জীবনের প্রথম ছবিতে অভিনয় করেই সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি (Mithun Chakraborty), প্রশংসা কুড়িয়েছিল সমালোচকদের। ১৯৮৯ সালে মাত্র এক বছরের মধ্যেই মুক্তি পেয়েছিল তাঁর ১৯টি সিনেমা! পরে তাঁর জনপ্রিয়তাকে অবলম্বন করে প্রকাশিত হয়েছে ‘জিমি ঝিনচ্যাক’ নামে একটি কমিক বুকও। প্রথমদিকে হেলেনের সহকারী হিসাবে কাজ করার সময় নিজের নাম রেখেছিলেন রানা রেজ। ভবিষ্যতে যদিও সম্পূর্ণ অন্য নামে তাঁকে চিনবেন শুধু বাংলা বা ভারতবর্ষের নয় সারা পৃথিবীর মানুষ। তিনি আর কেউ নন অভিনয় জগতের জীবন্ত কিংবদন্তী মিঠুন চক্রবর্তী!
১৯৫০ সালের ১৬ জুন বরিশালে জন্ম মিঠুন চক্রবর্তীর (Mithun Chakraborty)। ভালো নাম গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী। বাবা বসন্ত কুমার চক্রবর্তী পরে পরিবার নিয়ে কলকাতায় এসে ওঠেন। ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করে পরবর্তীতে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক স্তরের শিক্ষা সম্পন্ন করেন মিঠুন। এই সন্ধিক্ষণেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় কিংবদন্তী পরিচালক মৃণাল সেনের। কথায় বলে জহুরীর চোখ রত্ন চিনে নিতে জানে। তিনি তখন তাঁর পরবর্তী ছবির জন্য অভিনেতা খুঁজছেন। এভাবেই, ১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’ ছবির মধ্যে দিয়ে পথ চলা শুরু গৌরাঙ্গর। সেই সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কারও পান তিনি। যদিও জোড়াবাগানের গৌরাঙ্গ চক্রবর্তীর মুম্বাইয়ে মিঠুন হয়ে ওঠার জার্নিটা খুব সহজ ছিল না।
নকশাল আন্দোলনের জেরে কলকাতা ছেড়ে পাড়ি জমালেন আরব সাগরের তীরে, মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে হিরো হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। নতুন কারোর পক্ষে বলিউডে প্রবেশ করা বেশ কঠিন, তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। মুম্বাইতে রাতের পর রাত কাটিয়েছেন ফুটপাথে, আবার কখনও কোনও হোস্টেলের বাইরে। পরে এক পরিচিত মাতুঙ্গা জিমখানায় তাঁর সদস্যপদের ব্যবস্থা করে দিলে সেখানকার বাথরুম ব্যবহারের সংস্থানটুকু হয়েছিল মাত্র। অভিনয় জীবনের প্রথম দিকে স্পটবয়ের কাজও করেছেন তিনি। বলিউডে তাঁর প্রথম সাফল্য আসে ১৯৭৮ সালে ‘মেরা রক্ষক’ মুক্তির মাধ্যমে। এরপর ‘ওহ জো হাসিনা’, ‘সুরক্ষা’-র মতো ছবির মাধ্যমে দর্শকদের কাছে নবাগত অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেন তিনি।
এরপর ১৯৮২ সালের ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবিই বদলে দেয় মিঠুনের অভিনয় জীবনের গতিপথ! নাচের জগতে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন তিনি, হয়ে ওঠেন সেই দশকের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক। ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়ে তাঁর জনপ্রিয়তা। এদেশের পরই মিঠুন চক্রবর্তী সবথেকে জনপ্রিয় রাশিয়াতে, সেখানে তাঁকে ড্যান্সিং স্টারের তকমা দেওয়া হয়। তাঁর একাগ্রতা, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল জনপ্রিয়তার শিখরে। একের পর এক উপহার দিয়েছেন ‘গুন্ডা’, ‘কর্মযুদ্ধ’, ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা’, ‘অগ্নিপথ’, ‘জল্লাদ’, ‘হাম পাঁচ’-এর মতো জনপ্রিয় ছবি। ১৯৯৬ সালে স্বামী বিবেকানন্দের ছবি দিয়ে সেরা সহ-অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। অগ্নিপথ ও জল্লাদের জন্য পান সেরা পার্শ্ব ও খল অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।
বাংলায় মিঠুনকে পরিণত অভিনেতা বানানোর ক্ষেত্রে প্রথমেই মনে আসে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘তাহাদের কথা’ ছবিটি। এতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য ১৯৯২ সালে জাতীয় পুরস্কারও অর্জন করেন তিনি। এছাড়াও, ‘ত্রয়ী’, ‘কালপুরুষ’, ‘তিতলি’, ‘শুকনো লঙ্কা’, ‘আমি সুভাষ বলছি’, ‘নোবেল চোর’, ‘এক নদীর গল্প’ ও অন্যান্য ছবিগুলিতে তাঁর অভিনয় মনে রেখে দেওয়ার মতো। ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ ছবিতে মিঠুন কাজ করেছেন স্বয়ং উত্তমকুমারের সঙ্গেও। শুধু বাংলা বা হিন্দিই নয়, কাজ করেছেন পাঞ্জাবী, ওড়িয়া, ভোজপুরী, তামিল, তেলেগু, কন্নড় ভাষার বিভিন্ন ছবিতেও। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে সাড়ে তিনশোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সম্প্রতি ভারত সরকার পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে তাঁকে। এতদিন পেরিয়েও, ছোট-বড় সবার কাছে এখনও তিনি সমান জনপ্রিয়। আর তাই তো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে শুধু তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য লাখ-লাখ মানুষ ভিড় করে সুদূর কাজাকস্তানে। তাঁর আগমনের জেরে বাতিল করতে হয় সে দেশের রাষ্ট্রপতির সভা। তিনি বাংলার ঘরের ছেলে গৌরাঙ্গ, তিনি সকলের ‘মিঠুনদা’! জন্মদিনে তাঁকে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য (Birthday tribute)।
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।