Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

সেমি-বালিকা ডিম্পল আর খোকা ঋষির আপাত নিষ্পাপ আকর্ষণের ফুলে সাজানো কাপুর কাব্য ‘ববি’ সবে রিলিজ করেছে তখন। ওরা তো আর বড়দের মত অ্যাডাল্ট কিছু করবে না, ওদের মনে তো কোনও পাপ নেই, তাই ব্যাপারটা সরল মনের, এমনই ধরে নিল সবাই। যদিও নিশ্চিত জানত, ওখানে অন্য উত্তেজনার ছিটেফোঁটা পাওয়া যাবে। ওরা নিভৃতে কী করছে তা ক্যামেরা দেখিয়ে দিল, যথারীতি, বিশাল হিট হল সিনেমা। মামারবাড়ির সবাই ঝেঁটিয়ে গেল দেখতে, আমাকেও নিল। নায়ক আমার মতোই ভোঁদাই। মেয়েটা ক্যামন য্যানো, আমার কী যে ভালো লেগে গেল কী বলব। ওই ভালোলাগার ব্যাপারটা সারাজীবন আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে। তিয়াত্তর সালে এসব ঘটেছিল। ওরা পোল্কা ডট ডট জামা পরেছিল। সেই জামাও ছেয়ে গেল বাজারে, নাম শুনলাম ববি প্রিন্ট। আমি মেয়ে হলে ওই সিনেমায় দেখান বিকিনি পেতাম কি না জানি না।

[the_ad id=”266918″]

আমার সদ্য পাওয়া ববি শার্ট কবে পরা হবে তা নিয়ে জল্পনা শুরু করে দিলাম। রুপোর চামচ নয়, কিন্তু স্টেনলেস স্টিলের চামচ মুখে জন্মেছিলাম। তাই বাবা মা যা কিনে দিয়েছিল, তাছাড়াও অনেক জামাপ্যান্ট হল। রোজ সেগুলো সাজিয়ে ভাবতাম, এটা পঞ্চুমী, এটা সপ্তুমি। চুয়াত্তরে ঝলকালো সোনার কেল্লা। মন্দার বোস নানারকম তাসের ছবি দেওয়া শার্ট পরে ট্রেনে লুডো খেলছিলেন। আমারও ওই শার্ট হল। জমিয়ে রাখলাম মোক্ষম দিন, অষ্টমীতে পরার জন্য। এই চাই ওই চাই করতাম না আমি, বড়ো পরিবার তখন, কেউ না কেউ, কিছু না কিছু দিতই। আজকের ফেসবুকীয় ভাষায়, আই ওয়জ় ব্লেসড।

[the_ad id=”266919″]

একবার টাইগার হিলে যাওয়া হবে, তাই খুব ভোরবেলা রেডি হতে হয়েছিল। সারাবছর বাবা কিছু বলত না, এক বিশেষ দিনেই ভোর রাতে উঠতে হবে এমন নির্দেশ শুনতাম। রেডিওতে কী সব হবে, একে মহালয়া বলে, তাই ওই একদিন ঘুম থেকে উঠে পড়া জরুরি। রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে বাধ্য হতাম। আজ অবধি একদিনও ঘুম ভাঙেনি। ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত সুরে টানা স্তোত্রপাঠ ভেসে বেড়াত মশারির মধ্যে, ফ্যান ফুলস্পিডে চালানো হত না, এইটুকু মনে আছে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ নামটা শুনলেই স্কুলের একজন বিশেষ স্যারের মুখ ভেসে উঠত। মহিষাসুরমর্দিনী ক্যাসেট বেরনোর পরেও, আধা-ঠান্ডা অন্ধকারে টুকরো টাকরা ওই অদ্ভুত ধ্বনি শুনতে শুনতেই বড় হয়েছি। তারপর কবে যে আরও কত অজস্র পুরাতনী মধুর জীবনাংশ হারিয়ে ফেলেছি, তার আর হিসেব নেই। আজ আক্ষেপ হয়। অন্ধকারে আর একটা শব্দ ভেসে আসত ঘুমের মধ্যে। ফটাশ ফটাশ আওয়াজ করে ইকো হয়ে মিলিয়ে যেত সেটা। পরে মা বলেছিল, প্যান্ডেলের বাঁশ পড়ছে, পুজো এসে গেছে। তখন পাড়ায় পাড়ায় ফাটিয়ে মাইক বাজত। পুজো মানেই ‘কথা দিয়ে এলে না’। অসুন্দরী অথচ নির্মম আকর্ষণের অধিকারিণী এক নারী কণ্ঠে বিচিত্র সুরলহরী। ওই ডিম্পলের মত। তৎসহ উদ্ভট অহৈমন্তিক কণ্ঠ, বিচিত্র শরীরি ভাষার জন্য আংশিক কুখ্যাত, অথচ দুর্দমনীয় মিউজিকের নকশায় উদ্ভাসিত রাহুলদেব ভরিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের ছোটবেলা। আজও দিচ্ছেন। বহু আধুনিক তরুণের বড়বেলা আজও ঘুরপাক খাচ্ছে লতায়, আশায়, মান্নায়, কিশোরে। তারপর তো সুমন এসে গেলেন।

