Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

৯৯ বছর বয়সেও পারফেক্ট শীর্ষাসন

পল্লবী মজুমদার

অক্টোবর ৩০, ২০১৯

ঋজু
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

বয়স নব্বুইয়ের কোঠা ছাড়িয়ে গেলেও সবসময়ের পোশাক সাদা হাতাওলা ব্লাউজ আর ফিকে গোলাপি শাড়িটিতে বার্ধক্যের দাগ লাগতে দেননি কখনও। সে বয়সেও যোগাসনের প্রতিটি ভঙ্গিমা ছিল নিখুঁত। অবলীলায় মাথা ঠেকাতে পারতেন হাঁটুতে। শুয়ে পড়ে পা উল্টিয়ে দিয়ে ছুঁতে পারতেন মাথার পিছনের মাটি। মৃত্যুর হপ্তাখানেক আগে পর্যন্তও অনায়াসে শীর্ষাসন করতে পারতেন যোগাসনের জীবন্ত কিংবদন্তী ভি নানাম্মল। ২০১৯ সালে ৯৯ বছর বয়সে কোয়মবত্তুরের বাড়িতে প্রয়াত হন তিনি। শেষ দিন পর্যন্ত , অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ছোঁননি। বিশ্বাস করতেন সেরে ওঠবার তাগদ আছে শরীরের ভেতরেই। সুস্থ জীবনযাপন এবং নিয়মানুবর্তিতাই সুস্বাস্থ্যের গোড়ার কথা। সেই শিক্ষাই নিজের পরিবার এবং ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে চলেছিলেন পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিতা নানাম্মল, যাঁকে আদর করে ‘যোগাপাতি’ নামে ডাকতেন সকলে (তামিল ভাষায় পাতি শব্দের অর্থ ঠাকুমা)। 

কোয়মবত্তুরের কাছে এক গ্রামে চাষির ঘরে জন্ম নানাম্মলের। ১৯২০ সালে। আট বছর বয়সে বাবার কাছেই যোগাসনে হাতেখড়ি। সেই থেকে ওটাই ধ্যানজ্ঞান। বিয়ের পরেও ছাড়েননি। নেচারোপ্যাথি নিয়ে চর্চা শুরু করেন সেই সময় থেকেই। ক্রমে ছাত্রছাত্রী আসতে থাকে, সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৭২-এ কোয়মবত্তুরে খোলেন ওজোন অনাধম যোগা স্কুল। প্রাণায়াম এবং যোগাসনের প্রথাগত তালিম শুরু করেন যোগাপাতি স্বয়ং। তখনই তাঁর বয়স প্রায় পঞ্চাশ। এরপর প্রায় ৪৫ বছর ধরে টানা যোগাসন শিখিয়েছেন তিনি। উইকিপিডিয়া বলছে সারা বিশ্বে তাঁর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দশ লাখ। 

নানাম্মলের পুত্র ভি বালাকৃষ্ণন জানান, আর কিছুদিনের মধ্যেই সেঞ্চুরি করতে চলেছিলেন মা। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে চোট পান। তা থেকে আর সেরে উঠতে পারেননি নবতিপর এই কিংবদন্তী। “যদিও তার ক’দিন আগেই মা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মাস্কটে যোগা ট্যুরে গিয়েছিলেন। অসংখ্য ছাত্রছাত্রীকে তালিম দিয়েছেন। এমনকি রেডিওতেও যোগাসনের ডেমো দিয়েছেন। শেষ দিন পর্যন্ত ওঁর স্মৃতিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি অটুট ছিল। মা বলতেন, নিয়মিত শীর্ষাসন করার ফলেই এমনটা হয়েছে।“ জানান বালাকৃষ্ণন। নিজের পরিবারে তিন প্রজন্ম ধরে যোগাসনের তালিম দিয়েছিলেন নানাম্মল। এগারো বছরের নাতি এবং পাঁচ বছরের পুতিকেও শেখাতেন যোগাসন। নিজের পরিবার থেকেই ৬৩ জন যোগাসন শিক্ষক গড়ে তুলেছিলেন নানাম্মল। যোগাসনকে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় করে তুলতে তাঁর চেষ্টা ছিল অক্লান্ত।   

২০১৭ সালে বিবিসি থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। নাম দেওয়া হয় ‘বেন্ড ইট লাইক গ্র্যানি’। সেখানে নিজের যোগাসনের প্যাশনের কথা নিজের মুখেই জানিয়েছিলেন নানাম্মল। করে দেখিয়েছিলেন নানা আসন। ২০১৯-এর জানুয়ারি মাসে পদ্ম সম্মানে ভূষিত করা হয় তাঁকে। তাঁর কন্যা রাজামানির বয়স এখন ষাটের ওপর। তিনিও জানালেন, রোজকার জ্বর, ঠান্ডা লাগা, পেট খারাপের জন্য জীবনেও ওষুধ খাননি মা। তাঁদেরও খেতে দিতেন না। ঘুম না হলে গরম দুধে রসুনবাটা দিয়ে খেতে বলতেন। চিরকাল ব্রাহ্মমুহূর্তে শয্যাত্যাগ করে এক গেলাস জিরাপানি খেয়ে দিন শুরু করতেন। তাঁর প্রধান এবং প্রিয় খাবার ছিল সত্থু মাভু কাঞ্জি – নানাপ্রকার প্রোটিন-সমৃদ্ধ দানাশস্য গুঁড়ো করে একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হত এই খাবার। সঙ্গে থাকত হরেক রকম সবুজ শাক। রাতে কেবল খেতেন এক গেলাস দুধ আর একটা কলা। 

পুত্র বালাকৃষ্ণণ সগর্বে জানান, “অনেক অ্যালোপাথি চিকিৎসক মায়ের ছাত্র ছিলেন। জীবনশৈলি আর প্রাণায়ামের পাঠ নিতেন মায়ের কাছ থেকে। প্রতিদিন অন্তত শ’খানেক ছাত্র তালিম নিতেন ওঁর কাছে। বাচ্চাদের শেখাতে বিশেষভাবে ভালবাসতেন মা। বলতেন, যত কমবয়সে শিখবে, ততই ভাল। সারাটা জীবন এর সুফল ভোগ করতে পারবে।“ সেই বিশ্বাস সম্বল করেই এগিয়ে চলেছে নানাম্মলের পরিবার, মায়ের কর্মধারা অনিঃশেষ করার লক্ষ্যে। 

Author Pallavi Majumdar

লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!

Picture of পল্লবী মজুমদার

পল্লবী মজুমদার

লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!
Picture of পল্লবী মজুমদার

পল্লবী মজুমদার

লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস