Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

সৌন্দর্যের বাগিচায় বুকভরা হাহাকার

গৌতম সরকার

আগস্ট ৩, ২০২২

Orange Orchard of North Bengal
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

জলপাইগুড়ির বারুই পান, …
কুচবিহারের হেউতি ধান, …
দার্জিলিংয়ের চা বাগান,
জলদাপাড়ার জঙ্গলখান,
ঘুরিয়া ফিরিয়া দেখিয়া যান রে। …

ভাওয়াইয়ার সুরে হাতছানি দেয় উত্তরবঙ্গ। নিশির ডাকের মতো। দুর্নিবার সে আকর্ষণ। পান, ধান, চা বাগান ছাড়াও কত বাগিচা। কমলা বাগান, সিঙ্কোনা বাগান, পাইন বন, রডোড্রেনডন, জানা-অজানা নানা ফুলে শোভিত বনভূমি। লঙ্কা খেত– সেও তো একরকম বাগিচাই। বাগিচা মানে গান, প্রেম, কথকতা। আবার যন্ত্রণাও বটে। দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর খবর সবাই জানে। ক’জন জানি, উত্তরবঙ্গের বক্সা পাহাড়ও একসময় কমলালেবুর বাগানের জন্যই পরিচিত ছিল? অতীতে শুধু কমলালেবুর জন্য হাট ছিল তৎকালীন জলপাইগুড়ি, অধুনা আলিপুরদুয়ার জেলার এই পাহাড়ি অঞ্চলের পাদদেশে। সানতোলাবাড়ি। নেপালি ভাষায় কমলাকে বলে সানতোলা। এ অঞ্চলে বসতি, গ্রাম বোঝায় বাড়ি, গুড়ি ইত্যাদি শব্দ।

রাজভাতখাওয়া-জয়ন্তীর অদূরে সানতোলাবাড়িতে হাটটা এখনও আছে। কিন্তু শুধু কমলালেবুর হাট আর নেই। আর পাঁচটা বাজারের মতো হরেকরকম বিকিকিনি। একসময় পাহাড় থেকে বাঁশের টুকরি বোঝাই কমলা পিঠে নিয়ে পাহাড় থেকে হাটে নামতেন বক্সাবাসী। পাইকাররা অপেক্ষা করতেন সানতোলাবাড়িতে। বক্সার অধিবাসীরা নামলে তাঁদের কমলা দরদাম করে কিনে নিয়ে যেতেন। এই পাহাড়ের অধিবাসীদের সারা বছরের সংসার খরচ জোগাত এই জীবিকা। তিন মাসের জীবিকায় বছরভর অলস জীবন। সেটুকু স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তিনমাসের কঠিন পরিশ্রম। কমলা রংয়ের ফলটা দেখে আমরা শহুরে নাগরিক আহ্লাদিত হই। মিষ্টি রসে ভরপুর ফলটা চেখে তরতাজা হই। শরীর ভালো রাখতে ডাক্তাররা কমলা খেতে পরামর্শও দেন।

বক্সার কমলা বাগিচায় কিন্তু সিনেম্যাটিক ফ্রেম নেই। বরং বক্সার ঐতিহাসিক দূর্গের কাছের গ্রাম সদর বাজারের স্বভাবকবি ইন্দ্রবাহাদুর থাপার কবিতার ভেসে বেড়ায় যন্ত্রণার অনুভূতি। আড়াই দশকেরও আগে ইন্দ্র কবিতাটি শুনিয়েছিলেন এক জ্যোৎস্না রাতে। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছিল চরাচর। ইন্দ্রর কবিতায় কমলা ছিল, কিন্তু রোমান্টিকতা ছিল না। আদিখ্যেতা করার উপায় নেই যে ওঁদের। ইন্দ্রর কবিতার বাংলায় ভাবানুবাদটা মোটামুটি এরকম– 

যন্ত্রণায় টনটন করছে আমার পিঠ,
হাত ছিঁড়ে পড়ছে ব্যাথায়।
তবু টুকরিটা নামিয়ে রাখা যাবে না।
এখনও অনেকটা পথ নামতে হবে।
হাটে পৌঁছলে তবে ভাতের পয়সা জোগাড় হবে।
হাট থেকে ফিরে ভাত খাব। 

… হ্যাঁ, ভাত। কমলা নয়। ইন্দ্ররা কমলা বাগিচায় থাকেন। কিন্তু কমলা খেতে চান না। কমলায় ওঁদের পেট ভরে না। বরং কমলাটা বেচে দিলে ভাত আসবে। ওই যে টুকরি নিয়ে ইন্দ্ররা নামতেন, তাতে ভর্তি থাকত কমলা। সানতোলাবাড়িতে ঢেলে দিতেন পাইকারের ঝুড়িতে।

Orange Orchard
কমলালেবুর এই দেশে এসে প্রেমে পড়ে বাইরের লোক

কমলালেবু নিয়ে যাবতীয় গান, কবিতা, সুর, তাল-লয় উবে যায় টুকরি কাঁধে পাহাড়ের চড়াই-উৎরাই বেযে ওঠানামায়। পৃথিবীতে কমলালেবু নিয়ে কত রোমান্স, কত প্রেম। কমলালেবুর এই দেশে এসে প্রেমে পড়ে বাইরের লোক। স্থানীয়রা নন। যেমন, বাইরে থেকে এসে পড়েছিলেন হেলেন হুক্কা। বিদেশিনী। জন্মসূত্রে ফিনল্যান্ডের বাসিন্দা। পড়তে এসেছিলেন দার্জিলিংয়ের ইনস্টিটিউট অফ টিবেটোলজিতে। সেখান থেকে চলে যান বক্সা পাহাড়ে। ডেরা বাধেন অখ্যাত গ্রাম চুনাভাটিতে। কমলা বাগিচার গ্রামে একেবারে সংসার পেতে বসে পড়েন চল্লিশের দশকের শেষ দিকে। ফিনল্যান্ডের এক মিশনারি সংস্থার হয়ে কাজ করতে করতে কমলা বাগানের মালিক নরবু ভুটিয়া ডুকপাকে বিয়ে করে ফেলেন। গির্জা তৈরি, ধর্মান্তরণ ছাড়াও গ্রামে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল হয়ে ওঠেন হেলেন। চুনাভাটিতে এখনও চিকিৎসার তেমন পরিকাঠামো নেই। আট দশক আগে তো ছিলই না। হেলেন ছিলেন সেখানে চিকিৎসায় একক সেনানী। এসব কাজের ফাঁকে ছিল নরবুর সঙ্গে ঘরকন্যা।

কমলালেবুর গ্রামে নরবু-হেলেনের দুই সন্তানের জন্ম। বড় হওয়ার পরে তাদের ফিনল্যান্ডে পাঠিয়ে দিলেও সত্তরের দশক পর্যন্ত দুর্গম বক্সা পাহাড়ে কাটিয়ে গিয়েছেন হেলেন। দেশে ফিরে গেলেও ভোলেননি কমলা বাগানকে। শুনেছি, হেলেনের এক ছেলে কিছুদিন আগে বৌ নিয়ে চুনাভাটি ঘুরে গিয়েছেন। দেখে গিয়েছেন নিজের শিকড়কে। কমলা বাগানের বাতাসে ভেসে বেড়ায় নরবু-হেলেনের প্রেমকাহিনি। একই সঙ্গে ভাসে ইন্দ্রবাহাদুরের হাহাকার। পিঠে, হাতে যতই যন্ত্রণা হোক, কমলা না বইলে কমলার রসে কোনও রোমান্স জাগে না বক্সাবাসীর।

চা বাগিচাতেও ছন্দপতন ঘটেছে একইরকম হাহাকারে। ভূপেন হাজারিকার গানে মুগ্ধ মন নিয়ে এখন চা বাগানে গেলে তাল কাটবেই। হাজারিকার বিখ্যাত গান ‘…দুটি পাতা একটি কুঁড়ি রতনপুর বাগিচায়, কোমল কোমল হাত বাড়িয়ে লছমি আজও তোলে রে, লছমি আজও তোলে…।’ উত্তরবঙ্গের চা বাগিচায় লছমিরা আজও আছেন। তবে তাঁদের কোমল কোমল হাত নেই। রুগ্ণ, ক্ষয়াটে হাত দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তোলে ক্লান্ত পদচারণায়। পিছনে দাঁড়িয়ে থাকেন ‘কামদার’, ‘বৈদর’রা। এঁরা চা বাগানের সুপারভাইজার। শ্রমিকদের কাজের দেখভাল করেন। শ্রমিকদের হাত দ্রুত চলে। আরও পাতা, আরও পাতা তুলতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ পাতা না তুললে নির্ধারিত মজুরি মিলবে না। এমনিতেই বাংলায় আর পাঁচটা শিল্পের থেকে চা বাগানে শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে কম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ১৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন বৃদ্ধি করার পরেও মজুরি এখনও ২৫০ টাকা ছোঁয়নি। সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি জোটে না লছমিদের।

Tea Garden
সৌন্দর্যের খনি দারিদ্র‌্যের আকরও বটে

চা শ্রমিকদের জন্য আলাদা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ঝুলে আছে বছরের পর বছর। অন্তর্বর্তীকালীন বৃদ্ধির জেরে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ আরও অনিশ্চিত এখন। অথচ এই একটি শিল্প কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা এনে দেয়। দার্জিলিংয়ের চায়ের গন্ধে আমোদিত হয় লন্ডন, নিউ ইয়র্ক। ডুয়ার্সের চায়ের রংয়ে মোহিত হয় শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, মলদ্বীপ। সবুজের দেশ এই চা বাগান। কোথাও নদীর কোল ঘেঁষে, কোথাও পাহাড়ের পাদদেশে কিংবা পাহাড় চূড়ায় অনির্বচনীয় সৌন্দর্যের খনি। সৌন্দর্যের খনি দারিদ্র্যের আকরও বটে। কম মজুরি, বসবাসের ক্ষুদ্র পরিসর, চিকিৎসা পরিকাঠামোর অভাব, ইত্যাদি কারণে বদলে যাচ্ছে চা বাগানের সুর, তাল, ছন্দ। সহজসরল জীবন ক্রমশ অপসৃত। চা বাগিচার পরিসর আর আটকে রাখতে পারছে না নবীন প্রজন্মকে। পেটের খিদের সঙ্গে বাড়ছে নানা বিনোদনের খিদেও। শুধু দু’মুঠো ক্ষুণ্ণিবৃত্তির সংস্থানে আর মন ভরছে না। ভালো স্মার্ট ফোন, প্রসাধন সামগ্রী, শপিং মলের সংস্কৃতির আকর্ষণ বাড়ছে। টেলিভিশন জগতের বর্ণময়তায় কল্পজগৎ তৈরি হচ্ছে। সেই স্বপ্নের পিছনে ছুটতে গিয়ে চা বাগানের তরুণ-তরুণীরা হচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিক কিংবা পরের বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকা। ভিনরাজ্যে তুলনায় রোজগার বেশি। এই বাড়তি রোজগারের খোঁজে শিকড়চ্যুত এই প্রজন্ম হারাচ্ছে নিজ সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি। আলগা হচ্ছে পারিবারিক, সামাজিক বন্ধন। মিশ্র সংস্কৃতিতে ভাসছে চা বাগিচার নেপালি, আদিবাসী সমাজ।

কমলালেবুর গ্রামে নরবু-হেলেনের দুই সন্তানের জন্ম। বড় হওয়ার পরে তাদের ফিনল্যান্ডে পাঠিয়ে দিলেও সত্তরের দশক পর্যন্ত দুর্গম বক্সা পাহাড়ে কাটিয়ে গিয়েছেন হেলেন। দেশে ফিরে গেলেও ভোলেননি কমলা বাগানকে। শুনেছি, হেলেনের এক ছেলে কিছুদিন আগে বৌ নিয়ে চুনাভাটি ঘুরে গিয়েছেন। দেখে গিয়েছেন নিজের শিকড়কে। কমলা বাগানের বাতাসে ভেসে বেড়ায় নরবু-হেলেনের প্রেমকাহিনি। একই সঙ্গে ভাসে ইন্দ্রবাহাদুরের হাহাকার। পিঠে, হাতে যতই যন্ত্রণা হোক, কমলা না বইলে কমলার রসে কোনও রোমান্স জাগে না বক্সাবাসীর।

পার্বতীর (নাম পরিবর্তিত) উদাহরণটাই ধরা যাক। তরাই এলাকার এক চা বাগানের আদিবাসী কিশোরী। ওঁরাও জনজাতিভুক্ত। এলাকার এক মহিলা দালালের কথায় প্রলুব্ধ হযে বছর সাতেক আগে চলে গিয়েছিল হরিয়ানায়। বাবা-মাকে জানিয়ে। খেতে-পরতে দেওয়াই কষ্টকর ছিল ওঁরাও দম্পতির। তাছাড়া নানা প্রসাধন সামগ্রীর চাহিদাও বাড়ছিল পার্বতীর। সেসবের জোগান দেওয়া ওর চা শ্রমিক বাবা-মায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই মেয়ে কাজ করতে যাওয়ায় ওঁরা তেমন আপত্তি করেননি তখন। তারপর পার্বতীর খোঁজ ছিল না প্রায় চার বছর। বাবা-মায়ের মন কাঁদে। লোকে বলে, মেয়ে যৌনকর্মী হয়ে গিয়েছে। এসব শুনে বাবা-মায়ের আত্মমর্যাদা আহত হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সেই মহিলা দালালকে ধরে মেয়েকে ফেরানোর করুণ আর্জি জানাতে থাকেন ওঁরা। শেষপর্যন্ত দালাল রাজি হয় মোটা টাকার শর্তে। দশহাজার টাকা ধরে দিলে তিনি ফিরিয়ে আনবেন তাঁদের সন্তানকে। অনেক দরাদরির পর সাতহাজার টাকায় রফা হয়। বাড়ির একমাত্র গোরু বিক্রি করে, চড়া সুদে সাত হাজার টাকা ধার করতে চলে যায় আরও তিন মাস। ততদিনে আধপেটা খেয়ে আরও কিছু অর্থ জমিয়েছেন পার্বতীর বাবা-মা। কিন্তু আগাম সাত হাজার টাকা নিয়ে সেই যে দালাল গেলেন, দু’মাস আর তাঁর খোঁজই মিলল না। একদিকে কপর্দকশূন্য দশা, অন্যদিকে সন্তানের জন্য হাহাকার… পার্বতীকে ফিরে পাওযার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন শ্রমিক দম্পতি। হঠাৎ এক বিকেলে বাঁশের বেড়া, শতছিন্ন টিনের চালের ঘরে দড়ি দিয়ে বাঁধা ভাঙা দরজার সামনে হাজির হল পার্বতী। খুশি হবেন কী, বাবা-মায়ের কাছে বড় অচেনা এই পার্বতী। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া কিশোরী এখন ভরযুবতী। পরনে ভালো পোশাক, শরীরে প্রসাধনের ছাপ, হাতে ভালো স্মার্টফোন, হ্যান্ডব্যাগ, চোখে সানগ্লাস, সঙ্গে জামাকাপড় ভরা মোটা ট্রলি… এ মেয়ে বড় অচেনা বাবা-মায়ের কাছে।

Orange Orchard People
বাড়তি রোজগারের খোঁজে শিকড়চ্যুত এই প্রজন্ম হারাচ্ছে নিজ সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি

দিন কয়েক যেতে না যেতে মেয়ের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়ল। সবকিছুতেই নাক সিঁটকোয় পার্বতী। চা বাগানের পাইপে সরবরাহের জল তার কাছে পানের যোগ্য নয়। র‌্যাশনের চাল খেতে পারে না। ঘরে ফ্যান নেই, গরমে তার কষ্ট হয়। চা বাগান মালিকের দেওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ আছে বটে, কিন্তু কম ভোল্টেজে বাতি মিটমিট করে। তাতেও পার্বতীর অসন্তোষ। ঘরে টিভি নেই। দুপুরে-সন্ধ্যায় সিরিয়াল দেখার সময় মেজাজ আরও বিগড়ে যায়। ঘরে একটা ভালো আয়না নেই। প্রসাধন সামগ্রী রাখার জায়গা নেই। গরমে প্রসাধন গলে গলে পড়ে। সবকিছুতেই বিরক্তি। বেশিরভাগ সময় সে চোস্ত হিন্দিতে কথা বলে। বাবা-মা নিজেদের ভাষা ছাড়া আর শুধু বাংলা জানেন। মেয়ের সব কথা তাঁরা বোঝেন না। প্রতিবেশীরাও নয়। তাঁদের কাছে পার্বতী হয়ে ওঠে ভিনগ্রহের মানুষ। সকলের বিস্ময়, বিরক্তি, ক্ষোভের নজর এখন তার দিকে। মেয়ের ভালো খাবারের আবদার মেটাতে বাবা-মায়ের প্রাণান্তকর অবস্থা। রোজই তার মুরগি চাই রাতের খাওয়ায়। রুটির সঙ্গে মাংস ছাড়া নাকি ডিনার অখাদ্য। দামি মাছ চাই দুপুরে। সকাল-বিকেল ফল না খেলে শরীর টিকবে না। এছাড়াও শিলিগুড়ি শহর থেকে এটা-সেটা কিনে এনে দেওয়ার বায়না। মাটিগাড়ার মলে যাবে পার্বতী। সেজন্য একদিনে অন্তত ৫০০ টাকা দিতেই হবে। এসব না পেলে বাড়িতে কুরুক্ষেত্র। সন্তান ফিরে পেয়ে জীবনটা যেন নরক হয়ে গেল পার্বতীর বাপ-মায়ের। দিন কয়েক আগে শুনলাম, পার্বতী আবার হরিয়ানায় ফিরে যাবে। যে বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করত, তাঁদের সঙ্গে কথাও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যাওয়ার ট্রেন ভাড়া, আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে হবে বাবা-মাকেই। সেজন্য পার্বতীর আবদার ২০০০ টাকা।

পার্বতীকে ফিরে পেতে দালালকে দিয়েছিলেন সাতহাজার টাকা। এখন চলে যাওযার জন্য খসবে আরও দু’হাজার টাকা। মাঝের দেড় বছর মেয়েকে ভালো রাখতে, মেয়ের মন পেতে জলের মতো টাকা খরচ করেছেন। পার্বতীর বাবা-মা এখন কপর্দকশূন্য। মেয়ে চলে গেলে বরং তাঁরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন যেন। চা বাগিচা জুড়ে এমন পার্বতীদের সংখ্যা এখন দিনদিন বাড়ছে।

পার্বতীদের জন্য চোখের জল ফেলেন নীরবে, কিন্তু এখন আর কোনও মা মেনকা তাদের অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকেন না। সবুজ চায়ের বাগান ছেড়ে গরম দেশে টাকা রোজগারের মেশিন হয়ে গিয়েছেন তরুণরাও। জলপাইগুড়ি জেলায় মালবাজারের অদূরে এক চা বাগানের বাসিন্দা লালচাঁদ (নাম পরিবর্তিত) প্রায় ৮ বছর ধরে কেরালায় কাজ করেন। মাঝে মাঝে বাড়ি আসেন, প্রতি মাসে টাকা পাঠান। পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বলতে এটুকুই। বিয়ে করেছেন কেরালার এক তরুণীকে। ওখানেই সংসার। পাকাপাকিভাবে আসার কথা স্বপ্নেও ভাবেন না। মাতৃভাষা ভুলতে বসেছেন। পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের বাগিচা জুড়ে এখন এমন ছিন্নমূল প্রজন্মের বাড়বাড়ন্ত। সুর, তাল, ছন্দ সবই পালটে গিয়েছে চায়ের বাগিচায়। এই লেখা লেখার জন্য অনেকদিন পর কমলালেবু, চা বাগান, পানের বরজ, লঙ্কা খেতে নতুন করে ঘুরে বেড়ালাম আবার। কিন্তু ফিরে দেখার উচ্ছ্বাস নয়, কাজটা শেষ করলাম বুকভরা হাহাকার, যন্ত্রণা নিয়ে।  শিকড় কেটে যাওয়া দেখে বেদনায় নীল হয়ে ফিরেছি।

 

*ছবি সৌজন্য: Wikimedia Commons, Megapixl, Tripoto

কর্মসূত্রে কলকাতায় দীর্ঘদিন বসবাসের পর থিতু শিলিগুড়ি শহরে। নিজেকে ডুয়ার্সের সন্তান বলতে ভালোবাসেন। গ্রামের আদি বাড়ির একপাশে বোড়ো আদিবাসী বসত, অন্যপাশে সাঁওতাল মহল্লা। বক্সার রায়ডাক জঙ্গল গ্রামের কাছেই। শৈশব, কৈশোরে বাড়ির উঠোনে চলে আসতে দেখেছেন হাতি, চিতাবাঘ, হরিণ। জঙ্গলে কুল কুড়োতে কুড়োতে আর নদীতে ঝাঁপিয়ে বড় হওয়া। প্রকৃতি আর উপজাতিরাই প্রতিবেশী। যৌবনে এই পরিবেশে কিছুকাল বাউন্ডুলে জীবনের পর সিদ্ধান্ত, সাংবাদিকতা ছাড়া আর কোন কাজ নয়।

Picture of গৌতম সরকার

গৌতম সরকার

কর্মসূত্রে কলকাতায় দীর্ঘদিন বসবাসের পর থিতু শিলিগুড়ি শহরে। নিজেকে ডুয়ার্সের সন্তান বলতে ভালোবাসেন। গ্রামের আদি বাড়ির একপাশে বোড়ো আদিবাসী বসত, অন্যপাশে সাঁওতাল মহল্লা। বক্সার রায়ডাক জঙ্গল গ্রামের কাছেই। শৈশব, কৈশোরে বাড়ির উঠোনে চলে আসতে দেখেছেন হাতি, চিতাবাঘ, হরিণ। জঙ্গলে কুল কুড়োতে কুড়োতে আর নদীতে ঝাঁপিয়ে বড় হওয়া। প্রকৃতি আর উপজাতিরাই প্রতিবেশী। যৌবনে এই পরিবেশে কিছুকাল বাউন্ডুলে জীবনের পর সিদ্ধান্ত, সাংবাদিকতা ছাড়া আর কোন কাজ নয়।
Picture of গৌতম সরকার

গৌতম সরকার

কর্মসূত্রে কলকাতায় দীর্ঘদিন বসবাসের পর থিতু শিলিগুড়ি শহরে। নিজেকে ডুয়ার্সের সন্তান বলতে ভালোবাসেন। গ্রামের আদি বাড়ির একপাশে বোড়ো আদিবাসী বসত, অন্যপাশে সাঁওতাল মহল্লা। বক্সার রায়ডাক জঙ্গল গ্রামের কাছেই। শৈশব, কৈশোরে বাড়ির উঠোনে চলে আসতে দেখেছেন হাতি, চিতাবাঘ, হরিণ। জঙ্গলে কুল কুড়োতে কুড়োতে আর নদীতে ঝাঁপিয়ে বড় হওয়া। প্রকৃতি আর উপজাতিরাই প্রতিবেশী। যৌবনে এই পরিবেশে কিছুকাল বাউন্ডুলে জীবনের পর সিদ্ধান্ত, সাংবাদিকতা ছাড়া আর কোন কাজ নয়।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com