আমার সদ্য পাওয়া ববি শার্ট কবে পরা হবে তা নিয়ে জল্পনা শুরু করে দিলাম। রুপোর চামচ নয়, কিন্তু স্টেনলেস স্টিলের চামচ মুখে জন্মেছিলাম। তাই বাবা মা যা কিনে দিয়েছিল, তাছাড়াও অনেক জামাপ্যান্ট হল। রোজ সেগুলো সাজিয়ে ভাবতাম, এটা পঞ্চুমী, এটা সপ্তুমি।

আগেকার কথা হচ্ছে, হোক একটু। দু’ধরণের প্যান্ডেল হত। প্রায় সবজায়গায় আটপৌরে, কাপড়ে কুঁচির কাজটুকুই ছিল আর্টিস্টিক বিলাসিতা। ঠাকুর পেতেন ডাকের সাজ। অন্যটি ছিল রাজদরবারসম, যা কেউ দেখেনি। এখনও হয় । সেখানে রানি জাঁকিয়ে বসেন সপরিবার। এরপর প্যান্ডেল নতুন জামা পরল, একটু অন্ধকার হল, রহস্য বাড়ল, থিম কনসেপ্ট কোমর দোলাল দুর্গার সনাতনী শরীরী বিভঙ্গের সঙ্গে। দুর্গা পুতুল হলেন, শুরু হল বড়দের পুতুল নিয়ে দাবাখেলা। মাইক কিন্তু উঠে গেল। কর্পোরেশনের কলের জলের মত হুহু করে নয়, সঙ্গীতানুষঙ্গ কেমিস্ট্রি ল্যাবের ব্যুরেট পিপেট থেকে বিন্দু বিন্দু রঙিন তরলের মতো চুঁইয়ে পড়তে শুরু করল। কমিকস্ট্রিপের মতো ভেসে উঠল অজস্র থিম্যাটিক কাহিনি। বাগবাজারের গল্পহীন গাম্ভীর্যের পাশে এই নব্য বিপরীত মেরুকরণে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠলাম। এরপর অনেকদিন কেটে গেছে। এখন, বুঝে গেছি নয়া গল্পটা। শুরু আছে, ক্লাইম্যাক্স নেই। চরিত্র আছে, ক্যারেক্টর নেই।

[the_ad id=”270084″]

কে জানে কার পাপে এবছর এমন কাণ্ড হল। আরও হবে নাকি, এমনি আশঙ্কা। দুর্গার চেয়েও বিচক্ষণ, বিবেচক, হাইকোর্টের বিচারকরা জানিয়ে দিয়েছেন, আদিখ্যেতা চলবে না। এমনিতেই পুজো নিয়ে ফুটেজ কুড়নো কিছু গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল ভিড়ের রাশটা ধরে নিয়েছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। এবারে দর্শন বানচাল, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ফুর্তিফার্তার পুজোটা আবার ফিরে আসতেও পারে। ইকনমিক্স তুলবেন না প্লিজ়, পুজোশিল্প, পুজোকৃষি দিয়ে সবার পেট চলে না। তুললেই কিন্তু তিন অক্ষরের একটি ইংরিজি অপশব্দ বলব, সর্ব ভাষায় তার নাম জিডিপি। একমাস ধরে দেখছি দোকানদাররা আলো জ্বেলে চুপ করে বসে আছেন, ম্লান মুখে, পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে প্রায় অপরাধীর মত অস্ফুটে জিজ্ঞেস করছেন কিছু লাগবে কি না। শুনছি, ভিড় বাড়ছে সেখানে, কেনাকাটা চলছে।

অন্ধকারে আর একটা শব্দ ভেসে আসত ঘুমের মধ্যে। ফটাশ ফটাশ আওয়াজ করে ইকো হয়ে মিলিয়ে যেত সেটা। পরে মা বলেছিল, প্যান্ডেলের বাঁশ পড়ছে, পুজো এসে গেছে। তখন পাড়ায় পাড়ায় ফাটিয়ে মাইক বাজত। পুজো মানেই ‘কথা দিয়ে এলে না’। অসুন্দরী অথচ নির্মম আকর্ষণের অধিকারিণী এক নারী কণ্ঠে বিচিত্র সুরলহরী।

আমাকে আজ আর কেউ কোনও নতুন জামা দেবেন না, বড়রা সবাই চলে গেছেন মহাশূন্যের অজানা মণ্ডপে। এর জন্য আক্ষেপ নেই, একেবারেই। নতুন জামা পেয়ে ছোটরা অকারণে একটু লাফালাফি করলেই হল। নিয়ম মেনে, সাবধানে থাকলেই মঙ্গল। নতুন জামার কোরা গন্ধটুকু পাক ওরা। শিউলিরা সেজে উঠুক বিজ্ঞাপনে।

শুভময় মিত্র আদতে ক্যামেরার লোক, কিন্তু ছবিও আঁকেন। লিখতে বললে একটু লেখেন। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে অনেকরকম খামখেয়ালিপনায় সময় নষ্ট করে মূল কাজে গাফিলতির অভিযোগে দুষ্ট হন। বাড়িতে ওয়াইন তৈরি করা, মিনিয়েচার রেলগাড়ি নিয়ে খেলা করা, বিজাতীয় খাদ্য নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা ওঁর বাতিক। একদা পাহাড়ে, সমুদ্রে, যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতেন। এখন দৌড় বোলপুর পর্যন্ত।

Picture of শুভময় মিত্র

শুভময় মিত্র

শুভময় মিত্র আদতে ক্যামেরার লোক, কিন্তু ছবিও আঁকেন। লিখতে বললে একটু লেখেন। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে অনেকরকম খামখেয়ালিপনায় সময় নষ্ট করে মূল কাজে গাফিলতির অভিযোগে দুষ্ট হন। বাড়িতে ওয়াইন তৈরি করা, মিনিয়েচার রেলগাড়ি নিয়ে খেলা করা, বিজাতীয় খাদ্য নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা ওঁর বাতিক। একদা পাহাড়ে, সমুদ্রে, যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতেন। এখন দৌড় বোলপুর পর্যন্ত।
Picture of শুভময় মিত্র

শুভময় মিত্র

শুভময় মিত্র আদতে ক্যামেরার লোক, কিন্তু ছবিও আঁকেন। লিখতে বললে একটু লেখেন। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে অনেকরকম খামখেয়ালিপনায় সময় নষ্ট করে মূল কাজে গাফিলতির অভিযোগে দুষ্ট হন। বাড়িতে ওয়াইন তৈরি করা, মিনিয়েচার রেলগাড়ি নিয়ে খেলা করা, বিজাতীয় খাদ্য নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা ওঁর বাতিক। একদা পাহাড়ে, সমুদ্রে, যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতেন। এখন দৌড় বোলপুর পর্যন্ত।

2 Responses

  1. লেখাটি ছিমছাম। খুব ভালো লাগল দাদা। আমি তো ১৯৭৩ র প্রোডাক্ট। পুরনো দিনের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। থাকতাম রানিশঙ্করী লেন , 127/D হাজরা রোড। বাবার সঙ্গে রেগুলার বলরাম বসু ঘাট, হরিশ পার্কের কাছাকাছি, একেবারে বুড়িগঙ্গার গায়ে একটা পুজো হত। ছোট্ট, একচালার ঠাকুর এবং ছিমছাম। ওটা প্রতি পুজোতে দেখতে যেতাম। ক্যাপ বন্দুক, সোনার কেল্লার মুকুলের বন্ধু কে যেটি ফেলুদা দিয়েছিল, ঠিক সেই রকম , বাবা কিনে দিতেন হরিশ মুখার্জি এবং হাজরা রোড এর একদম কোনায় কেষ্ট দা পান বিড়ি সিগরেট এর দোকান থেকে । ভালো লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস