আগের পর্ব পড়তে: [১] [২] [৩] [৪] [৫] [৬] [৭] [৮] [৯] [১০] [১১] [১২] [১৩] [১৪] [১৫] [১৬] [১৭] [১৮][১৯][২০]
জীবন আমার চলছে যেমন তেমনি ভাবে
সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দে চলে যাবে
চলার পথে দিনে রাতে
দেখা হবে সবার সাথে
তাদের আমি চাব
তারা আমায় চাবে
রঙের খেলার সেই সভাতে
খেলে যে জন সবার সাথে
তাদের আমি চাব
তারা আমায় চাবে

আমার মনের কথা এতদিন আগে কবিগুরু কী ভাবে জানলেন? লিখলেন? ঐ যে বারবার বলছি রবীন্দ্রনাথ না থাকলে আমরা কেউই মনের কথাটা বুঝতে পারতাম না। কাউকে সাজিয়ে গুছিয়ে মনে হয় বলতেও পারতাম না, আমার অগোছালো, বিড়ম্বিত, সৃষ্টিছাড়া জীবনটা প্রতি মুহূর্তে গুছিয়ে তোলেন রবীন্দ্রনাথ, তাঁর গান দিয়ে, রচনা দিয়ে। বাঙালি তথা ভারতবাসীর সংস্কৃতি যাঁরা পৃথিবীর কাছে মেলে ধরেছেন, তাবৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে যাঁরা ভারতবর্ষের রুচি, শালীনতা, শিক্ষা, আবেগকে সম্মান জানাতে বাধ্য করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান আমাদের প্রাণের ঠাকুর, আমাদের গর্ব শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এসবই আমার উপলব্ধি। ঐকমত্যে অন্যদের সঙ্গে নাও হতে পারে।

আমি রাজনীতির মানুষ নই। বারবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন ভাবে আমি তা ব্যক্ত করি। কিন্তু যে পরিবেশে বড় হয়েছি সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নামী দামি কুশীলব, উচ্চপদস্থ সরকারী আমলা, সবরকম মানুষেরই আনাগোনা ছিল। যা কিনা আজ আমাকে আমি হতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এটাও ঠিক মানুষকে মানুষ বলে গ্রাহ্য করার বা সম্মান করার শিক্ষাটাই সবার ওপরে পেয়েছি। সেখানে উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ, ধর্মের দোহাই দিয়ে সমাজকে বিভক্ত করা, এসব থেকে আমরা বহুদূরে চিরকালই।

এইসব আলোচনা শুরু করলে একদমই শেষ হবে না। আমরা বাঙালিরা ভীষণ তার্কিক জাত। বিশেষত সেখানে যদি রাজনীতি কোনোক্রমে ঢুকে পড়ে, আর রেহাই নেই। যতজন সেই আড্ডায় বা তর্কে আছে, সবাই প্রমাণ করেই ছাড়বে বা চেষ্টা করেই যাবে যে সেই হল একমাত্র শিক্ষিত এবং সঠিক। তাই বাঙালির চা’এর আড্ডা সর্বজনবিদিত এবং আমি এই ধরনের গোষ্ঠি থেকে শত হস্ত দূরে। যখন দেখি তর্ক সাংঘাতিক চড়া সুরে বাজছে, একটা বা দুটো গান গেয়ে, তাতে সবাইকে সামিল করে সেই দ্বন্দ্ব ভণ্ডুল করাই ছিল আমার চেষ্টা। সেখানেও আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে থাকেন রবীন্দ্রনাথ, আর ঐ যে বললাম রবীন্দ্রনাথ তো সবারই ঠাকুর। আমার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে দ্বন্দ্ব ভণ্ডুল করার কাজে আমার বন্ধুরাও সাহায্য করে। এই সুরের এমন মহিমা, বাণীর এমন যাদু, যাঁরা আশেপাশে আছে তাঁরা নিমেষের মধ্যে সেই জালে ধরা পড়ে, গেয়ে ওঠে…

“আমরা সবাই রাজা
আমাদের এই রাজার রাজত্বে
নইলে মোদের রাজার সনে
মিলব কী স্বত্বে
আমরা সবাই রাজা…”

এবার এক সত্যি রূপকথার ঘটনাতে আসি। ২৫ বৈশাখ, ২০১৭। এই ২৫ বৈশাখের আশপাশটা আমার জীবনে বারবার ব্যতিক্রমী হয়ে এসেছে। প্রথমে ২০১৭, ৪ মে’র ঘটনা বলি। বিকেলবেলা, রোজকার মতো বারান্দায় শুকিয়ে যাওয়া কাপড় জামাগুলো তুলে ভাঁজ করে আলমারিতে গুছিয়ে রাখছি। কর্তা হাঁক দিয়ে বলল, আমার ফোনে কেউ একজন তোমার নম্বর চাইলেন, দিয়েছি। আমি বিরক্ত হয়ে বলি, আশ্চর্য! না জেনে না বুঝে সবাইকে তুমি আমার ব্যক্তিগত নম্বর যে কেন দাও। আমি নম্বর বদল করলাম সবে। তোমার দয়ায় কোনও গোপনীয়তা রাখা যাবে না আমার। কানে গেল কী না বুঝলাম না। সে তখন গভীর মনোযোগ দিয়ে পি.ভি.নরসীমা রাও-এর The Insider এর রহস্য ভেদ করতে ব্যস্ত। বইটা কতবার যে পড়েছে ঈশ্বর জানেন। হ্যাঁ এই প্রসঙ্গে বলে রাখি The Insider খোদ লেখক তাঁর দামি সই সহযোগে আমাদের gift করেছিলেন। সঙ্গে এটাও বলেছিলেন আমাকে উদ্দেশ্য করে, “Indrani, You are my Parvati” পরে বইটা পড়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী-র পার্বতী চরিত্র উদ্ধার করি। কিন্তু আজও জিজ্ঞাসাচিহ্ন নিয়ে বসে আছি, কেন উনি এমন কথা বলেছিলেন? উত্তরটা পাবার আশা আর নেই স্বাভাবিক কারণেই, এ ঘটনা বিস্তারিত অবশ্যই লিখব পরবর্তীতে।

এখন আসি ২০১৭’র ৪ মে’র ঘটনায়। যা বলছিলাম, গজগজ করতে করতে জামা-কাপড় আলমারিতে গোছাচ্ছি। অবশ্যম্ভবীভাবেই মোবাইল বেজে উঠল, ধরলাম।
-আপনি কি ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য? একটি পুরুষ কণ্ঠ…
– হ্যাঁ
– ম্যাডাম আপনার সঙ্গে কথা বলবেন
– কে?
– আমাদের CM ম্যাডাম।
আমি কিছু প্রশ্ন করার আগেই

মমতা –
– ইন্দ্রানী তুমি নাকি আমাদের দলে আসতে চাও?
– আমি চুপ। সত্যি বলছি তখন সব কিছুই ধাঁধাঁ মনে হচ্ছিল। ভাবার চেষ্টা করছিলাম, কবে, কাকে কখন এমন কথা বললাম…
– আমাকে না বলে এখানে ওখানে কেন বলছ… মমতার গলায় উষ্মা।
আমি কিছুই বলছি না…
– শোনো আমি এখন কৃষ্ণনগরে। দু’দিন পর ফিরব। তুমি তার পরদিন আমার কালীঘাটের বাড়িতে আসবে।

আমি বললাম,
– আসলে এখন তো কবিপক্ষ। অনেকগুলো গানের অনুষ্ঠান নিয়ে ফেলেছি। ওগুলো…
– ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুমি গান গাও। হ্যাঁ ঠিকই তো। তাহলে ১৯ মে তুমি আসছ। দলে Join করবে। আর এই যে ফোন নাম্বার, যেখান থেকে কথা বলছি। এইটা রাখো। যখন আমাকে দরকার, এই নাম্বারে ফোন করবে, কেমন? ভালো করে গান গাও।
আস্তে, আস্তে, থেমে, থেমে খুব নিশ্চিন্ত হয়ে বললাম মমতাকে। আমার বহুদিনের পরিচিত। আমাদের প্রিয় মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী।
– আচ্ছা। তুমি ভালো থেকো। সাবধানে থেকো।
এরপরের ঘটনা আরও রোমাঞ্চকর, তবে আবারও বলি আমি রাজনীতির কিচ্ছু বুঝি না।
(চলবে)
বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও দূরদর্শন ব্যক্তিত্ব
2 Responses
আবারও একটা নতুন আর সুন্দর পর্ব পেলাম আমরা এবং অবশ্যই অনেক নতুন কথা জানলাম। খুবই ভাল লাগলো!! তবে মনে হলো এটা যেন একটু তাড়াহুড়ো করে লেখা হয়েছে।
কী ভালো লেখা !