ওঁরা ওই রাস্তাটা দিয়ে দিব্যি জুতো পায়ে গটগটিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।
আমি কিন্তু জুতো পরে রাস্তাটায় নামতে পারলাম না। সঙ্কোচ হল।
শুনেছি, আরও একজন জুতো খুলে হাতে নিয়েছিলেন এই রাস্তায়। বাস্তবে নয়, স্বপ্নে। বছর তেত্রিশের এক টগবগে ইহুদি যুবা। নাম— রবার্ট অ্যালেন জ়িমারম্যান। স্বপ্নে নাকি দেখেছিলেন, বিষাদ-সরণির পাথুরে পথে ক্লিষ্ট এক সমবয়সী যুবার রক্তিম চরণচিহ্ন ধরে তিনি হেঁটে যাচ্ছেন। সামনের অবসন্ন যুবক ক্রুশকাঠ বয়ে আছাড় খাচ্ছেন, লুটিয়ে পড়ছেন, ফের উঠে দাঁড়াচ্ছেন চাবুকের ঘায়ে। ইহুদি থেকে খ্রিস্টান হয়ে যাওয়া স্বপ্নদর্শী ভদ্রলোক বদলে ফেলেন নিজের নামটাও। রবার্ট জ়িমারম্যান হয়ে ওঠেন বব ডিলান!
[the_ad id=”266918″]
সামনে এখন যাঁরা হাঁটছেন, তাঁরা সবাই ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান। আমি নই। ধর্ম নিয়ে কোনও আদেখলেপনাও নেই। তবু সঙ্কোচ হল। সওয়া তিনশো বছরের এক খোকা-শহরের বাসিন্দা হয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের জেরুজ়ালেমে পা রেখে যেমন সম্ভ্রম, ঠিক তেমনই। আরণ্যকের সত্যচরণ যেন বসন্তের মধুমালতী হাওয়ায় ফিসফিসিয়ে বলে গেলেন, সামনে দোবরু পান্নার সমাধি, জুতো খোল, মাথা নোয়াও!

সামনের রাস্তাটা তো অমনই। বহু প্রাচীন। পাথুরে, সরু, এবড়ো-খেবড়ো। দু’পাশে দেড়-দু’তলা বাড়ি যেন গিলে খেতে আসছে। দু’হাজার বছর আগে নাকি এই পথ ধরেই হেঁটে গিয়েছেন মানবতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান। যিনি শিষ্যদের বলেছিলেন, দুনিয়া যদি তোমাকে ঘেন্না করে, তা হলে মনে রেখ, তা আমাকে প্রথম ঘেন্না করেছে। মাথায় তাঁর কাঁটার মুকুট, শরীর বিক্ষত কশাঘাতে, গায়ের শালুটা রক্তে ভেজা, কাঁধে ক্রুশকাঠের গুরুভার। যে ক্রস হয়তো বিশ্ব-ভুবনের সব অপরাধ, সব পাপের রক্তাক্ত রূপক!
[the_ad id=”266919″]
এই সেই রাস্তা। রাস্তাটার নাম— বিষাদ-সরণি। ভিয়া দোলোরোসা!
… দূর ছাই, বড়দিন নিয়ে লেখায় মৃত্যুর কথা আনছি কেন? তার চেয়ে চলুন, একটু বেথলেহেম ঘুরে আসি। ওঁরা বলেন, বায়েথলেহেম। জেরুজ়ালেম ছেড়ে যাই প্যালেস্তাইনের একেবারে প্রাণকেন্দ্র, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে!

ঢোকা গেল চার্চ অফ দ্য নেটিভিটি-তে। এখানেই নাকি জন্মেছিলেন তিনি। এখানেই নাকি ছিল সেই আস্তাবল, সরাইখানায় জায়গা না-পেয়ে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন যোসেফ আর মেরি। দিকে দিকে রটে গিয়েছিল, মানবজাতিকে পরিত্রাণ করতে জন্ম নিয়েছেন এশুয়া মেসায়াহ্ (সেখান থেকে লাতিনে ইয়েসুস ক্রিস্তোস, ইংরেজিতে জেসাস ক্রাইস্ট)। এই তো, গির্জার ভূগর্ভ বা ক্রিপ্টে একটি চোদ্দোমুখী রুপোলি তারা। উপরে একটা ফলকে লাতিনে লেখা— হিক দে ভার্জিনে মারিয়া জেসাস ক্রাইস্তাস নেতাস এস্ট— কুমারী মেরির সন্তান যিশু খ্রিস্ট এখানেই জন্ম নিয়েছিলেন।

এই ফলক নিয়েও অবশ্য খ্রিস্টানদের নানা গোষ্ঠীর মধ্যে টানাপোড়েন যথেষ্ট। ১৭১৭ সালে বসিয়েছিল ক্যাথলিকরা, ১৮৪৭-এ গ্রিকরা তা উপড়ে ফেলে দেয়। তুরস্ক সরকার আবার ১৮৫৩-তে নতুন করে ফলক বসানোর ব্যবস্থা করে। এখানেই তো শিশু যিশুকে উপহার দিতে এসেছিলেন তিন প্রাজ্ঞ ম্যাজাই— ওই যে, তাঁদের কথা মনে রেখে গড়ে তোলা হয়েছে গ্রটো অফ দ্য ম্যাঞ্জার আর অল্টার অফ দ্য ম্যাজাই। কিন্তু জন্মস্থানের প্রতীক যে তারা, তাতে চোদ্দোটা মুখ কেন? ওই সংখ্যা আসলে যিশুর বংশপঞ্জি দ্যোতক। প্রথম চোদ্দো এব্রাহাম থেকে দাভিদ, পরের চোদ্দো দাভিদ থেকে ব্যাবিলনীয় কারাবাসের অধ্যায়, আর শেষ চোদ্দো হল ব্যাবিলন থেকে যিশু খ্রিস্ট। একটা ব্যাপারে অবশ্য খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনও গোষ্ঠী-সংঘাত নেই। ওঁরা সবাই মানেন ‘ইম্যাকুলেট কনসেপশন’— অর্থাৎ কুমারী মা থেকেই খ্রিস্টের জন্ম!

মজার কথা হল, যিশু আদৌ জন্মেছিলেন কিনা, তার কিন্তু কোনও ঐতিহাসিক নথি-প্রমাণ নেই। এমনকী, লিউক আর ম্যাথিউ তাঁদের গসপেলে যিশুর জন্মের উল্লেখ করলেও, তারিখ কিছু বলেননি। হিসেব-নিকেশে দেখা যায়, পুরোনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ধরলে ‘বড়দিন’ হওয়া উচিত ৭ জানুয়ারি, মোটেই ২৫ ডিসেম্বর নয়। আসলে, খ্রিস্টের ধর্ম-প্রবাহের আগে ওই ২৫ ডিসেম্বরেই পড়ত বহু ঈশ্বর-পূজারী পেগান ধর্মাবলম্বীদের মকরক্রান্তি, শীতের আবহে সূর্যের উপাসনা হত সেদিন। শোনা যায়, অনেক টালবাহানার পর চতুর্থ খ্রিস্টাব্দে পণ্ডিতরা ঠিক করেন, যিশুও তো মানবতার কাছে সূর্যের মতোই উজ্জ্বলতার প্রতীক, তাই ‘বড়দিন’ হোক ওই ২৫ ডিসেম্বরেই!

বেথলেহেমের চেয়ে জেরুজ়ালেম অবশ্য বরাবরই আমার বেশি প্রিয়। তা কি এই জন্যই যে, ৩৩ বছরের উজ্জ্বল জীবন ততটা বরণীয় নয়, ওই যুবকের রক্তাক্ত দীন মৃত্যু যতটা অবিস্মরণীয়? আরও কি এই কারণেই নয় যে মানবতাকে এক মহান শিক্ষা দিয়ে গিয়েছিলেন ওই ইহুদি যুবক? বুঝিয়েছিলেন, আমাদের সবার পিঠেই একটা ক্রুশকাঠ থাকে। কর্মফলের গুরুভারের ক্রুশ। মহাপ্রস্থানের পথে তা বহন করে নিয়ে যেতে হয় আমাদেরই। রক্তাক্ত হয়ে পথে পড়ে গেলে কোনও ভেরোনিকা হয়তো তোয়ালে দিয়ে সযতনে মুছিয়ে দেবেন মুখের স্বেদ-রক্ত, কোনও সাইমন অফ সাইরেনি হয়তো সহমর্মী হয়ে কিছুক্ষণ কাঁধ দেবেন ক্রসে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই ভার বহন করে অন্তিম গন্তব্যে পৌঁছতে হবে আমাদেরই, কেউ তা খণ্ডাতে পারবে না!
… যতক্ষণে এ সব সাত-পাঁচ ভাবছি, ততক্ষণে জেরুজ়ালেমের ভিয়া দোলোরোসায় জনস্রোত।

এপ্রিল মাস। সময়টা ইস্টার উৎসবের। সমাধি থেকে পরিত্রাতার পুনরুত্থানের দিন। ‘আজি শুভদিনে পিতার ভবনে’ যাওয়ার দিন। সবাই চলেছে পবিত্র সমাধির দিকে। পুনরুজ্জীবনের আগে তিনি নাকি শয়ান ছিলেন ওই সমাধিতেই। নাতিদীর্ঘ বিষাদ-সরণি মেরেকেটে ছ’শো মিটার হবে। তার শেষপ্রান্তে একটা টিলা। সবাই যাচ্ছে ওই পীঠস্থানেই। পিঠে প্রতীকী ক্রস, হাতে মোমবাতি। পাঁচিলের গায়ে গায়ে সপ্ত-শাখা ইহুদি প্রদীপ মেনোরাহ্। টিলার উপরে সেই গির্জা— ‘চার্চ অফ দ্য হোলি সেপালক্যর।’ ভ্যাটিকানের পর খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে পবিত্র জায়গা। সুরক্ষিত কাচের বর্মের আড়ালে এখনও দেখা যায় ফাটলধরা প্রস্তরখণ্ড। রক্তস্নাত যুবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পর নাকি ভূমিকম্পে ফেটে গিয়েছিল!
কোথায় মহিমা এ গির্জার?

আপনি কি সিজারের শাসন মানেন না? জবাবে যে আলোকপ্রাপ্ত বিদ্রোহী যুবক অবহেলায় বলেছিলেন, ‘যা সিজারের প্রাপ্য, তা তাঁকে দাও। আর যা ঈশ্বরের প্রাপ্য, তা ঈশ্বরকে’, সেই যুবকের নাকি অন্তিম ঘনিয়েছিল এখানেই। জায়গাটার নাম— গলগথা। মানে, খুলির স্থান। যিশু খ্রিস্টের কালভ্যারি!
[the_ad id=”270085″]
ভিড়ে পড়া গেল ওঁদের দলে। বেজায় ভিড়। কিন্তু ভাবগম্ভীর, সংবৃত। প্রিয়জন বিয়োগের মতো স্তব্ধ। শুধু সুরেলা ঘণ্টাধ্বনি আছে। কারও গলায় স্যান্ডি পাত্তির গান— লাইক আ ল্যাম্ব কেম দ্য মেসাইয়াহ্, ক্রাইস্ট দ্য কিং। আর এক দল আবার অভিনয় করে দেখাচ্ছেন বিষাদ-সরণি ধরে যিশুর অন্তিম সফর। কীভাবে ‘এক দিন যারা মেরেছিল তাঁরে গিয়ে, রাজার দোহাই দিয়ে’, ভক্তিভরে দেখানো চলছে তাই। ‘ঘাতক সৈন্য’দের মাথায় প্লাস্টিকের হেলমেট আর গায়ে লাল বর্ম, যিশুর শরীরে অঝোরে লাল কালি। মেল গিবসনের ‘প্যাশন’ দেখে যাঁদের গা শিউরে উঠেছে, তাঁদের কাছে অবশ্য এটা গ্রামীণ যাত্রাপালা ছাড়া আর কিছুই নয়। গোড়ায় ভেবেছিলাম, এ বুঝি ইস্টার স্পেশ্যাল। পরে শুনলাম, প্রতি শুক্রবারই অভিনয়ের পালা চলে এখানে।

