(Haram Halal) আলী হাসান নামের এক বাংলাদেশি র্যাপার ঘোষণা করেছেন তিনি আর গান গাইবেন না কারণ তিনি মনে করছেন গান গাওয়া হারাম। তিনি আরও ঘোষণা করেছেন তিনি ব্যবসা করেন, সেই ব্যবসার টাকায় খাবেন, আর গান গেয়ে যে টাকা কামিয়েছেন সেই টাকায় বাড়ি বানাবেন। তিনি যদি সত্যিই মনে করেন গান গাওয়া হারাম, তাহলে হারাম (Haram Halal) টাকায় যে বাড়ি বানাবেন, সেই বাড়িতে বাস করাও তো হারাম (Haram Halal)। শুধু হালাল টাকায় খেতে হবে, এবং হারাম টাকায় বাকি সব কিছু করতে হবে, এ তো তাঁর প্রভুকে ফাঁকি দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। প্রভু কি শুধু কোন টাকায় খাবার কেনা হচ্ছে সেটা দেখেন? তিনি তো সবকিছুই দেখেন। তিনি তো দেখেন কোন টাকায় কেনা বাড়িতে থাকা হচ্ছে, কোন টাকায় জামা-কাপড় , আসবাবপত্র কেনা হচ্ছে, কোন টাকায় ভ্রমণ করা হচ্ছে। সুতরাং উপার্জনের সব টাকাই হালাল টাকা হতে হবে।(Haram Halal)
জীবন যাপন করতে হলে টাকার দরকার প্রতিদিন। সেই টাকা হালাল হওয়াই বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, হালাল টাকার সঙ্গে হারাম টাকার মিশেল ঘটলে হালালও হারাম (Haram Halal) হয়ে যায়। এক বালতি দুধে এক ফোঁটা চোনা মেশালে যেমন দুধ নষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট, ঠিক তেমন প্রচুর হালাল টাকার সঙ্গে সামান্য হারাম টাকা মেশালে হালাল (Haram Halal) টাকাও নষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট। হালাল টাকা রোজগার করছো, নাকি হারাম টাকা রোজগার করছো, তা আর কেউ না দেখলেও সর্বশক্তিমান দেখছেন। তাহলে কী করতে হবে? আলী হাসানকে গান গাওয়া বন্ধ করতে হবে, গান গেয়ে টাকা উপার্জন বন্ধ করতে হবে। এতে হয়তো তাঁর বাড়ি বানানো হবে না, তাঁর বাড়ির স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে। শুধু তা-ই নয়, দর্শকদের মনোরঞ্জন করা তাঁর আর হবে না, তাঁর আর লোকপ্রিয় হওয়া, বিখ্যাত হওয়া হবে না। হাতে গোণা কিছু লোক ছাড়া তাঁকে কেউ চিনবে না। আলী হাসান হয়ে উঠবেন সাধারণ একজন ছাপোষা লোক। (Haram Halal)

আমি আলী হাসানকে চিনি না। র্যাপ সঙ্গীত আমার পছন্দও নয়। আলী হাসান গান বন্ধ করে দিলে জাতির যে খুব দুর্দশা হবে, রেকর্ড কোম্পানীর যে ক্ষতি হবে, অসংখ্য ভক্ত যে মর্মাহত হবে, তাও আমি মনে করি না। আলী হাসান একা নন, গান গাওয়াকে হারাম মনে করার লোক বাংলাদেশে ক্রমশ বাড়ছে। আমি খুবই দুঃখ পেয়েছিলাম আমার এক প্রিয় শিল্পী, এক প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী, যেদিন গান গাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি শাহনাজ রহমতুল্লাহ। আমি শাহনাজ রহমতুল্লাহর গান খুবই ভালবাসতাম। তাঁর দেশাত্ববোধক গানগুলোর কোনও তুলনা ছিল না। তিনি হজ্ব করে এসে হিজাব পরা শুরু করলেন, এবং দিব্যি গান ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করা শুরু করলেন। আল্লাহর ইবাদত করলে, নামাজ রোজা করলে, গান ছাড়তে হবে কেন, এ আমি ঠিক বুঝতে পারি না। (Haram Halal)

এর পেছনে আমি কোনও যুক্তি খুঁজে পাই না। সুকণ্ঠ তো আল্লাহরই দান, সুর ছাড়া তো আজানও হয় না। অনেকে বলে যে লোক গান ভালবাসে না, সুর ভালবাসে না, ফুল এবং শিশু ভালবাসে না, সে লোক মানুষ খুন করতে পারে। বাংলা গানগুলোয় দেশের জন্য, মানুষের জন্য, প্রকৃতির জন্য ভালবাসা প্রকাশিত হয়। বাউল গানগুলো মূলত আধ্যাত্মিক গান। আধ্যাত্মিক গানে বা ভালবাসার গানে আপত্তি ওঠার তো কোনও কারণ দেখি না। আপত্তি ওঠায় তো তারাই, যারা ঘৃণাকে সম্বল করে বেঁচে থাকে। পৃথিবীতে শান্তি আনতে হলে মানুষে মানুষে ঘৃণা নয়, ভালবাসা চাই।

গায়ক ক্যাট স্টিভেন্স ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম বদলে ইউসুফ ইসলাম হয়েছেন সত্তর দশকের শেষের দিকে। মুসলমান হওয়ার পর তিনি গান ছেড়ে দিলেন। বহু বছর কোনও গান করেননি। বহু বছর পর গানে ফিরে এসে শুধু ইসলামী গান গেয়েছেন। এদিকে আশির দশকে মাইকেল জ্যাকসনের বড় ভাই জারমেইন জ্যাকসন ইসলাম গ্রহণ করার পর গান গাওয়া ছেড়েই দিয়েছেন বলতে গেলে। যদি মাঝে মাঝে কিছু গান করেন, সে ইসলামী গান। (Haram Halal)নেপোলয়ন এবং লুন , আমেরিকার দুই প্রতিভাবান গায়ক, ইসলাম গ্রহণ করার পর গানের জগত ছেড়ে চলে গেছেন। ইসলামের সঙ্গে গানের কোনও বিরোধ যদি থেকেই থাকে, তবে বিরোধ দূর করে গানকে গ্রহণীয় করতে হবে। গানকে দূর করে বিরোধকে গ্রহণীয় করা মোটেও ভাল কাজ নয়।
আজমির শরীফে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির মাজারে প্রতিদিনই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কাওয়ালি গাওয়া হয়। মঈনুদ্দিন চিশতি ইসলামের দাওয়াত দিয়ে ভারতবর্ষের লক্ষ লক্ষ হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিলেন। এই উপমহাদেশে ইসলামের সেবা তাঁর চেয়ে বেশি কে করেছেন? তিনিই গান গেয়ে মানুষকে মুগ্ধ করেছেন, তাঁর ভক্তরা আজও তাঁর মাজারে গান গাইছে।

ইসলামে অভিনয় হারাম বলেও অভিনয় ছেড়েছেন অনেকে। জনপ্রিয় নায়িকা শাবানা অভিনয় ছেড়ে আল্লাহর পথে চলে গেছেন। এখন হিজাব পরেন। অভিনয় হারাম বলে মৌসুমী অভিনয় ছেড়েছেন, মাহিয়া মাহিও ছেড়েছেন। ওদিকে দুই সফল সিনেমা দঙ্গল আর সিক্রেট সুপারস্টারের সফল নায়িকা প্রতিভাময়ী জায়রা ওয়াসিম অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন, কারণ চলচ্চিত্র জগতে থেকে তিনি মনে করেছেন, তাঁর ঈমান নষ্ট হচ্ছে। তিনি অভিনয় করে পাপ করেছেন বলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, অগত্যা বোরখা পরে আল্লাহর পথে চিরকালের জন্য চলে গেছেন। অভিনয় ছেড়েছেন সানা খান। বলিউডে টিকে থাকার জন্য যখন তারকারা দিন-রাত পরিশ্রম করেন, সেখানে দীর্ঘ দিনের বলিউডের গোছানো ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়েছেন অভিনেত্রী সানা খান। কেন বিদায় জানিয়েছেন, এই প্রশ্নের উত্তরে সানা খান বলেছিলেন তিনি ইসলামে সমর্পণ করতে চান নিজেকে। (Haram Halal)

সানা খানের মতোই ইসলাম ধর্মের পথে চলার জন্য বিনোদন জগৎকে বিদায় জানিয়েছেন ভোজপুরী সিনেমার নামী অভিনেত্রী সহর আফসাহ। তিনি বলেছেন, ‘আমি সকলকে জানাতে চাই যে আমি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দিয়েছি, আর এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই না। বাকি জীবনটা ইসলামের শিক্ষা এবং আল্লাহর নিয়ম মেনেই কাটিয়ে দিতে চাই। অতীতে আমি যেভাবে জীবন কাটিয়েছি তার জন্য আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছি।’ সহর আরও বলেছেন, ‘বিপুল সাফল্য আর অর্থ পেয়েও আমি তৃপ্ত ছিলাম না। কারণ আমি ছোটবেলায়ও এই ধরণের জীবনযাপন করার কথা ভাবিনি। হঠাৎ করেই এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমি এসে পড়ি আর এগিয়ে যেতে থাকি। কিন্তু এইসব কিছু শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

শুধু সঙ্গীত আর অভিনয় নয়, ইসলামের আদেশ মেনে আরও অনেকে নৃত্য ত্যাগ করে, অঙ্কন ত্যাগ করে, এবং নানা রকম সুকুমার বৃত্তি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ইসলামের দোহাই দিয়ে কত মেয়েকে যে গান ছাড়তে, নাচ ছাড়তে, ছবি আঁকা ছাড়তে, অভিনয় ছাড়তে, লেখা ছাড়তে, খেলা ছাড়তে, পড়ালেখা ছাড়তে, চাকরি ছাড়তে,ব্যবসা ছাড়তে, ভিন্নমত প্রকাশ করা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। প্রতিভার মৃত্যু আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। দুর্নীতি, অপরাধপ্রবণতা, নারীবিদ্বেষ ইত্যাদি অপসংস্কৃতি মূল্যবোধের যে অবক্ষয় ডেকে আনছে সমাজে, সেই অবক্ষয় রোধে সুকুমার বৃত্তির বিকাশ অত্যন্ত জরুরি, শিল্প-সাহিত্যচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প-সাহিত্যচর্চা বন্ধ হলে সমাজে ভয়াবহ অন্ধকার নেমে আসবে। মোল্লাতন্ত্র এবং ধর্মান্ধতা সমাজকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেলছে যে, মাঝে মাঝে আশঙ্কা হয়, অন্ধকার নেমে আসতে খুব বেশি দিন হয়তো বাকি নেই। (Haram Halal)
ইসলামকে একশো ভাগ মেনে চলা কোনও মুসলমানের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তারা বেছে নিয়েছে কী মানবে, কতটুকু মানবে। যেটুকু মানলে খুব একটা অসুবিধে হয় না, সেটুকুই মানছে। ইসলামে মানুষের ছবি আঁকা হারাম, তাহলে মানুষের ছবি তোলাও তো হারাম। কিন্তু মোবাইল ক্যামেরায় তো প্রতিটি মুসলমান ছবি তুলতে ব্যস্ত। ছোটবেলায় শুনতাম, টেলিভিশন দেখা হারাম। কোন মুসলমান টেলিভিশন দেখে না, শুনি! ইসলামে মিথ্যে কথা বলা হারাম, তাই বলে মুসলমানরা কি মিথ্যে বলছে না? হাজী-নামাজী-রোজদারও তো নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে মিথ্যে বলে। ইসলামে চুরি করলে হাত কাটার কথা বলা হয়েছে। সুরা মায়িদায় বলা হয়েছে, ‘যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের শাস্তি হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।’ তাই বলে মুসলমান নারী-পুরুষেরা কি একেবারেই চুরি করছে না? শুধু চুরি নয়, মহাচুরি করছে। দুর্নীতিতে ভেসে যাচ্ছে মুসলিম দেশগুলো। চোরদের তো হাত কাটা হচ্ছে না! বিধর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না-করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে তো মেরে ফেলার কথাও বলা হয়েছে । (Haram Halal)
ইসলামের নিষেধ সত্ত্বেও ইরান মিশর জর্ডান লেবানন সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া এরকম কত মুসলিম দেশ চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা মুসলিম, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মুসলিম। চলচ্চিত্র নির্মাণ করার জন্য বা চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য কারও ধর্ম বিশ্বাসে কোনও সমস্যা হয়নি! সঙ্গীত পরিবেশন করার জন্য, বাদ্যযন্ত্র বাজানোর জন্যও কারও ধর্ম বিশ্বাসে কোনও সমস্যা হয়নি।
অথচ লক্ষ লক্ষ মুসলমান নিজের দেশ ত্যাগ করে বিধর্মীদের দেশে গিয়ে বাস করছে। বিধর্মীদের করুণায় বেঁচে আছে। বেশির ভাগ মুসলিম শাসক বাণিজ্যের কারণে বিধর্মী শাসকদের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক বজায় রাখে। সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিবেশি মুসলিম দেশগুলোর যে সম্পর্ক, তার চেয়ে ভালো সম্পর্ক ইউরোপ আমেরিকার অমুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে। ইসলাম সত্যিকার মেনে চলছে না পুরুষেরা। কিন্তু মেয়েদের ওপর ইসলাম চাপিয়ে যাচ্ছে, কারণ মেয়েদের ওপর ইসলাম চাপানো সহজ। যেহেতু পুরুষতন্ত্রের অত্যাচারে মেয়েরা কাবু হয়ে আছে বহুকাল, আর ইসলাম যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক, তাই ইসলামকে ব্যবহার করে ইতিমধ্যে কাবু হওয়া মেয়েদের আরও কাবু করছে পুরুষেরা। তারপরও অগুনতি সাহসী মুসলিম মেয়ে ধর্মান্ধ পুরুষের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঘরের বাইরে বেরিয়েছে, শিক্ষিত হচ্ছে, আলোকিত হচ্ছে, নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে, নিজের শর্তে নিজের জীবন যাপন করছে। যারা পরকালে শাস্তির ভয়ে প্রতিভা বিসর্জন দিয়ে অন্ধকারে পড়ে আছে, তাদের উপেক্ষা করা ঠিক নয়। তারা নিজেদের ভুল বোঝার পর সাহায্য চাইলে সাহায্য করার, অন্ধকার থেকে তাদের আলোয় আনার দায়িত্ব নিতেই পারেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা। (Haram Halal)
ইসলামের নিষেধ সত্ত্বেও ইরান মিশর জর্ডান লেবানন সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া এরকম কত মুসলিম দেশ চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা মুসলিম, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মুসলিম। চলচ্চিত্র নির্মাণ করার জন্য বা চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য কারও ধর্ম বিশ্বাসে কোনও সমস্যা হয়নি! সঙ্গীত পরিবেশন করার জন্য, বাদ্যযন্ত্র বাজানোর জন্যও কারও ধর্ম বিশ্বাসে কোনও সমস্যা হয়নি। এই একবিংশ শতাব্দিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোয় ইসলামের নামে কারও সঙ্গীত ত্যাগ করা, অভিনয় ত্যাগ করা, জীব জন্তুর ছবি আঁকা ত্যাগ করা, বা কারও নৃত্য ত্যাগ করার ঘোষণা বড় মর্মান্তিক। (Haram Halal)
সবকিছুরই বিবর্তন ঘটছে প্রতিনিয়ত। মানুষেরও বিবর্তন ঘটে চলেছে। জ্ঞান বিজ্ঞানেরও পরিবর্তন ঘটছে। সমাজ বদলে যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত আধুনিক হচ্ছে। জীবন যাপনের মান উন্নত হচ্ছে। ধর্মের নামে যে বর্বরতা, অমানবিকতা, বৈষম্য, হিংস্রতা, হিংসে, ঘৃণা ইত্যাদিকে আঁকড়ে রাখা হয়েছে, সেগুলোকে বিদেয় করে মানবিকতা এবং উদারতাকে আহবান জানানো দরকার। (Haram Halal) এই দরকারটি সম্পর্কে অনেকেই উদাসিন। আজ নাচ, গান, বাদ্যযন্ত্রের বিরুদ্ধে ধর্মান্ধ মোল্লারা ফতোয়া দিচ্ছে। কাল সাহিত্য রচনার বিরুদ্ধে দেবে। বই প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাবে। শিক্ষা এবং জ্ঞানচর্চা বন্ধ হয়ে যাবে। স্কুল কলেজ উঠে যাবে। একটি বই ছাড়া আর কোনও বই পড়ার অনুমতি জুটবে না। একটি মত ছাড়া আর সব মত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। গণতন্ত্র বলে কোনও তন্ত্রের অস্তিত্ব থাকবে না। সরকার কি এমন ঘোর অন্ধকারের দিকে ছুড়ে দিচ্ছে না দেশকে? এমন সমাজ না চাইলে, সরকারের উচিত, ফতোয়াবাজ মোল্লাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং শিল্প সাহিত্য চর্চায় জনগণকে উৎসাহ দেওয়া, শিল্পের জন্য এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা, ধর্মকে যেন ভয়ংকর কোনও ত্রাস বলে কেউ মনে না করতে পারে, যেন ধর্মের ভয়ে শিল্পীরা শিল্পকর্ম বাদ দিয়ে গর্তে লুকিয়ে না পড়ে।
(Haram Halal) হারাম হালালের সংজ্ঞার বদল দরকার। ভাল কাজ, মন্দ কাজের সংজ্ঞা আমরা জানি। সেটির চেয়ে ভাল ‘হারাম হালালের সংজ্ঞা’ আর কিছু হতে পারে না। মানুষকে অত্যাচার/ নির্যাতন করা,ধোঁকা দেওয়া, মানুষের সঙ্গে অন্যায় করা/ প্রতারণা করা, মানুষের অনিষ্ট করা, মানুষের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া মন্দ কাজ। মানুষকে ভালবাসা, ধর্ম-বর্ণ-জাত-শ্রেণী নির্বিশেষে মানুষের উপকার করা, বিপদে মানুষকে এবং অন্যান্য প্রাণীকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করা ভাল কাজ। চুরি ডাকাতি করা, লুঠ করা, দুর্নীতি করা, যৌন হেনস্থা করা, খুন করা মন্দ কাজ। মানুষকে শিক্ষিত ও সভ্য করা, মানুষকে মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা ভাল কাজ। আজ ভাল কাজের সংজ্ঞা যদি হালাল কাজ হতো, আর মন্দ কাজের সংজ্ঞা যদি হারাম (Haram Halal) কাজ হতো– আর মানুষ হালাল (Haram Halal) কাজ করতো আর হারাম কাজ করা থেকে বিরত থাকতো, তাহলে সমাজ রাতারাতি সভ্য হয়ে উঠতো। দুঃখ এই, হালাল বিষয়টি এখন পশুকে হত্যা করার পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। হারাম বিষয়টি এখন শিল্প-সংস্কৃতির উচ্ছেদে সীমাবদ্ধ। এতে কিছু বদ লোকের স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোনও উপকার হচ্ছে না। (Haram Halal)
ছবি সৌজন্য: The Daily Star, Mohakal, Wikipedia, Wikipedia, JamunaTV, The Siasat Daily
____________________________________________________
পড়ুন:
- সব ধর্মের সব জাতের পুরুষই নারীহত্যা করে
- শাস্তি দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হয় কি?
- ভ্যালেন্টাইন’স ডে
- ধর্ষণহীন দিন
- নারী দিবসে
- রোজায় আমি কী ভাবছি,
- বাঁধ ভেঙে দাও
- টাঙ্গাইল শাড়ির জি আই বাংলাদেশের প্রাপ্য কেন?
- তারকাময় রাজনীতি ভাল নয়
- ধর্মানুভূতি নয়, এ ধূর্তদের কৌশল
- লিঙ্গসূত্র (১)
- লিঙ্গসূত্র (২)
- হিন্দু-মুসলমানের বিয়ের পরিণতি
- বাংলাদেশ আজ প্রশ্নের সম্মুখীন
- ধর্ষণ পুরুষতন্ত্রের উপসর্গ
- বাংলাদেশ দখল করে নিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী ইসলামী সন্ত্রাসী
____________________________________________________
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী মুখ তসলিমা নাসরিন। বাঙালি হয়েও তিনি আন্তর্জাতিক। গদ্য ও কবিতার সব শাখাতেই অনায়াস বিচরণ তসলিমার। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি তাঁকে আমরা চিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী ও নারীবাদী একজন চিন্তাশীল হিসেবেও। নারীর অধিকার, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মানববাদ, বিজ্ঞান ও সহনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি তাঁর বিশ্বব্যাপী উদার ও মুক্তচিন্তার জন্য দেশে-বিদেশে তিনি সম্মানিত হয়েছেন একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননায়। 'নির্বাচিত কলাম' ও আত্মজীবনী গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দু'দুবার আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের শাখারভ পুরস্কার। ফ্রান্স সরকারের মানবাধিকার পুরস্কার, কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। লিখেছেন 'ফেরা', 'লজ্জা', 'ফরাসি প্রেমিক'-এর মতো অসামান্য উপন্যাস; বেশ কিছু ছোটগল্প, আত্মজীবনীমূলক রচনা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ।