কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে এ বার সরাসরি মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান তিনি। মার্কিন রাষ্ট্রপতির দাবি, দুই দেশের সম্পর্কের ক্রমাবনতির পিছনে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ধর্মের।
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি নতুন দিল্লি এবং ইসলামাবাদ। প্রসঙ্গত, এর আগেও মার্কিন রাষ্ট্রপতি দাবি করেছিলেন কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে আমেরিকার হস্তক্ষেপ চান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারত সরকারের বিদেশ দফতর অবশ্য পত্রপাঠ সেই দাবি খারিজ করে দেয়।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, কাশ্মীরের সমস্যাা অত্যন্ত জটিল। সেখানে বিপুল সংখ্যক মুসলিমের পাশাপাশি অনেক হিন্দুও রয়েছেন। দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষ এক সঙ্গে ভাল থাকার জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের। কিন্তু আপাতত কাশ্মীরে সেই পরিস্থিতি নেই। এর পরই ট্রাম্প জানান, ভারত ও পাকিস্তানের পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতির প্রধান কারণটি ধর্মীয়। দীর্ঘ সাত দশক যাবত কেবলমাত্র ধর্মীয় কারণেই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠছে না। মার্কিন রাষ্ট্রপতির কথায়, আমেরিকা কাশ্মীরে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সে জন্য ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রয়োজন। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকা কাশ্মীর প্রশ্নে মধ্যস্থতা করতে চায়।
সম্প্রতি ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর থেকেই অশান্ত হয়ে উঠেছে ভূস্বর্গ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সুর চড়িয়েছেন নতুন দিল্লির বিরুদ্ধে। ১৪ এবং ১৫ অগস্ট আজাদ কাশ্মীরের পক্ষে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে পাকিস্তান। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের আইনসভায় দাঁড়িয়ে ভারত বিরোধী বক্তৃতা করেছেন ইমরান। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রসংঘেরও দ্বারস্থ হয়েছে ইসলামাবাদ। অন্য দিকে ভারতের অভিযোগ, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হওয়া সত্ত্বেও অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে পাকিস্তান। সংসদে দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, ভারতের লক্ষ্য পাক অধিকৃত কাশ্মীর পুর্নদখল করা। তাঁকে সমর্থন করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সব মিলিয়ে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এর মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করল মার্কিন রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপের ইচ্ছাপ্রকাশ।
কাশ্মীর ইস্যুতে সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার সক্রিয় হয়েছে আমেরিকা। সোম বারই ট্রাম্প ফোনে কথা বলেন নরেন্দ্র মোদী ও ইমরান খানের সঙ্গে। দুই রাষ্ট্রনেতাকেই সংযত থাকার পরামর্শ দেন তিনি। মোদি পাল্টা অভিযোগ করেন, কাশ্মীর নিয়ে অকারণে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে পাকিস্তান। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনও দেশের নাক গলানোর অধিকার নেই। ইমরানও ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান মার্কিন রাষ্ট্রপতির কাছে।
কাশ্মীর বিষয়ে মধ্যস্থতা করতে চেয়ে অবশ্য এর আগে বিতর্কে জড়িয়েছেেন ট্রাম্প। ইমরানকে পাশে বসিয়ে তিনি বলেছিলেন, মোদি চান আমেরিকা কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করুক। মার্কিন রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয় দেশজুড়ে। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি সরকারের কাছে বিষয়টির স্পষ্ট ব্যাখার দাবি জানায়। এর পরই বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষল থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, মার্কিন রাষ্ট্রপতি যা বলেছেন তা ঠিক নয়। কাশ্মীর ইস্যু সম্পূর্ণভাবে দ্বিপাক্ষিক বিষয়। এতে কোনও তৃতীয় শক্তির ভূমিকা থাকতে পারে না।