১
বিয়ের ধুম পড়েছে। পূর্ব পশ্চিম দুই বাংলাতেই। লক্ষ্য করলাম, পুরুষের ভাগ্য সর্বশক্তিমানের কৃপায় অতিশয় সুপ্রসন্ন। পুরুষের বয়স যত বাড়ে, তত তাদের জীবন মধুর থেকে মধুরতর হয়ে ওঠে। তাদের প্রথম বউয়ের চেয়ে দেখা যায় দ্বিতীয় বউ বেশি ইয়ং এবং বেশি সুন্দরী, দ্বিতীয় বউয়ের চেয়ে তৃতীয় বউ আরও বেশি ইয়ং এবং আরও বেশি সুন্দরী।
মেয়েদের বেলায় উল্টো। যত বয়স বাড়ে, তত নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে, তত একাকীত্ব বাড়ে, তত হতাশা বাড়ে। সর্বশক্তিমানের প্রশ্রয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন নারী পুরুষের বৈষম্যও মহাসমারোহে টিকে থাকবে, এবং নারী পুরুষের সমানাধিকার খুব স্বাভাবিকভাবেই মাচায় তোলা থাকবে। (Taslima Nasrin)

২
কিছু সুন্দরী-তরুণী বৃদ্ধ লোকদের বিয়ে করেছে। সেই বৃদ্ধরা যদি ব্র্যাড পিট বা টম ক্রুজের মতো সুদর্শন হত, তাতে হয়তো মানুষের এত আপত্তি থাকত না। আনঅ্যাট্রাকটিভ, আনপ্লিজিং, আনঅ্যাপেলিং, আনশেপলি, আনএস্থেটিক বলেই চোখে লাগছে। কেন বৃদ্ধদের তারা পছন্দ করেছে, এই প্রশ্নের উত্তরে তরুণীরা বলে, ‘এ আমাকে টেককেয়ার করে, এ খুব মানবিক, খুব যত্নশীল, আমার দেখভাল করে, আমাকে সময় দেয়, আমাকে ভালবাসে, আমাকে স্পেস দেয়, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না।’ বৃদ্ধরা সবাই যে খুব ধনী, মিলিওনিয়ার বা বিলিওনিয়ার— তা কিন্তু নয়। তরুণীরা যে জিনিসটা চাইছে তা হল ওই সম্মানটা, কেয়ারটা। সেটা যার কাছে পাচ্ছে, তার দিকে হাত বাড়াচ্ছে, সে দেখতে যেমনই হোক, বয়স তার যতই হোক। ওই শ্রদ্ধা, সম্মান, লাভিং আর কেয়ারিং ব্যাপারটা, মানি আর না-মানি, দিন দিন প্রাউড যুবকদের মধ্যে কমে এসেছে। তাদের পৌরুষের বড়াই এত বেশি যে নারীবিদ্বেষকে তারা স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়। হিংসা-ঘৃণা-ঈর্ষাকে, বর্বরতা আর নিষ্ঠুরতাকে পৌরুষ বলে ভেবে নেয়। আলফা মেইল হওয়ার চেষ্টা নিরন্তর করে।
বধূ নির্যাতন, বধূহত্যা যুবকেরা করে পৌরুষের অহংকারেই। ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। তথাকথিত পৌরুষ যত কমে, পুরুষেরা তত মানুষ হয়। মায়ামমতা, ভালবাসাকে মেয়েদের গুণ বললে চলবে না। এগুলোকে পুরুষের গুণ করতে হবে। আবেগ, অনুভূতি, কান্না পাওয়া, কষ্ট পাওয়া— এসব মেয়েদের ব্যাপার বলে সরিয়ে রাখলে চলবে না, এসবকে পুরুষের ব্যাপার করতে হবে। তা না হলে বিষাক্ত পৌরুষে ছেয়ে যাবে সমাজ সংসার, নষ্ট হয়ে যাবে মানব প্রজাতি।

৩
ভয়ংকর নারীবিদ্বেষী সিনেমা অ্যানিমেলের জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। ৯০০ কোটিরও বেশি টাকা আয় হয়েছে এই সিনেমা থেকে। এই টক্সিক মাসকিউলিনিটি এখন আধুনিক ট্রেন্ড গোটা উপমহাদেশে। এই সময় নারীদিবস আসছে। নারীদিবসে উৎসব হচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়নের কথা জোরে সোরে বলা হচ্ছে, বড় বড় লোক বড় বড় বক্তৃতা করছেন। কিন্তু এ বছর নারীদিবস পালন করতে গিয়ে কেউ যেন ভুলে না যান টক্সিক মাসকিউলিনিটির জনপ্রিয়তার কথা। এটিকে চ্যালেঞ্জ করাই যেন এবারের নারীদিবস পালনের উদ্দেশ্য হয়।

৪
নারীদিবস, আজকাল লক্ষ্য করেছি, চারদিকে বেশ পালিত হয়। সকালে অনেকেই ফোনে বলেন, ‘হ্যাপি নারীদিবস’। রাস্তাঘাটে পুরুষদের অনেকেই মেয়েদের বলেন, ‘হ্যাপি নারীদিবস’। গত বছর ব্যাংকে গিয়ে দেখেছি নানা রঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে ব্যাংক, ব্যাংকের কর্মচারীরা আমার হাতে গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে বলছেন,‘হ্যাপি নারীদিবস’। মুদির দোকানে গেলাম, দোকানি বলছেন— ‘হ্যাপি নারীদিবস’। শুধু আমাকে নয়, সব নারীকেই তাঁরা বলছেন। এই অভিজ্ঞতাটি নতুন। এর মানে সাধারণ মানুষও নারীদিবস সম্পর্কে অবগত, তাঁরা মনে করছেন, আজ সারাদিন কোনও নারীকে দেখলেই তাকে ‘হ্যাপি নারীদিবস’ বলে শুভেচ্ছা জানাতে হবে। শুভেচ্ছা জানানো পুরুষগুলো মনে করছেন আজ নারীকে শ্রদ্ধা জানানোর দিন। কাল থেকে হয়তো এই পুরুষেরাই নারীকে অপমান অপদস্থ করতে দ্বিধা করবেন না। নারীদিবসই বা নারীর জন্য কতটা নারীবিরোধহীন! নারীদিবসে কোনও মেয়েকে ধর্ষণ করা হয় না, কোনও মেয়ের ওপর নির্যাতন হয় না, কোনও মেয়েকে হত্যা করা হয় না, তা তো নয়! অন্য যে কোনও দিনের মতোই এটি একটি নারীবিরোধী দিন।

নারীদিবসটা একটা বোরিং জিনিস। এ অনেকটা ইস্কুলের ক্লাস শুরু হওয়ার আগে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মতো। গাইতে হয় তাই গাওয়া। গাওয়ার সময় দেশের প্রতি কারও ভালবাসা বাড়ে না। ওই সংগীত গেয়ে দেশের কোনও উন্নতিও হয় না। ‘নারীদিবস’ পালন করে নারীর অবস্থারও কোনও পরিবর্তন হয়নি। পালন করতে হয় বলেই পালন করা। তবে হ্যাঁ, ‘নারীদিবস’টা আছে বলে তাও নারীর উন্নতির জন্য নানা কর্মসূচি নেওয়া যায়। আমার প্রশ্ন, নারীর উন্নতির জন্য কিছু করতে কি নারীদিবসের দরকার হয় নাকি? বছরের তিনশ’-পয়ষট্টি দিনই তো তা করা যায়!
নারী-বিরোধী সমাজে বসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারীর সমানাধিকারের কথা লিখছি আজ চল্লিশ বছর (Taslima Nasrin), আমি আর কতটুকু কী করেছি! হাজারো নারীবাদী হাজার বছর আগে থেকেই আমার চেয়েও বেশি ঝুঁকি নিয়ে নারীর অধিকারের জন্য লড়েছেন। তারপরও কি নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার পেয়েছে? পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এ পাওয়া সহজ নয়।
আরও পড়ুন- বিস্মৃত নারী শোভনাসুন্দরী
নারীদিবস যদি উদযাপন করতেই হয়, তবে নারীদের নয়, উদযাপন করা উচিত পুরুষদের। কারণ নারীদের একা একা চেঁচিয়ে চিল্লিয়ে কোনও লাভ নেই। প্রাপ্য অধিকার থেকে নারীদের বঞ্চিত করছে পুরুষেরা। এই পুরুষেরা যেদিন নারীদের সমানাধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে, যেদিন নারীদের বঞ্চিত করা বন্ধ করবে, সেদিনই নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবে। যেদিন পুরুষেরা নারীদের অত্যাচার করা, যৌন হেনস্থা করা, ধর্ষণ করা, খুন করা বন্ধ করবে, সেদিনই বন্ধ হবে নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণ্য জঘন্য নির্যাতন। চিৎকার করে নারীদের কোনও লাভ হয়নি এতকাল, হবেও না।

কিছুই হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত কর্তাদের টনক না নড়ে। কর্তারা চিরকালই পুরুষ। সুতরাং চিৎকার করতে হবে পুরুষদের। পুরুষের চিৎকার পুরুষ-কর্তাদের কর্ণকুহরে দ্রুত পৌঁছয়। পুরুষেরা সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে চেয়েছিল, বন্ধ হয়েছে। পুরুষেরা বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে চেয়েছিল, বন্ধ হয়েছে। পুরুষেরা নারী শিক্ষা চালু করতে চেয়েছিল, চালু হয়েছে। এই কাজগুলো যদি নারীরা করতে চাইত, শত বছর কেটে গেলেও কিছুই হয়তো সম্ভব হত না।
ভোটের অধিকারের জন্য নারীরা আন্দোলন করেছিল, সেই অধিকার পেতে নারীদের শত বছর লেগেছে। এই সময়টায় নারীরা কম মার খায়নি, কম জেল খাটেনি। সমাজে নারীর স্থান অত্যন্ত নীচে। নিচু স্তরের মানুষের কথা শুনতে উঁচু স্তরের মানুষ অভ্যস্ত নয়। পুরুষেরা উঁচু স্তরের। নারীবাদী-পুরুষরাও পুরুষ হওয়ার কারণে উঁচুস্তরের। নারীরা দাবি করলে সেই দাবি মেটাতে পুরুষেরা চিরকালই গড়িমসি করেছে। পুরুষেরা দাবি করলে সেই দাবি মেটাতে পুরুষদের এগিয়ে আসার সম্ভাবনা বেশি। তাদের হাতেই তো নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানো-বাড়ানোর ক্ষমতা! পুরুষকেই তো দূর করতে হবে তাদের নারীবিদ্বেষী মানসিকতা! পুরুষকেই তো শুদ্ধ হতে হবে! পুরুষ না চাইলে কখনও কি তা সম্ভব! নারীরা পুরুষের মানসিকতা বদলাতে পারবে না। মানসিকতা বদলানোর কাজ নিজে করতে হয়।
পুরুষেরা সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে চেয়েছিল, বন্ধ হয়েছে। পুরুষেরা বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে চেয়েছিল, বন্ধ হয়েছে। পুরুষেরা নারী শিক্ষা চালু করতে চেয়েছিল, চালু হয়েছে। এই কাজগুলো যদি নারীরা করতে চাইত, শত বছর কেটে গেলেও কিছুই হয়তো সম্ভব হত না।
মানুষই মানুষকে নির্যাতন করছে, মানুষই মানুষের অধিকারের জন্য লড়ছে। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচানোর দায় নারীর একার নয়। এ বৈষম্য ঘোচানোর দায় সব মানুষের। যে মানুষেরা সচেতন, যে মানুষেরা চেঁচালে, চেষ্টা করলে বৈষম্য ঘোচে, দায়িত্বটা তাদেরই নিতে হবে। নারী-পুরুষের বৈষম্য যতদিন থাকবে ততদিন মানবজাতিকে সভ্য জাতি বলার কোনও যুক্তি নেই।

পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই নারীবিরোধী পুরুষেরা ‘পুরুষরক্ষা সংগঠন’, ‘পুরুষাধিকার সংগঠন’ ইত্যাদি গড়ে তুলেছে। এসব সংগঠন নারীবিরোধিতা, নারীবিদ্বেষ প্রচার করতে সারাক্ষণই ব্যস্ত। আমার খুব ভালো লাগে, যখন দেখি পুরুষেরা ‘নারীদিবস’ পালন করছে, নারীর অধিকারের পক্ষে মিছিলে নামছে। এই পুরুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়, কিন্তু নারীদিবসে আমার একান্ত চাওয়া, এই সংখ্যাটা বাড়ুক। এই সংখ্যাটা বাড়লেই সমাজে পরিবর্তন আসবে। যে পুরুষেরা নারীকে ধর্ষণ করে, খুন করে, তারা আজ প্রতিজ্ঞা করুক আজ থেকে কোনও নারীকে তারা ধর্ষণ করবে না বা খুন করবে না। যে পুরুষেরা নারী নির্যাতনে বেশ হাত পাকিয়েছে, তারা আজ প্রতিজ্ঞা করুক নারী নির্যাতন আর করবে না। যে পুরুষেরা যৌন হেনস্থা করে, তারা আজ থেকে বন্ধ করুক যৌন হেনস্থা। আজ থেকে সংসারের যাবতীয় কাজ, নিজেদের সন্তান-পালন, নিজেরা মিলে-ঝিলে করুক। আজ থেকে বাইরের দুনিয়ার কাজ নারী-পুরুষ উভয়ে করুক, স্বনির্ভর আর পরনির্ভরের সংসারের বদলে সংসার হয়ে উঠুক দু’জন স্বনির্ভর মানুষের সংসার। আজ থেকে নারী আর পুরুষের সমতা আসুক সংবিধানে, রাষ্ট্রে, আইনে, সমাজে, পরিবারে, অফিসে, আদালতে, রাস্তা-ঘাটে, বাসে, ট্রেনে, জাহাজে, লঞ্চে সর্বত্র। নারী-পুরুষের মধ্যে গড়ে উঠুক সত্যিকারের বন্ধুতা। প্রভু-দাসির সম্পর্কটা, উঁচু-নিচুর সম্পর্কটা সম্পূর্ণ নির্মূল হোক।
আমার খুব ভালো লাগে, যখন দেখি পুরুষেরা ‘নারীদিবস’ পালন করছে, নারীর অধিকারের পক্ষে মিছিলে নামছে। এই পুরুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়, কিন্তু নারীদিবসে আমার একান্ত চাওয়া, এই সংখ্যাটা বাড়ুক। এই সংখ্যাটা বাড়লেই সমাজে পরিবর্তন আসবে। যে পুরুষেরা নারীকে ধর্ষণ করে, খুন করে, তারা আজ প্রতিজ্ঞা করুক আজ থেকে কোনও নারীকে তারা ধর্ষণ করবে না বা খুন করবে না। যে পুরুষেরা নারী নির্যাতনে বেশ হাত পাকিয়েছে, তারা আজ প্রতিজ্ঞা করুক নারী নির্যাতন আর করবে না। যে পুরুষেরা যৌন হেনস্থা করে, তারা আজ থেকে বন্ধ করুক যৌন হেনস্থা।
মনে আছে কিছু আফগান পুরুষ নীল বোরখা পরে, হাতে ব্যানার নিয়ে, কাবুলের রাস্তায় হেঁটেছিলেন! তাঁরা নারী নির্যাতন বন্ধ হোক চান। কী চমৎকার ছিল সেই দৃশ্য! দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। নারী- নির্যাতন বন্ধ করার জন্য পুরুষের মিছেলের দৃশ্য, নারীর মিছিলের দৃশ্যের চেয়ে, বেশি সুন্দর, বেশি যৌক্তিক, বেশি মানবিক। অত্যাচারের বিরুদ্ধে অত্যাচারিতদের রুখে দাঁড়ানোর চেয়ে অত্যাচারী গোষ্ঠীর রুখে দাঁড়ানোটা জরুরি। কাবুলের রাস্তায় মাত্র পনেরো-কুড়িজন আফগান পুরুষ নেমেছিলেন। এই সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ুক। রাস্তার পুরুষেরা নারী নির্যাতন বন্ধ করার জন্য পুরুষের উদ্যোগ দেখুক, শিখুক। এই দৃশ্য টিভিতে দেখাক। ইন্টারনেটে ছেয়ে যাক। লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখুক, শিখুক।
আরও পড়ুন- জন্মশতবর্ষে শিল্পী মীরা মিশ্র : নারীদিবসের শ্রদ্ধার্ঘ্য
পাশ্চাত্যের পুরুষেরা মেয়েদের জুতো পরে রাস্তায় হেঁটেছিলেন। ইংরেজিতে একটি কথা আছে,‘পুট ইওরসেল্ফ ইন মাই সুজ’। মানে, আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার অবস্থাটা বুঝতে চেষ্টা কর। তাঁরা আক্ষরিক অর্থে প্রচলিত বাক্যটি গ্রহণ করেছেন। সত্যি সত্যি মেয়েদের জুতো পরে তাঁরা এক মাইল পথ হেঁটেছিলেন। এই হাঁটার উদ্দেশ্য হল, মেয়েদের বিরুদ্ধে যত যৌন-নির্যাতন পুরুষেরা করে, সেসব বন্ধ হোক, নারী-পুরুষের মধ্যে যত বৈষম্য আছে, সব দূর হোক। শুধু মেয়েদের হাই-হিল পরে হাঁটা নয়, পুরুষরা তুরস্কে, ভারতে, মেয়েদের স্কার্ট পরে মেয়েদের যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। নারী-পুরুষের সমানাধিকারে বিশ্বাস করা এই সচেতন পুরুষদের সংখ্যাটা লক্ষাধিক হোক। কোটি ছাড়িয়ে যাক।

এই ‘নারীদিবস’ জিনিসটি আমাকে কখনও আনন্দ দেয় না। আনন্দ দেয় না, কারণ দিনটি আমার কাছে অত্যন্ত দুঃখের দিন। দুঃখের দিন কারণ প্রাপ্য অধিকার পাওয়ার জন্য আজও আমাদের চিৎকার করতে হচ্ছে।
শত বছর আগে নির্যাতিত, নিপীড়িত, অত্যাচারিত ও অসম্মানিত না হওয়ার অধিকার চেয়েছিল নারী। সেই থেকে আজও বছর বছর এই দিনটিতে একই অধিকার চাওয়া হয়। চাওয়া হয়, কারণ আজও নারীরা নারী হয়ে জন্ম নেওয়ার অপরাধে নির্যাতিত, নিপীড়িত, অত্যাচারিত ও অসম্মানিত।
আমরা ‘নারীদিবস’ পালন করছি, এর অর্থ আমরা নারীরা আজও বঞ্চিত, লাঞ্ছিত। যেদিন সমানাধিকার পেয়ে যাব, সেদিন থেকে এই দিবসটির আর প্রয়োজন পড়বে না। সর্বান্তকরণে দিবসটির বিলুপ্তি চাই আমি।
*পরবর্তী পর্ব প্রকাশ পাবে ২৬ মার্চ, ২০২৪
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী মুখ তসলিমা নাসরিন। বাঙালি হয়েও তিনি আন্তর্জাতিক। গদ্য ও কবিতার সব শাখাতেই অনায়াস বিচরণ তসলিমার। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি তাঁকে আমরা চিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী ও নারীবাদী একজন চিন্তাশীল হিসেবেও। নারীর অধিকার, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মানববাদ, বিজ্ঞান ও সহনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি তাঁর বিশ্বব্যাপী উদার ও মুক্তচিন্তার জন্য দেশে-বিদেশে তিনি সম্মানিত হয়েছেন একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননায়। 'নির্বাচিত কলাম' ও আত্মজীবনী গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দু'দুবার আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের শাখারভ পুরস্কার। ফ্রান্স সরকারের মানবাধিকার পুরস্কার, কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। লিখেছেন 'ফেরা', 'লজ্জা', 'ফরাসি প্রেমিক'-এর মতো অসামান্য উপন্যাস; বেশ কিছু ছোটগল্প, আত্মজীবনীমূলক রচনা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ।