(Women in Sports)
এত কর্মকর্তার খবর, কাগজ আর টিভিতে দেখতে পাই, অথচ কোনও কর্মকর্ত্রীর খবর দেখতে পাই না! কেন বলুন ত।।
ভারত মেয়েদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পরই ফোনে প্রশ্ন করলেন এক পরিচিত মহিলা। লেখক। তিনিও মেয়েদের বিশ্বজয়ে হঠাৎই উদ্দীপিত। গোটা দু’য়েক পোস্ট লিখে ফেলেছেন ফেসবুকে। (Women in Sports)
চমকে দিল প্রশ্নটা। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সাম্প্রতিক ভারতীয় খেলায় আর কিছু হতে পারে না। ভদ্রমহিলার কথা শুনে খুব মন দিয়ে ভাবার চেষ্টা করলাম, ভারতীয় খেলার জগতে এই মুহূর্তে কতজন মহিলা কর্মকর্তা রয়েছেন। যাঁরা সাধারণ গৃহবধূ বা ছেলেবেলায় খেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। (Women in Sports)
গোটা দেশের কথাই ভাবলাম। কেন না স্পষ্ট করে জানি, কলকাতা ময়দানে এখন গোটা চারেকের বেশি ‘মহিলা গৃহবধূ কর্মকর্তা’ নেই, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে খেলার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের মধ্যে দু’জন আবার প্রাক্তন খেলোয়াড়। (Women in Sports)
ভাবার চেষ্টা করে গেলাম এবং গোয়া ছাড়া আর কোথাও সেভাবে মহিলা কর্মকর্তার নাম মনে করতে পারলাম না। গোয়াতেও হাতে গোনা সেই দু’জন। ভারতের অবস্থা আরও খারাপ। অনেক পুরোনো নামী খেলোয়াড়কে এখন সরকার বা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চেয়ারে বসানো হয়েছে। অনেকে আছেন এবং সেটা মূলত খাতায় কলমে। নাম কা ওয়াস্তে। (Women in Sports)
এই সব খেলোয়াড় থেকে কর্ত্রী হওয়া মেয়েদের কথা নয়, আমি বলছি, সাধারণ নারীদের কথা। তাঁদের মধ্যে থেকে কেউ আগ্রহ দেখাননি খেলার কর্মকর্ত্রী হওয়ার। বাংলায় কর্মকর্ত্রী শব্দটা তাই চালুও হয়নি। খেলায় কর্মকর্তার জায়গাটা আসলে হয়ে গিয়েছে পুরুষদের সম্পূর্ণ নিজস্ব। মেয়েদের সামনে যেন এক বদ্ধ প্রাচীর। খেলায়, খেলার সাংবাদিকতায় দাপিয়ে কাজ করছেন মেয়েরা। ফিফা রেফারি, আইসিসি ম্যাচ রেফারি হচ্ছেন মেয়েরা। তবু সাধারণ নারীর খেলায় কর্ত্রী হওয়ার দরজা কার্যত বন্ধ কেন? (Women in Sports)

রাজধানী দিয়ে শুরু করেছিলাম। নয়াদিল্লিতে দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সংস্থা ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে মাথায় এখন একজন মহিলা। অতি পরিচিত মুখ পি টি ঊষা। তাঁর সঙ্গে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে রয়েছেন আরও দুই পরিচিত মুখ মেরি কম এবং দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এঁরা কেউই একেবারে নিচু তলা থেকে কর্মকর্তা হিসেবে উঠে আসেননি। তাঁদের কার্যত তুলে এনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে মাথায়। বিজেপির তরফ থেকে, পদ্ম ঘনিষ্ঠতার সুযোগে। (Women in Sports)
রাজধানীর পরিচিত ক্রীড়া সাংবাদিকরা কেউ মনে করতে পারছেন না সাধারণ নারীদের কর্মকর্ত্রী হিসেবে কাজ করতে দেখার কথা। যাঁরা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে খেলার প্রশাসন চালাবেন। খেলোয়াড় তৈরি করবেন। (Women in Sports)
এসব দেখে মনে হবে, খেলার কর্মকর্ত্রী হওয়ার অধিকার শুধু প্রাক্তন মহিলা খেলোয়াড়দের। যতই ভারতে মেয়ে ক্রিকেটারদের সাফল্যে সাধারণ মেয়েরা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠুন, দেশের নিরানব্বই ভাগ স্কুলের ছাত্রীরা যেমন এখনও জানে না, মেয়েরা আসলে খেলবে কোথায়। তাদের স্কুল স্পোর্টস এখনও আদিম যুগের ইভেন্ট নিয়ে থাকে। লজেন্স দৌড়, অংক দৌড়, হাঁড়ি ভাঙ্গা, গো অ্যাজ ইউ লাইক…! (Women in Sports)
আরও পড়ুন: প্রয়াণের এক যুগ পরেও মান্নার প্রেমের গান অমর
এখানেই যোগ করা জরুরি একটা তথ্য। ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থায় যুগ্ম সচিব হিসেবে আছেন অলকানন্দা অশোক। তিনি উত্তরাখণ্ড ব্যাডমিন্টন সংস্থার প্রেসিডেন্ট, জাতীয় ভলিবল ফেডারেশনের সদস্য। তার থেকেও বড় কথা, তিনি উত্তরাখণ্ডের সেই সময়ের ডিজিপি অশোককুমারের স্ত্রী। সিভিল সার্ভিস অফিসার্স ওয়াইভস অ্যাসোসিয়েশনের বড় কর্তা। আসলে অনেক নারীই এভাবে খেলার পদে চলে আসেন নেতা বা আমলার স্ত্রী হিসেবে। মাঠে লড়াই না করেই। (Women in Sports)
কেন্দ্রীয় সরকারের খেল-নীতি নিয়ে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, সেখানে কর্মকর্তাদের তালিকায় মেয়েদের রাখার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। অনেক প্যানেলে নামী মেয়ে ক্রীড়াবিদরা রয়েছেন। প্রশ্ন সেটা নয়। প্রশ্ন হল সাধারণভাবে মেয়েরা কেন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন না? কেন তাঁদের নিয়মিত মাঠে দেখা যায় না? (Women in Sports)
পুরুষতন্ত্রই কি মেয়ে কর্তাদের মাঠে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা, নাকি মেয়েরা নিজেরাই উদ্যোগী নন মাঠে কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে? পরিস্থিতি যা দেখি, তাতে মিলেমিশে দুটোই এর পেছনে দায়ী। (Women in Sports)

আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে কলকাতা ময়দানে তিন মহিলা বিপ্লব এনেছিলেন মেয়েদের খেলায়। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী আরতি বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রিকেট কর্তা প্রশান্ত গায়েনের স্ত্রী বুলবুল গায়েন ও কুমকুম বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়েদের ক্রিকেট টিম করার জন্য শেষ দুজন বিশাল উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মেয়ে ফুটবলারদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এই যে নিজেরা খেলোয়াড় না হয়েও খেলোয়াড় তৈরির জন্য মিশে যাওয়া, এই ভাবনাটা দেখিয়েছিলেন তাঁরা। (Women in Sports)
এঁদের পর কলকাতায় মাঠে-ঘাটে দৌড়ে খেলোয়াড় তৈরির কাজে দেখেছি অনিমা পণ্ডিতকে। তাঁর দাদামণি পণ্ডিত ছিলেন হকি মাঠের পরিচিত আম্পায়ার। সেই সূত্রেই অনিমার মাঠকে ভালোবাসা। ৩৭ বছর আগে তাঁকে আইএফএ সহসচিব করেছিলেন প্রয়াত প্রদ্যোত দত্ত। (Women in Sports)
একটা সময় এয়ারলাইন্স ক্লাবে কাজকর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন শম্পা দাস। এয়ারলাইন্স কাপ হওয়ার সময় মারাত্মক সক্রিয় থাকতেন। (Women in Sports)
আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া মানচিত্রে বিস্মিত লালদীঘি!
মোহনবাগান জুনিয়র টিম তৈরিতে বড় ভূমিকা ছিল রঘু নন্দীর স্ত্রী রত্না নন্দীর। মেয়ে ফুটবল দল গড়ে সাড়া ফেলেছিলেন দত্তপুকুরের মহিলা দুর্গা রায়। তাঁর ক্লাবের নাম ছিল জিসি রায় মেমোরিয়াল। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্লেয়ার এনে ক্লাব চালাতেন দুর্গা। এখন যা চালান তাঁর ছেলে। (Women in Sports)
এই দুর্গারাই বরং এক একজন খেলার মাঠে মেয়েদের নতুন পথ দেখানোর কারিগর। প্রাক্তন খেলোয়াড় অমিতা সরকার চালাতেন ছেলেদের ফুটবল টিম। অনিতা রায় যেমন যুক্ত ছিলেন বাস্কেটবলে। (Women in Sports)
এইভাবে মাঠ ভালবেসে কর্মকর্তা হওয়ার মতো নারী চরিত্র সেভাবে পাওয়াই যায়নি। শুধু কলকাতা নয়, পুরো দেশেই। কলকাতা ফুটবলে ইদানিং পরিচিত নাম সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় ও সোহিনী চৌবে।
এইভাবে মাঠ ভালবেসে কর্মকর্তা হওয়ার মতো নারী চরিত্র সেভাবে পাওয়াই যায়নি। শুধু কলকাতা নয়, পুরো দেশেই। কলকাতা ফুটবলে ইদানিং পরিচিত নাম সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় ও সোহিনী চৌবে। দুজনেরই বাবা যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন ময়দানে দেবু মুখার্জি ও অঞ্জন মিত্র। সোহিনীর স্বামী আবার এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে। (Women in Sports)
অনিমা পণ্ডিতের পর রাজ্য ফুটবল সংস্থার সহসচিব হয়েছেন সুদেষ্ণা। প্রায় পনেরো বছর কর্ত্রী হিসেবে কাজ করার পরে। ইদানীং সাদার্ন সমিতি ক্লাবে চেয়ারপার্সন হিসেবে আছেন জিনিয়া রায়চৌধুরী। (Women in Sports)
এখন বাস্তব হল, ময়দানের আর বড় বা ছোট ক্লাবেও কোনও মহিলা কর্তাকে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়নি কর্মকর্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। বা প্লেয়ার তুলে আনার জন্য। দুর্গা রায় বা রত্না নন্দীরা যেমন ছিলেন। (Women in Sports)

ঝুলন গোস্বামী-রিচা ঘোষদের খেলায়, সিএবির সর্বোচ্চ কমিটি অ্যাপেক্স কাউন্সিলে আনা হয়েছে ক্রিকেট পরিবারের মেয়ে নীলাঞ্জনা বসুকে। তবে এই পেশাটা, এই নেশাটা সাধারণ মেয়েদের সেভাবে আকৃষ্ট করতে পারল না কোথাও। (Women in Sports)
বাংলাতে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী অনেকদিন ধরে। তবু দেশের মতো বাংলাতেও পরিস্থিতি পাল্টাল না এতটুকুও। কী করে পাল্টাবে, দেশের ছোঁয়া তো রাজ্যে লাগবেই। (Women in Sports)
উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলোর কথা ভাবুন। সেখানে অনেক জায়গাতেই নারী প্রধান সমাজ। সেখানেও কিন্তু মেরি কম বা মীরাবাই চানুদের উঠে আসার জন্য নির্ভর করতে হয়েছে পুরুষশাসিত ক্রীড়া প্রশাসনের ওপর। (Women in Sports)
বাংলার সর্বোচ্চ ক্রীড়া সংস্থা বাংলা অলিম্পিক সংস্থার ৬৮ কর্তার তালিকায় ৬ জন মাত্র মেয়ে। এবং সবাই কার্যত প্রাক্তন খেলোয়াড়।
বাংলার সর্বোচ্চ ক্রীড়া সংস্থা বাংলা অলিম্পিক সংস্থার ৬৮ কর্তার তালিকায় ৬ জন মাত্র মেয়ে। এবং সবাই কার্যত প্রাক্তন খেলোয়াড়। যুগ্ম সচিব সুরভি মিত্র হকি ও রোয়িংয়ের। বহুদিন ধরে প্রশাসনে। অন্য পাঁচ জন তিরন্দাজির কৃষ্ণা ঘটক, সাইক্লিংয়ের রিক্তা ধর, নেটবলের বীণাপানি দাস, তাইকোন্ডোর শশী ভার্গব ও কুস্তির শ্বেতা দুবে। (Women in Sports)
দেশের অন্য ব্যাপারে পরে যাচ্ছি। তার আগে বাংলায় দুই মহিলা কর্ত্রীর কথা শুনি। শুনলে মনে হবে, বিভিন্ন পেশার মেয়েরা খেলা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রকমারি পোস্ট করলেও সিনেমা-সিরিয়াল-গান-নাটকের মতো খেলায় প্রশাসনে কাজ করতে আজও অনাগ্রহী। (Women in Sports)
আরও পড়ুন:উত্তর কেন দেশের সব রাজ্যই বঞ্চিত, উত্তর নেই
রাজ্য টেবল টেনিস সংস্থার যুগ্ম সচিব শর্মি সেনগুপ্ত ২০১৪ থেকে টিটি প্রশাসনে। তখন কমিউনিস্ট সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় রাজ্য টিটি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, এখন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। শর্মি নিজে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি খেলার ব্লু। সাঁতার, রোয়িং, বাস্কেটবল। কিন্তু বাস্তবে গৃহবধূ। সন্তানদের বড় করে এই পেশায়। তিনি মেনে নিলেন, এই ক্ষেত্রে নারী স্বাধীনতা গুরুত্ব পায় না। তাঁর সাফ কথা, ‘স্বীকার করতে খুব খারাপ লাগে। কিন্তু কোথাও না কোথাও গিয়ে আমরা নারীরা আজও পরাধীন। যতই উওমেন্স ডে বলি, নারী স্বাধীনতা বলি, আর যাই বলি, আজও রাতে দেরিতে বাড়ি ফিরলে অনেককে অনেকের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। পুরুষরা অফিস করে, অ্যাসোসিয়েশন করে এগারোটায় ফিরলে জবাবদিবি করতে হয় না। মেয়েদের করতে হয়। আমাকে জিজ্ঞেস করে না, অনেককেই করে।’ (Women in Sports)
মজা হল, সবচেয়ে বেশিদিন ধরে যুগ্ম সচিব থাকলেও বিওএতে টেবল টেনিসের প্রতিনিধি হিসেবে রাখা হয়নি শর্মিকে। যেমন গুরুত্ব পাননি বাংলায় টিটি দুটো ভাগ করার অন্যতম কারিগর প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মান্তু ঘোষ। (Women in Sports)
কেন এই পেশায় সাধারণ ঘরের মেয়েরা নিয়মিত আসেন না, ছেলেরা তো প্রচুর আসেন কর্মকর্তা হতে? শর্মির বিশ্লেষণ, ‘সাধারণ বাড়িতে মেয়েদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়। সংসারের কাজ করে, বাচ্চা মানুষ করে। তারপর প্রচুর প্যাশন থাকতে হয়। যারা খেলা ছাড়া থাকতে পারে না, তারাই পারবে। তারপর এখানে প্রচুর স্ট্রেস, স্ট্রাগল। স্বার্থপর, ধান্দাবাজ লোকও আছে। যারা সব সময় কিছু না কিছু চাইছে। আপনি কোনও সুযোগ দিলে ভাল, না দিলেই খারাপ। মহিলা হলে কোথাও অসুবিধের জায়গা থেকেই যায়। তারপরে এই পেশাটা পুরোপুরি অনারারি। সৎ থাকলে কাজ করে টাকা মেলে না। পকেট থেকে পয়সা যায়।’ (Women in Sports)
‘মেয়েদের পক্ষে নিজের ক্লাব চালানো সম্ভব নয়। অনেকটা অনীহা থেকেই সাধারণ মেয়েরা এই পেশায় আসে না। পুরুষ শাসিত বলেও সাহস পায় না।’
আইএফএর সহসচিব সুদেষ্ণা আবার খেলতেন না। বাবার ক্লাব তালতলা দীপ্তি সংঘে কাজ করতে করতে ফুটবলে আসা। তিনিও অকপট, ‘মেয়েদের পক্ষে নিজের ক্লাব চালানো সম্ভব নয়। অনেকটা অনীহা থেকেই সাধারণ মেয়েরা এই পেশায় আসে না। পুরুষ শাসিত বলেও সাহস পায় না।’ (Women in Sports)
এখন অনেক পরিচিত মহিলা লেখকও ফেসবুকে মেয়েদের খেলা নিয়ে লিখছেন। সুদেষ্ণার অভিজ্ঞতা অবশ্য বলে, ‘মেয়েরা অনীহার জন্য খেলার প্রশাসনে আসে না। বাস্তব হল, সাধারণ মেয়েদের ভালবাসা নেই খেলায়। প্রশাসনে আসতে গেলে সাহস লাগে। খারাপ লাগছে বলতে, তবে এ ক্ষেত্রে মেয়েরা সাহসী নয়। আর মেয়েদের মধ্যে খেলার প্রশাসন নিয়ে নাক সিঁটকোন ব্যাপার রয়েছে।’ শুরুর দিকে দু’জনকেই অনেক টিপ্পনি শুনতে হয়েছে পুরুষ কর্তা ও দর্শকদের কাছে। (Women in Sports)

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক ভয়ঙ্কর বিতর্ক হয়েছে নারী-পুরুষকে কেন্দ্র করে। জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটার জাহানারা আলম যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক এবং ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। আমাদের দেশে বক্সিংয়ের সর্বময় কর্তা ব্রিজভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে তোলপাড় হয় কিছুদিন আগে। অনেক নামী অলিম্পিক পদকজয়ী সরব হন এ নিয়ে। অনেক টালবাহানার পর ব্রিজভূষণ সরলেও এখনও বিভিন্ন রাজ্য থেকে উঠে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। (Women in Sports)
ভারতে মেয়েদের খেলা ঘিরে দূর অতীত ও সাম্প্রতিক অতীতে এই ধরনের অভিযোগ ওঠে প্রচুর। সে সময় অনেক কর্মকর্তা মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক পাতিয়ে তাঁদের নানা সুবিধে দিয়েছেন। কাউকে জাতীয় দলে ঢুকিয়েছেন, কাউকে কোচ করেছেন, কাউকে কর্মকর্তা বানিয়ে দিয়েছেন। সমকামিতার গল্প নিয়ে অহেতুক বিতর্ক ছড়িয়েছে। মি-টুর বহু অকল্পনীয় গল্প চাপা পড়ে গিয়েছে, অনেক মেয়ে খেলোয়াড় সামাজিক ভয়ে মুখ খুলতে না পারায়। (Women in Sports)
সাধারণ মেয়েরা যদি গণহারে ক্রীড়াকর্তা হতেন ভারতে, তা হলে এমন পরিস্থিতি হত না। মেয়েরাই তা হলে মেয়েদের খেলার প্রশাসনিক দিকটা পুরোপুরি দেখতেন।
সাধারণ মেয়েরা যদি গণহারে ক্রীড়াকর্তা হতেন ভারতে, তা হলে এমন পরিস্থিতি হত না। মেয়েরাই তা হলে মেয়েদের খেলার প্রশাসনিক দিকটা পুরোপুরি দেখতেন। ড্রেসিংরুমে, হোটেলে, ট্রেনিংয়ে পুরুষদের উপস্থিতির দরকার হত না। নারী লোভী পুরুষদের তৈলও দিতে হত না। (Women in Sports)
টাকার জন্য, অভিজাত মানুষদের উপস্থিতির জন্য ভারতে চিরকালই ক্রিকেট এগিয়ে। এখন হইচই চলছে মেয়েদের নিয়ে। অথচ ভাবতে পারেন, মেয়েদের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচ হয়েছে ১৯৩৪ সালে আর ভারতের মেয়েরা প্রথম টেস্ট খেলেছে ১৯৭৬ সালে। খেলাটা শুরু হওয়ার ৪২ বছর পরে। তার মানে আমরা শুরুই করেছি ৪২ বছর পর। (Women in Sports)
১৯৭৩ সালে যখন উওমেন্স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া লখনউতে তৈরি হল, তখন সচিব ছিলেন এক পুরুষ। মহেন্দ্র শর্মা। প্রেসিডেন্ট এক মহিলা, হামিদা হামিদাদুল্লা। একজন সাংসদ ও সমাজকর্মী। ২০০৬-৭ সালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে মিশে যায় ওই সংস্থা। (Women in Sports)
এখন আপনি জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ কমিটি অ্যাপেক্স কাউন্সিলে চোখ রাখলে দেখবেন এগারো জনে, ২ জন মহিলা। দু’জনে কোনও রাজ্য থেকে আসেননি, মেয়ে ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন।
এখন আপনি জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ কমিটি অ্যাপেক্স কাউন্সিলে চোখ রাখলে দেখবেন এগারো জনে, ২ জন মহিলা। দু’জনে কোনও রাজ্য থেকে আসেননি, মেয়ে ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন। শুভাঙ্গী কুলকার্নি ও সুধা শা। গত ১৮ বছরে ভারতীয় বোর্ডে কোনও রাজ্য কোনও মহিলাকে সচিব বা প্রেসিডেন্ট করেননি। তাই কেউ আসেননি ওয়ার্কিং কমিটিতে। মাঝে একবার রেল বোর্ড এক মহিলা অফিসার ঝাঁঝা ত্রিপাঠীকে রেল বোর্ডের তরফে ক্রিকেট বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটিতে পাঠিয়েছিল। তাই জায়গা হয়েছিল কোনও মহিলার। তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ। (Women in Sports)
অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সর্বোচ্চ কমিটিতে দেখা যায় ইতিহাস সৃষ্টিকারী অ্যাথলিট অঞ্জু ববি জর্জ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। কার্যকরী কমিটিতে রচিতা মিস্ত্রি, প্রিয়াঙ্কা ভানোটদের নাম রয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সব পদেই পুরুষতন্ত্রের জয়ধ্বনি। (Women in Sports)

এঁরা কেমন ভূমিকা নিয়ে থাকেন, বা কেমন ভূমিকা তাঁদের নিতে দেওয়া হয়? এই প্রশ্ন তোলার আগে একটু সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির দুই মহিলা ফুটবলার প্রতিনিধির গল্প বলে নেওয়া যায়। নয়াদিল্লিতে যে কোনও সভায় এলে তাঁদের কাজ ছিল একটাই। বক্তব্য রাখা নয়, সভায় নিজেদের ছবিটা একবার জোগাড় করে নেওয়া। ওটা পোস্ট করতে হবে তো সোশ্যাল মিডিয়ায়! (Women in Sports)
দেশের সব জায়গাতেই মেয়ে কর্তাদের ভূমিকা মোটামুটি এমন আঁধারেই পড়ে। বাংলায় তবু কিছু মুখ দেখা যায় মাঝেসাঝে। প্রচারের জন্য ইস্টবেঙ্গল কর্তারা কার্যকরী কমিটিতে নেন ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামীকে, মোহনবাগান কর্তারা মাঝে মাঝে গুরুত্বহীন করে রাখা অ্যাথলেটিক্সের দায়িত্ব দেন এশিয়াড সোনা জয়ী সোমা বিশ্বাসকে। মোহনবাগান কার্যকরী কমিটিতে একবার আনা হয়েছিল সবুজ মেরুন সদস্য গ্যালারিতে সবার প্রিয় মঞ্জু ঘোষকে। ইস্টবেঙ্গল এনেছিল কৃশানু দের স্ত্রী পনি দে-কে। সাধারণত শোভা বাড়াতে। কলকাতার বাইরে, ভিন রাজ্যে খোঁজ নিতে দেখা যায়, পরিস্থিতি সেখানে একই রকম খারাপ। (Women in Sports)
খেলার মাঠ আবার নতুন করে বলে দিয়ে যায়, বহু পেশাতেই নারী স্বাধীনতা এখনও শুধু কথার কথা। কিছু পেশা নারীদের বাদ দিয়েই ভাবা হয়ে থাকে।
তখন নারী স্বাধীনতা নিয়ে শর্মি বা সুদেষ্ণার বলা কথাগুলো মনে হানা দেয় বারবার। খেলার মাঠ আবার নতুন করে বলে দিয়ে যায়, বহু পেশাতেই নারী স্বাধীনতা এখনও শুধু কথার কথা। কিছু পেশা নারীদের বাদ দিয়েই ভাবা হয়ে থাকে। খেলায় কর্মকর্ত্রী ব্যাপারটা যেমন। (Women in Sports)
আজ বহু ভারতীয় নারী খেলায় অলিম্পিক পদক জিতছেন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হচ্ছেন। অথচ নারীদের খেলায় কর্মকর্ত্রী হিসেবে কাজ করায় প্রধান বাধা হিসেবে উঠে আসছে নারী পরাধীনতার কথা। (Women in Sports)
আশ্চর্য বৈপরীত্য, না?
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।
