দিদির বিয়েতে বরযাত্রীদের মনোরঞ্জন করতে প্রথম গান গেয়েছিলেন সেই যুবক (Mukesh)। সেই বিবাহের আসরেই উপস্থিত ছিলেন সেকালের জনপ্রিয় অভিনেতা মোহিত লাল। যুবকের গান শুনে মুগ্ধ মোহিত লাল বোম্বে নিয়ে যান যুবকটিকে। অভিনেতা ও গায়ক হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ ‘নির্দোষ’ ছবিতে। সে ছবিটি যদিও বিশেষ চলেনি। তারপর গায়ক-অভিনেতা থেকে শুধুমাত্র প্ল্যেব্যাক গায়ক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন সেই যুবক। পেশাগতভাবে পরিচিতি এনে দেয় ১৯৪৫ এর ছবি ‘পেহলি নজর’।
একবার BBC’র এক ইন্টারভিউতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় – ‘আপনি এত সুপুরুষ হওয়া সত্তেও পরবর্তীকালে অভিনেতা হওয়ার কথা ভাবলেন না কেন?’ এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন – ‘দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন শিল্প মাধ্যম। আর আমি মনে করেছিলাম একজন সেকেন্ডক্লাস হিরো হওয়ার থেকে একজন ফার্স্ট ক্লাস গায়ক হওয়া অনেক ভালো।’ ইনি হলেন ভারতীয় সংগীতের ‘দুঃখরাতের রাজা’ মুকেশ। সম্পূর্ণ নাম মুকেশ চন্দ মাথুর। জন্ম ২২জুলাই, ১৯২৩। বাবা জোরাওয়ার চাঁদ মাথুর। মুকেশ’রা দশ ভাইবোন ছিলেন, মুকেশ ষষ্ঠ। বাবা চাইতেন মুকেশও (Mukesh) বাবার মত ইঞ্জিনিয়ার হোক। তবে দশম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া করেননি মুকেশ। শুরু হয় তাঁর গানের জয়যাত্রা।
সেই সময়টা ছিল মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মহম্মদ রফি, কিশোর কুমার’দের। তার মধ্যেও নিজের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করে নিয়েছিলেন মুকেশ। গানের মধ্যে দুঃখ, বেদনা, যন্ত্রণার ভাব ফুটিয়ে তুলতে মুকেশ ছিলেন অদ্বিতীয়। বাংলা গানের যেমন উত্তম-হেমন্ত জুটি, হিন্দির ক্ষেত্রে তেমনই ছিল রাজ কাপুর-মুকেশের জুটি। রাজ কাপুর একসময় একথা’ও বলেন – ‘আমি তো আমার কণ্ঠ হারিয়েছি, সবাই মনে করে আমার কণ্ঠ মুকেশের মতো!’ মুকেশ তাঁর জীবনে প্রায় ১২০০-র কাছাকাছি গান গেয়েছেন। ‘কাভি কাভি মেরে দিল মে খ্যায়াল আতা হ্যায়’, ‘এক প্যায়ার কা নাগমা হ্যায়’, ‘কিসি কি মুসকুরাহাটো পে হো নিসার’, ‘মেরা জুতা হ্যায় জাপানি’, ‘কাহি দূর যাব দিন ঢাল যায়ে’, ‘আওয়ারা হু’, ‘ম্যায় পাল দো পালকা শায়ের হু’-এর মতো বহু কালজয়ী গান অমর হয়ে আছে মুকেশের (Mukesh) কণ্ঠে।
বন্ধু পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ‘সরি ম্যাডাম, সরি’ গান দিয়ে বাংলা গানের আঙিনায় পথচলা শুরু হয় মুকেশের (Mukesh)। এছাড়াও তাঁর ঝুলিতে আছে ‘মন মাতাল সাঁঝ সকাল, কেন শুধুই ডাকে’, ‘ঝুন ঝুন ময়না নাচো না, তাথৈ তাথৈ নাচো না’-র মতো বাংলা গান। মুকেশ ১৯৭৩ সালে ‘রজনীগন্ধা’ ছবির ‘কাই বার ইউ হি দেখা হে’ গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা গায়ক হিসাবে সম্মানিত হন, চারবার পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। মুকেশ (Mukesh) একবার বলেন – ‘যদি আমি দশটি হালকা চালের গান পাই আর একটি স্যাড সং পাই, তাহলে আমি সেই দশটা হালকা গান ছেড়ে একটা দুঃখের গানকেই বেছে নেবো।’ রেট্রো গানের জগতে কিশোর রফি মান্না’দের ভিড়ে আজও মানুষ মুকেশকে মনে রেখেছে।
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।