বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। এ পুজোতে যে মূর্তিকে সামনে রেখে আমরা উৎসবে মুখর হয়ে উঠি,তার মধ্যমণি অবশ্যই সিংহবাহিনী দুর্গা এবং পদতলে বিক্ষত পরাজিত অসুর। এই মূল মূর্তি ডানদিকে ও বাঁদিকে আরও দুটি করে দেবতার অবস্থান। এরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব মহিমায় আবির্ভূত/আবির্ভূতা হন, এবং বর্তমানে প্রায় দূর্গাপূজার ব্যপ্তিতেই এঁদের পূজা-উৎসব চলে। ব্যতিক্রম কেবল কার্তিকঠাকুর। কিছু কিছু ক্ষেত্রবিশেষে এঁর পূজার প্রচলন থাকলেও, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ইনি অন্যান্য দেবতাদের মতো অতটা জনগণমনপ্রিয় নন। এমনকি হিমালয়েও, যেখানে অসংখ্য দেবতার ঘোরাফেরা, সেখানেও এঁর স্থায়ী মন্দিরের সংখ্যা নগণ্য। ঘুরে বেড়ানোর তত্ত্বতালাশ করতে গিয়ে দেখি, গাড়োয়াল হিমালয়ে উত্তরাখণ্ড প্রদেশে, রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় এঁর মন্দির আছে। নাম কার্তিকস্বামী মন্দির। সেখানে পৌঁছতে গেলে আবার হেঁটে পাহাড়ের মাথায় চড়তে হয়। ব্যাস,আর পায় কে! চালিয়ে দিলুম পানসি।
হিমালয়ের অন্যান্য মন্দিরগুলির মতো এই মন্দিরটির পিছনেও একটা প্রাচীন কল্পগল্প আছে, যার একাংশ অনেকেরই জানা। একদা শিবঠাকুর এবং তাঁর সহধর্মিনী পার্বতীর দেখতে ইচ্ছে হল, তাঁদের দুই ছেলের মধ্যে কার বিচারবুদ্ধি কেমন। তখন দুই ছেলেকেই তাঁরা বললেন, “যাও তো বাছারা, পৃথিবীটা একটু প্রদক্ষিণ করে এসো। যে আগে আসবে তাকে আমরা বরদান করব।” এ কথা শুনে বড়ছেলে কার্তিক কুমার অস্ত্রশস্ত্র আর ময়ূরবাহন নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন পৃথিবী পরিক্রমায়। কিন্তু গণেশ বাবাজি টুক করে বাবা-মায়ের চারপাশে ঘুরে এসে বললেন,”এই তো আমার পৃথিবী ঘোরা হয়ে গেলো।” হর-পার্বতী চমৎকৃত হয়ে তাঁকে বরদান করলেন। এ পর্যন্ত গল্প প্রায় সকলেরই শোনা। কিন্তু তার পর কী হয়? পুরাণ বলে, কার্তিক অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে পুরো পৃথিবী পরিক্রমা করে এসে দেখলেন যে আগেই ছোট ভাইটি কেল্লা ফতে করে বসে আছেন। এই দেখে তিনি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে নিজের মাংস আহুতি দিলেন মায়ের পায়ে আর অস্থিমজ্জা নিবেদন করলেন পিতার চরণে। এই অস্থিরই প্রস্তরীভূত রূপ রয়েছে কার্তিকস্বামী মন্দিরে। তেমনটাই স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস।
আমাদের উদ্দেশ্য অবশ্য শুধু মন্দির দেখা নয়। মন্দিরকে সামনে রেখে প্রাকৃতিক শক্তি ও সৌন্দর্যের আকর হিমালয়ের আরও একটি দিকের উন্মোচন। সেই আশায় গুটি গুটি পায়ে যথারীতি হিমালয়ের সিংদরজা হরিদ্বারে পৌঁছলাম। পরদিন অন্ধকার থাকতে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে মোটামুটি আরামদায়ক একটা বাসে চেপে রওনা হলাম রুদ্রপ্রয়াগের পথে। বাসের মধ্যে কিছুটা কাটল ভোরবেলার ঘুমে। যখন চটকা ভাঙল তখন দেখি বাস চলেছে পাহাড়ি রাস্তায়। মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম – কিছু ওঠা নামা। কিছুক্ষণ পর অল্প কিছু দোকানপাট আছে এমন একটা জায়গায় বাস দাঁড়াল। যাত্রীরা নেমে একটা পথচলতি ধাবায় সকালের জলখাবার সারতে লাগলো। আমার ও বালাই নেই। সঙ্গীকে অল্পকিছু খেতে বলে আমি এদিক ওদিক পায়চারি করতে লাগলাম।
হঠাৎ লক্ষ করলাম, আমাদের বাসের চালক ও পরিচালক চিন্তিতমুখে একটি গাড়ি সারানোর গুমটির সামনে সুগভীর আলাপনে রত। কীরকম সন্দেহ হলো! জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, আমাদের বাহনের কোনও একটা যন্ত্রাংশ বিগড়েছে। এখন চাই ঝালাই! তাহলেই নাকি নির্বিঘ্নে বাহন বাকি পথ পাড়ি দেবে। কিন্তু আপাতত বিদ্যুৎ নেই তাই ঝালাইও নেই! এবং কখন আসবে তাও বলা যাচ্ছেনা। সর্বনাশ! অথচ দেখি বেশিরভাগ যাত্রীরই কোন তাপ উত্তাপ নেই। সবাই যে স্থানীয় মানুষজন তাও নয়। তবু বেশ নিশ্চিন্ত হয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছেন সকলে। কিন্তু আমার মাথাব্যথা তো প্রবল! কারণ রুদ্রপ্রয়াগ থেকে আমাকে আবার অন্য রাস্তায় যেতে হবে।
কী ভাবে পৌঁছনো যায় যখন ভাবছি, তখন একজন স্থানীয় মানুষ জানালেন যে উত্তরকাশী যাবার পথচলতি জিপগুলো রুদ্রপ্রয়াগ হয়ে যাবে। নেমে পড়লাম রাস্তায়। গাড়ি থামাচ্ছি আর জায়গা খুঁজছি। কিন্তু শুধু মানুষের জায়গা পেলেই তো হবে না, বোঁচকা বুঁচকিরও স্থান সঙ্কুলান হওয়া চাই। এইভাবে খুঁজতে খুঁজতে একটা পেয়ে গেলাম অবশেষে আর গুঁজেও যাই তারই পেটে আমরা দুজন। ভ্রূণের মতো শারীরিক ভঙ্গিমায় বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর, রুদ্রপ্রয়াগ পৌঁছলাম। গাড়ি নামিয়ে দিল একটা বাজার মতো এলাকায়। লোকজন, দোকানপাট, বাসস্ট্যান্ড সব মিলিয়ে বেশ জমজমাট পাহাড়ি গঞ্জ। খবর নিয়ে দেখি আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের সেই দিনের শেষ বাস সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। দৌড়ে গিয়ে একেবারে ফাঁকা বাসে উঠে সামনের দিকের সিটের দখল নিই। এবার কিঞ্চিৎ ফলাহারের ব্যবস্থা করে জমিয়ে বসি। নিশ্চিন্ত। চলো কনকচৌরি।
নামটির মধ্যেই কেমন একটা যেন মধু মধু স্বাদ আছে। সেই আস্বাদটুকু সঙ্গে করে শেষ পথটুকুর চলা শুরু হয়। খালি বাস কখন ভর্তি হয়ে গেছে টের পাইনি। বাইরে তখন গাড়োয়াল হিমালয়ের অনাবিল সৌন্দর্য ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে। বাসের ভিতরে বাজার-ফেরত মানুষজন, অফিসযাত্রী, স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা, সবাই কথা বলছে। কানে সেগুলো ঢুকলেও চোখ ও মন তাতে সংযুক্ত হচ্ছেনা। বাইরে যে প্রকৃতির জামদানী আঁচল বিছানো! হঠাৎ খেয়াল করি বাসের চলার শব্দে কেমন একটা গোঙানির আওয়াজ। বুঝলাম একটু একটু করে ওপরে উঠছি। নিচে অনেক নীচে আঁকা ছবির মতো পাহাড়ি গ্রাম, নদী। একেকটা গাঁও আসে,হৈ হৈ করে লোকজন ওঠানামা করে, আবার গঞ্জটুকু পেরিয়ে গেলেই সেই ধ্যানগম্ভীর হিমালয়।
এভাবেই পার হয়ে যাচ্ছি ছোট ছোট পাহাড়ি গ্রাম। কী তাদের নামের বাহার – সাতেরাখাল, দুর্গাধার, চোপতা (এ পথেও একটা আছে), ঘিমতোলি। বাস এখন অনেক খালি। কন্ডাকটার আওয়াজ দেয় – কনকচৌরি। মালপত্তর নিয়ে নামি। বাস এগিয়ে যায় কালো রাস্তা ধরে পোখারি গ্রামের পথে। পাহাড়ি বিকেল শুরু হয়ে গেছে, বেশ ঠান্ডা ঝিমধরা একটা ভাব। এমন সময় আচমকা, “আপ কলকাত্তা সে? তনুময় সাহাব?” ঘাড় নেড়ে সায় দিতেই “আইয়ে” বলে মাল কাঁধে তুলে নিয়ে এক ব্যক্তি ধুপধাপ করে একেকটি দেড়ফুটিয়া পাথরের সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগল। আমরাও পড়ি মরি করে নামতে লাগলাম পিছন পিছন। হাঁস ফাঁস করতে করতে ঘরে পৌঁছলাম। চেরা বাঁশের দেওয়াল, ভিতরে প্লাইউডের পলেস্তারা। একটু থিতু হয়ে বাইরে আসি। প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামের আকাশের শেষ বিকেলের আলো গায়ে মাখতে। সামনে ছোট্ট একটু ঘাসজমি, তার ধারে ধারে অল্পকিছু ফুলগাছ। সামনে নিচের দিকে ঢেউ খেলতে খেলতে জমিটা নেমে গেছে। তারই ফাঁকে ফাঁকে বোধহয় গ্রামের ঘর দুয়ার। আমাদের কটেজের পাশের ধাপকাটা পথটিও ওই দিকেই উধাও হয়েছে। পিছনে কাঁধের ওপর দিয়ে বাসরাস্তা আকাশঢাকা, বনানীর চাদরে মোড়া পাহাড়কে পাশে রেখে দিয়েছে লম্বা ছুট। সামনের একটা শুকনো গাছে একটা গ্রে-ট্রিপাই ঘরে ফেরার ডাক দিচ্ছে কাকে কে জানে। হঠাৎ মনটা কেমন করে ওঠে।
অন্ধকার নামে। আলো জ্বলে ওঠে অস্থায়ী আস্তানায়। আগামীকালের পথপ্রদর্শক হাজিরা দিয়ে যায়। দুটো শক্ত পোক্ত লাঠি রেখে যায় ঘরের কোণায়। কাল ভোর চারটেয় বেরোতে হবে তবেই সূর্যোদয়ের আগে পৌঁছনো যাবে পাহাড়চূড়ায়। ঠিক চারটেয় অন্ধকার পাথর বাঁধানো সিঁড়ি টপকে টপকে বাসরাস্তায় উঠে আসি। আরও কিছু মানুষজন আছেন, আর আছেন আমাদের পথ-দেখানিয়া। সোলার লন্ঠন হাতে আগে আগে তিনি, আর সাদা আলোর পিছে পিছে অনিশ্চয় পদক্ষেপে আমরা। আলোয় ছায়ায় মাটি পাথরের পথরেখা। পথ বলতে ওইটুকুই। আমরা উঠব ক্রোঞ্চ পর্বতের শিখরদেশে। যার উচ্চতা কমবেশী ৩১০০ মিটার। হাঁটতে হবে তিন কিমি। মোটা মোটা প্রাচীন গাছের শিকড় মাঝে মাঝে আড়াআড়িভাবে রাস্তা কেটেছে। কোথাও সিঁড়ির ধাপের মতো কাজ করছে, আবার কোথাও অবাঞ্ছিত বিপত্তি। একটু অসাবধান হলেই হোঁচট খেয়ে পড়ার সম্ভাবনা। খাচ্ছিও।
চারপাশে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। আকাশের আলোও কোনও ফাঁক ফোকর দিয়ে আসছে না। দম নিতে দাঁড়াই। সামনে তাকিয়ে দেখি অন্ধকারের মধ্যে আলোকবিন্দুগুলোর ইতঃস্তত বঙ্কিম সঞ্চরন। আর শুনি টুকরো টাকরা শব্দ। আশ্চর্য! সবই বাংলায়, “বিল্টু,অত তাড়াহুড়ো কোরও না”, “কাকুকে খেয়াল রেখো”, “তোর বাবাকে নিয়ে একসঙ্গে আয়”, “এই,হাতটা ধরো না, পড়ে যাব যে”। কোনও এক লালমোহনবাবুও আছেন… “ইধারমে জঙ্গল তো হ্যায়, জংলি জানোয়ারলোগ হ্যায়?” এই ভাবে প্রায় ঘন্টাখানেকের বেশি হাঁটার পর, উঠে আসি এক প্রশস্ত চাতালে। এখানেও সোলার আলো, বসার জায়গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে। একপাশে একটি দু’কামরার পাকা দালান, পুরোহিতের ঘর। একটি ঘরে পুরোহিতমশাই ও তাঁর পূজনীয় দেবতাদের অধিষ্ঠান। অন্য ঘর রাখা আছে অধিকতর অ্যাডভেঞ্চারকামী মানুষজনের জন্যে। তাঁরা নিচে না-থেকে সোজা ওপরে এসে সূর্যাস্তের শোভা দেখে এই ঘরে রাত কাটিয়ে আবার সূর্যোদয় দেখতে পারেন। সেই পুরোহিতমশাইয়ের ঘর থেকেই চা এল। ক্লান্ত শরীরে অমৃতের আস্বাদ যেন।

একটু বিশ্রামের পর আবার এগোতে থাকি। এগনো মানে ক্রমাগত উঠে যাওয়া। ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে চারপাশ।আমাদের পথের বাঁ পাশে দেখতে পাচ্ছি লাইন দিয়ে পাহাড়চূড়ার সিল্যুয়েট। সূর্য উঠবে ডান দিক থেকে, সেদিকে আকাশ ফর্সা হলেও পাহাড়তলি গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা। কিন্তু সামনে এ কি?! খাড়া উঠে গেছে পাথরের ধাপ। অনেক ঘণ্টা ঝোলানো একটা তোরণ দেখা যাচ্ছে বটে, কিন্তু তারপর আকাশ। তোরণের ওপাশে কী আছে দেখা যাচ্ছে না, এতটাই খাড়াই। গাইড বলছে,”লগভগ সও সিড়িয়া হ্যায়।” চড়তে থাকি বাঁধানো সিঁড়িপথ। খুবই কষ্টকর। হাঁফাতে হাঁফাতে তোরণের নীচে এসে দাঁড়াই। সামনে চারদিক খোলা প্রশস্ত চাতাল। ধারে ধারে লোহার রেলিং। মাঝখানে অকিঞ্চিৎকর একটি ইঁট সিমেন্টের নির্মাণ। তার সাজসজ্জায় বুঝতে পারি, ওখানেই দেবসেনাপতির অধিষ্ঠান।
পূর্বদিকে মুখ করে দাঁড়াই। অন্ধকার কাটছে। আকাশে রঙিন আলোর উদ্ভাস। অবধারিত রবিঠাকুর মনে মনে। মন্দির চত্বরে অসংখ্য ঘণ্টা কারা যেন বাজিয়ে চলেছে। বিভিন্ন স্বরগ্রামে বাজছে সেই সুর আর ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। সুর আর আলোয় মাখামাখি হয়ে ভোর হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন এক অলৌকিক বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। নিচে, অনেক নিচে, বাকি পৃথিবী তখনো সুপ্তিমগ্ন। চোখ বন্ধ করে সেই অপার প্রাণশক্তিকে নিজের মধ্যে অনুভব করার চেষ্টা করি। গাইডের কথায় ঘোর কাটে, “সাব পিছে দেখিয়ে!”
ওরে বাবা, ওরা কারা সার সার দাঁড়িয়ে আছে দিগন্ত জুড়ে?

এক একজন এক এক ভঙ্গিমায়। প্রত্যেকের মাথায় তুষার কিরীট। সেখানে কারও লেগেছে লালের ছোঁয়া, কারও বা হলুদ। কেউ বা এখনো রূপালি। বন্দরপুঁছ, কেদারনাথ, কেদারডোম, মেরু-সুমেরু, চৌখাম্বা, নীলকন্ঠ, দ্রোণাগিরি, নন্দাঘুন্টি, ত্রিশূল, নন্দাদেবী। তাকিয়ে থাকি, তাকিয়েই থাকি। আর মাঝে মাঝে আগামীতে ফিরে দেখব বলে স্মৃতিধর যন্ত্রটির শাটার টিপতে থাকি।
এবার চোখ ফেরাই, যাঁকে উপলক্ষ্য করে এতদূর আসা এবং প্রাণভরিয়ে তৃষা হরিয়ে প্রাণ পাওয়া ,সেই কার্তিকস্বামী মন্দিরের দিকে। অত্যন্ত সাদামাটা নির্মাণ। সেখানে কোনও প্রাচীনত্বের চিহ্ণ নেই। বিগ্রহও নবীন। শ্বেতপাথরের। সঙ্গে ময়ূর বাহন। পুরোহিত এগিয়ে আসেন পূজা ও নৈবেদ্য নিবেদনের উৎসাহে। আমরা প্রণাম এবং দক্ষিণায় যথাসাধ্য ভক্তি নিবেদন করি। প্রাচীনত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন করাতে পুরোহিতমশাই পাশের একটি প্রকোষ্ঠে এক প্রস্তরখন্ডের দিকে নির্দেশ করেন এবং বলেন ওটিই নাকি কুমার কার্তিকেয়র অস্থির প্রস্তরীভূত রূপ। মন্দিরের গায়ে এবং চারিদিকে প্রচুর পরিমাণ ঘণ্টার সমাবেশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় জানা গেল, সেগুলি মনোকামনা পূরণার্থে ভক্তদের দান। বেশিরভাগই অবশ্য পুত্রসন্তান কামনায়।
সকাল হয়ে গেছে। চারদিক প্রভাতী আলোয় উজ্জ্বল। পায়ে পায়ে চাতালের প্রান্তে রেলিংয়ের ধারে এসে দাঁড়াই। এখন দিগন্তে হিমলচূড়াদের অন্য রূপ। সকলে আলোকস্নাত হয়ে রূপোর বেশ পরে উন্নত শিরে আসীন। নিচে যতদূর দৃষ্টি যায় দেখি ঢেউ খেলানো ঘন-জঙ্গলাবৃত সারিবদ্ধ পর্বতশ্রেণী। তারও নিচে মেঘ আর কুয়াশায় আবছায়া।শেষবারের মতো নগাধিরাজের দিকে মাথা নত করে ফেরার পথ ধরি।
শেষরাতের অন্ধকারে যে পথ ছিল রহস্যে মোড়া, এখন দেখি কেবল ঘন রডোডেনড্রনের জঙ্গল। তারই মাঝখান দিয়ে দিয়ে পথরেখা।মনে মনে কল্পনা করে নিই বসন্তে এই বনে কেমন রঙের আগুন লাগে। প্রাচীন গাছেদের ফাঁক দিয়ে সকালের উজ্জ্বল আলোয় রজতশুভ্র শিখরগুলো চকচক করছে।এই উতরাই পথে তাদের যেন আরও কাছে মনে হচ্ছে। সতর্ক পায়ে নেমে আসি পিচঢালা রাস্তায়। সেখানে এক ছোট্ট শিবালয়। পুত্রের সাথে দেখা হওয়ার কথা পিতাকে জানিয়ে যাত্রা শেষ করি।
পেশায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী। নেশা বহুল। গ্রুপ থিয়েটার, পাখির ছবি তোলা আর পাহাড়ে পাহাড়ে ভ্রমণ তার মধ্য়ে তিন। খেপে ওঠেন সহজে। হেসে ওঠেন গরজে! খেতে ও খাওয়াতে ভালোবাসেন। আর পছন্দ টেলিভিশন দেখা!
2 Responses
ছবিগুলো অসাধারন
খুব ভালো অনুভবি বর্ণনা। ভীষণ ভালো লাগলো।