এত সাহস হয় কী করে আপনাদের? নিউ ইয়র্কে পরিবেশ সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলনে সমবেত বিশ্বের রাষ্ট্রনেতাদের উদ্দেশে এই কথাটাই বার বার বলেছিলেন গ্রেটা থুনবার্গ। ষোলো বছরের মেয়েকে আপনি বলাটা দস্তুর নয়, শুনলে কানে লাগে হয়তো, কিন্তু গ্রেটার গুরুত্ব তাঁর বয়েস দিয়ে মাপতে গেলে ভুল হবে। এই কৈশোরেই তিনি গোটা পৃথিবীর চেতনাকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। মাত্র এক বছরের মধ্যে তাঁর পরিবেশ-ভাবনা দুনিয়ার তাবড় নেতাকে ভাবতে বাধ্য করেছে, তাঁর কথা শুনতে বাধ্য করেছে। এমনকি স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাঁকে অগ্রাহ্য করতে পারেননি, তাঁর সম্পর্কে টুইট করে নানা বাঁকা কথা বলছেন। ট্রাম্পকে রেগে যেতে বাধ্য করাই যে সাফল্যের একটা বড় প্রমাণ, তা এখন আর পৃথিবীর অজানা নয়।
গ্রেটা রেখেঢেকে কথা বলেন না, বলতে পারেন না, তাঁর অ্যাসপারগার সিনড্রোম এক ধরনের অসুস্থতা বলে গণ্য হতে পারে বটে, কিন্তু সেটাই তাঁকে ওই রেখেঢেকে কথা না বলার স্বাভাবিক শক্তি দিয়েছে। নিউ ইয়র্ক সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হেঁটে-যাওয়াকে তিনি যে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে দেখেছেন তার আগুন বিশ্বপৃথিবী দেখেছে এবং দেখে চমৎকৃত হয়েছে। সেই আগুনই সুইডেনের ষোড়শীর কণ্ঠে ঝরে পড়ছিল, যখন তিনি বলছিলেন, ‘আমার তো এখানে এখন থাকার কথা নয়, আমার তো এখন মহাসাগরের অন্য তীরে স্কুলে ক্লাস করার কথা। কিন্তু আমার শৈশবকে কেবল মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঝরঝরে করে দিয়েছ তোমরা, তার পর আজ বলছ তোমাদের পথ দেখাতে হবে। এত সাহস তোমাদের হয় কী করে?’
আসলে গ্রেটা থুনবার্গ একটি সময়ের সন্তান। যে সময় এই গ্রহকে ধ্বংসের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতি ও বিশ্বপরিবেশের দূষণ এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যে গ্রহের ভবিষ্যৎই সম্পূর্ণ বিপন্ন। সুদূর ভবিষ্যৎ নয়, অদূর ভবিষ্যৎ। আর তার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী রাষ্ট্রনায়করা, বিশেষ করে ধনী দেশগুলির রাষ্ট্রনায়করা, যাঁরা নীতি স্থির করেন, যে নীতি পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে না তুলে তাকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে দেয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিধ্বংসী রাষ্ট্রনীতির প্রতীক। তিনি মানতেই রাজি নন যে, পরিবেশের বিপদ নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও দরকার আছে। কিন্তু তিনি একা নন, দুনিয়ার বহু রাষ্ট্রই যথেষ্ট পরিবেশবান্ধব নয়।
বুঝতে কোনও অসুবিধা নেই, এই বিপন্ন পৃথিবীর ভবিষ্যৎ যদি বদলানো না যায়, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে শিশুদের, যারা আমাদের উত্তরপ্রজন্ম, যারা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর অধিবাসী। স্বভাবতই গ্রেটা থুনবার্গের কথায় দুনিয়ার অগণিত কিশোরকিশোরী তরুণতরুণী সাড়া দিয়েছে। দেশে দেশে বিরাট বিরাট সমাবেশ করে তারা সংহতি জানিয়েছে পরিবেশের প্রশ্নে। এই শিশুরাই আমাদের ভরসা। এই গ্রহের ভরসা।