ্গসূত্র (২)
- হিন্দু-মুসলমানের বিয়ের পরিণতি
____________________________________________________
*পরবর্তী কলাম প্রকাশ পাবে ১২ই আগস্ট, ২০২৪
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী মুখ তসলিমা নাসরিন। বাঙালি হয়েও তিনি আন্তর্জাতিক। গদ্য ও কবিতার সব শাখাতেই অনায়াস বিচরণ তসলিমার। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি তাঁকে আমরা চিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী ও নারীবাদী একজন চিন্তাশীল হিসেবেও। নারীর অধিকার, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মানববাদ, বিজ্ঞান ও সহনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি তাঁর বিশ্বব্যাপী উদার ও মুক্তচিন্তার জন্য দেশে-বিদেশে তিনি সম্মানিত হয়েছেন একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননায়। 'নির্বাচিত কলাম' ও আত্মজীবনী গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দু'দুবার আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের শাখারভ পুরস্কার। ফ্রান্স সরকারের মানবাধিকার পুরস্কার, কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। লিখেছেন 'ফেরা', 'লজ্জা', 'ফরাসি প্রেমিক'-এর মতো অসামান্য উপন্যাস; বেশ কিছু ছোটগল্প, আত্মজীবনীমূলক রচনা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ।