(Little Magazine)
শুধু লাল লাল শব্দ ডাঁই হয়ে পড়ে আছে
‘মড়া বেড়ালেরা ডাকতেই থাকে’
স্কুলের দেয়ালের পিছনে যখন ছাত্রছাত্রীরা লাইন দিয়ে পতাকায় স্যালুট করতে দাঁড়িয়ে আছে, বাচ্চারা জ্যান্ত বেড়ালদের ছাল ছাড়িয়ে নেয়, সেগুলির পশম লম্বা লাঠির মাথায় চাপিয়ে, সারা চত্বর ‘মিঁইয়াও মিঁইয়াও’ চেঁচিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বাপ-মায়েরা ভাবে ছেলেপুলে সব বেড়াল হয়ে গেল বুঝি, পাড়ার গলির রাস্তাঘাটে তারা নুন ছেটাতে থাকে – অনুপস্থিতির দুর্গন্ধ যাতে চলে যায়, কচিকাঁচাদের কাপড় বারবার ধুয়ে চলে এমন একটা ছুটির জন্য যা কোনোদিন আসে না। (Little Magazine)
একটা অন্ধ লোক রেডিওতে খেলার পুণঃপ্রচার শুনতে শুনতে রাস্তায় ছুটে-যাওয়া লোকেদের বলে – অত হুড়োহুড়ি কোরো না হে, ম্যাচ শেষ হলে দেখা দুটো টিমই হেরেছে। কিন্তু কেউ এই রসিকতার মারপ্যাঁচটা ধরতে পারল না। উলটে তারা যখন ওর রেডিওটা চুরি করে নেয়, সে লোক নেতামন্ত্রীদের খিস্তি দিতে থাকে সারা বেলা। সে সময় আমরা দেয়ালের নালিশগুলোয় নজর দিতাম না – এত রক্ত লেগে থাকত যে সেসব ছেড়ে কে আর নালিশে মন দিত? এক সকালে দেখি, আমাদের বাড়ি নেই। শুধু লাল লাল শব্দ নোংরা কাপড়ের মতো ডাঁই হয়ে পড়ে আছে, সেগুলো নিয়েও কেউ মাথা ঘামাল না, কপোত-কপোতীরা দেয়াল ছাড়াই নিজেদের কাজকম্মো চালিয়ে গেল, শুধু তাই-ই নয় – পয়দা করল আরো আরো বাচ্চা – যারা স্কুলের ভিতর আরো আরো বেড়ালদের ছাল চামড়া ছাড়াতে শুরু করে হার্টের ডাক্তার আমায় একটাই পরামর্শ দিয়েছেনঃ
একটা উজাড় হয়ে যাওয়া গ্রাম নিয়ে ডায়েরি লেখা বন্ধ কর
‘ব্রুকলিন ট্রান্সলেসন কালেকটিভ’-এর জন্য মূল থেকে ইংরেজিতে অনুবাদঃ এমা (ঝ)ঘাল, খালেদ- আল হিলি, আমিয়েল আলকালে
দরজাহীন জানালার হৃদয়
১।
গানটা ও গেয়েছে… সুর ঠিকঠাক মনে ছিল।
প্রত্যাশার মতো অফুরাণ রাস্তায় ছুটতে ছুটতে মরল,
যেন বাগানের জালি-কাটা বাতাস, ছন্দ-লাগা ধুলোর মতো আত্মা ঢেলে দিল দেয়ালে
তার নাম মনে রাখার চেষ্টা করছে এমন একটা গোলাপের সঙ্গে বর্ণনা গুলিয়ে যাচ্ছে
গায়ক মরল, গানগুলো মার্বেলের সমাধিফলক।
ওর বুক কীভাবে
বুলেটের শুখা-পুষ্পোদ্গম সহ্য করল?
যারা প্রতিনিয়ত কুচোকাচা দুর্ঘটনায় মরে, কোনো মস্ত বিপর্যয়কে তারা বিব্রত করতে পারে না।
দ্রুত পালাতে পালাতে
কাঁটাতারে থমকে ঘুমিয়ে পোড়ো না।
যে রাস্তায় হাঁটছ, মুখে হাসি রেখে হাঁটো যাতে তোমার ক্ষততে ফতিহা* না দেখা যায়
মামুলি দিনকাল থেকে একটি দিন ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দাও,
চাকার এক্কেবারে তলায়।
এটা, মোটে, একটা দিন।
(Little Magazine)
২।
আমি একটা মেঘকে ছুটতে দেখেছি। পিছু নিয়েছি
যতক্ষণ না নিজের বাড়ি হারিয়ে ফেলি – রাস্তাকে নেমে
আসতে দেখেছি, তাকে দিলুম একটা রাইফেল, আর
পা-ছাড়া ফিরে এলাম। একটা হারিয়ে-যাওয়া মহিলাকে দেখলাম
আহত লোকেদের পোশাক নিয়ে আঙুলে জড়াতে।
তাকে কান্নার পাথর দিয়ে মারি। দেখেছি ফ্যাকাশে আরশি থেকে
গান পড়ে যাচ্ছে, আমি ক্লান্ত হয়ে যাই।
ঘুমিয়ে পড়ি। কে আর ঘুমন্ত আয়না নিয়ে ভাবে!
কে আর যুদ্ধের কারণে বিবর্ণ হয়ে ফিরবার পথে গাওয়ার কথা ভাবে?
(Little Magazine)
৩।
রাতে কাশতে কাশতে কেন তুমি নানান জিনিসের অনুপুঙ্খ বর্ণনা তুলে দাও?
আমার ডুবে-যাওয়া জাহাজগুলো জেগে আছে। যেন জাতীয় সঙ্গীত,
মৃতদের নাম গেয়ে গেয়ে আমার হৃদয়ের পারে সমুদ্র তাদের বেঁধে রেখেছে।
আমার নাম এলেও আমি লজ্জায় রাঙা হয়ে যাচ্ছি না।
আমি নিজের তারা গুনব কী করে যখন আমার হৃদয়ের আঙুল
ইতিহাস বইয়ে নোঙর করে আছে?
কোনো লাইফবয় নেই, কোনো বোট, আর এখানে আমরা…
ঢেউ এসে আমার দেশ চুরি করে নিয়েছে,
আমার খাটের মতো, দিবাস্বপ্নের মতো।
কেন সবকিছুর বর্ণনা অন্ধকারে কাশছে? পড়শির জানালা দিয়ে
সন্দেহ বৃষ্টির মতো ঢুকে আসছে আমায় গাল দেবার জন্য?
আমি ঘুরিয়ে গাল পারি। ঘড়ি জমে যায়।
আমি রাতের জল-কর্ষণে অভিযুক্ত হই।
কাশির ওষুধ আমার পিছনে ঝরে পড়ে।
(Little Magazine)
*কোরানের প্রথম শুরা থেকে
মূল থেকে ইংরেজিতে অনুবাদঃ সালেহ রাজুক, ফিলিপ টারমেন
কবি পরিচিতিঃ
নাসের রাবাহ-র জন্ম গাজায়, ১৯৬৩ সালে। অদ্যাবধি সেখানেই থাকেন। ১৯৮৫ সালে কৃষিবিদ্যায় স্নাতক হয়ে কৃষিমন্ত্রকের হয়ে কাজে যোগ দেন। Palestinian Writers and Authors Union-এর সদস্য নাসেরের কাব্যগ্রন্থ পাঁচটি। Running After Dead Gazelles (2003); One of Nobody (2010); Passersby with Invisible Clothes (2013); Water Thirsty for Water (2016); Eulogy for the Robin (2020)। তাঁর একটিই উপন্যাস প্রকাশিত, Since approximately an hour (2018). (Little Magazine)
বাংলায় অনূদিত দুটি কবিতার প্রথমটি, ‘Dead Cats Continue to Meow’ প্রকাশিত হবার ইতিবৃত্তটি Literary Hub, (২২ ডিসেম্বর, ২০২৩) পত্রিকাসূত্রে জানা যায় – ইজরায়েলি আক্রমণে বিধ্বস্ত আর পাঁচটা লোকের মতোই কবি বারংবার বাসা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কখনও যোগাযোগ থেকেছে, কখনও থাকেনি। এই কবিতাটি যে Amman পত্রিকায় প্রকাশ পায়, তার কারণ, কবি এক আত্মীয়রর ফোন ব্যবহার করেছেন, যাতে মাত্র তিন শতাংশ ব্যাটারি বাকি ছিল। আর এই ন্যুনতম চার্জটিও কোনো ক্রমে সোলার চার্জার জুটিয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। [প্যালেস্তিনিয়ান কবিতার অনুবাদে পথ দেখাচ্ছেন যাঁরা – আহলাম বশারাত, সানা দারঘামউনি আর পিনা পিকোলোকে ধন্যবাদ জানানো আর বাহুল্য নয়, অভব্যতা হয়ে দাঁড়াবে – তাই কিছু বলছি না।] (Little Magazine)
(বানান অপরিবর্তিত)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।