Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

কার্ডিফ‚ ওয়েলস-এর দুর্গা পুজো

ড: সন্দীপ রাহা

অক্টোবর ১, ২০১৯

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

‘ওয়েলস পূজা কমিটি ‘ একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল ভারতীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পর্কে আমাদের আশেপাশের সকালের চেতনা বৃদ্ধি করা| সংগঠনের দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখাশোনার ভার আমাদের কার্যনির্বাহক কমিটির উপরে থাকে এবং একান্ত প্রয়োজন হলেই ট্রাস্টিরা মধ্যস্থতা ক’রে থাকেন| প্রথম থেকেই সব অনুষ্ঠানে আমরা একটা পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করেছি যেখানে উপস্থিত সকলেই, বিশেষ করে যারা প্রথম অনুষ্ঠানে এসেছেন, যেন অনুভব করতে পারেন ‘ এটা আমাদের অনুষ্ঠান’| ‘আপন করে নেয়া’ -র ভাবনাটা আমাদের আদর্শ এবং সেটা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি সবসময়ে|

আমাদের পুজোর ইতিহাস : কয়েকটা বছর পুজো না দেখা কার্ডিফের বাঙালিরা ১৯৭৩ সালে চিন্তা করলো ‘ আর পারছি না, পুজো করতেই হ’বে ‘| বাঙালিদের কাছে দুর্গাপুজো কী, এখানে সকলেই সেটা জানেন | কয়েক জনের চেষ্টাতেই শুরু হ’ল ওয়েলস-এ প্রথম দুর্গাপুজো, এক জনের বাড়িতে | পরের বছর সবার সহযোগিতায় বদলে যায় সাম্প্রদায়িক পুজোতে| কিছু পরে সরস্বতী পুজোর শুরু, ধীরে ধীরে যোগ হয়েছে কালী পূজো, দেওয়ালি ইত্যাদি| আমাদের কর্মসূচিতে পুজোগুলি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই, কিন্তু আমরা তার বাইরে অন্যান্য অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে থাকি| যেমন ধরুন নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভারতীয় মেলা, সেমিনার, নানা বিষয়ের উপরে আলোচনা সভা এবং মাটি বা অন্যান্য উপকরণ থেকে দুর্গামূর্তি তৈরী করার প্রকল্প ইত্যাদি| এ ছাড়া স্থানীয় কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে অন্যান্য নানা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে থাকি |

মা দুর্গার ছবি দিয়ে ওয়েলস-এ প্রথম সর্বজনীন দুর্গাপূজা শুরু হ’ল ১৯৭৪ সালে| প্রথমে পাতলা
কাপড়ের উপর এবং পরে কার্ড বোর্ডের উপরে কলকাতার শিল্পীর হাতে আঁকা চালচিত্র সহ মা দুর্গা ও
আর সকলের ছবিতে আমরা পুজো করি ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত| ১৯৮৬ সালে আমাদের এক সদস্য নিজের
হাতে তৈরি করলেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গনেশের মূর্তি| ৪ বছর সেই মুর্তিদের আমরা
পুজো করলাম |


১৯৯০ সালে প্রথম মাটির মূর্তি এল, সোজা কুমারটুলি থেকে| সকলের সে যে কি আনন্দ কী করে বোঝাই। ৫ বছর পরে যখন সে মূর্তিগুলোতে ফাটল দেখা দেয়, আবার এল নতুন মূর্তি, ১৯৯৬-এ| তাদের গায়ে
আবার ফাটলের চিহ্ন দেখে ২০০২ সালে ওয়েলস-এ প্রথম এবং যুক্তরাজ্যেও সম্ভবত প্রথম আমরা
দুজন ভাস্কর বা মৃৎশিল্পীকে কলকাতা ও বিষ্ণুপুর থেকে কার্ডিফে এনে মা দুর্গা ও আর সকলের মাটির
মূর্তি তৈরি করার ৪ সপ্তাহের একটা প্রকল্পকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছি| এর পরে ২০০৯ ও ২০১৬
সালে একই ভাবে দেশের শিল্পীদের এনে মাটি ও কাগজের মন্ড দিয়ে পাঁচটি আলাদা আলাদা মূর্তি তৈরি
করার আরও দুটি পরিকল্পনাকে সফল করতে পেরেছিলাম|


আমাদের পুজো এত কাল পাঁচদিন ধরেই হয়েছে, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত| কিন্তু এ বছর আমরা প্রথম
তিন দিনের পুজো করছি| ২৬ বছর ধরে যে জায়গায় আমরা পুজো করছি, তারা এই প্রথম পাঁচ দিনের জন্য
জায়গাটা দিতে পারার অক্ষমতা জানিয়েছে এবং আমরা ঠিক মতো কোনও জায়গা খুঁজে পাইনি|
দু ‘এক বারের ব্যতিক্রম ছাড়া, শুরু থেকেই আমাদের পুজো করে এসেছেন আমাদেরই কোনও না কোনও
সদস্যরা, বিনা পারিশ্রমিকে| আমাদের পুজো সাধ্যমত নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গেই করার চেষ্টা করা হয়| প্রথম দিন সন্ধ্যেতে ষষ্ঠীর বোধন থেকে শুরু করে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী প্রত্যেক দিন সকালে এবং সন্ধ্যায় নিষ্ঠা সহকারে আমাদের পুজো, অঞ্জলি, ভোগ ইত্যাদি সবই করা হয়| শেষ দিন সকালে দশমীর পুজো, মায়ের বিদায়, সিঁদুর খেলা ইত্যাদির শেষে পাঁচটি প্রতিমাকে যথারীতি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে পরে বছরের জন্য, কাপড় দিয়ে ঢেকে, সংরক্ষণ করে রাখা হয়|

সময় সীমার জন্য এ বার প্রথম আমরা নিয়ম থেকে খানিকটা বিচ্যুত হয়ে যাব| এ বারে হবে ষষ্ঠী ও সপ্তমী প্রথম দিনে, অষ্টমী দ্বিতীয় দিনে এবং নবমী ও দশমী তৃতীয় দিনে| আশা করি মা আমাদের ক্ষমা করবেন| প্রতি দিন দুপুরে পুজোর পরে প্রসাদ আর দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়| রাতে সন্ধ্যারতি, সাধ্যমতো আনন্দানুষ্ঠান ও খাওয়ার ব্যবস্থা একটু বিশেষ ভাবে করার চেষ্টা করা হয়| সমস্ত রান্নাবান্না আমাদের সদস্যরাই মিলেমিশে করেন| বেশির ভাগ বিনোদন পরিবেশন করেন আমাদের সদস্যরা এবং তাদের ছেলেমেয়েরা| কখনও কখনও দেশ থেকে আসা নামী শিল্পীরাও তাদের নাচ,গান, বাদ্যযন্ত্র বা অন্যান্য শিল্পের পরিবেশন করেন |


দুর্গা পুজোকে এখানে বোধহয় ধর্মের অল্প আচ্ছাদনে মোড়া একটা সামাজিক আনন্দানুষ্ঠান হিসেবেই
দেখি আমরা| পুজো আসছে এই আনন্দে আমরা সকালে উত্তাল হই| পুজোর কটা দিন এখানে দারুণ
হইচই, আনন্দ, চেঁচামেচি, আড্ডা ইত্যাদিতে একান্তই মশগুল হয়ে পড়ি সবাই| সকালে মিলে হাতে হাতে
সব কাজ ঠিকঠাক করে ফেলি, ছোটখাটো বাধা বা বিপত্তিগুলো পাশ কাটিয়ে যাই, মনের অমিলগুলো
ক’দিনের জন্য ভুলে যাওয়া হয়| পুজোর এ ক’টা দিন কী করে চালে যায় টের পাই না| শেষ দিনের অনুষ্ঠান
শেষে, আর সব বাঙালিদের মতই, খানিকটা দুঃখ নিয়ে বাড়ি ফিরি পরের বছরের দিকে তাকিয়ে থেকে|
গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সকালে বা দুপুরে আমরা ৭০-৮০ টি পরিবার এবং
সন্ধ্যেবেলায় ১০০-১২৫ টি পরিবার আমাদের পুজোতে পেয়েছি| সপ্তাহান্তে পুজো হলে কিছু বেশি লোক
হয়ে থাকে | কোনও বিশেষ বিনোদনের ব্যবস্থা হলেও বেশি লোক আশা করতে পারি | তিন দিনের পুজো
হওয়াতে এ বছর তার কিছুটা ব্যতিক্রম হয়তো হবে।

Picture of ড: সন্দীপ রাহা

ড: সন্দীপ রাহা

Picture of ড: সন্দীপ রাহা

ড: সন্দীপ রাহা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
বিপুল দেব নাথ

সংস্কৃতি

আহার

শমিতা হালদার
অমৃতা ভট্টাচার্য
শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়

বিহার

কলমকারী

মধুজা বন্দ্যোপাধ্যায়
কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

ফোটো স্টোরি

শক্তিপদ ভট্টাচার্য
নির্মাল্য চ্যাটার্জি
নির্মাল্য চ্যাটার্জি

উপন্যাস

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়