

আমরা গ্রামে ঢুকেই দেখি সামনে বড় বোর্ড। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ছবি তোলা যাবে না। এমনি ছবি তুলতে পাঁচশো আর ভিডিও করতে হাজার টাকা দিতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই টাকার অংকটা বেশি বললেন। আমি তাঁদের বোঝালাম নিশ্চয়ই এই টাকা ব্যবহার করা হবে এখানকার মানুষের কল্যাণের জন্য। তখন তাঁরা রাজি হলেন। এমনিতেই গ্রামের গাছপালা ছাওয়া মাটির বাড়ির দেওয়ালে এত সুন্দর আঁকা দেখে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল, আমরা কে টাকা নেবে সেই খোঁজ করছিলাম। গ্রামের মানুষ কাজে গিয়েছেন। মহিলাদের জিজ্ঞাসা করাতে কয়েকটা বাড়ি পরে একটা ঘর দেখিয়ে দিলেন। বললেন, ওখানে ছেলেমেয়েরা আছে। ওরা ব্যবস্থা করে দেবে। সেখানে যেতেই হৈ হৈ করে কিশোর কিশোরীর দল চলে এল। টাকার রিসিট বই, লিফলেট সব এনে ফেলল তারা। —“সে কী রে, তোরা টাকা নিবি?” আমরা ইতস্তত করছি। কয়েকজন বয়স্ক লোক এলেন। বললেন —“আপনারা নিশ্চিন্তে এদের হাতে টাকা দিন। বিকেলবেলায় চালচিত্রের বাবুরা এলে এরা গুনে এই টাকা তাদের হাতে দেবে। সব টাকা এখানকার জন্যিই ব্যয় হবে।” ছেলেমেয়েরা নীচে কার্বন কপি রেখে নিজেদের হাতে রিসিট লিখে সই করে আমাদের দিল। —“আমাদের বাচ্চারা এখন লেখাপড়া শিখছে”, তাঁরা হাসিমুখে জানালেন। নিজেদের মতো করে এই উত্তরণের গল্প বলছিলেন তাঁরা। জানলাম, এ গ্রামেরই একজন ষষ্ঠীচরণ আইচ প্রথমে আঁকা ও হাতের কাজ শিখে তাঁদের উৎসাহিত করেন।
ছেলেমেয়েরা আমাদের নিয়ে বিভিন্ন দেওয়ালের আঁকা ছবি দেখাতে লাগল। তাদের কে কোনটা এসেছে তাও কলকল করে বলতে লাগল। বড় ভালো লাগল এদের সংসর্গ। আর কী সুন্দর সব ছবি! হনুমান গাছের ডালে ঝুলছে, হাঁস-মুরগির ছবি, টিকিওয়ালা বামুন লাঠি ভর করে হেঁটে যাচ্ছেন, লাউ মাচানের নীচ দিয়ে গিয়ে দেখলাম লাল কাপড় নিয়ে মানুষ আর ষাঁড়ের লড়াইয়ের ছবি, কোথাও করোনা সচেতনতার ছবি… তবে সবচেয়ে ভালো লাগল গ্রামের নাম ‘খোয়াবগাঁ’ লিখে গোল করে আঁকা শিশুদের হাসিমুখ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এমনই হাসিমুখে এগিয়ে যায়। আমি ওদের হাতে দুশো টাকা দিলাম। —“এটা তোদের হিসেবের খাতায় লিখতে হবে না, তোদের আলাদা করে দিলাম। তোরা দশজন, প্রত্যেকে কত করে নিবি?” —“কুড়ি টাকা।” সঙ্গে সঙ্গে সমস্বরে উত্তর। —“ঠিক, এটা দিয়ে তোরা রংপেনসিল বা তোদের যা মনে হয় কিনতে পারিস।”

শিখা সেনগুপ্ত বিজ্ঞানের স্নাতক। ছোটবেলা থেকেই বইপড়ার নেশা, book worm বলা যায়। কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি শুরু। অফিস জীবনেও আনন্দবাজার সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিশেষ কলাম ও ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি ব্যাংক থেকে অবসরের পরে প্রথম শ্রেণীর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, দেশ, ভ্রমণ ও আনন্দবাজারে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
One Response
THANK YOU FOR THRE ARTICLE..
KIDS ARE TALENTED AND SHOW THEIR TALENT VIA EXTRACURRICULAR ACTIVITIES,
THANK YOU AGAIN.