Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

শ্রীলঙ্কা ইয়ালা ন্যাশনাল পার্কের ছবি - অরূপ দাশগুপ্ত

এখানে অরণ্য গভীর সখ্যতায় ভারত মহাসাগরের ধূসর নীল জলকে ছুঁয়ে থাকে । সমুদ্রের সফেন ঢেউ রোজ ভিজিয়ে দিয়ে যায় মাটির ওপর জেগে থাকা ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূল, – লেগুন আর খাঁড়ির পথ ধরে সকাল বিকেল নোনা জলের সঙ্গে চলে পর্ণমোচী বনস্পতির লুকোচুরি খেলা। বিস্তীর্ণ ঘাসজমি আর ঝোপঝাড়ের একঘেয়েমির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা স্যাটিনউড বা আবলুশ গাছের ঘন পাতার আড়ালে নিশ্চিন্তে বাসা বাঁধে গ্রে হর্নবিল অথবা ব্ল্যাকহেডেড আইবিস।শেষ বিকেলের নরম  আলোয় যখন গোটা চরাচর হয়ে ওঠে ভারি মায়াময় তখন হয়তো কোনোদিন পথ ভুলে দলছুট হাতি পৌঁছে যায় সমুদ্রের কিনারে অথবা গভীর রাতে নিশব্দে রাজকীয় ভঙ্গিতে হেঁটে চলে যায় লেপার্ড – ঢেউ-ভাঙ্গা বালির তটে পড়ে থাকে তার পায়ের ছাপ। এই বৈচিত্র্য ভরা অরণ্য প্রকৃতির পোশাকি নাম ‘ইয়ালা ন্যাশনাল পার্ক’। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণপূর্ব উপকূল ঘেঁষে প্রায় হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই অরণ্য। অবস্থানগত কারণে ইয়ালায় বর্ষা আসে শীতকালে। শিশিরঝরা হেমন্তের শেষে, উত্তরপূর্ব মৌসুমী বাতাসের হাত ধরে বৃষ্টি নামে ইয়ালায়। সে বৃষ্টি শ্রীলঙ্কার অন্যান্য অঞ্চলের মত নদীর কূল ছাপানো, পাড় ভাঙ্গানো বৃষ্টি নয়, বরং তার হিসেব খানিকটা কমতির দিকেই। তাই এখানে মৌসুমী, পর্ণমোচী, ম্যানগ্রোভ ইত্যাদি নানা ধরনের অরণ্যের আশ্চর্য সহাবস্থান লক্ষ্য করা গেলেও পার্ক ল্যান্ড বা সাভানা অরণ্যেরই আধিপত্য বেশি। প্রায় চুয়াল্লিশটি প্রজাতির স্তন্যপায়ী, দুশো পনেরোটি প্রজাতির পাখি এবং অসংখ্য সরীসৃপের বসবাস এই অরণ্যে। জঙ্গল সাফারির পথে তাদের অনেকের সাঙ্গেই দেখা হয়ে যায়। আর যদি ভাগ্য সত্যিই প্রসন্ন থাকে তবে দেখা মেলে ইয়ালার রাজা লেপার্ডের। অবশ্য না দেখতে পেলেও আফশোসের কোনো কারণ নেই। প্রকৃতি তার একান্ত নিজস্ব এই অরণ্যভূমির আনাচে কানাচে যে নিখাদ, আদিম সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছে, তার কিছুটা কুড়িয়ে নিলেই ঝুলি আপনি ভরে ওঠে, পূর্ণ হয়ে ওঠে প্রাপ্তির ভান্ডার।সেই প্রাপ্তিই ভাগ করে নিলাম ছবির হাত ধরে।

Author Aroop Dasgupta

পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়ো ফিজিক্স বিভাগে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তিকে। প্রায় এগারো বছর নানা বহুজাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত থাকার পর উনিশশো সাতানব্বইতে তৈরি করেন নিজের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বর্তমানেও যুক্ত রয়েছেন সেই সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে। কাজের জগতের ব্যস্ততার ফাঁকে ভালবাসেন গান-বাজনা শুনতে এবং নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে। সুযোগ পেলেই বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন আর সেই অভিজ্ঞতা ধরে রাখেন ক্যামেরায়।