banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ছিন্নপাতার সাজাই তরণী (পর্ব ১৫): দোল

ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য

মার্চ ২০, ২০২৪

Memories of Holi in Shantiniketan
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

আগের পর্ব পড়তে: [] [] [] [] [] [] [] [] [] [১০] [১১] [১২] [১৩] [১৪]

আত্মকথা লিখতে গিয়ে কত কথাই যে মনে আসছে! আমি তো লেখক নই, সবসময় সব চিন্তার ঠিক মতো বহিঃপ্রকাশ হয় না। সুন্দর করে কথা বলা; সুন্দর করে মনের ভাব প্রকাশ করা; ভেবেচিন্তে নিজেকে মানুষের সামনে পেশ করা, মেপে কথা বলা, মেপে ঠিক অ্যাঙ্গেলে ঘাড় ঘুরিয়ে মাপা হাসি হেসে যথার্থ স্বরক্ষেপন করা— এসব আমার আসে না। এ সমস্তই আমি শিখেছিলাম যখন দিল্লিতে শাহনাজ্ হোসেনের অর্গানিক বিউটি কেয়ার সংস্থায় পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করছি। তার আগে কলকাতায় গ্র্যাজুয়েশন করেছি। 

তা যা বলছিলাম। বিশ্বখ্যাত বিউটি থেরাপিস্ট তখন পড়াচ্ছেন। তিনি বলতেন, আজন্ম বিউটিফুল যদি থাকতে চাও, যৌবন যদি চাও তাহলে প্রেমে পড়ো। যদি সত্যি প্রেম হয় তাহলে তোমার সারা শরীর মনে যে দ্যুতি ছড়াবে, গভীর আনন্দ দেবে, সেই জ্যোতি, সেই পেলব অনুভূতি আর কিছু থেকেই পাওয়া যাবে না। তাই যৌবন ধরে রাখার জন্য প্রেমে পড়ো। বারবার ওই সুখানুভূতি অনুভব কর, দেখ তোমার চোখে, মুখে, ত্বকে, শরীরে যৌবন কীভাবে বসন্ত এনে দেবে। কীভাবে প্রতিটি মুহূর্ত তোমাকে সজীব, সুন্দর করে তুলবে। হ্যাঁ, মিসেস শাহনাজ হোসেন খুব সম্ভব তিনবার বিয়ে করেছেন। নিশ্চয়ই অনেকবার প্রেমেও পড়েছেন। আজ এই বছর তাঁর আশি বছর পূর্ণ হল। কিন্তু এইভাবে তো যখন তখন চাইলেই প্রেমে পড়া যায় না। সত্যি প্রেম হয়তো
“একবারই এসেছিল নীরবে
আমারই এ দুয়ার প্রান্তে
সে তো হায় মৃদু পায়
এসেছিল পারিনি তা জানতে…”
অথবা কবিগুরুর ভাষায়—
“প্রেম এসেছিল নিঃশব্দ চরণে
তাই স্বপ্ন মনে হল তারে
দিইনি তাহারে আসন…”

Indrani Bhattacharya

আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবনে প্রেম কখন আসে, কখন যায় জানতেও পারি না। তাই… চল, আসল কথায় আসি। গৌরচন্দ্রিকা অনেক হল।
এখন বসন্ত। সামনেই দোল (Holi)। বসন্ত পূর্ণিমা। এই দোল বারবার আমার জীবনে নানানভাবে, নানান সাজে আসে, যায়। বড় ভালবাসি এই সময়টা। ছোটবেলা থেকে কতরকমভাবে এই উৎসব পালন করে চলেছি। তার মধ্যে শান্তিনিকেতনের উৎসব বারবার, প্রতিবার নতুন সাজে নতুন মাত্রায় এসে দাঁড়ায় আমার সামনে।

যদি সত্যি প্রেম হয় তাহলে তোমার সারা শরীর মনে যে দ্যুতি ছড়াবে, গভীর আনন্দ দেবে, সেই জ্যোতি, সেই পেলব অনুভূতি আর কিছু থেকেই পাওয়া যাবে না। তাই যৌবন ধরে রাখার জন্য প্রেমে পড়ো। বারবার ওই সুখানুভূতি অনুভব কর, দেখ তোমার চোখে, মুখে, ত্বকে, শরীরে যৌবন কীভাবে বসন্ত এনে দেবে। 

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তবে সেই তালিকায় প্রথমেই যেমন দুর্গাপুজো, তেমনই তারপরে আসে দোলযাত্রা বা হোলি। হোলি সারা ভারতবর্ষ জুড়ে পালিত হয়। এই রঙের উৎসবে কমবেশি সবাই সামিল হল। দোল পূর্ণিমায় রাধাকৃষ্ণের পুজো হয়। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির নিয়ে শ্রীরাধিকা ও অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে রং খেলেছিলেন। আবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব শুরু করেছিলেন। শান্তিনিকেতনের এই রঙিন উৎসবের দিকে সবার মতো আমিও তাকিয়ে থাকি। এবারও গিয়েছিলাম, কিন্তু এবারের ২৫ মার্চ দোলের আগেই কলকাতা ফিরে আসি। এখন এত ভিড়, এত বাধ্যবাধকতা থাকে যে, এই দোলের সময় শান্তিনিকেতনের সেই পুরনো অনুভূতি বা সৌরভ হারিয়ে যায়। আমরা তাই ওইদিনের আগেই কলকাতা ফিরে আসি বা অন্য কোথাও চলে যাই। 

Holi of Vrindavan
রঙের উৎসব

আমি যে কোনও জায়গায় বেড়াতে যাই না কেন, ভালো লাগলে মনে হয় ওইখানেই একটা বাড়ি কিনে রাখি। খুবই হাস্যকর। কিন্তু এইভাবে শান্তিনিকেতনে প্রথম বাড়ি কিনলাম ১৯৯৪ সালে। নাম দিলাম রাজারানি। ভারী সুন্দর বাড়ি, প্রায় একবিঘে জমির ওপর লম্বা একতলা বাড়ি। চারপাশে আমার স্বপ্নের প্রণম্য, প্রিয় শিল্পীরা। সামনে এলমহার্স্ট ইনস্টিটিউট, তার পাশে বিখ্যাত শিল্পী শানু লাহিড়ীর বাড়ি। তারপাশে ভূদেব শঙ্কর—ঝর্ণাদি। ডানপাশে মণিলাল নাগ। বাঁ-পাশে দ্বিজেন মুখার্জি। ঠিক বাড়ির পেছনের অংশে রুনুদি-নবদার বাড়ি। রুনুদি-নবদা, কণিকা ব্যানার্জির বোন-ভগ্নীপতি; প্রিয়ম মুখার্জি নতুন প্রজন্মের নামকরা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর মা, বাবা। নবদা, প্রফেসর নবকুমার মুখার্জি এই এলমহার্স্ট ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি স্টাডিজ-এর প্রিন্সিপাল ছিলেন। এখানে সমাজের বিভিন্ন স্তরে, গ্রামের মানুষদের  নিয়ে কাজ করার জন্য একটি বেসরকারি সফল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যার প্রধান উদ্দেশ্য গ্রামীণ এলাকার নারী ও শিশুদের সমস্যাগুলির ওপর বিশেষ জোর দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কাজ করা। তবে প্রিয়ম বা পম কিন্তু প্রধানত কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মোহরদির কাছেই মানুষ।

My house Shantiniketan
শান্তিনিকেতনে আমার বাড়ি- রাজারানি

রুনুদি-নবদার বাড়ির পাশেই ছিল মোহরদির বাড়ি। আমারও শান্তিনিকেতন যাওয়া মানে মোহরদির বাড়িতেই অবাধ, অবলীলায় বিচরণ। গান গেয়ে, আড্ডা মেরে, খেয়ে-দেয়ে ওখানেই দিনের বেশিটা সময় কেটে যেত। মোহরদির তখন সত্যি বলতে কী বেশ শরীর খারাপ। কিন্তু কণ্ঠস্বরে সেই কিশোরী কণিকার আমেজ। সুর, আবেশ, আবেগ— যা আমৃত্যু তাঁকে ছেড়ে যায়নি। কী যে ভালবাসতেন আমাকে! সত্যি বড় ভালমানুষ ছিলেন। 

with Gorada
গোরাদা, গোরা সর্বাধিকারীর সঙ্গে শান্তিনিকেতনে

দোলের দিন আমার বাড়িতে প্রচুর নিমন্ত্রিত। রবাহুত, অনাহূত কেউ বাদ যেত না। একেকজন এসে একেকরকম আবদার করতেন। পারশে মাছ ভাজা, বিরিয়ানি, পিঠে, পায়েস, মাংস, পোলাও, তার সঙ্গে বিবিধ সুরার ব্যবস্থা। সকাল থেকে চা, মুড়ি, চপ, পেঁয়াজি, বেগুনি— কী নেই! যা চাও সব হাজির, রান্নাঘরে তিনজন কুক সমানে হাত চালিয়ে যাচ্ছে। কতজন যে আসতেন তার হিসেব নেই। কলকাতা থেকেই কত বন্ধুবান্ধব এসে হাজির হতেন। আবির খেলা, শুধু আবির। নানা রঙের ফাগের বাহারে পুরো চত্বর রামধনুর সাজে সেজে উঠত। তার সঙ্গে যে যার মতো নাচছে, গাইছে। এরপর সবাই মিলে গান গাইতে গাইতে চলে যেতাম পূর্বপল্লী চত্বরে। সেখানে ততক্ষণে বিশ্বভারতী এবং তার ছেলেমেয়েরা গাছতলায় গোল হয়ে বসে গান গাইছে। কেউ কেউ সেই গানের তালে নাচছে। আমরাও তাদের দলে মিশে নাচগান শুরু করে দিতাম। কী আনন্দ! কী আনন্দ!

Holi in Shantiniketan
নানা রঙের ফাগের বাহারে পুরো চত্বর রামধনুর সাজে সেজে উঠত

এবার বাড়ি ফিরে স্নানের পালা। আমার বাড়ির জমিতে আমি পরে আরও একটা বাড়ি তৈরি করিয়েছিলাম। কেয়ারটেকার তার পরিবার নিয়ে থাকত। ওরাই বাড়ির সব দেখভাল, রান্নাবান্না করত। তিনটে বাথরুমে সবাই যে যার মতো স্নান সেরে, খাওয়া-দাওয়া সারা হল। এবার সন্ধে, রাতের আয়োজন। আমার বাড়িতে সাধারণত বেশিরভাগই আর সেই ব্যবস্থা করতাম না। অন্য বন্ধুদের বাড়িতে চলে যেতাম, সেখানেই বাকি দিনটা। 

Bratin Sen,..Debanjan Chakravorty.. Doordarshan director,news
আমাদের দোলের আড্ডায়- দুই দুরদর্শন অধিকর্তা ব্রতীন সেন ও দেবাঞ্জন চক্রবর্তী

একবার সুনীলদার বাড়িতে গিয়েছি। প্রচুর বন্ধুবান্ধব, বেশিরভাগই কলকাতার। কিছু বিদেশ থেকে আসা ভারতীয়রাও আছেন। সুনীলদা গান ধরলেন— “আজি দখিন দুয়ার খোলা”… আমরা সবাই গলা মেলালাম। হঠাৎ সব থামিয়ে সুনীলদা বললেন, “ইন্দ্রাণী গান না, তুমি নাচ ধরো…”

আমি আর আমার মেয়ে শুরু করলাম ‘শাপমোচন’ নৃত্যনাট্যের এই অসাধারণ গানের সঙ্গে নাচ। আহা! কমবয়সে শাপমোচন নৃত্যনাট্যে অরুণেশ্বরের ভূমিকায় নাচ করে আমি এবং আমার কো-অ্যাক্টর best dancer’s and actor’s prize পেয়েছিলাম। Ballygunge Science College-এর ex verses present student Competition-এ ex মানে প্রফেসরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা present student-রা এক হাঁড়ি রসগোল্লা প্রাইজ পেয়েছিলাম।

My stage show
শাপমোচন নৃত্যনাট্যে অরুণেশ্বরের ভূমিকায় আমি

উফফ! কী সব দিন যে কাটিয়েছি! তবে হ্যাঁ, কলকাতায় হর্ষ নেওটিয়ার বাড়ির হোলি উৎসবও ভারি মনোরম। বিরজু মহারাজের নাচ। সঙ্গে শাশ্বতী, ওঁর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রী। তারপর অজস্র সুখাদ্য এবং ভাঙ, উফফ্, সে অন্য অনুভূতি। আমি অবশ্য খুব সাবধানে অল্পস্বল্প স্বাদ নিয়েছি। ঠান্ডাই কিন্তু খুব সুস্বাদু পানীয়। তবে বেশি খেলেই বিপদ। 

*ছবি সৌজন্য: লেখক, Istock

*আগামী পর্ব প্রকাশ পাবে এপ্রিল ২০২৪-এ

বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও দূরদর্শন ব্যক্তিত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com