[বাংলালাইভ ভূতের গল্প প্রতিযোগিতার মনোনীত গল্প]
ওয়াংখা বার থেকে আমি আর দিলরাজ ঠিক ক’টার সময় বেরিয়েছিলুম মনে করতে পারিনি।
ওরা তো থানা পুলিশ করেচিল। তখন অফিসার ধুনচিলেন খুব, ক’টা- কোথায়- কে কে। মনে না থাকলে কী বলব? ওরা মানে মনীষার বাপের বাড়ি। বিশেষত ওর ভাউজু, পেশায় উকিল। তো, তাও মনে করতে পারিনি।
রাত দেড়টার সময় দিলুর ফোনে একটা কল এসচিল মনে পড়ে। যা হয়। সাইকডেলিক আলোর শব্দে গমগমে ফ্লোর। সিনি একটু দূর থেকে আঙুল দেখাচ্চিল, ইওর ফোন ইজ রিংগিং। তিনবারের বার হুঁশ পায় দিলরাজ। তারপর ধন্যবাদ, লাসো-লা চলতে থাকে। মাঝখান থেকে ফোন কেটে যায়। সৌজন্যের আলাপচারিতা কিন্তু থামে না। অপরিচিত সংখ্যা আবার বেজে ওঠে। সিনি ফের ইঙ্গিত করে। দিলরাজ তখন সিনির শালির মেয়ে দিল্লিতে পড়তে গিয়ে কেমন আচে, এবম্বিধ আত্মীয়তায় কাতর। তবু, নেহাতই অনুকম্পায়, ফোনটি তোলে। তেরো সেকেন্ডের মাথায় নাবিয়ে রাখে।
– বস! ইয়… আম্বিলিকাল কর্ড ভনেকো, কেই হুন ছ?
বেশ ক্যাজুয়ালি-ই বলে। বলে, নতুন পেগ ভরে দেয় আমাকে। সিনিকে ঘাড় ফিরিয়ে অনুরোধ করে। মাথা ঝোঁকায়। এদিকে ফেরে। গুছিয়ে বসে দিলরাজ,
– আরে, হসপিটাল থেকে, বলছে গিন্নির কী বলে একটা কর্ড জড়িয়ে গ্যাছে। তাই আর কী।
তখন দেড়টা। মনীষাকে বিকেলে দেখে এসেচি আমরা। উদ্বেগ না কৌতূহল বোঝার চেষ্টা করি একটু। দিলরাজ টোস্ট করেই চুমুকে গেলাশ অর্ধেক করে ফেলে। বার গার্লদের পিটপিট করে মাপে মিনিটখানেক।
— হ্যাঁ, তুমি তো খোঁজখবর রাখো নানারকম। সিগারেট এগিয়ে দেয়।
প্রমাদ গণি কি? না বোধহয়। ডাক্তারির সঙ্গে দূরদূরান্তের সম্পর্ক না থাকলেও, হুইস্কির চব্বিশ ক্যারাট আমাকে গপ্পের দিকে টানছিল। ঠান্ডা স্যাঁতসেতে পাহাড়ি পরিবেশ, সেখানে কথা ভাঁজার বিষয় তো বড় একটা মেলে না। ধরিয়ে একটা টান দিই।
— ইটস আ পাইপ বিটুইন দি ইয়েট টু বি বর্ন বেবি অ্যান্ড দ্য মাদার।
নিখুঁত সংজ্ঞা নির্ধারণ ক্ষমতায় নিজের প্রতি নিজেই মুগ্ধ হই খানিক।
আরও পড়ুন: অশোককুমার মুখোপাধ্যায়ের নভেলা: নন্দিনী আসছে…
— ওহ ওকে… ওকে। দিলরাজ যেন কত বোঝে। আমি যেন কত জানি। তবে পেগ নিই আবার। গ্রিক মাইথলজিতে আম্বিলিকাল কর্ড এসব ধুনচুন বকি খানিক। গপ্পের গন্ধ পেয়ে দিলরাজ বলে তার গ্রামে, এ জিনিস বুড়ো সাইপ্রাস গাছের তলায় মাটিচাপা দেওয়া হয় পুজো করে। আমরা একটু হাসাহাসি করি গ্রামের লোকদের নিয়ে। সোনম পালদেন গ্রামপ্রধানের পরীক্ষায় পাশ দিয়ে শহরের নামী প্রাইভেট কোম্পানি ছেড়ে গেল, এ নিয়ে আলোচনার মাঝে দিলরাজের ফোন আবার বেজে ওঠে। বেজে যায়। আমরা ততক্ষণে, কবে সোনমের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ভোজ খাব আর শুয়োর শিকারে বেরব ভুট্টা ক্ষেতে, প্রধানের শহুরে বন্ধুদের দেখে গাঁয়ের লোকজন কেমন লাসো-লা করবে, সেইসব নিয়ে দুপ্রস্ত আলোচনা সেরে ফেলেচি। দিলরাজ যথারীতি উত্তেজিত।
হাত লেগে তিন নম্বর গ্লাসটা ভাঙার সময় আমি খেয়াল করি যে বার টেন্ডার কিংগা একটুও রেগে যাচ্চে না। দু’ দুটো গ্লাস পড়ে ভেঙেচে দিলরাজের হাত থেকে। অথচ। গত তিন ঘন্টায়। ভাঙা কাচ সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। আর কিংগা তার মাঝ দিয়ে কেমন একটা ফরেন লুকিং সারস পাখির মতো বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে হেঁটে বেড়াচ্চে। তার পরনে নি-লেংথ কালো স্কার্ট। পায়ে মেরুন হিল। দিলরাজকে ডেকে দেখাতে চাই। আর তখনই সে আবার প্রশ্ন করে, এই আম্বিলিকাল কর্ড জড়িয়ে যাওয়া কেস টা কী। এতে কী হয়।
মাথাটা অল্প ধরে ছিল। ওয়াংখার দরজা খোলার আগে থেমে যাই। প্রবল ঝড়ের শব্দ। হাওয়ার ধাক্কায় লোহার ড্রাগন আঁকা গেট দুটো থেকে থেকে আছড়াচ্চে। এর মধ্যে কে যাবে বাইরে! দিলরাজ মত্ত হাতে হ্যাঁচকা টান দেয় একটা। পরিষ্কার আকাশ। বাতাস চুপ। তাহলে শোঁ শোঁ শব্দ কিসের! গাড়িতে ঢুকতেই কাচের ওপর বৃষ্টি। আমি পাশে বসি। দুবারের চেষ্টায় স্টার্ট নেয় দিলু। স্বাভাবিক। দুপুরে এমব্যাসি ক্লাবে পার্টি ছিল, সেই ইস্তক টানচে।
গাড়ি ছোটে। মুখে হাওয়া লাগাব বলে জানলা একটু নাবাই। ছাট আসে না। দূরে পাসাখা সাইডে পাহাড়ের মাথায় একটা চাঁদ হয়ে আচে। ক্রমে সেই চাঁদের তলায় ফুয়েনছোলিং সিটি হসপিটাল ফুটে ওঠে। হাসপাতালের সিঁড়িতে এক অপরিচিত যুবক হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে দিলরাজের দিকে ছুটে আসে, পরে জেনেছিলুম ছোটো শালা, তখন কোনওমতে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরাই। আপদ। লেবর ওয়ার্ডের পোশাক, দেয়াল সব এত ফ্যাকাসে হয় কেন কে জানে। ঢুকতেই একদল ফ্যাকাসে পেংগুইন আর স্টেথো গলায় সীলমাছ আমাদের ঘিরে ধরে মাথা নিচু করে বকবক করতে থাকে।
পেগ নিই আবার। গ্রিক মাইথলজিতে আম্বিলিকাল কর্ড এসব ধুনচুন বকি খানিক। গপ্পের গন্ধ পেয়ে দিলরাজ বলে তার গ্রামে, এ জিনিস বুড়ো সাইপ্রাস গাছের তলায় মাটিচাপা দেওয়া হয় পুজো করে। আমরা একটু হাসাহাসি করি গ্রামের লোকদের নিয়ে। সোনম পালদেন গ্রামপ্রধানের পরীক্ষায় পাশ দিয়ে শহরের নামী প্রাইভেট কোম্পানি ছেড়ে গেল, এ নিয়ে আলোচনার মাঝে দিলরাজের ফোন আবার বেজে ওঠে। বেজে যায়।
নাড়ি জড়িয়ে মৃত্যু এদের কাছে নতুন না। তবু এমন ভাব করে চলেচে যে, দিলরাজ সময়মতো এসে সই করে দিলে বাচ্চাটাকে বাঁচানো যেত। মাথা দপদপ করতে থাকে আমার। ফালতু দোষ দেওয়ার একটা সীমা থাকবে তো নাকি! ইতিমধ্যে মনীষার বাড়ির লোক হাজির। ফোনাফুনি। তাদের গুরুর নির্দেশ, কীসব পুঁতে দিতে হবে মাটিতে আর কীসব ভাসাতে হবে নদীর জলে। দিলরাজ যন্ত্রের মতো হাঁ হঁজুর করে যেতে থাকে সবেতেই।
তোর্সা নদীর ধার ধরে, জল থেকে দূরে, বালির চর পার করে আমাদের গাড়ি দাঁড়ায়। হাতে পুঁটলি নিয়ে হঠাৎ দিলরাজ বলে, চলো জুতো খুলে জল অবধি যাই। গাড়ি থেকে নেবে কয়েক পা ফেলতে গিয়ে টলে যায় একবার। দুপুর থেকে হুইস্কি আর এখন নদীর ধারের হাওয়া। কিন্তু সে মানতে চায় না নেশা হয়েচে। উলটে বলে, বাচ্চা নাকি নড়ে উটল। আবার মাথা গরম হতে থাকে আমার। একে মুড নষ্ট তারপর এসব ঢং। দিলরাজ জিদ ধরে। চাদর ফাঁক করে বেবির মুন্ডুটা দেখায়। চাঁদের আলোয় একটা নীলচে হয়ে যাওয়া পুতুলের মুখ। বিরক্ত হই। কিন্তু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয় কেমন। হাওয়ার ঝাপটে ঢেকে যায় কাপড় উড়ে। মুহূর্তের জন্যে চোখ দুটো কি নড়ে ওঠে?
গাড়ি ঘোরাই আমরা। বাচ্চাকাচ্চার ব্যাপার। সত্যি বেঁচে নাকি কে জানে।
এবার আর কাচ নাবানোর চেষ্টা করলুম না। গাড়ি পেলখিল রোড ধরল। টানা পথ। হাসপাতাল গিয়ে উঠেচে। এদিকে রাস্তার আলোগুলো কাটল কী করে, কে জানে। দিলরাজকে বলি আস্তে চালাতে, সে শোনে না এবং কিলোমিটার দুয়েক গিয়েই ব্রেক কষে কোনওরকমে থামায়। গাড়ির আলোয় দেখি চাকার সামনেই খাদ। তিন ফুট ব্যবধান বড়জোর। শুধু খাদ। পাহাড়ি পিচের রাস্তাকে কেউ কাগজের ঠোঙার মতো দুমড়ে ছিঁড়ে নিয়েচে। দিলরাজ একবার পেছনের সিটে, বেবির পুঁটলিটা দেখে। ঝাঁকুনিতে পড়ে যায়নি। আমি ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলি,
— এতা ভুঁইচল ভাকো ছ। কার ঘুমাউনি।
দিলরাজ শোনে না। গাড়ি থেকে নাবে ও বাইরে কোনও ঝড়বৃষ্টি হচ্চে না দেখে আমার দিকে হাঁ করে তাকায়। আবার ঠান্ডা গলায় বলি, এক্ষুনি গাড়ি ঘোরাও, আর্থকোয়েক।
আবার তোর্সার দিকে চলেচি। কাচের বাইরে অবিশ্রান্ত ঝড় বৃষ্টি। সোম, প্রব্লেম ছ, বিড়বিড় করে দিলরাজ, গাড়ি স্পিড নিচ্ছে না। তাকিয়ে দেখি, চল্লিশ থেকে ষাট ছাড়িয়ে যাচ্ছে স্পিডোমিটার, সাইড মিররে দেখার চেষ্টা করি ভারী চোখের পাতা খুলে। পেছনে ও কী সুড়ঙ্গের মতো ধেয়ে আসচে! নাকি ঝড়?
নদীর ধারে যখন এসে নাবলুম, তখন দু’জনেরই অবস্থা সুবিধের নয়। পা দুটো ভারী, চোখ টানচে। গুমোট বাতাস। মনে হচ্চে বেকার জল অবধি না হেঁটে বাচ্চাটাকে এখানেই পুঁতে দিয়ে চলে যাই। চাঁদের আলোয় চারপাশে ছড়ানো নোংরা পলিথিন আর কৌটোবাটা। ভাঙা গাছের ডাল উঁকি দিচ্চে তার থেকে, ভাবি ডেকে দেখাব দিলরাজকে, যেন কারও উঠে আসা হাতের সরু সরু আঙুল। যদিও খুব ভয় পেয়েছিল দিলু এমন নয়। কেমন ঘোর লেগে ছিল মতো। সত্যিই ভেবেচিল নাকি বাচ্চাটা বেঁচে? হাজার হোক নিজের রক্ত। কিন্তু আমার আর পোষাচ্ছিল না। আবার বলি, জল অবধি যাবে? অগত্যা আমাকেও পাশে পাশে যেতে হয়। যতটা চোখ যায় নদীর চরের পাথর টপকে টপকে। দিলু দুবার পাথরের ওপর হুমড়ি খেতে গিয়ে সামলায়।

ফাইনালি, বেবির পুঁটলিটা খরস্রোতা পাহাড়ি নদীর জলে ভাসানোর পর, যখন বোল্ডারে ধাক্কা খেতে খেতে ভেসে যাওয়া সাদা কাপড়টুকু অন্ধকারে দেখা যায় শুধু, পাথরে আটকায়, পরের ঢেউয়ের আঘাতে মিলিয়ে যায়; আমি ভাবি দিলরাজকে জিগাব, বেঁচে ছিল না তো? দেখি, সে আঁতিপাতি করে বালিতে পাথরের ফাঁকে কী খুঁজে চলেচে।
— কী ভয়ো সোম? আমি জিগাই, কিছু পড়ে গেল নাকি!
— কর্ড, তপাইকো, কেই ভনছ অম্বা অম্বা–
— ওহ আম্বিলিকাল! জলে ফেলোনি?
— হই নাআআআআআ! দিলরাজ প্রায় আর্তনাদ করে ওঠে। বাচ্চার নাড়ি আলাদা করে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়। ফেলতে নেই। একটা কাপড়ের কানিতে মোড়া ছিল, হাত ফস্কে পড়েচে পাথরের খাঁজে।
সঙ্গে টর্চ অবধি নেই। চাঁদের আলোতে পাথরের আড়াল ঠাহর হয় না। এর মধ্যে ব্যাটা মাতাল দিলরাজ তার মড়া বাচ্চার নাড়ি হারিয়ে ফেল্ল! বিরক্ত হয়ে সরে দাঁড়াই। পাশের একটা উঁচু পাথরে, ঠেস দিই।
এই সময়েই মাটি কেঁপে ওঠে। ভুঁইচল। এবং, এবার, সন্ধে থেকে প্রথমবার, বাইরে দাঁড়িয়ে ঝড় টের পাচ্ছি। সেই শোঁ শোঁ শব্দ। বাতাসের গতি বাড়চে। ঝিল্কি আলোয় সাদা বালি পাক খেয়ে উঠচে। কোনওরকমে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করি। পায়ের তলায় কী যেন! দ্রুত এক পা তুলে সরে গিয়েই দেখি, নদীর সাদা বালি থেকে ছোটো ছোটো শুঁড়ের মতো দুলতে দুলতে কী সব উঠে আসচে আমাদের চারপাশে। সাপ নাকি? না মাথায় ফণা নেই।
কী ওগুলো?!
মাংসের ফুলের মতো মুখ বাড়িয়ে দেকচে যেন। চোখ নেই, ঠোঁটসর্বস্ব ছোট ছোট মুখ প্রতিটা ডগায়। দ্রুত ঘিরে ধরচে আমাদের। মুহূর্তের মধ্যে লকলক করে লম্বা হয়ে গায়ের কাছে দুলচে এসে। গায়ে প’ড়ে। না, গায়ে পড়তে বুঝি, হাতির বা অক্টোপাসের শুঁড় নয়, কেমন পাকানো পাকানো মাংসল দড়ির মতো আর তার সারা গায়ে কোনও চকচকে তরল। ফট করে বাঁহাত পেঁচিয়ে ধরতেই ঝাঁকুনি দিয়ে ছাড়াই। এহ্ হাতে চটচটে কীসব লেগে গেল। দিলরাজকে হাঁক দি, পালাও। এখানে আর না!! কিন্তু সে পাগলের মতো বালি পাথরের খাঁজে খুঁজে চলেচে তার মড়া বাচ্চার নাড়ি।
আর আমাদের ঘিরে চাঁদের আলোয় বিস্তীর্ণ সাদা বালির চর জুড়ে নদীপাথরের ফাঁকে ফাঁকে জেগে উটচে অসংখ্য মাংসল দড়ি। আম্বিলিকাল কর্ড।
এদিকে রাস্তার আলোগুলো কাটল কী করে, কে জানে। দিলরাজকে বলি আস্তে চালাতে, সে শোনে না এবং কিলোমিটার দুয়েক গিয়েই ব্রেক কষে কোনওরকমে থামায়। গাড়ির আলোয় দেখি চাকার সামনেই খাদ। তিন ফুট ব্যবধান বড়জোর। শুধু খাদ। পাহাড়ি পিচের রাস্তাকে কেউ কাগজের ঠোঙার মতো দুমড়ে ছিঁড়ে নিয়েচে। দিলরাজ একবার পেছনের সিটে, বেবির পুঁটলিটা দেখে।
দড়িগুলো ক্রমশ ঘিরে ধরে দিলুকে। আমিও পা থেকে ছাড়াতে গিয়ে বোল্ডারে হুমড়ি খেয়ে পড়লুম। মাথা ঠুকে গেল। শেষবারের মতো পেছন ফিরে যখন দিলরাজের নাম ধরে ডাকলুম, একটা পাইপ তার চোখের মধ্যে দিয়ে ঢুকে গেল, তারপর ছটফটিয়ে বেরিয়ে এল মুখের ভেতর দিয়ে। মুখের ভেতর থেকে বেরনো সেই মুখ তার পুরু ঠোঁট হাঁ করে ফুলের মতো মেলে ধরল খানিক, রস গড়িয়ে পড়ল ভেতর থেকে। আর একটা নাড়ি পেটের মধ্যে চুষে আটকে গিয়ে শরীরটাকে টেনে আছড়ে এনে ফেলল মাটির মধ্যে। যেন কসরত করে দিলরাজের গোটা পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি দেহখান হিঁচড়ে কোনও এক মাটির তলার সুড়ঙ্গে নিয়ে যাচ্চে নাড়িগুলো।
আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুলো না। কপালে অসহ্য ব্যথা। মাথাটা বিষ লাগচে। ঝাপসা হয়ে এল সবকিচু।
[এরপর প্রায় আট মাস আমাকে ফুয়েনছোলিং থানায় এবং কোর্টে হাজিরা দিতে হয়েচিল। আমার কোলিগ দিলরাজ গুরুং-এর বডির হদিশ পাওয়া যায়নি। সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে কেস ক্লোজ ঘোষণা হল যেদিন, ওয়াংখা বারে গেসলুম শেষবারের জন্যে। কিংগা একটা আলপিন দিয়ে কান খোঁচাতে খোঁচাতে বলল, ফিরে যাও, এখানে আর থেকো না। সেদিনই বদলির দরখাস্ত করে দিই। জান-মাল গুছিয়ে ফেরার সময় নদীর ব্রিজ থেকে চোখ গেচিল এক পলক। ঠা ঠা সাদা বালির ওপর উড়ুন্তি হাওয়া। ঘুমন্ত নদী-পাথর। বিপদের চিহ্নমাত্র নেই। কোথাও কিচু পাকিয়ে উটল কি!]
*ছবি সৌজন্য: deviantart
একক নামেই যাবতীয় লেখালেখি। গল্প ও কবিতা মূল পরিসর। মিশনে ইশকুল পত্রিকার হাত ধরে লেখার শুরুয়াৎ। ২০০৬ থেকে একটি ওয়েবম্যাগাজিন ও প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে লেখক-সম্পাদনা সহায়ক হিসেবে যুক্ত। পেশায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। কাজের সুবাদে দেড় দশক নেপাল, ভূটান ও কর্ণাটক হয়ে অবশেষে কল্লোলিনীর টানে ফিরে আসা। নিজের লেখায় হরর-কে, চিরাচরিত গথিক ভঙ্গিমা থেকে সরে এসে ভারতীয় ধ্রুপদী রসের জায়গা থেকে প্রকাশে আগ্রহী। প্রিয় বিষয়: অঙ্ক। নেশা ফটোগ্রাফি। প্রিয় লেখক: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ওসামু দাজাই, কাওয়াবাতা। প্রিয় চিন্তাবিদ: স্লটারডাইক। আপাতত হুয়েলবেক-এ নিমজ্জিত। প্রিয় অবসর: চুপ করে থাকা। ২০১৮-তে গুরুচণ্ডালী থেকে প্রকাশিত গল্প সংকলন 'অতিনাটকীয়'।