আগের পর্ব পড়তে: [১]
জ্যোতির্ময় দত্ত: প্রথমে শেয়ালদা স্টেশন থেকে শম্ভুকে (রক্ষিত), তারপর হাওড়ার ঘুসুড়ি থেকে আমাকে। তিন গাড়ি পুলিস গিয়েছিল আমাকে ধরতে, তার মধ্যে একটা লজঝড়ে ব্ল্যাক মারিয়াতে তোলা হয়েছিল আমাকে। তার সামনের সারিতে ড্রাইভারের পাশে যিনি বোরখা পরে বসেছিলেন, তাঁর পা দুটো দেখা যাচ্ছিল। শম্ভু রক্ষিতের পা চিনে নিতে আমার কোনও অসুবিধেই হয়নি।
ধ্রুবজ্যোতি নন্দী: তারিখটা মনে আছে?
জ্যোতির্ময় দত্ত: ২০শে সেপ্টেম্বর ১৯৭৬। ঘুসুড়ি থেকে কলকাতার লর্ড সিনহা রোডে পুলিসের স্পেশাল ব্রাঞ্চের দপ্তরে পৌঁছতে সেই ব্ল্যাক মারিয়া সময় নিয়েছিল আঠেরো ঘণ্টারও বেশি। পুলিস এসেছিল দুপুরবেলায়, তারপর থেকে কখনও চলে, কখনও খারাপ হয়ে থেমে গিয়ে, ভোরবেলা হাঁপাতে হাঁপাতে পৌঁছেছিল কলকাতায়। পৌঁছনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হল জেরা। টানা চার দিন একটানা জেরা করার পর আমাকে প্রথম একটা ঘরে রাখার ব্যবস্থা হল। তার বেশ কয়েকদিন পর, দিন দশ-পনেরো পরে, নিয়ে যাওয়া হল লালবাজারে। তখনও প্রকাশ্যে জানানোই হয়নি যে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মীনাক্ষি দত্ত: তবে আমরা খবর পেয়ে গিয়েছিলাম। ঘুসুড়ির যে গ্রামের বাড়িতে জ্যোতি ছিল তখন, সেই বাড়িরই এক ছেলে একদিন এসে জানিয়ে গেল, মামাকে পুলিস ধরে নিয়ে গেছে। সেই খবর পেয়েই আমরা ছোটাছুটি শুরু করেছি। বেশ কয়েকদিন পর পুলিস আমাকে ডাকল। জ্যোতির খবর দেবার জন্যে নয়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে।
জ্যোতির্ময় দত্ত: লালবাজারে আনার পরেও আরও কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েক দফা জেরা করার পর কোনও কোর্টে না-তুলে স্রেফ এক ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুমে আমাকে জেলে পাঠানো হল। এমার্জেন্সির সময় এই ছিল বিচারব্যবস্থার চেহারা। আমি জেলে যাওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গৌরদাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাকে অবশ্য আটকে রেখেছিল ১৯৭৭-এর ফেব্রুয়ারি, মানে এমার্জেন্সি তুলে নেওয়ার কিছুদিন আগে পর্যন্ত। কিন্তু আর না, এবার এই প্রসঙ্গ শেষ করা যাক। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!
মীনাক্ষি দত্ত: বেদনা কি এখনও আছে? সে সব অনুভূতি এখন ভোঁতা হয়ে যায়নি?
জ্যোতির্ময় দত্ত: না, একটা ক্ষরণ চলতেই থাকে। যাদের বন্ধু বলে ভেবেছিলাম, প্রাণের বন্ধু, খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তাদের যে চেহারা তখন দেখেছি, যে ব্যবহার পেয়েছি তাদের কাছ থেকে, সেই আঘাতের ক্ষরণ। তবে তার সঙ্গে এটাও বলব, হামদি বে আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সুহৃদ বন্ধু না পেলে জীবনের স্বাদই হয়ত অন্যরকম হত।

মীনাক্ষি দত্ত: গৌরকিশোরের কথাও এখানে বলতে হবে। সব সময় সত্যি বলেছেন। তাতে যে ঝঞ্ঝাটই হোক না কেন, সব সামলে হাসিখুশি থেকেছেন, অন্যদেরও আনন্দ দিয়েছেন। এত ভালো, এত ভালো মানুষ, খুব দুর্লভ…
জ্যোতির্ময় দত্ত উঠে পড়লেন। বললেন, আজ আর কথা বলতে পারব না। মাথার ভেতর দপদপ করছে। একটু জলের নীচে দাঁড়াতে হবে। আবার কথা হবে আর একদিন। জিজ্ঞেস করলাম, আগামীকাল যদি আসি? বললেন, বেশ তো। বলে, আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করলেন না। এর পরের অংশের কথোপকথন সেই পরের দিনের।
ধ্রুবজ্যোতি নন্দী: আপনাদের তো বলা হয় গৌরকিশোরের নবরত্ন সভার দুই রত্ন। গৌরকিশোর যখন নিজে সম্পাদক হলেন, সেটা ১৯৮১, শুনেছি জ্যোতির্ময়কে বলেছিলেন তাঁর কাগজ ‘আজকাল’-এ চাকরি নিতে?
জ্যোতির্ময় দত্ত: হ্যাঁ, বলেছিলেন। মীনাক্ষি বলে, সে প্রস্তাব আমি নাকি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমার মনে হয় না সেটা ঠিক। আসলে তখন আমি একটা স্বাধীন জীবনের স্বপ্ন দেখছি। যদ্দূর মনে পড়ে, গৌরদাকে বলেছিলাম, কোনও চাকরি-বাকরিই আমার দ্বারা হবে না। কাগজে কাগজে লেখালেখি করে সংসার চালাতে পারব না?
ধ্রুবজ্যোতি নন্দী: সেইজন্যেই সোনালি চা বাগানের শ্রমিকদের বঞ্চনা আর দুর্দশা বিশদে তুলে ধরতে গৌরদা আপনাকেই বেছে নিয়েছিলেন?
জ্যোতির্ময় দত্ত: ব্যাপারটা শুরু থেকে বলি। বিস্তর দেনা রেখে মালিকরা পালিয়ে যাওয়ার পর ১৯৭৪ সাল থেকে ডুয়ার্সের সোনারগাঁও মৌজায় ১২০০ একর জোড়া সোনালি চা বাগান চালাচ্ছিল ওই বাগানের আদিবাসী শ্রমিকদের উদ্যোগে তৈরি এক কো-অপারেটিভ, মানে সমবায়। যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছিল, দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল সেই শ্রমিক সমবায়। তাতে জলপাইগুড়ির অন্যান্য চা-বাগানের মালিকদের ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। এইভাবে চললে তো লোকসানে চলা সমস্ত চা বাগান থেকেই মালিকদের সরিয়ে শ্রমিকরা দখল নেবে! তাই বাগান সুষ্ঠুভাবে চলছে দেখে পুরোনো মালিক খেমকারা আবার নিজেদের হাতে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার জন্যে মামলা করে। সেই মামলায় ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে কোর্ট রিসিভার বসায়, আর তার কিছুদিন পর পর থেকেই শুরু হয় শ্রমিকদের হেনস্থা আর লাঞ্ছনা।
পুজোর মুখে বামফ্রন্ট সরকারের পুলিস লাঠি, টিয়ার গ্যাস, এমনকী গুলি পর্যন্ত চালিয়েছিল সোনালির শ্রমিকদের ওপর। ‘আজকাল’ বেরতে শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যে সেই লাঞ্ছনার কথা লিখে আজকাল সম্পাদক গৌরকিশোর ঘোষকে একটা ছ’পাতার চিঠি দিয়েছিলেন ওই বাগানের শ্রমিক এবং সমবায়ের অন্যতম উদ্যোগী সাইমন ওঁরাও। ‘সাগিনা মাহাতো’-র লেখক সেই চিঠি ফলাও করে ‘আজকাল’-এর প্রথম পাতায় ছাপলেন, আর আমাকে ডেকে জানতে চাইলেন, এরপর কী করা উচিত? আমি বললাম, এক্ষুণি ছোটা উচিত জলপাইগুড়ির শাওনগাঁও। গৌরদা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিজে যেতে পারবে? আমাদের বাজেট কিন্তু খুব কম।

এমন সেনাপতির আদেশ মানতে আমি সব সময় তৈরি। যথারীতি যো হুকুম বলে পরের দিনই বেরিয়ে পড়লাম। সেই চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বছর আগে মাল থেকে শাওনগাঁও যাওয়া খুব সহজ ছিল না। বেশ কিছুক্ষণ ধরে খোঁজ খবর চালাচ্ছি, হঠাৎ একটা লোককে দেখে মনে হল, এই কি সাইমন ওঁরাও? দেখা গেল, আমার অনুমান নির্ভুল, তিনিই সাইমন ওঁরাও। কিন্তু তাঁর কাছে কোনও বাহন, এমনকী একটা সাইকেল পর্যন্ত নেই। বহুদূর হেঁটে ভিড়ে ঠাসা একটা বাস ধরে দু’জনে কোনওমতে পৌঁছলুম সোনালি চা বাগানের শ্রমিক বস্তি। কথাটথা বলে বুঝলাম, সাধারণ রিপোর্টিংয়ের ছকে এখানকার গল্প লেখা চলবে না। কারণ, চোখে দেখা যায় এরকম কিছু তো ঘটছে না এখানে, যে সন্ধে হলেই ডেটলাইন দিয়ে লিখতে বসে যাব! এখানে ঘটছে একটা ষড়যন্ত্র, যার কেন্দ্রে পৌঁছতে হবে, তারপর সেটা মেলে ধরতে হবে। চা বাগানে বসে সব খবর পাওয়াও যাবে না, ছুটতে হবে ব্যাঙ্কে, রেজিস্ট্রার অফ কম্পানিজের দফতরে, আরও অনেক জায়গায়।
লালবাজারে আনার পরেও আরও কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েক দফা জেরা করার পর কোনও কোর্টে না-তুলে স্রেফ এক ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুমে আমাকে জেলে পাঠানো হল। এমার্জেন্সির সময় এই ছিল বিচারব্যবস্থার চেহারা। আমি জেলে যাওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গৌরদাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাকে অবশ্য আটকে রেখেছিল ১৯৭৭-এর ফেব্রুয়ারি, মানে এমার্জেন্সি তুলে নেওয়ার কিছুদিন আগে পর্যন্ত। কিন্তু আর না, এবার এই প্রসঙ্গ শেষ করা যাক। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!
সন্ধানে নেমে জানা গেল, ব্রিটিশ মালিকের কাছ থেকে ‘দি গ্রেট গোপালপুর টি কোম্পানি’ নামে ১২০০ একর জমির ওপর তিনটি চা বাগান কিনেছিলেন বি সি ঘোষ নামে এক বাঙালি উদ্যোগপতি। ১৯৭২ সালে সেই কোম্পানির মাথার ওপর ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের দেনা ৩২ লক্ষ টাকা, এ ছাড়াও টি বোর্ড, শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদিতেও বকেয়া আরও কয়েক লক্ষ। কলকাতার দুই ব্যবসায়ী ভাই ভিকে এবং কেকে খেমকাকে তিনি তাঁর চা কোম্পানি বিক্রি করে দেন। খেমকারাও বাগান চালাতে পারেননি। এক বছরে শ্রমিকদের বেতন, বোনাস, পিএফ ইত্যাদি বাবদ আরও লাখ চারেক টাকা বকেয়া বাড়িয়ে ১৯৭৩ সালে তাঁরা বাগান ছেড়ে কলকাতায় পালান। ইউবিআই পাওনা উদ্ধারের জন্য মামলা রুজু করে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের কাছে আর্জি জানানো হয়, তাঁরা একটি সমবায় গঠন করে বাগান চালাতে চান। তাতে লাভ করে একদিন ব্যাঙ্কের দেনা মেটানো সম্ভব।

খেমকারা বলেন, তাঁদের যদি কোনও আর্থিক দায় না থাকে, তবে তাঁরা এই প্রস্তাবে রাজি। তারপর থেকে কোনও ম্যানেজার ছাড়া সমবায়ের পরিচালনায় আধা মজুরিতে আধপেটা খেয়ে সোনালির শ্রমিকরা অসাধ্য সাধন করেন। ইতিমধ্যে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের জন্য সমান মজুরি চালু করে সোনালি ইতিহাস তৈরি করেছে। ১৯৭৬ সালের মধ্যে শ্রমিকরা পুরো মজুরি পেতে শুরু করেছেন, পিএফ সমেত শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছে শ্রমিক সমবায়। ব্যাঙ্ক আমানতে জমা আছে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। বাগানে ফিরে এসেছেন স্কুলের শিক্ষক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার। বাগানের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি করে ১৯৭৭ সালে মামলা করেছিল খেমকারা, যারা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে একটি পয়সাও ঢালেনি। ১৯৭৮ সালে সেই মামলায় খেমকাদের আর্জি হাইকোর্ট খারিজ করল বটে, কিন্তু ব্যাঙ্কের ঋণ ফেরত দেওয়ার জন্য সমিতির মাথায় বসিয়ে দিল রিসিভার।
ইতিমধ্যে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে বামফ্রন্ট সরকার, আর তারা দেখা গেল মোটেই সমবায়-বন্ধু নয়। কোর্টের বসানো রিসিভার রাধেশ্যাম আগরওয়াল নামে স্থানীয় এক কেরোসিন ডিলারকে তাঁর এজেন্ট নিযুক্ত করলেন। সেই আগরওয়াল শুরুতেই ব্যাঙ্কের সঙ্গে একটা ব্যবস্থা করে ফেললেন, তারপর থেকেই শুরু হয়ে গেল নতুন করে শ্রমিক লাঞ্ছনা। ১৯৭৮ সালের পুজোর মুখে একটা বিক্ষোভের ছুতোয় শ্রমিকদের ওপর লাঠি, গ্যাস, গুলি চালাল পুলিস। সমবায় সমিতি চালু হতে সোনালির চা-শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সমবায়ের সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে একটা ভয় ছড়িয়ে পড়ছিল, অন্যান্য রুগ্ণ চা বাগানেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। সরকার তাই শ্রমিক সমবায়ের পাশে দাঁড়ায়নি। ডুয়ার্সের অন্য সব রুগ্ন চা-বাগানের মালিকরাও একই ভয়ে সন্ত্রস্ত। ব্যাঙ্কের কিছু অসাধু কর্মীকে হাত করেছিল রিসিভারের এজেন্ট রাধেশ্যাম। সে নিজেকে বাগানের মালিক বলে পরিচয় দিত, ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগসাজশ করে কোম্পানির অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা জমা দিয়েই নতুন ঋণ চাইত বাগান চালানোর জন্য এবং পেতও। ধারাবাহিকভাবে চলছিল এই লুঠ, অবশ্যই রাজনৈতিক মদতে। ব্যাঙ্কের ঋণ মেটানোর জন্যই রিসিভার, তাঁর এজেন্ট। অথচ ব্যাঙ্কের ঋণ কেবলই বেড়ে চলেছে। কোন ব্যাঙ্ক? না, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, যারা ‘আজকাল’ সংবাদপত্রকেও ঋণ দিয়েছে।
পুজোর মুখে বামফ্রন্ট সরকারের পুলিস লাঠি, টিয়ার গ্যাস, এমনকী গুলি পর্যন্ত চালিয়েছিল সোনালির শ্রমিকদের ওপর। ‘আজকাল’ বেরতে শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যে সেই লাঞ্ছনার কথা লিখে আজকাল সম্পাদক গৌরকিশোর ঘোষকে একটা ছ’পাতার চিঠি দিয়েছিলেন ওই বাগানের শ্রমিক এবং সমবায়ের অন্যতম উদ্যোগী সাইমন ওঁরাও। ‘সাগিনা মাহাতো’-র লেখক সেই চিঠি ফলাও করে ‘আজকাল’-এর প্রথম পাতায় ছাপলেন
আমি যখন একের পর এক কিস্তিতে এই অন্তর্তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি, সরকার, ব্যাঙ্ক, চা বাগানের মালিকপক্ষ, সকলেই চেয়েছে এখনই এ লেখা বন্ধ হোক। আমাকে ততটা নয়, যতটা চাপ সহ্য করতে হয়েছে ‘আজকাল’-এর মালিকপক্ষকে এবং সম্পাদক গৌরকিশোর ঘোষকে। কিন্তু গৌরদা এতটুকু বিচলিত হননি, নমনীয়ও হননি। বরং ‘আজকাল’-এর প্রথম পাতায় দিনের পর দিন ছেপেছেন আমার লেখা, এই অন্তর্তদন্তে নতুন নতুন দিগন্ত খোলার উৎসাহ দিয়ে গেছেন আমাকে। সীমিত আর্থিক সাধ্য সত্ত্বেও বারবার ছুটিয়েছেন উত্তরবঙ্গ, দার্জিলিং। আমিও সোনালি চা বাগানের গণ্ডি ছাড়িয়ে খুঁজতে চেয়েছি সামগ্রিকভাবে বাংলার চা শিল্পের বিপন্নতার কয়েকটা প্রধান কারণ, সন্ধান পেয়েছি দার্জিলিংয়ের মানুষের ক্ষোভের আগুনের।
ধ্রুবজ্যোতি নন্দী: শিরোনাম বোধহয় ছিল ‘বরফের নীচে আগুন’, যেখানে বলা হয়েছিল কীভাবে জমাট বাঁধছে দার্জিলিংয়ের মানুষের বঞ্চনার ক্ষোভ। খবরের কাগজের পাঠকের সেই প্রথম পরিচয় সুবাস ঘিসিংয়ের গোর্খাল্যান্ডের দাবির সঙ্গে।
জ্যোতির্ময় দত্ত: ‘বরফের তলায় আগুন’ নাকি, ‘তুষারের তলায় আগুন’? ঠিক মনে পড়ছে না, তবু প্রসঙ্গটা মনে রাখার জন্যে ধন্যবাদ। রাজ্য সরকার যে এর কোনও খবরই রাখত না, তা তো হতে পারে না! কিন্তু ভেবেছিল, পাহাড়ে সমস্ত চা বাগানের ইউনিয়ন বামপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে। ঘিসিংয়ের পক্ষে কীই বা করা সম্ভব? কিন্তু তার গুরুত্ব বুঝতে গৌরদা কোনও ভুল করেননি। এতটাই দূরদর্শী ছিলেন রূপদর্শী। [সমাপ্ত]
আদতে ছিলেন সাংবাদিক, তারপর কর্পোরেট কর্তা। অবসরের পর শান্তিনিকেতনে বসে লেখাজোকায় মন দিয়েছেন। বেশ কিছু প্রবন্ধ আর গল্প লিখেছেন আজকাল, অনুষ্টুপ আর হরপ্পা-য়। প্রথম উপন্যাস 'গোলকিপার' প্রকাশিত হয়েছে বাংলালাইভে। আপাতত ডুবে রয়েছেন ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে। আজকালের রবিবাসর ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর ধারাবাহিক রচনা - সিনেমাতলার বাঙালি।