Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

রসনায় রঙের উৎসব

শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়

মার্চ ১৩, ২০২৫

Holi festival cuisine menu article cover
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

(Holi Festival) পাতা ঝরা শীতের শেষে যখন ধীরে ধীরে প্রকৃতি রূপ বদলায়, কৃষ্ণচূড়ার কচি সবুজ পাতা কিংবা কুসুম গাছের লাল পাতায় ভরে থাকে পথঘাট, বাগান বিলাসের পাপড়ির রক্তিম আভায় ঢেকে যায় মাটি, আর পলাশ শিমুলরা যখন আকাশে দু হাত বাড়িয়ে ডাক দেয় বসন্তকে, তখন আপামর ভারতবাসী মেতে ওঠে রঙের উৎসবে। আসে দোল! ভালোবাসার উৎসব। প্রকৃতির রঙের সাথে রং মিলিয়ে আবির গুলালে মন রাঙাতে চায় সবাই। আর উৎসব মানেই তো খাওয়াদাওয়া, তাই না? (Holi Festival)

Holi cuisine menu article
ব্রজভূমে হোলি

রঙের উৎসবে এমন খাওয়াদাওয়া যা দেখতেও যেমন রঙিন তেমনই মনকেও করে তোলে নবীন রঙে মাতোয়ারা। কেরলে যেমন মঞ্জল কুলি, হলুদগুঁড়ো দিয়ে রং খেলা হয়। রঙিন বসন আর লোকগান নাচে প্রাঞ্জল গোয়ান শিগমো উৎসব। আমাদের প্রাণের ঠাকুর রবি ঠাকুরের বসন্তোৎসব কিংবা বৃন্দাবনের ফুলের হোলি – একই উৎসব সারা ভারতে নানান রূপে পালিত হয়। তাই হোলি বলো বা শিগমো বা দোল বা মঞ্জল কুলি, খাবারও তো বৈচিত্রময় হবেই। আজ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কিছু চেনা, স্বল্প চেনা, বা অচেনা খাবার রইল উৎসবের দিনে। (Holi Festival)

Holi cuisine menu article (1)
রঙের উৎসবে রঙিন খাওয়াদাওয়া

রাঙা ডিমা 

অসমের বরপেটা হোলির বিশেষ খাবার এই রাঙা ডিমা আর আলু ভাজা। পাঁচফোড়ন আর পেয়াঁজ কুচি দিয়ে আলুভাজার কথা বলছি না। তবে রাঙা ডিমা নিয়ে না বললেই নয়। রাঙা ডিমা আসলে লাল রঙের সেদ্ধ ডিম। রঙচঙে ডিম যদিও বিদেশে নানা উৎসবে খাওয়া হয়। তবে অসমের এই ডিমে কোনও আর্টিফিশিয়াল রং নয়, ব্যবহার করা হয় বিজ্ঞানকে! (Holi Festival)

Holi cuisine menu article (7)
রাঙা ডিমা আর আলু ভাজা

হলুদ একটি ন্যাচারাল ইন্ডিকেটর, যেটা অ্যাসিডিক বলে তার রং হলুদ। কিন্তু ক্ষার জাতীয় কিছুর সংস্পর্শে এলেই রং বদলে লাল হয়ে যায়। ডিমে হলুদ মাখিয়ে, তাতে অল্প চুনজল দিলেই লাল টুকটুকে রঙের ডিম! তারপর তাকে ভেজে নিলেই তৈরি রাঙা ডিমা! রাঙা ডিমা আসলে কোনও রেসিপি বা খাবার নয়, আলুভাজা আর রাঙা ডিমা হলো আবেগ। (Holi Festival)

Holi cuisine menu article (2)
রাঙা ডিমা হলো আবেগ

ভাং পেড়া 

মথুরার হোলি বিখ্যাত। সেই মথুরার স্পেশাল ভাং দিয়ে পেড়া। ভাং-এর পাতায় থাকা টেট্রাহাইড্র-ক্যানাবিনল মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করে, মনকে তুরীয় অবস্থায় নিয়ে যায়। অল্প একটু ভাঙ মেশানো পেড়া খেলে ক্ষতি কি?
উপকরণ:
২ টেবিল চামচ ভাঙ পাউডার, ১ কাপ মাওয়া, ১/২ কাপ চিনি, ১/২ কাপ ঘি, পেস্তা সাজানোর জন্যে,
অল্প কেশর দুধ রঙের জন্যে।

Holi cuisine menu article (4)
ভাঙ পেড়া

কড়াইতে ঘি গরম করে তাতে মাওয়া আর চিনি দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে হবে। চিনি গলে গেলে, কেশর, পেস্তা আর ভাঙ পাউডার মিশিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিয়ে আকার দিতে হবে। তারপর, ফ্রিজে রাখলেই রেডি!

মোহন থাল 

শ্রীকৃষ্ণর হোলি বলে কথা আর ব্রজের মোহন থাল থাকবে না! এই মিষ্টি রাজস্থান গুজরাতে জনপ্রিয়। হোলি বা জন্মাষ্টমী যাই হোক, এই মিষ্টি ছাড়া যেন আয়োজন অসম্পূর্ণ।
উপকরণ :
৫০০ গ্রাম বেসন, ৫০০ গ্রাম ঘি, ৪০০ গ্রাম চিনি, ১০০ মিলিলিটার বা ১/২ কাপ দুধ, ১০০ গ্রাম খোয়া (না দিলেও হয়), ১/২ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ জায়ফল গুঁড়ো, এক পিঞ্চ জাফরান, এক কাপ জল।

Holi cuisine menu article (3)
মোহন থাল

১০০ গ্রাম ঘি আর দুধ গরম করে ফুটিয়ে নিয়ে সেটা একটা পাত্রে রাখা বেসনে ঢেলে দিতে হবে। তারপর হাতে করে খুব ভালো করে মেশাতে হবে। একটা গুঁড়ো গুঁড়ো ভাব আসবে বেসনে। আরও খানিক হাতে করে ঘষে নিতে হবে, যাতে বেশ একটা দানা দানা ভাব চলে আসে। তারপর আধঘণ্টা মতো ঢেকে রেখে, ভালো করে চেলে নিতে হবে বেসন মিক্সচারটা ।
পরের ধাপে ওই বাকি ৪০০ গ্রাম ঘি-এর আর্ধেকটা প্যানে ঢেলে তাতে বেসন মিক্সচার দিয়ে খুব অল্প আঁচে নাড়তে হবে। খানিক রোস্ট হলে বাকি ঘি আর এলাচ, জায়ফল গুঁড়ো দিয়ে নাড়তে থাকতে হবে। (Holi Festival)

রঙের উৎসবে এমন খাওয়াদাওয়া যা দেখতেও যেমন রঙিন তেমনই মনকেও করে তোলে নবীন রঙে মাতোয়ারা। কেরলে যেমন মঞ্জল কুলি, হলুদগুঁড়ো দিয়ে রং খেলা হয়। রঙিন বসন আর লোকগান নাচে প্রাঞ্জল গোয়ান শিগমো উৎসব। আমাদের প্রাণের ঠাকুর রবি ঠাকুরের বসন্তোৎসব কিংবা বৃন্দাবনের ফুলের হোলি – একই উৎসব সারা ভারতে নানান রূপে পালিত হয়।

অন্যদিকে একটা পাত্রে জল আর চিনি গরম করে ফুটিয়ে কেশর দিয়ে গাঢ় চিনির রস করে রাখতে হবে। (দুই আঙুলের মাঝে রাখলে যাতে একটা মোটা তারের মতো টেনে ফেলা যায়) সেই গাঢ় চিনির রস যাবে প্যানের বেসন মিক্সচারে। 
তারপর একটা চৌকো বড় বেকিং ট্রেতে ঘি মাখিয়ে, ওই মিশ্রণ ঢেলে ভালো করে চেপে চেপে দিয়ে চৌকো করে কেটে নিতে হবে। ঠান্ডা হলে তবেই ট্রে থেকে বের করে পরিবেশন করতে হবে। (Holi Festival)

পূরণ পোলি 

মহারাষ্ট্রে বেশ বিখ্যাত এই পুর ভরা রুটি। পূরণ নামেই হলো পুর আর পোলি হলো রুটি। বিশেষ করে হোলির সময় মন জয় করে পূরণ পোলি। 

উপকরণ:

