পর্ব – ৭
জোহান ক্রিস্তফ ফ্রিডরিশ ভন শিলার (১৭৫৯-১৮০৫) ছিলেন জার্মান কবি, নাট্যকার, দার্শনিক, এবং একজন ডাক্তার। তিনি ছিলেন বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম এক ধ্রুপদী মহাকবি গ্যেটের বন্ধু। ধ্রুপদী নাট্যকার হিসেবে শিলার (Friedrich von Schiller) ছিলেন অধিক পরিচিত। কিন্তু শিলারের কবিতাও অসামান্য। যদিও তা গ্যেটের কবিতার আলোকচ্ছটায় চাপা পড়ে গিয়েছিল তখন। শিলারের ধ্রুপদী কবিতার ভক্ত ছিলেন অনেকেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলারের কবিতার অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর রোমান্টিক ভাবনাচিন্তার সঙ্গে মিশে গেছিল ধ্রুপদী ক্লাসিকিয়ানার গাম্ভীর্য।

ব্যালাডগুচ্ছ-র কয়েকটি
১
শীত নিষ্প্রহর, রাত, আছড়ে পড়ো তুমি, জলবায়ু
আমার বার্ধক্য থেকে দু একটি কোকিল উড়ে যায়
যেমন স্বভাব থেকে খসে পড়ে মোমবাতির শিখা
যেমন কফিন থেকে ক্ষয়ে যায় আমাদের আয়ু।
২
ভাষা থেকে হে শিল্প, তোমাকে নিবিড় মনে হয়,-
পাথরে পাথরে গান, হে ভাস্কর, তুমি রক্ত দাও
যে কঠিন সুর থেকে সংগীতের নম্র আয়োজন
তাকে দাও শরতের হাওয়া আর সংগীতের লয়।
৩
ধ্রুব, আমি তোমাকেই এ জীবনে খোদাই করেছি
গান, আমি তোমাকেই গেয়েছি আমৃত্যু অসহায়
অন্ধ, আমি জীবনের স্পষ্ট সেই মাটি মেখে গায়ে
দেখেছি, সময় শেষ, ঘড়ির কাঁটায় অস্থিরতা।

৪
যে লব্ধ জ্ঞানের মানে ভিখিরির উষ্ণ হাতে ছিল
তুমি তাকে এক-কাপড় আড়াল দিয়েছ মাঝরাতে
বরফ জমেছে দ্রুত, স্টেশনে একটিও ট্রেন নেই
কে আমায় প্রাণ দিল এ করুণ শীর্ণপ্রায় হাতে?
৫
এখনো বাজেনি সুর, হে আগুন মন্ত্র দাও আজ
দূরের সাইরেন শুনি, কারা যেন ভালুক শিকার
করেছে, জঙ্গল থেকে শুনি শুধু মৃতের আকুতি।
এ করুণ গান বাজে তার জন্য, স্বপ্ন নেই যার।
৬
চাঁদ দেখে তৃপ্ত হয়ে দেখেছি চাঁদের মৃত্যু হয়
আমারই দুচোখে, তবু, চাঁদ জানে মৃত্যু তার নেই
সে হাসে, হাসির শব্দে কেঁপে ওঠে সমস্ত তারায়
নিহত মানবজন্ম, বালির উপরে লেখা ক্ষয়।
৭
তুমি কি কবির জন্য এত পথ এসেছ আবার?
কাঁধে কি লুকোনো জল? মাংস হাতে এসেছ দুয়ারে?
তুমি কি কবিতা শুনবে? সত্য নয় এত বড় ঘ্রাণ
তোমার শিকারী মন যে হারপুন তীক্ষ্ণ করে তার।

৮
আমি তো কবিতা নয়, গান লিখি, গানের ভিতরে
গানের নিহত দেহ পড়ে থাকে, যেভাবে শস্যের
ভিতরে সমাধি শুধু কৃষকের, বরফে শোয়ানো।
কবিতা কি লেখা হয়? পুঁথি থেকে উচ্চারণ ক’রে?
৯
তোমাকে বলিনি, আমি, পেরিয়ে এসেছি মধ্যরাত-
আমার ভুবন তুমি নিজ হাতে দিয়েছ পুড়িয়ে।
এখন কফিনে শুয়ে রয়ে গেছে আমাদের দেহ।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুণ্যলোভী ছেঁড়া ছেঁড়া হাত।
১০
যেমন জলের স্রোতে ভেসে ওঠে মরে যাওয়া দেহ
যেমন পৃথিবী জুড়ে ভেসে ওঠে মরে যাওয়া আলো
আমি কে তেমন প্রিয়, তোমাদের সহস্র আঘাত
পেরিয়ে এসেছি, তুমি এ দীপ নতুন করে জ্বালো।
*তথ্যসূত্র:
১) শিলার’স পোয়েমস অ্যান্ড ব্যালাডস ট্রান্স- এডওয়ার্ড লর্ড লিটন, জর্জ রুটলেজ অ্যান্ড সনস, ১৮৮৭
২) মাইকেল হ্যামবার্গান– জার্মান রোমান্টিক পোয়েমস
৩) https://archive.schillerinstitute.com/fidelio_archive/2005/fidv14n01-02-2005SpSu/fidv14n01-02-2005SpSu_036-friedrich_schillers_the_song_of.pdf
৪) https://www.friedrich-schiller-archiv.de/inhaltsangaben/schiller-die-buergschaft-inhaltsangabe-interpretation-und-quelle/
হিন্দোল ভট্টাচার্যের কবিতা লেখার শুরু নয়ের দশকে। কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দুইই পেয়েছেন বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে। মোংপো লামার গল্প, সব গল্প কাল্পনিক, রুদ্রবীণা বাজো, বিপন্ন বিস্ময়গুলি, এসো ছুঁয়ে থাকি এই লেখকের কিছু পূর্বপ্রকাশিত বই।
6 Responses
মুগ্ধতা রইল। ❤️
ভাল লাগল❤️
Bhison bhalo laaglo. Sarthok translation!
ভাল লাগল।
ধন্যবাদ ! শিলারের Ode an die Freude উল্লেখের দাবি রাখে না কি? অভিভূত বেটোফেন শিলারের কবিতাকে প্রাণ দিলেন সপতম সিম্ফনিতে যা ইতিহাসে একমাত্র উদাহরণ! নামটা য়োহান হবে।
সরি ফিফথ সিমফনি