সুনীল সরকার
প্রাচীনকালে সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জানতে পেরেছিল যে এক টুক্রা এবোনাইট(Ebonite) বা রজনকে উলের দ্বারা ঘর্ষণ করে তার কাছে যদি কোন হাল্কা বস্তু নিয়ে আসা হয়, তাহলে হালকা বস্তুগুলি নাচতে নাচতে এবোনাইট বা রজনের দিকে ছুটে আসে।(Magnet)
সে সময়ে মধ্য এশিয়ার ম্যাগ্নেশিয়া প্রদেশে এক রকম পাথর পাওয়া যেতো, যেগুলি লোহার টুক্রা আকর্ষণ করতে পারতো। ঐ প্রদেশের নাম অনুসারে ওই পাথরকে বলা হতো ম্যাগ্নেটাইট।
মানুষ চিরদিনই খেয়ালী। তাই সে একদিন ওই ম্যাগ্নেটাইটকে সুতায় ঝুলিয়ে অবাক হয়ে দেখলো, পাথরটা এদিক ওদিক কয়েকবার পাক খেয়ে এক দিকেই মুখ করে দাঁড়ালো। যতবার যত জোরেই তাকে ঘোরানো হল ততবারই পাথরটির দুটি মুখ ঠিক দুটি নির্দিষ্ট দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো। বৈজ্ঞানিকেরা এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে পাথরটির দু’টি মুখের আলাদা আলাদা নাম দেন। তাঁরা উত্তর দিকের মুখটিকে বললেন উত্তর মেরু বা North Pole এবং দক্ষিণ দিকের মুখটিকে বললেন South Pole।
এর পর বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আর্কিমিডিসের নজরে পড়লো ওই ম্যাগ্নেটাইট পাথরটি। তিনি পাথরের এই বিস্ময়কর আচরণ লক্ষ্য করে এই পাথরটির সাহায্যে আবিষ্কার করলেন দিগদর্শন যন্ত্র- যা সমুদ্রপথে দিশাহারা নাবিকদের পক্ষে সঠিক দিক নির্ণয়ের সহায়ক হলো।
তাছাড়া সে যুগের বৈজ্ঞানিকেরা ওই পাথর নিয়ে পরীক্ষা করে দেখলেন, ওই পাথরের দ্বারা অন্য লোহার টুক্রাকে ঘর্ষণ করলে সেটিও অনুরূপ আকর্ষণ শক্তি লাভ করে। একেই বলা হয় চৌম্বক শক্তি। শুধু তাই নয়, সেই লোহার টুক্রাটিকে যদি ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করা হয়, তাহলে তাদের মুখও নির্দিষ্ট দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। এটাই হলো প্রতিটি ম্যাগ্নেটের ধর্ম।
বৈজ্ঞানিকেরা তখন এই নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু করলেন, একটা টেবিলের উপর লোহার চূর্ণ ছড়িয়ে তার মধ্যে একটি ম্যাগ্নেট রেখে দেখলেন-লোহার চূর্ণগুলি সারিবদ্ধভাবে এক-একটি রেখায় দাঁড়িয়ে পড়লো। বৈজ্ঞানিকেরা এই রেখার নাম দিলেন চৌম্বক রেখা। ক্রমশ ম্যাগ্নেটের নানা সংস্করণ হলো। একটি জোরালো ম্যাগ্নেটকে টেবিলের উপর সাদা কাগজে বসিয়ে তার একটি মুখের নিকট ঘড়ির কাঁটার মতো ছোট একটি চুম্বকের কাঁটা রাখা হলো। তারপর, কাঁটা যেই ঘুরলো, তখনই একটি দাগ কাটা হলো। এভাবেই বৈজ্ঞানিকেরা চুম্বকের আচরণ লক্ষ্য করে চৌম্বক ক্ষেত্রের(Magnetic Field)মানচিত্র তৈরি করেন।
তারপর তড়িৎ-শক্তির দ্বারা চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করা সম্ভব হবার ফলেই তড়িৎ বিজ্ঞানের নব অধ্যায়ের সূচনা হলো।
সৌজন্যে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ
বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ থেকে প্রকাশিত জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকার জুন সংখ্যা, ১৯৬৯ থেকে সংগৃহীত
(বানান অপরিবর্তিত)

বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ
বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের চর্চা ও জনপ্রিয়করণের জন্য একটি অগ্রগামী সংস্থা । জাতীয় অধ্যাপক আচার্য সত্যেন্দ্র নাথ বসুর নেতৃত্বে বাংলার সমস্ত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল 1948 সালে। আজকাল, সারাদেশে বহু গোষ্ঠীর নেতৃত্বে গণবিজ্ঞান আন্দোলন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে।
এই সংস্থার উদ্যোগে প্রকাশিত 'জ্ঞান ও বিজ্ঞান' পত্রিকার লেখাগুলিকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলা লাইভ ও বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের একসঙ্গে পথ চলা শুরু।