২ কাপ আটা, ১ কাপ ময়দা, ময়ানের জন্যে ঘি ৩ টেবিল চামচ, হলুদ ১/৪ চা চামচ, ১ চিমটে নুন। পুরের জন্যে লাগবে বেশ সুন্দর হালকা সোনালি রঙের গুড় ১ কাপ, ছোলার ডাল ১ কাপ, জায়ফল গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ, এলাচ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, অল্প আদা ১/২ চা চামচ, মৌরি গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ, ঘি এক টেবিল চামচ। ভাজার জন্যে ঘি ৩/৪ টেবিল চামচ।  

Holi cuisine menu article (5)
পূরণ পোলি

ছোলার ডাল ৫/৬ টা সিটি দিয়ে প্রেসার কুকারে ভালো করে নরম করে নিতে হবে। তারপর বের করে সেদ্ধ করা জল আর ডাল আলাদা রাখতে হবে। সেদ্ধ ডালের দানা ভালো করে হাত দিয়ে চটকে তাতে গুড় মিশিয়ে গরম প্যানে নরম আঁচে নাড়তে হবে, বেশ আঠালো হলে ঘি মিশিয়ে দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে নাড়তে পুরের বাকি মশলা দিয়ে দিতে হবে। পুর বেশ ঘন ও কিছুটা শক্ত হলে নামিয়ে রাখতে হবে ঠান্ডা হওয়ার জন্যে। (Holi Festival)


আরও পড়ুন: দোলের মিষ্টিমুখ, ঘরোয়া রেসিপিতেই বাজিমাৎ


ছোলার ডাল সেদ্ধ বসিয়ে সেই সময়ে ভালো করে আটা ময়দা মেখে ফেলতে হবে নুন ঘি হলুদ দিয়ে। একটু নরম হবে মাখাটি। যতক্ষণ পুর তৈরি হবে আটা মাখা ঢাকা দেওয়া থাকবে। তারপর পুর এবং আটামাখা থেকে প্রায় ১২ টি লেচি কেটে নিতে হবে। এরপর লেচি গোল করে আঙুলের চাপে একটা বাটির আকৃতি করে তাতে পুর ভরে, ভালো করে আবার ঢেকে দিয়ে খুব হালকা হাতে ময়দার গুঁড়ো দিয়ে বেলে নিতে হবে, প্রায় ৮ ইঞ্চির মতো ডায়ামিটারের রুটি। এরকম তিন চারটি রুটি একসাথে বেলে সেঁকে ঘি দিয়ে ভেজে নিতে হবে ভালো করে। এক লট হলে বাকিগুলোও ভাজতে হবে। ভালো ঘি কিংবা ওই ডালসেদ্ধর জলে ফোড়ন দেওয়া কাটাচি আমটি (মহারাষ্ট্রের মশলাদার ডাল), অথবা বাদাম দুধ সহযোগে পরিবেশন করা হয়। (Holi Festival)

মুগ ডালের খাস্তা কাচৌড়ি 

উপকরণ:
পুরের জন্যে: ১/২ কাপ মুগ ডাল ভালো করে ধুয়ে ঘণ্টা দুই ভেজানো, ১ চা চামচ ঘি, ১ চা চামচ মৌরি, ১ চা চামচ জিরা, এক পিঞ্চ হিং, ১ চা চামচ আমচুর, ১/৪ চা চামচ হলুদ, ১ চা চামচ লঙ্কা গুঁড়ো, ১ চা চামচ ধনে গুঁড়ো, ১ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ আদা গুঁড়ো, ১/২ চা চামচ নুন, ১/৪ কাপ বেসন।

Holi cuisine menu article (6)
মুগ কাচৌড়ি

কচুরির জন্যে: আড়াই কাপ ময়দা, ১/২ চা চামচ নুন, ৩ টেবিল চামচ ঘি (গরম)।

ভেজানো মুগ ডাল জল ঝরিয়ে মিক্সারে বেটে নিতে হবে। তারপর প্যানে ঘি দিয়ে তাতে জিরে মৌরি ফোড়ন দিয়ে সুগন্ধ বেরোলে তাতে একে একে একটু আঁচ কমিয়ে পর পর হিং, আমচুর, ধনে গুঁড়ো, হলুদ আর বাকি সব মশলা মিশিয়ে একটু নেড়ে বেসন দিয়ে দিতে হবে। বেসন একটু ভাজা ভাজা হলে মুগ ডাল বাটা দিয়ে ভালো করে নেড়ে নিতে হবে, যাতে সব কিছু ভালো ভাবে মিশে যায়। (Holi Festival)

holi-festival
রঙের উৎসবে মেতে উঠুক দেশ

ওদিকে ময়দাতে নুন আর গরম করা ঘি মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর প্রয়োজন মতো জল দিয়ে ময়দা মেখে রেখে দিতে হবে আধ ঘণ্টা। আবার সেটাকে ভালো করে ঠেসে নিয়ে লেচি কেটে নিতে হবে ৭ টা মতো। এরপর লেচি গোল করে বেলে নিয়ে (বেশি বড় গোল হবে না, ৪ ইঞ্চির মতো) তাতে পুর ভরে পাশগুলো তুলে পুর ঢেকে ভালো করে সিল করে অল্প চাপ দিয়ে বেলে নিতে হবে, যাতে পুর বেরিয়ে না আসে। (Holi Festival)

তারপর তেল গরম করে নরম আঁচে বেশ সময় নিয়ে ভাজতে হবে কচুরি, তেলে দেওয়ার পর যতক্ষণে কচুরি ভেসে না ওঠে আর ভালো করে লালচে রং না আসে। এক এক পিঠ ভাজা হতে প্রায় তিন চার মিনিট লাগবে। তারপর ভেজে টিসু পেপারে রাখতে হবে। পরিবেশনের জন্যে অম্ল মধুর তেঁতুলের চাটনি মাস্ট! (Holi Festival)

এবারের হোলির মেনু তালিকায় বাংলা ছাড়িয়ে অন্য রাজ্যের খাবার। বৈচিত্র্যের মধ্যে থাকুক ঐক্য। রঙের উৎসবে মেতে উঠুক দেশ, জাতি ধর্ম আর রাজ্য রাজপাটের সীমানা ছাড়িয়ে…

(Holi Festival)

ছবি সৌজন্য: লেখক, অনিন্দ্য মজুমদার, GoodFon.com

Shruti Gangopadhyay Author

শ্রুতি অনেকদিন ধরে চক ডাস্টার নিয়ে স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে ফিজিক্স লিখতেই স্বচ্ছন্দ। সামান্য ও এত ক্ষুদ্র মানুষ, যে জীবনেও কখন হাইজে়নবার্গস আনসার্টেনটি প্রিন্সিপল কাজে লেগে গেছে অজান্তে। বর্ধমানে থাকার অবস্থানটি এতটাই সুনিশ্চিত, যে পিএইচডি উত্তর, উচ্চশিক্ষার মোমেন্টাম সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলা শেষ হলেও বাকি থাকে নিশ্চিন্তে আকাশ নদী পাখি আর প্রজাপতির গল্প শোনা।

Picture of শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়

শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়

শ্রুতি অনেকদিন ধরে চক ডাস্টার নিয়ে স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে ফিজিক্স লিখতেই স্বচ্ছন্দ। সামান্য ও এত ক্ষুদ্র মানুষ, যে জীবনেও কখন হাইজে়নবার্গস আনসার্টেনটি প্রিন্সিপল কাজে লেগে গেছে অজান্তে। বর্ধমানে থাকার অবস্থানটি এতটাই সুনিশ্চিত, যে পিএইচডি উত্তর, উচ্চশিক্ষার মোমেন্টাম সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলা শেষ হলেও বাকি থাকে নিশ্চিন্তে আকাশ নদী পাখি আর প্রজাপতির গল্প শোনা।
Picture of শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়

শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়

শ্রুতি অনেকদিন ধরে চক ডাস্টার নিয়ে স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে ফিজিক্স লিখতেই স্বচ্ছন্দ। সামান্য ও এত ক্ষুদ্র মানুষ, যে জীবনেও কখন হাইজে়নবার্গস আনসার্টেনটি প্রিন্সিপল কাজে লেগে গেছে অজান্তে। বর্ধমানে থাকার অবস্থানটি এতটাই সুনিশ্চিত, যে পিএইচডি উত্তর, উচ্চশিক্ষার মোমেন্টাম সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলা শেষ হলেও বাকি থাকে নিশ্চিন্তে আকাশ নদী পাখি আর প্রজাপতির গল্প শোনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস