(Taslima Nasrin) যখন কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হলো,আমরা ভেবেছিলাম এ হয়তো ছাত্রদের ন্যায্য দাবির আন্দোলন। কোটাবিরোধী আন্দোলন আমরা, সাধারণ মানুষেরা, সমর্থন করেছিলাম। যখন সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেছিল লক্ষ লক্ষ ছাত্র, তখনও তাদের সমর্থন করেছি। ছাত্ররা কাউকে বুঝতে দেয়নি, এই আন্দোলনের নীল নকশা এঁকেছে ইসলামী মৌলবাদি এবং ইসলামী সন্ত্রাসী দল। স্বৈরাচারী দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর দেশের সর্বত্র ভায়োলেন্স চলেছে।
(Taslima Nasrin) জিহাদিরা, সন্ত্রাসীরা, ইসলামী মৌলবাদীরা এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নামে চরম বৈষম্যবাদী গোষ্ঠী নির্বিঘ্নে মানুষ খুন করেছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে দেওয়ার জন্য সব রকম ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী এবং সমর্থকদের খুন করেছে। তাদের বাধা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ নেই। থাকলেও পুলিশেরা হাত গুটিয়ে বসে ছিল। ছাত্র আন্দোলনের কাউকে বাধা দিয়ে পুলিশেরা বিপদ ডেকে আনতে চায় না। তারা জানে হাজারের ওপর পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্ররা। ঠিক যেমন কয়েকশো ছাত্রকে খুন করেছে পুলিশ। অবশ্য পুলিশ এবং ছাত্ররা যত না পরস্পরকে খুন করেছে, তার চেয়ে বেশি করেছে ইসলামী জঙ্গিরা।

(Taslima Nasrin) ছাত্ররা মব ত্রাস সৃষ্টি করছে। গত দশ দিনে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬৯ শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে, পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। শিক্ষকদের অধিকাংশই হিন্দু শিক্ষক। চলেছে লাগাতার হিন্দুদের ওপর হামলা। চলেছে দেশ জুড়ে লুটতরাজ, মূর্তি ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া, উড়িয়ে দেওয়া এবং পুড়িয়ে দেওয়ার উৎসব। কারাগার থেকে অবাধে বেরিয়ে এসেছে জিহাদি জঙ্গি, সাজাপ্রাপ্ত আসামী। জামাতে ইসলামী, এবং জিহাদি দল হিযবুত তাহরীরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাস্তায় এখন যত না রাজনৈতিক দল, তার চেয়ে ঢের বেশি ইসলামী সন্ত্রাসী দল। এরা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বিশ্ব জুড়ে ইসলামী শাসন চায়। বিশ্বের কথা না হয় পরে ভাবা যাবে। আপাতত বাংলাদেশকে জিহাদিস্থান বানানো থেকে রক্ষা করতে হলে কী কী করতে হবে সেটা ভাবছি।

(Taslima Nasrin) প্রথমেই চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। যত দ্রুত সম্ভব। নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে, এমনকী আওয়ামী লীগও। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ শাসনের দায়িত্ব নেবে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে গ্রহণ করা হবে না, যেহেতু এই দলটির প্রধান উপজীব্য ধর্ম। হিযবুত তাহরীর, আইসিস, এবং আরও নানারকম জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। মব-জাস্টিস নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রেস ফ্রিডম থাকতে হবে। মানুষের বাক স্বাধীনতা থাকতে হবে। ছাত্র এবং শিক্ষকদের ফিরে যেতে হবে সংসদ থেকে ক্লাসরুমে। আর্মিদের ফিরে যেতে হবে ব্যারাকে। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দিতে হবে। আনতে হবে ধর্মনিরপেক্ষতা।
ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন নিষিদ্ধ করতে হবে। সমানাধিকারের ভিত্তিতে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি জারি করতে হবে। স্বাধীনতা জাদুঘর, জাতির পিতা জাদুঘর, মুক্তিযোদ্ধাদের জাদুঘর ইত্যাদি ইতিহাসের অংশ, সেসব তো অবশ্যই এবং আরও যে শত শত ভাস্কর্য এবং মনুমেন্ট ভেঙে ফেলা হয়েছে, সবই পুনর্নিমাণ করতে হবে। মাদ্রাসাগুলোকে ইস্কুলে পরিণত করতে হবে। সিলেবাসে থাকবে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা। ছাত্রছাত্রীদের ধর্মান্ধ হিসেবে নয়, বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সরকারের প্রতিটি খরচ জনগণকে দেখাতে হবে, সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। তথ্য জানার অধিকার আইন পাস করতে হবে। বাক স্বাধীনতা বিরোধী সমস্ত আইন বাতিল করতে হবে। ধর্মব্যবসা, ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ করতে হবে।

আমার ইচ্ছের কথা জানার পর লোকেরা বলেছে, আমার প্রস্তাব কোনওদিনই বাংলাদেশের কেউ মেনে নেবে না। হাসিনা গণতন্ত্র মানেননা বলে মানুষ তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে। যারা ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে, তারাও কিন্তু গণতন্ত্রে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করছে না। চারদিকে চলছে উন্মত্ততা। বিজয় উৎসব হিসেবে এই উন্মত্ততাকে জাস্টিফাই করা হচ্ছে। নির্বিঘ্নে হত্যাকাণ্ড চলছে, ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, সন্ত্রাস চলছে। ইউনুস বা উপদেষ্টা কমিটির কেউ এসব বন্ধ করার কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না বরং উগ্র তরুণ সমাজ Gen-Z এর ধ্বংসাত্মক এবং অমানবিক কার্যকলাপকে নানা ভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। উপদেষ্টারা জানিয়ে দিয়েছেন দেশ গড়তে সময়ের দরকার।
নির্বাচন প্রসঙ্গেও খুব একটা মুখ খুলছেন না কেউ। বিএনপি নেতা তারেক জিয়াকেও দেশে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ক্ষমতা এখন জামায়াতে ইসলামীর হাতে। সম্ভবত তারা চায় না, বিএনপির নেতা ফিরুক দেশে। তারেক জিয়া দেশে ফিরে এলে বিএনপি নির্ঘাত নির্বাচনে জিতে যাবে, এবং জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা হয়ে উঠবে নিতান্তই গৌণ। তার চেয়ে নির্বাচন ছাড়াই জামায়াতে ইসলামী যদি বিভিন্ন ইসলামী দল এবং জিহাদি দলকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতা ভোগ করতে পারে, এবং দেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, আল্লাহর আইন কায়েম করতে পারে, তাহলে তো তাদের সমস্ত পরিকল্পনা সফল। জামায়াতে ইসলামীকে সহযোগিতা করছে ছাত্রআন্দোলনের মাদ্রাসায় পড়া ছাত্রনেতারা।

স্বৈরাচারী সরকারের শাসনকালে প্রেস ফ্রিডম ছিল না। সরকারের প্রশংসা করে সংবাদপত্রে কলাম লেখা হতো। প্রতিদিন সরকারের গুণগান গাওয়া হতো। সরকারের সমালোচনা করলে সরকার সমস্যা করতো। স্বৈরাচারী সরকারকে হঠানোর পর এখন প্রেস ফ্রিডম আছে কি? থাকলে দিনে দুপুরে কে কাকে খুন করে ফেলে রাখছে, কী কারণে ১০ দিনে ১১৬৯ জন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার পরও মিডিয়া চুপ করে আছে? কারা খেলাফতের মিছিল করছে, কারা মাজার ভাঙছে, কারা হিন্দু বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, কিছু বলছে না। মিডিয়ার মুখ কে চেপে রেখেছে? প্রেস ফ্রিডম না থাকলে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সঙ্গে এই নতুন সরকারের পার্থক্য কোথায়?

প্রফেসর ইউনুস একটি রহস্যময় চরিত্র। তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদি শক্তির মতো মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে ২০২৪ এর গণ অভ্যুত্থানের তিনি নাম দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গুঁড়ো করে দেওয়ার বিপক্ষে সরকার থেকে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নয়, মেহেরপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্ত ভাস্কর্য গুঁড়ো করে ফেলা হলেও পাকিস্তানী আর্মির যে মূর্তিগুলো আছে, সেসব ভেঙে হয়নি। এন জিওর লোক কি দেশ চালাতে পারবেন? তিনি কতটা পাপেট, কতটা ফ্রি, তা সময় বলবে। যখন দেশের সমস্ত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হচ্ছিল, জাতির পিতার বাড়ি এবং মিউজিয়াম ভেঙে ফেলা হচ্ছিল, ইউনুস বলেছিলেন ‘’মুক্তিযোদ্ধা’’রা বিজয়ের উৎসব করছে। ধ্বংসলীলাকে এরকম নির্লজ্জভাবে বিবেকহীনের মতো ডিফেন্ড করতে দেখিনি।
বাংলাদেশ হয়ে উঠছে একখণ্ড মধ্যযুগ। এতে মনে হচ্ছে অমুসলিম, নাস্তিক, মুক্তচিন্তক, ইসলামের সমালোচক, প্রগতিশীল, উদারপন্থী, বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, নারীবাদী, মানবাধিকারে বিশ্বাসী, বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষের কোনও স্থান নেই। ভাস্কর্য শিল্প, নৃত্য, সংগীত, মিউজিক এর কোনও স্থান নেই। দেশকে এই জঘন্যতম অবস্থায় ফেলার জন্য হাসিনার অবদান কিন্তু কম নয়।
এখন ইসলামী সন্ত্রাসীরা বড় আনন্দে মাজার ভাঙ্গছে। এসব সুফিদের কবর বা মাজার। ভারতীয় উপমহাদেশে সুফিরা এসেছিল ইসলাম প্রচার করতে। উদার ইসলামের চর্চাই হতো এ অঞ্চলে। বাংলাদেশে নতুন এসেছে হিংস্র বর্বর ওয়াহাবিজম। এরা সুফিজম বিদ্বেষী। বাংলাদেশে যারা জঙ্গি জিহাদি, তারা ওয়াহাবিজমে বিশ্বাস করে। আইসিস জঙ্গি গোষ্ঠীও মধ্যপ্রাচ্যে মাজার ধ্বংস করতো। মনে আছে তারা মক্কায় গিয়ে কাবা আর রওজা মোবারক গুঁড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল! ওয়াহাবিজমে মাজারের স্থান নেই। মাজারকে সম্মান করার অর্থ তারা মনে করে মূর্তি পূজা করা। আইসিসরা সুফি ইসলামকে ধ্বংস করে নিজেদের জঙ্গি ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করে।

গণঅভ্যুত্থানের দু’সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও অনেকেই বুঝতে পারিনি কে বা কারা দেশ চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা, আর্মিরা, উপদেষ্টাবৃন্দ, ইউনুস, জামায়াতে ইসলামী, জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবির, সন্ত্রাসী দল হিযবুত তাহরীর, জিহাদি দল আন্সারুল্লাহ বাংলা টিম অর্থাৎ দেশি আইসিস, নাকি আমেরিকা? অনেকে বলল, সবাই মিলেই চালাচ্ছে। সম্ভবত তারা ঠিক। দেশ চালাচ্ছে সবাই মিলেই কিন্তু দেশ তো চলছে না। নৈরাজ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। ৮৪ বছর বয়সে ইউনুস কী যোগ্যতায়, কার স্বার্থ রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন, তা অনেকের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। সরকারে একজনও রাজনীতির লোক নেই। আছে ছাত্র এবং এনজিও, এবং আর্মি।
হলি আর্টিজান ক্যাফে, যেখানে ২০১৬ সালে জিহাদি হামলা হয়েছিল, ২৪ জন বিধর্মী এবং প্রগতিশীল মানুষের গলা কেটে হত্যা করেছিল জিহাদিরা, সেখানে জিহাদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রাণ দেওয়া পুলিশের যে ভাস্কর্য ছিল, সেটা ভেঙে ফেলে হিজবুত তাহরীর তাদের জিহাদি পোস্টার সেঁটে এসেছে। হিযবুত তাহরীর আইসিসের পতাকা হাতে ঢাকার রাস্তায় র্যালি করেছে, অবাধে তাদের জিহাদি পুস্তিকা বিলি করেছে দেশময়। আল কায়দার পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত আহসানুল্লাহ বাংলা টিমের জিহাদি নেতা মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন রাহমানিকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রাহমানি এখন মুক্ত মানুষের মতো ঘুরছে, এবং প্রকাশ্যে সভা করছে দেশকে জিহাদিস্তান বানাবে এই সংকল্প নিয়ে। এ আর কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না, দেশ কাদের হাতে।

এই নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রচণ্ড ভারত বিদ্বেষী। ভারত বিদ্বেষী স্লোগান দিয়ে বেশ কিছু র্যালি হয়ে গেছে দেশে। বন্যা হওয়ার দোষ ভারতের, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার দোষ ভারতের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো এমন স্লোগানও দেওয়া হলো, “আমরা সবাই বাবর হব, সেভেন সিস্টার স্বাধীন করব।” এই সরকারের মনে হয় না, কোনও রকম ইচ্ছে আছে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার। হাসিনার পতনের পর থেকে যখন ইসলামী মৌলবাদিদের হাতে ক্ষমতা চলে গেল, তারা হিন্দু বাড়ি লুটপাট করে পুড়িয়ে দিতে শুরু করেছে, মন্দির ভেঙে তো আছেই, বাড়িঘর দোকানপাটে আগুন দেওয়া ছিল নিত্যদিনের কর্ম। এরা আওয়ামী শাসনাকালেও অত্যাচারিত হয়েছে, এই নতুন তথাকথিত স্বাধীন দেশেও অত্যাচারিত হচ্ছে।
নতুন এক নির্যাতন শুরু হয়েছে, বড় পদে চাকরি করছে যে হিন্দুরা, তাদের ভয় দেখিয়ে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর ফল কী হবে? হিন্দুরা আবারও দলে দলে দেশ ত্যাগ করবে। যদিও সাহস করে র্যালিতে স্লোগান দিয়েছিল, ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপ দাদার?’ স্লোগান, র্যালি তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে কতটুকু? বাপ দাদার ভিটে মাটিতে বাস করা বুঝি হিন্দুদের আর হলো না। মাত্র ৮% হিন্দু বাস করে বাংলাদেশে। একে শূন্য শতাংশ না করে ছাড়বে না মুসলমানেরা। শিয়া, আহমদিয়ার সংখ্যাও শূন্য করবে। নাস্তিক, যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তকের সংখ্যাও শূন্য করবে। অতঃপর তারা মুসলমানে মুসলমানে যুদ্ধ করবে, এবং মরবে। বোধোদয় কি তারপর হবে? আমার মনে হয় না।

বাংলাদেশ হয়ে উঠছে একখণ্ড মধ্যযুগ। এতে মনে হচ্ছে অমুসলিম, নাস্তিক, মুক্তচিন্তক, ইসলামের সমালোচক, প্রগতিশীল, উদারপন্থী, বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, নারীবাদী, মানবাধিকারে বিশ্বাসী, বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষের কোনও স্থান নেই। ভাস্কর্য শিল্প, নৃত্য, সংগীত, মিউজিক এর কোনও স্থান নেই।
দেশকে এই জঘন্যতম অবস্থায় ফেলার জন্য হাসিনার অবদান কিন্তু কম নয়। জিহাদিদের তিনি জেলে ভরেছিলেন বটে, কিন্তু অতিরিক্ত মসজিদ মাদ্রাসা তৈরি করে, মাদ্রাসার ডিগ্রিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সমতুল্য করে, শিল্প সাহিত্যকে নির্বাসনে পাঠিয়ে ইসলামী ওয়াজ মাহফিল দিয়ে সারা দেশ ছেয়ে ফেলে, যুবসমাজকে ইসলামীস্ট বানানোর জন্য মগজধোলাই করে, জিহাদি উৎপাদন করেছেন। যারা তার পতন ঘটিয়েছে, এদেরই তিনি অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার লোভে দুধ কলা দিয়ে পুষেছিলেন। এরাই ছোবল দিল শেষে।
ছবি সৌজন্য: ফেসবুক, ANI, WikimediaCommons, FirstPost, Organizer
____________________________________________________
পড়ুন:
- সব ধর্মের সব জাতের পুরুষই নারীহত্যা করে
- শাস্তি দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হয় কি?
- ভ্যালেন্টাইন’স ডে
- ধর্ষণহীন দিন
- নারী দিবসে
- রোজায় আমি কী ভাবছি,
- বাঁধ ভেঙে দাও
- টাঙ্গাইল শাড়ির জি আই বাংলাদেশের প্রাপ্য কেন?
- তারকাময় রাজনীতি ভাল নয়
- ধর্মানুভূতি নয়, এ ধূর্তদের কৌশল
- লিঙ্গসূত্র (১)
- লিঙ্গসূত্র (২)
- হিন্দু-মুসলমানের বিয়ের পরিণতি
- বাংলাদেশ আজ প্রশ্নের সম্মুখীন
- ধর্ষণ পুরুষতন্ত্রের উপসর্গ
____________________________________________________
*পরবর্তী কলাম প্রকাশ পাবে ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী মুখ তসলিমা নাসরিন। বাঙালি হয়েও তিনি আন্তর্জাতিক। গদ্য ও কবিতার সব শাখাতেই অনায়াস বিচরণ তসলিমার। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি তাঁকে আমরা চিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী ও নারীবাদী একজন চিন্তাশীল হিসেবেও। নারীর অধিকার, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মানববাদ, বিজ্ঞান ও সহনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি তাঁর বিশ্বব্যাপী উদার ও মুক্তচিন্তার জন্য দেশে-বিদেশে তিনি সম্মানিত হয়েছেন একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননায়। 'নির্বাচিত কলাম' ও আত্মজীবনী গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দু'দুবার আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের শাখারভ পুরস্কার। ফ্রান্স সরকারের মানবাধিকার পুরস্কার, কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। লিখেছেন 'ফেরা', 'লজ্জা', 'ফরাসি প্রেমিক'-এর মতো অসামান্য উপন্যাস; বেশ কিছু ছোটগল্প, আত্মজীবনীমূলক রচনা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ।