ঊনকোটি
(Unakoti) এবার অপেক্ষার অবসান। এতদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার পালা। প্রাচীন জনপদ কৈলাশহরের দিকে যাত্রা হল শুরু। ভোর ভোর ব্রেকফাস্ট সেরেই আমাদের গন্তব্য ঊনকোটি।ত্রিপুরার সবচাইতে আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট, প্রত্নতাত্বিক পাহাড়রাজি ঊনকোটির ছবি দেখে চোখ জুড়িয়েছে এতদিন। সচক্ষে বিশাল রঘুনন্দন পাহাড়ের কাছে আসতেই চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন হলো। পাহাড়ের আরও প্রাচীন নাম সুব্রাই খুং। এটি একটি শৈবতীর্থ। এর সৃষ্টির পরতে পরতে লুকিয়ে আছে রহস্যময় পুরাণ কথা। ঐতিহাসিকদের মতে, ঊনকোটির অভিনব ভাস্কর্য তৈরি হয়েছিল অষ্টম বা নবম শতকে। (Unakoti)
আরও পড়ুন: ত্রিপুরার ৭ কাহন – পর্ব ১
ঊনকোটি মানে এক কোটির থেকে এক কম। কিন্তু কী কম পড়েছিল, যে তার কারণে এই পাহাড়ের নাম ঊনকোটি? কার অনুগ্রহে সেই কালে স্থপতি ছেনি হাতুড়ির সমন্বয়ে দক্ষতার সঙ্গে এমন অভিনব ভাস্কর্য ফুটিয়ে তুলেছিলেন পাহাড়ের গায়ে? লোকায়ত কিংদন্তী অনুসারে পার্বতীর ভক্ত কালু কামার নামে একজন শিল্পী ছিলেন। একবার দেবী পার্বতী মহাদেবের সঙ্গে কৈলাসে যাচ্ছিলেন। তখন কালু কামার বায়না ধরল তাকে যেন তাঁরা এই তীর্থযাত্রায় সঙ্গে নেন। তখন মহাদেব সেই স্থপতির ওপর এক শর্ত আরোপ করলেন। সে যেতে পারে, একটি শর্তে। মাত্র এক রাত্রির মধ্যে এককোটি দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করে দিতে হবে। কিন্তু ভক্ত কালু কামার এককোটি থেকে একটি কম মানে ঊনকোটিটা মূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হল। তবে পুরাণে এই কালু কামারের নাম পাওয়া যায় না। (Unakoti)

আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাহিনি অনুসারে, দেবাদিদেব শিব একবার দেবতাদের নিয়ে বারাণসী যাচ্ছিলেন। মহাদেবকে নিয়ে দেবতাদের সংখ্যা ছিল এক কোটি। সন্ধ্যে নামার পর তাঁরা আশ্রয় নিলেন এই রঘুনন্দন পাহাড়ে। পথশ্রমে ক্লান্ত দেবতারা গভীর নিদ্রায় অচেতন হলেন। পরেরদিন সূর্যোদয় হওয়ার আগে সবার বারাণসীর উদ্দেশে যাত্রা করার কথা, কিন্তু মহাদেব ছাড়া অন্য কারোর নিদ্রাভঙ্গ হল না। মহাদেব বিরক্ত হয়ে একাই বারাণসীর উদ্দেশে রওনা দিলেন। গভীর নিদ্রায় সমাধিস্থ দেবতাদের কালনিদ্রা আর ভাঙল না এবং তাঁরা অনন্তকালের জন্য পাথর হয়ে মহাস্থবির হয়ে রইলেন। এই দেবতাদের সংখ্যা ছিল এক কম কোটি তাই বুঝি ঊনকোটি। সেই থেকেই এই রঘুনন্দন পাহাড় শৈবতীর্থ ঊনকোটি। (Unakoti)
অরণ্যসংকুল, জঙ্গলাকীর্ণ সেই প্রকান্ড পাহাড়গাত্রে দেবদেবীর অগণিত বিশালকার সব অবয়বগুলিকে দেখে মনে হয় কোনও এক প্রাচীন মায়া সভ্যতার মায়াবী নগরে পা দিলাম। অনেকগুলি মূর্তি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে, কালের স্রোতে, জলবায়ুর কারণে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। তবে যা আছে তাও অফুরান।
এবার প্রাচীন এই কিংবদন্তি মিথ না মিথ্যে সে বিতর্কে যাব না। তবে কালু কামার বা অন্য কোনও স্থপতি হয়তো ত্রিপুরার কোনও রাজানুগ্রহে এমন শৈল্পিক কর্ম পাহাড়গাত্রে ফুটিয়েছিলেন। অথবা শুধুমাত্র ঈশ্বরের প্রতি নিবিড় ভালোবাসাতেই হয়তো স্বেচ্ছায় কেউ এমন কাজে হাত দিয়েছিল আর নেশার মত একে একে ফুটিয়ে তুলেছিল তার হাতের শৈলী। বাকিটা লোকায়ত কাহিনি। যা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে আর প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনিত হয় রঘুনন্দন পাহাড়ের গায়ে। (Unakoti)

আসলে ভারতের সনাতন সংস্কৃতির ফল্গুধারা এভাবেই বুঝি আজও বহমান। লোকাচারের সনাতনী কিংবদন্তির ককটেইল এভাবেই আমাদের বিশ্বাস করানো হয়। তা না হলে কোনও পীঠস্থান যে আক্ষরিক অর্থে “পীঠ” হয়ে উঠবে না, তা বলাই বাহুল্য। আর তবেই না ত্রিপুরার মতো ক্ষুদ্র রাজ্যে এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ট্যুরিস্ট ভিড় করবে, তাই না? বাকিটা আর্থসামাজিক। ধর্মীয় বিশ্বাস শিকেয় তুলে রেখেই বলছি। কিন্তু এই যে রাজকীয় ঊনকোটিশ্বর কালভৈরবের মূর্তি! এ তো সাধারণ কাজ নয়। আর তাই বুঝি ইউনেসকো হেরিটেজের তকমায় ঊনকোটিকে “ভারতের আঙ্কোরভাট” বলা হয়। (Unakoti)

সভ্যতার আদিতে মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন নান্দনিক শিল্প হল রক আর্ট বা শিলা শিল্প। চুনাপাথর, বেলেপাথর, ক্যালসাইট, জিপসাম, গ্র্যানাইট, মার্বেল বা জেড পাথরের ওপর, আমাদের পূর্বপুরুষেরা কখনও সেই পাথর কুঁদে রচনা করেছে অনবদ্য গুহাচিত্র, কখনও ভেষজ রং দিয়ে রক আর্ট। তাই আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। তবে মানুষের বিশ্বাসে কীভাবে তা তীর্থক্ষেত্র হয়ে ওঠে সেটাই বিস্ময়ের। এখনও মানুষ সেখানে গিয়ে পুজো চড়িয়ে আসে। হয়তো একদল অজ্ঞাতপরিচয় ভাস্করের নেশা আর হাতের খেল এমন সব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এর পেছনে শিল্পীর শ্রম এবং হাতের যাদুর যে অভিনব মিশেল হয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। (Unakoti)

পাথর কুঁদে এই বিশাল শিল্পকর্ম হয়তো এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মের হাত ধরে অব্যাহত থাকত। আসলে শিল্প সৃষ্টির নেশা যাদের রক্তে তারা তো এমনই হয়। সারাবিশ্ব জুড়ে এমন নজির অনেক আছে। তবে নান্দনিকতার চূড়ান্ত নিদর্শন হিসেবে শিলাশিল্পে সেরা ভারতীয় স্থপতিরা।
জলবায়ুর আনুকুল্যে প্রাচীনকাল থেকেই ভারতভূমি ভাস্করদের স্বর্গ রাজ্য। তাই অজন্তা-ইলোরা থেকে খাজুরাহো-এলিফ্যান্টা, উদয়গিরি-খন্ডগিরি, রত্নগিরি, বাদামি গুহা, ভীমবেটকা সহ আরও কত কত রক আর্ট দেখার জন্য সারা বিশ্ব থেকে আজও ছুটে আসেন লক্ষ লক্ষ পর্যটক। (Unakoti)
কালু কামারের বিষয়ে পুরাতাত্ত্বিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদেরা নীরব। সে বাস্তবের কোনও মানুষ, না কাল্পনিক, না কেবলই পৌরাণিক চরিত্র তাও অজানা। তবে এটা বাস্তব, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সমাপ্ত করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কয়েক শত প্রশিক্ষিত ও পেশাদার ভাস্করের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভবপর হয়েছিল এই অত্যাশ্চর্য রক আর্ট গ্যালারি।
অরণ্যসংকুল, জঙ্গলাকীর্ণ সেই প্রকান্ড পাহাড়গাত্রে দেবদেবীর অগণিত বিশালকার সব অবয়বগুলিকে দেখে মনে হয় কোনও এক প্রাচীন মায়া সভ্যতার মায়াবী নগরে পা দিলাম। অনেকগুলি মূর্তি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে, কালের স্রোতে, জলবায়ুর কারণে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। তবে যা আছে তাও অফুরান। রঘুনন্দন পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা মূর্তিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জটাধারী শিব এবং ৩০ ফুট উঁচু কালভৈরব। দুই কানে বিশালকায় কর্ণকুণ্ডল আর মাথার দুপাশে তরঙ্গায়িত কেশরাজি। জটাজুটসম্বলিত শিবের কপালে পুর্ণচন্দ্রখচিত ৭টি রত্ন, হয়তো ছিল মোট ৯টি। মনে হল বাকি দুটি ভেঙে গেছে। সেটি শিল্পীর কল্পনায় শিবের মুকুটের নিচের অংশ হয়তো।
তবে শিল্পী যে পরম শৈব ছিলেন তা বোঝা যায় কারণ, এখানকার অধিকাংশ দেবাদিদেব মহাদেবের মূর্তি। পাহাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলে গণেশকুণ্ড সংলগ্ন পাথরে খোদাই করা আছে তিনটি অভিনব গণেশ মূর্তি। তার পাশেই রয়েছে চতুর্ভুজ বিষ্ণু মূর্তি। এভাবেই পাথর কুঁদে দুর্গা, রাম, রাবণ, যমুনা, হিড়িম্বা, হনুমান, ঐরাবত ও শিবের বাহন নন্দীর সঙ্গে অচেনা, অজানা মূর্তিও তৈরি করেছিল তারা। (Unakoti)

কোথাও সবুজ অরণ্যে পাহাড়ের গা বেয়ে তিরতির করে নেমে এসেছে বুনো ঝোরা। কোথাও পাহাড়ের গায়ে সবুজ মসের কার্পেট। সবমিলিয়ে বেশ সুন্দর। ডিসেম্বরে বাতাসে হালকা ঠান্ডা, পাহাড় চড়ায় আরামদায়ক। বাকিসব ধর্মীয় পরম্পরা মেনে প্রতি বছর মকর সংক্রন্তি ছাড়াও মার্চ-এপ্রিল মাসে শিবরাত্রি এবং অশোকাষ্টমী মেলার মত বিখ্যাত উৎসবে যে ঊনকোটিতে জনজোয়ার হবে, সেটাই ধ্রুব সত্য। (Unakoti)
উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশহর থেকে ৮ কি মি দূরে এই দুর্গম রঘুনন্দন পাহাড়ে পৌঁছতে আগরতলা থেকে প্রায় ঘণ্টা চারেক সময় লেগেছিল। কালের স্রোতে, ধর্মীয় আখ্যানের স্থান মাহাত্ম্যে তার নাম আজ ঊনকোটি, আমাদের মন ক্যামেরায় চির ভাস্বর হয়ে রইল।
তবে লেখক কালিপ্রসন্ন সেনের মতে, সেকালের সমৃদ্ধ জনপদ কৈলাশহর এককালে ত্রিপুরার রাজধানী ছিল। মহারাজা ইন্দ্রমানিক্য কৈলাশহরের রাঙাউটিতে একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। সেখানকার মন্দিরের পাশেই আছে ৫ বর্গ কিমি জুড়ে খাওড়াবিল নামে একটা বড় হ্রদ, যা রাজার দিঘি নামে পরিচিত ছিল।
কালু কামারের বিষয়ে পুরাতাত্ত্বিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদেরা নীরব। সে বাস্তবের কোনও মানুষ, না কাল্পনিক, না কেবলই পৌরাণিক চরিত্র তাও অজানা। তবে এটা বাস্তব, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সমাপ্ত করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কয়েক শত প্রশিক্ষিত ও পেশাদার ভাস্করের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভবপর হয়েছিল এই অত্যাশ্চর্য রক আর্ট গ্যালারি। হয়তো আগের প্রজন্মের অসমাপ্ত কাজ পরের প্রজন্ম শেষ করেছিল। তবে অনেকের অনুমান, এই বিশালকায় কর্মযজ্ঞ নিশ্চয়ই কোনও রাজা বা সম্রাটের আমলে তাঁদের অনুগ্রহেরই ফসল। কিন্তু সেখানেই ওঠে প্রশ্ন। রাজা, মহারাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের শাসনকালের সেরা কীর্তিগুলি ধরে রাখলেন না কেনো ইতিহাসের পাতায়? অষ্টম বা নবম শতাব্দীতে নির্মিত ঊনকোটির নাম নেই কেনো? (Unakoti)

সেই সময় এই এলাকা সহ সমগ্র ত্রিপুরা শাসন করতেন হিন্দু ফা-রাজারা। ষষ্ঠ শতাব্দীতে রাজা প্রতীত এই রাজবংশের পত্তন করেছিলেন। শৈব ফা রাজারা যদি ঊনকোটির অনবদ্য রক আর্ট ভারতবর্ষকে উপহার দিয়ে থাকেন, সেকথা কেনো লেখা নেই রাজা ধর্মমানিক্যের শাসনকালে কালিপ্রসন্ন সেনের লেখা, ত্রিপুরা সম্পর্কিত আকরগ্রন্থ রাজমালায়? হাতের মুঠোয় ঊনকোটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে, সেখানে জানলাম আরেক রাজপ্রাসাদের কথা। সে রাজপ্রাসাদ দেখার সৌভাগ্য হয়নি সময়াভাবে। (Unakoti)

তবে লেখক কালিপ্রসন্ন সেনের মতে, সেকালের সমৃদ্ধ জনপদ কৈলাশহর এককালে ত্রিপুরার রাজধানী ছিল। মহারাজা ইন্দ্রমানিক্য কৈলাশহরের রাঙাউটিতে একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। সেখানকার মন্দিরের পাশেই আছে ৫ বর্গ কিমি জুড়ে খাওড়াবিল নামে একটা বড় হ্রদ, যা রাজার দিঘি নামে পরিচিত ছিল। একটি সুবিশাল প্রাচীন বট গাছ ও এই বিশাল হ্রদটি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাহলে কি এই রাজাদের কোনও অবদান আছে ঊনকোটির ব্যাপারে? কিন্তু ইতিহাসে কেনো তার উল্লেখ নেই? (Unakoti)

ঊনকোটির সেই রহস্য মাথায় নিয়েই অনেক দূরে ত্রিপুরার অন্যতম শৈল শহর জম্পুইতে ছিল আমাদের রাত্রিবাসের ব্যাবস্থা। ভালো হোটেল নেই সেখানে। মাত্র ৩০০০ ফুট উচ্চতায় জম্পুই গিয়ে এক রাত থেকে মন্দের ভালো হলো। প্রবল পথশ্রমে দেহের ক্লান্তিনাশ, আর সেইসঙ্গে তুলনামূলকভাবে সমতলের চাইতে মনোরম ঠান্ডায় আগজ্বলন্ত ডাল, ভাত আর মুরগির মাংসের ঝোল দিয়ে মনের মতো ডিনার হলো। তবে বলাই বাহুল্য, আমাদের উত্তরবাংলার পাহাড়ি জায়গাগুলোর ধারেকাছে লাগেনা জম্পুই। জম্পুই এর পরিকাঠামোর উন্নতির দিকে সরকারিভাবে উঠে পড়ে লাগা উচিৎ। ততক্ষণ ট্যুরিজম আইটিনারিতে জম্পুই হিলস ওভার রেটেড ডেস্টিনেশন। কিছুটা মায়ের কাছে মাসির গল্পের মতোই। (Unakoti)
(চলবে)
ছবি সৌজন্য: লেখক
রসায়নের ছাত্রী ইন্দিরা আদ্যোপান্ত হোমমেকার। তবে গত এক দশকেরও বেশি সময় যাবৎ সাহিত্যচর্চা করছেন নিয়মিত। প্রথম গল্প দেশ পত্রিকায় এবং প্রথম উপন্যাস সানন্দায় প্রকাশিত হয়। বেশ কিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যেই। সব নামীদামি পত্রিকা এবং ই-ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখেন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, রম্যরচনা ও প্রবন্ধ।