“জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা –
ধুলায় তাদের যত হোক অবহেলা -”
(Dal) ডাল-ভাত, এই বহুল প্রচলিত কথাটা আমাদের জীবন যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বাঙালি হেঁশেলে ডাল নিত্যদিনের সঙ্গী। ডাল সেদ্ধ, ডালের জল থেকে মাছের মাথার ডাল, সবই নানানভাবে রান্নাঘরে জায়গা করে নিয়েছে। চটকানো ভাতের সঙ্গে একটু মুগ কি মুসুর ডাল সেদ্ধ, আর একটু মাখন – ছোট বাচ্চাদের রোজকার খাবার। আবার রোগভোগ থাকলে, শরীরে বল পেতে ডাক্তারবাবু হামেশাই বলেন, “ডালের জল দিও”। (Dal)

নিরামিষ হেঁশেলে মটর ডাল, মুগ ডালের চল বেশি, মুসুর ডাল সেখানে ব্রাত্য। রোজকার রান্নায় ডালের ফোড়নেই তার স্বাদ। আবার সবজি ডাল খুবই উপাদেয়। মরসুম অনুযায়ী গরমের দিনে ডালের মধ্যে কখনও উচ্ছে, লাউ, আম, আমড়া, চালতা, করমচা আর শীতের দিনে সবজি, গাজর, কড়াইশুঁটি, পালং শাক ইত্যাদি আনাজপাতি দিয়ে সবজি ডাল রান্না করা হয়। Dal)

বর্ষায় ডালের খিচুড়ির সঙ্গে ডালের পাঁপড় যেমন এক সুস্বাদু যুগলবন্দী, তেমনই শুক্তো থেকে মাছ, সবেতেই বছরভর ডালের বড়ি সঙ্গী। সাদামাটা তরকারিতে একটু বড়ি ভেজে মেশালে স্বাদ বদলে যায়। বিউলি ডালের বড়ি, মুসুর ডালের বড়ি, উত্তর ভারতের মশলা দেওয়া মুগ, উরদ ডালের বড়ি – এক কথায় লা জবাব। (Dal)

ডাল বেচে গেছে? সেক্ষেত্রে বেঁচে যাওয়া যেকোনও রান্না ডাল কড়াইতে বা মাইক্রোওয়েভ ওভেনে শুকনো করে নিন। এইবার একটু সরষের তেল গরম করে তাতে রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি, আর শুকনো লঙ্কা কড়া করে ভেজে, একটু ধনেপাতা কুচি আর আচারের তেলে মেখে ফেলুন ডালটা, তারপর গরম ভাতে খাবেন। এসব যদিও খুব সাধারণ, ঘরের খাবার। বাঙালি মধ্যবিত্ত ঘরে মা-মাসিরা কিছুই ফেলতে চাইতেন না। তাই বেঁচে থাকা বাসি ভাত একটু পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভেজে, অথবা আগের দিনের ডাল আচারের তেলে মেখে, তাকে উপাদেয় করে খাওয়ার যোগ্য করে তুলতেন। (Dal)

ঢেঁকি ছাঁটা আউশ চালের ভাত, সাথে মুলো আর কাঁচা টমেটোর ডাল – খেতে খুবই সুস্বাদু। আর সঙ্গে আছে মটর শাক ভাজা।মুগের ডালে মুলো, টোমেটো আর নুন হলুদ দিয়ে সিটি দিয়ে নিন। মুলোর বদলে লাউ দিয়েও করা যেতে পারে এই ডাল। তারপর সরষে, তেজপাতা আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। আমার যশোর জেলা থেকে আসা ছিন্নমূল দিদা এই ডালে দিতেন অল্প নারকেল কোরা। বলতেন, “আমাদের গ্রামে গরম ভাতে এই ডাল হতো মটর কি খেসারি ডালে। আজকাল তোরা খেতে চাস না, তাই কাঁচা মুগই সই”।
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নানারকম ডাল প্রচলিত। তাদের রান্নার ভিন্নতা নিয়ে বলতে গেলে শেষ হবে না। সে রকমই কিছু রেসিপি ভাগ করে নিলাম। (Dal)
ডাল পালক
মারাঠি ডাল পালক, দিব্ব খেতে। সঙ্গে বেশি কিছু ভাজাপোড়া লাগে না। এক কাপ অড়হর ডাল, এক মুঠো মুসুর ডাল ভিজিয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন। এরপর দু কাপ পালং কুচিয়ে ধুয়ে রাখুন। কুকারে এক চামচ ঘি দিয়ে তাতে ডাল হাল্কা নেড়ে জল ঢেলে দিন, সাথে নুন হলুদ আর শাক। একটা সিটি।

কড়াইতে সাদা তেল গরম করে শুকনোলঙ্কা, জিরে, দুটো লবঙ্গ আর হিং দিয়ে নেড়ে নিয়ে, তাতে ৩-৪ চামচ পেঁয়াজ কুচি দিয়ে বেশ ভালো করে ভেজে, ১ চামচ রসুন কুচি, কাঁচালঙ্কা কুচি আর ১টা টমেটো কুচি, মিশিয়ে নাড়তে হবে। একটু ধনে গুঁড়ো আর কাশ্মিরী লাললঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে বেশ ভেজে ডাল দিতে হবে। সিমে গ্যাস রেখে ডাল ফুটতে দিতে হবে ৫-৭ মিনিট। এক চামচ ঘি দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
ডালের উত্তপাম
সাদা বিউলি ডাল ২ কাপ, ১/২ কাপ মুগ ডাল, ১/২ কাপ সবুজ মুগ ডাল সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে লঙ্কা, আদা দিয়ে মিক্সারে পেস্ট করে নিন। নুন মেশান। শীতের সবজি অর্থাৎ, গাজর, টমেটো, ক্যাপসিকাম, ধনেপাতা কেটে নিতে হবে। ফ্রাই প্যানে তেল ব্রাশ করে হাতা দিয়ে ডাল দিয়ে ওপরে সবজি কুচি দিন। এপিঠ ওপিঠ ভেজ নিন।

চাটনি
তেলে বাদাম, রসুন, আদা, লঙ্কা, নারিকেল হাল্কা ভেজে নিয়ে দই, নুন, চিনি মিশিয়ে মিক্সিতে বেটে চাটনি বানিয়ে নিন। বা সসের সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন।
ডালের ইডলি
সবুজ মুগ (কলা ওঠা) ১/২ কাপ, বিউলি ডাল ১ কাপ মিশিয়ে বানাতে হবে এই ইডলি। যারা চাল এড়িয়ে চলেন তাদের জন্য উপকারি এই ইডলি।
ডাল ৬-৭ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে সকালে মিক্সারে পেস্ট করে নিন। নুন আর দই মিশিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। ১/২ চামচ তেল গরম করে তাতে সরষে, কারিপাতা কুচি, শুকনো ছোলার ডাল ১-২ চামচ আর আদা কুচি দিয়ে, (ইচ্ছে হলে গাজর কুড়িয়ে দেওয়া যায়) সামান্য নেড়েচেড়ে ডালের ব্যাটারে মিশিয়ে দিন। ইডলি মেকারে তেল ব্রাশ করে স্টিম দিতে হবে ১৫ মিনিট। যদি মনে হয় বেশি ফোলা ইডলি পছন্দ, তাহলে ১/২ চামচ ইনো মেশাতে হবে।

এই প্রোটিন সমৃদ্ধ ডালের ইডলি হলুদ মুগ ডাল ভিজিয়েও বানানো যায়। ধনেপাতার চাটনি কি নারকেলের চাটনির সাথে সুস্বাদু জলখাবার। যাদের ইডলি মেকার নেই, তারা স্টিলের ছোট ছোট বাটি যাতে চাটনি দেয়, তাতে মোমোর মতো স্টিম করবেন ২০-২৫ মিনিট।
তেতো ডাল
মুগ অথবা মটর ডাল নুন দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। তেতোর ডালে লাগবে উচ্ছে। অনেকে লাউ, চালকুমড়োও দেন ডুমো করে কেটে। সেক্ষেত্রে ডালের সাথেই লাউ সেদ্ধ করে নিলে ভালো।

২ টো উচ্ছে চাক চাক কেটে নুন হলুদ দিয়ে ভেজে নিতে হবে। তা তুলে নিয়ে ওই তেলেই মেথি অথবা রাঁধুনি, তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। তারপর ডাল ঢেলে অল্প জল মিশিয়ে ফুটে গেলে উচ্ছে দিতে হবে। আদা বাটা, ঘি দিয়ে একটু ফুটে গেলে ডাল তৈরি।
ছবি সৌজন্য: লেখক
নিবাস গুরগাঁও। পেশায় বাবুর্চি। নিয়মিত রান্না বিষয়ক লেখালেখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এছাড়া স্কুলছুট বাচ্চাদের স্কুলে ফেরানোর কাজ করেন শমীতা।
15 Responses
Very useful and tasty recipes..
Onek smriti mone pore galo, sathe onek natun kichu o janlam
Very useful and tasty recipes.
Ak katahy oshadharon.. onk kichu notun janlam
Thanks for sharing yummy recipes
অসাধারণ সব রেসিপি
Very nice
খুব ভালো লাগলো রেসিপি গুলো। সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।
Excellent article on ordinary Bengali cooking made extraordinary.
Khub sundar recipe.maner maton ranna jegulo fela jai na.
এমন মানুষ আজকাল খুব কম পাওয়া যায়। লাখো মে এক। অনেক ভালোবাসা ও শুভ কামনা।
Awesome
It’s very usefull like always…
You are the one who makes even very simple recipes do mouthwatering…
It feels so good whenever I read her writings on food she describes so beautifully that I can smell it. Thanks for sharing dal recipes which are very easy to cook and relatable with us
Very simple yet good recipe