ভিড় ঠেলে পৌঁছনো গেল গির্জায়। বিশ্বের প্রাচীনতম গির্জাগুলোর অন্যতম, যার সিঁড়ির একটা ধাপ মুছতে পারলে বর্তে যান খ্রিস্টানরা। অলি-গলি-পাকস্থলীর সব জায়গায় পুনরুত্থিত পরিত্রাতার জয়গান খ্রিস্টীয় যাজকদের গলায়। ওঁদের মধ্যে বিভাজন কিন্তু প্রবল। গ্রিক অর্থোডক্স, রুশ, কপটিক, ল্যাটিন, আর্মেনিয়ান, ক্যালডেন, সাইরিয়াক, ইস্টার্ন অর্থোডক্স— আর কত নাম করব! বেথলেহেমের মতো এখানেও কারও সঙ্গে কারও সদ্ভাব নেই। সবাই সবার দিকে আড়ে তাকায়, যেন ‘প্রভু শুধুই আমার সম্পত্তি’। কালনেমির এই লঙ্কাভাগ কি যিশু চেয়েছিলেন? শোনা যায়, এ জন্যই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী নাকি একবার উইনস্টন চার্চিলকে তিরস্কার করে লিখেছিলেন, ‘ইউ ক্রিশ্চিয়ানস আর সো আনলাইক ইয়োর লর্ড ক্রাইস্ট!’

আরও একটা অদ্ভুত ব্যাপার। সেপালক্যর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বহুধা-বিভক্ত খ্রিস্টানদের হাতে, কিন্তু সমাধি-ভবনের এক ফুটিয়া চাবি ওঁদের হাতে নেই, দরজা খোলার অধিকারও নয়। সেই অধিকার দুই মুসলিম পরিবারের হাতে। চাবি থাকে জওদেহ আল-গওদিয়া পরিবারের কাছে। আর সেই চাবি দিয়ে গির্জা খোলে আল-নুসেইবেহ পরিবার। কোরানে পঁচিশবার উল্লেখ থাকা নবি ইসা-র সমাধির তাঁরা রক্ষক বলে দুই পরিবারই প্রবল গর্বিত। রীতিমতো বুক চাপড়ে ওঁরা বলেন, ‘১১৮৭ সালে সুলতান সালাদিন আমাদের পূর্বপুরুষদের এই দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। এই অধিকার আমরা হাতছাড়া করব না।’ সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে!

যিশুর সমাধি-মন্দির থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে ইহুদিদের পরম-পীঠ। রাজা সলোমনের মন্দিরের শেষ ভগ্নস্তূপ— দ্য ওয়েস্টার্ন ওয়াল। নিজভূমে পরবাসী হয়ে, ডায়াস্পোরায় ছড়িয়ে পড়া ইহুদিরা যুগে যুগে এখানে এসে পাথরে মাথা রেখে ডুকরে কাঁদেন, ক্ষয়াটে গ্র্যানাইটের খাঁজে-ভাঁজে গুঁজে দেন প্রার্থনার চিরকুট। সহস্রাব্দ ধরে ইহুদিদের কান্না শুনে রুক্ষ এই পাঁচিল যেন আজ নিজেই ক্রন্দনরত—‘ওয়েলিং ওয়াল’। শুধু দুই ধর্ম হলে তা-ও না-হয় হত, হোলি সেপালক্যর থেকে পূবে তাকালেই কুবাত-আস-সাখারা। ডোম অফ দ্য রক আর আল-আকসা মসজিদ। মক্কা-মদিনার পর ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান। প্রকাণ্ড মসজিদের ভিতরে ধূসর পাথরখণ্ড আছে। এটাই নাকি প্রাচীন মাউন্ট মোরিয়ার অবশিষ্ট অংশ। যিশুর পাথরের গায়ে যদি ভূকম্পের ফাটল থাকে, তা হলে এ পাথরের গায়ে আছে ফেরেস্তা জিব্রাইলের (আর্কেঞ্জেল গ্যাব্রিয়েল) হস্তলাঞ্ছন। দুধসাদা ঘোড়া বোর্রাক-এ চড়ে হজরত মহম্মদ যখন আকাশগামী, তখন জিব্রাইল তাঁকে দেখিয়েছিলেন ইসা ইবন মরিয়ম (যিশু)-র জন্মভূমি বায়েথলেহেম। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোই নাকি ছিল মহম্মদের ইহজীবনের শেষ কাজ। দুই মহামানবের অন্তিম পীঠস্থানের মধ্যে দূরত্ব কতটা? মেরে-কেটে এক কিলোমিটার হবে, যেন অঙ্গে অঙ্গ লাগি মোর!

এত কাছে, তবু এত দূরে? এরই জন্য এত ক্রুসেড, এত জিহাদ? সে দুঃখই করছিলেন হাজেম নুসেইবি, জর্জ ডিন, ইউরি কোহেন-রা। ওঁরা সবাই একসুরে জানালেন, পবিত্রতার মাসুল প্রতি পদে গুনতে হয়েছে জেরুজ়ালেমকে। রাজা দাভিদ থেকে ফ্যারাও রামেসিস, আসুর-রাজ সেনাচেরিব থেকে বাগদাদের নেবুচাদনেজ়ার, রোমের টলেমি থেকে হেরড, টাইটাস থেকে তৈমুর লং, সুলতান সালাদিনের লস্কর থেকে গডফ্রয় দ্য বুলয়ঁ-এর ক্রুসেডার। তিন-তিনটে এব্রাহামিক ধর্মের এই পীঠস্থানের দখলদারির জন্য সবাই মেরেছেন আর মরেছেন। অথচ কী আশ্চর্য, প্রাচীন হিব্রুতে এই শহরের নাম ‘য়েরুসালায়িম’— শান্তির নগরী। ধর্মের গরিমাই যে শহরের অভিশাপ!
[the_ad id=”270086″]
আরও অদ্ভুত কথা শোনালেন রাব্বাই মোশে বিন মোশে। তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মবিদ্যার অধ্যাপক। তাঁর দাবি, যিশু নাকি কখনও বিষাদ-সরণি ধরে হেঁটেই যাননি। মোশে বলছেন, ‘আরে, এই রাস্তাটাই তো বানানো হয়েছে যিশুর মৃত্যুর অন্তত একশো বছর পরে, রোমান সম্রাট হেড্রিয়ানের আমলে। তখন এই সড়কটার নাম ছিল ডেকুম্যানাস ম্যাক্সিমাস।’

যিশু তা হলে কোন রাস্তা ধরে হেঁটেছিলেন? ‘সে পথটা এখানেই, তবে বেশ কিছুটা দূরে, অন্য দিকে’, আলোকপ্রাপ্ত করেন মোশে। তা হলে এত লোক যে এত দিন ধরে ভুল পথে হেঁটে চলেছে এটাকেই বিষাদ-সরণি ভেবে? মোশের জবাব মনে রাখার মতো, ‘এরও একটা গভীর মানে আছে, জানেন। যাঁরা যিশুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন, তাঁদের অনেকেই তাঁর জীবন আর শিক্ষা বাস্তবে ঠিকঠাক কাজে লাগান না। এই ভুল পথে হাঁটা আসলে জীবনেও ভুল পথ ধরে হাঁটারই নামান্তর।’
[the_ad id=”270088″]
কিন্তু এত দিন এই ভুল কেউ ঠিক করার চেষ্টা করেননি কেন? সহসা সরব মোশের বন্ধু ইয়েশুভ কোহেন, ‘কে কী করবে? দু’হাজার বছরের ভক্তি, বিশ্বাস আর সংস্কারকে কি আর প্রত্নতত্ত্বের নমুনা দেখিয়ে মুছে ফেলা যায়?’
সত্যিই তো! বেথলেহেম-জেরুজ়ালেমে যত না ইতিহাস, তার চেয়ে অনেক বেশি একাকার মিথ! এখানে জন্ম-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য…
পায়ে পায়ে ফিরে আসছি বিষাদ-সরণি ধরে। ক্লান্ত মনে অনেক প্রশ্ন। তরুণ ইহুদি যাজক পিছু ডাকলেন— ‘মাজেল তোভ!’
শুভেচ্ছা রইল…
অনিশ্চয় মূলত প্রাবন্ধিক। উপনিবেশবাদ ও ঔপনিবেশিক ইতিহাস বিষয়ে চর্চা করেন। এ ছাড়াও খেলার ইতিহাস ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রবন্ধ রচনায় বিশেষ পারদর্শী। অবসরে বই পড়তে, গান শুনতে, বিশ্বের নানা প্রান্তের সিনেমা দেখতে ভালবাসেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে পাশ্চাত্য সঙ্গীত - সবরকম গান নিয়েই অনিশ্চয়ের সমান উৎসাহ।
One Response
অসাধারণ!!! কত কি জানতে পারলুম। অনিশ্চয় নিয়োগী আপনি আরো লেখা উপহার দিন পাঠকদের।