Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আলো: অপ্রত্যাশিতের আলো

পঙ্কজ চক্রবর্তী

অক্টোবর ২৭, ২০২৫

Aalo
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Aalo)

চারপাশে ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে সামান্য কয়েকটি অগভীর জলাশয়। তার পাশে ঘন কাশের বন। সেখানে চুপচাপ বসে ছিলে দুই ভাই বোন। চারপাশে ধান ক্ষেত, জলা আর বেত-ঝোপ। ঘন বেত বনের ভেতর পাঁকের জলে পা পুঁতে যায়। উপন্যাসে বাড়ি ফেরার পথ হারিয়ে ফেলে তারা। কিন্তু সিনেমায় আশ্চর্য এক রহস্যময় অচেনা ধ্বনিতে হঠাৎ উঠে দাঁড়ায় দুই কিশোর কিশোরী। ঘন কাশের বন ভেদ করে ছুটে যায় তারা। রেলগাড়ি আসছে। একটা আস্ত রেলগাড়ি চোখের উপর দিয়ে চলে যায় ধোঁয়া উড়িয়ে। চারপাশ ধোঁয়ায় ঢাকা। তারপর একটু একটু করে ধোঁয়া মিলিয়ে গেলে দেখা যায় জীবন আর আগের মতো নেই। এক অপ্রত্যাশিত আলো, বিপুল সুদূরের আলো বদলে দেয় তাদের জীবন। (Aalo)

আরও পড়ুন: আলো: আলো: ফেলে আসা দেশের বাড়ি, হস্টেল, মেস জীবনের আলো

ভারতবর্ষের সিনেমাতেও এসে পড়ে এক অপ্রত্যাশিত আলো। এই নাছোড় আলোর ডাকেই উপন্যাসের পাতায় মৃত্যুর আগে জ্বরের ঘোরে দুর্গা অপুকে বলে ‘আমায় একদিন তুই রেলগাড়ি দেখাবি?’ সেই অপু আজ কোথায়? এখন কি তার চোখে জ্বলে ওঠে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকের আলো? এই ঘটনার অর্ধ শতক পরে কবি জয় গোস্বামী তাঁর এক দীর্ঘ কবিতায় লিখছেন ভিন্ন এক অপুর আখ্যান। তার মুখে ‘চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত’ গান। কোমরে ভিডিও ভাঙা নাচ। অতঃপর কবি জয় গোস্বামী লিখছেন:

‘গোপাল নগর থেকে, গাইঘাটা, গুমা, চাঁদপাড়া
আমরা ফেরত আসছি। ডোবা, ছাইগাদা, কচুবন।       
লাইনের ধারে ধারে গাঁজা আর চোলাইয়ের ঠেক।
দু’ধারে ঝোপঝাড় দুলছে। জলে শুয়ে আছে পাট।
                    মাঠে উড়ছে চাঁদ দিশাহারা…
রামায়ণ যাত্রা নয়। রাত রাত জেগে
A মার্কা ভিডিও দেখছে গ্রামে গ্রামে অপুদের পাড়া!’ (Aalo)

Aalo
এই নাছোড় আলোর ডাকেই উপন্যাসের পাতায় মৃত্যুর আগে জ্বরের ঘোরে দুর্গা অপুকে বলে ‘আমায় একদিন তুই রেলগাড়ি দেখাবি?’ সেই অপু আজ কোথায়?

আজ নব্বইয়ের ধূসর দিনগুলি পেরিয়ে, অনিশ্চিত আলো- অন্ধকার পেরিয়ে পৌঁছেছি ২০২৫ সালে। আর মনে হয় জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি হারিয়ে গেছে এমন এক অপ্রত্যাশিত আলো, যার দেখা সহজে মেলে না। আগে পাওয়ার চেয়ে না- পাওয়া ছিল বেশি। তাই কবে কখন একটুখানি পাওয়ায় বদলে যেত জীবন। না পাওয়ার মনোরম বিরহ নিয়ে জীবন কেটেছে পুকুরের পাড়ে, খোলা মাঠে। আজ চাওয়ার আগেই দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি। দশ মিনিটে ডেলিভারি বয় এনে দেয় অযাচিত স্বপ্ন। যা চাই সবই পাব। আমাদের ছোটবেলার মতো তীব্র, অহেতুক আকাঙ্ক্ষা আর দীর্ঘ অপেক্ষা আজ আর নেই। (Aalo)

অতিরিক্ত কিছু ছিল না বলেই আমাদের চারপাশ থেকে অপ্রত্যাশিত নির্মাণ করে নিতে হত। আমরা দেখতাম কয়েকটি কাগজ আর প্লাস্টিক সুতো দিয়ে বেঁধে দিলে একটা আস্ত ফুটবল হয়ে ওঠে। আর চারপাশে এসে দাঁড়ায় অলৌকিক খেলার মাঠ। ঝোপের মধ্যে বল কুড়োতে গিয়ে সন্ধ্যার আগের মুহূর্তে আমরা কেউ কেউ দেখে ফেলেছি পাড়ার দাদা বৌদির ঘনিষ্ঠ শরীর। সেই দাগ, অপ্রত্যাশিতের কুহক সরাসরি বুকে এসে পড়েছে। কতদিন সেই তাপ আমরা ছড়িয়ে দিয়েছি খেলার শেষে প্রায় সন্ধ্যার মুখের গোপন আলোচনায়। বাড়িতে মিষ্টির হাঁড়ি এলে তার ওপর প্লাস্টিক বেঁধে ঢোলের বাজনা তোলার দিন ছিল। সেদিন ঝর্ণা কলম পুড়িয়ে নীচে একটি সূঁচ ঢুকিয়ে, উপরে পাখির পালক দিয়ে চমৎকার এক খেলনা উড়ে বেড়াত আকাশে আর অতর্কিতে এসে গেঁথে যেত মাটিতে। (Aalo)

“সেসব নিবিড়, পরস্পর বিরোধী যৌনতার অপ্রত্যাশিত পাঠ থেকে আজকের কিশোরের যৌনজীবন যোজন যোজন দূরে সরে গেছে। শুরু হয়েছিল অবশ্য ক্লাস এইট থেকে। তার আগে পুকুরে দুই একটি পুঁটি মাছের ধারণা ছাড়া গল্প তেমন এগোয়নি।”

কাগজ কুচি কুচি করে ইট দিয়ে উপরে ছুড়ে দিয়ে দেখেছি কেমন এক অলৌকিক পুষ্প বৃষ্টি হয়। এই অলৌকিক বৃষ্টির ভেতর ভিজতে ভিজতেই আমরা একটু একটু করে বড় হচ্ছিলাম। সেসব নিবিড়, পরস্পর বিরোধী যৌনতার অপ্রত্যাশিত পাঠ থেকে আজকের কিশোরের যৌনজীবন যোজন যোজন দূরে সরে গেছে। শুরু হয়েছিল অবশ্য ক্লাস এইট থেকে। তার আগে পুকুরে দুই একটি পুঁটি মাছের ধারণা ছাড়া গল্প তেমন এগোয়নি। ফাইনাল পরীক্ষার আগে একদিন টিফিন পিরিয়ডে সন্দেহজনক ভিড় দেখা দিল পিছনের বেঞ্চে। দু’বার ফেল অভিষেকের কাছে মিলল আস্ত একটা চটি বই। বই না বইয়ের কুহক। (Aalo)

তার আগে জীবন বিজ্ঞানের ক্লাসে জনন পড়াতে এসে আমাদের ফিক ফিক হাসি শুনে পিঠে কয়েকটা চড় থাপড় পড়েছিল স্যারের। আমাদের সিলেবাসের সাহিত্যে ছিল যৌনতার শব্দগত ইশারা। ‘সবার বাড়া শত্রু সে’, (দ্বিজেন্দ্রলাল), ‘সে যে শাইলকের বাড়া হইল’ (রবীন্দ্রনাথ), ‘তরঙ্গবিক্ষুব্ধ বিচিমালা’ (বঙ্কিমচন্দ্র), ‘তেঁই শুকাইল জলপূর্ণ আলবাল অকাল নিদাঘে’ (মধুসূদন), এইসব পড়াতে গিয়ে, ঠিক এই শব্দগুলির সামনে এসে বিব্রত এবং উদাসীন হয়ে যেতেন ক্লাসটিচার। পরবর্তীকালে গৃহ শিক্ষকতার সময় আমাকেও এই বেড়া টপকাতে হয়েছে ছাত্রদের মৃদুগুঞ্জনকে নিস্পৃহ করে। তবু রেহাই মেলেনি। পিছনের বেঞ্চের সে বইয়ের ভেতর আস্ত একটা গুপ্ত সাম্রাজ্যের খিলান গাঁথা ছিল। (Aalo)

ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে একটু আধটু, ধন্যাত্মক অব্যয় সহযোগে তীব্র বাক্য বিন্যাসে কান তখন গরম। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে আসার উপায় নেই। সাধারণত ক্লাসের তথাকথিত ফেল করা দাদার বয়সী ছেলে, তারাই এই গুপ্ত সাম্রাজ্যের মালিক। অকুতোভয়। আমরা মিনমিনে ফার্স্ট সেকেন্ড বয়। সেদিন সেই যৌনসম্রাটদের দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মনে মনে ঈর্ষা করতাম ওদের মতো মুক্ত বিহঙ্গদের। অবশেষে সেই বই একদিনের জন্য বাড়িতে পাওয়া গেল। (Aalo)

“সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শারদীয়ায় লিখলেন ‘রাকা’ উপন্যাসটি। ঢেউ এসে পড়ল কোচিং ক্লাসে। আর আমরা কোচিং ক্লাসে গিয়ে মূল জায়গাগুলি বান্ধবীর থেকে নিয়ে পড়ে নিলাম। ফেরার পথে লুকোনো সিগারেটে টান দিয়ে সেইসব স্মৃতি রোমন্থনের দিনগুলি হারিয়ে গেল অচিরেই।”

তখনও আমাদের বই বা খাতা ক্যালেন্ডার দিয়ে মলাট দেওয়া রীতি ছিল। প্রভাতাংশু মাইতির ইতিহাস বইয়ের মলাটের ভিতর রাখা রইল সেই বই। হয়তো বা কোনও দেবদেবীর স্পর্শেই। বাড়িতে অনেক বইয়ের ভিতর টেবিলে আছে। তবু মনে হচ্ছে ধরা পড়ে যাব এমন এক অপরাধবোধে চোখ চলে যায় বারবার। রাতে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়ার নাম করে দেখলাম অলৌকিক বাক্যের সৌন্দর্য। আমাদের চেনা জগৎ মুছে দিচ্ছে। মধ্যরাতে মায়ের নাক ডাকার শব্দ আর বুকের ভিতরের দ্রুত ধকধক শব্দ মিশে রাত্রি গড়ায় ভোরের দিকে। পরের দিন হস্তান্তর করে তবে নিষ্কৃতি। (Aalo)

পাড়ার লাইব্রেরিও এ ব্যাপারে কিছু কম যায় না। কয়েক দশক আগে, দু-একজন বন্ধুবান্ধব, পাড়ার বড়রা জড়ো হলে লাইব্রেরি করার কথা ভাবতেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সেই সব লাইব্রেরি কখনও কখনও সুবর্ণজয়ন্তী ছুঁয়ে ফেলেছিল নব্বই দশকে। তেমনই দুই-একটা লাইব্রেরির মেম্বার ছিলাম আমরা। সেইসব লাইব্রেরিতে জেমস হেডলি চেজের বইয়ের ডিম্যান্ড ছিল সবচেয়ে বেশি। আমাদের সেসব বই সহজে দেওয়া হত না। আমরাও অবশ্য সেসব বই বাড়িতে আনতাম না। দেখতাম আমাদের পূর্বপুরুষ আসল জায়গাগুলিতে আন্ডারলাইন করে রেখেছে আগেই। পাতা উল্টেই যৌনতার পাঠ নিয়ে সেই বই ফেরত দিয়ে অন্য বই নেওয়া যেত। এভাবেই গ্রামে গ্রামে অজস্র বার্তা রটে যেত। (Aalo)

আরও পড়ুন: আলো: পর্যটক, উন্নয়ন ও পাহাড়: আলো ক্রমে আসিতেছে?

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শারদীয়ায় লিখলেন ‘রাকা’ উপন্যাসটি। ঢেউ এসে পড়ল কোচিং ক্লাসে। আর আমরা কোচিং ক্লাসে গিয়ে মূল জায়গাগুলি বান্ধবীর থেকে নিয়ে পড়ে নিলাম। ফেরার পথে লুকোনো সিগারেটে টান দিয়ে সেইসব স্মৃতি রোমন্থনের দিনগুলি হারিয়ে গেল অচিরেই। তখন কোনও একটি উপন্যাসে রাতের অন্ধকারে দুই শরীরের গায়ে ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোয় আমাদেরই পূর্বরাগের ছায়া লুকিয়ে থাকত। মনে আছে সহায়ক পাঠে ছিল নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘এক পো দুধ’ গল্পটি। সেখানে ঝগড়ার পর অনেক রাতে অন্ধকারে দুটি শরীর এক হয়ে গেল, এই একটি ইঙ্গিত ছিল। বাড়িতে বড়দের বই এবং ছোটদের বই আলাদা ছিল। একবার, এইমুহূর্তে নাম মনে নেই, এমন এক লেখকের ‘ফুলশয্যার রাতে’ নামক একটি উপন্যাস পড়ে কানমলা আর বকা জুটলেও পারিবারিক জল গড়িয়েছিল অনেকদূর। (Aalo)

Aalo
অতিরিক্ত কিছু ছিল না বলেই আমাদের চারপাশ থেকে অপ্রত্যাশিত নির্মাণ করে নিতে হত। আমরা দেখতাম কয়েকটি কাগজ আর প্লাস্টিক সুতো দিয়ে বেঁধে দিলে একটা আস্ত ফুটবল হয়ে ওঠে

আরেকটু বড় হয়ে মাধ্যমিক পাশের পর বখাটে ছেলেগুলির গুপ্তধনের সরাসরি উৎসের সন্ধান পাওয়া গেল। স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রাতের কামনা, নিষিদ্ধ যৌবন, মধুর মিলন ইত্যাদি চটি বই কিংবা ‘দফা ৩০২’- এর রঙিন প্রচ্ছদ শরীরে বান ডাকত। আর ছবির বইয়ের প্লাস্টিকে পিন দেওয়া থাকত। কিনলে তবেই দেখা যাবে। সেখানে বাক্যের বিন্যাস দেখবার চাহিদা নেই, শুধুমাত্র চক্ষুদর্শন। কাজেই দোকানদার পিন খোলার রিস্ক নিতেন না কাস্টমার হারাবার ভয়ে। সেসব বই আমাদের কেমিস্ট্রির মোটা বইয়ের মলাটের ভিতর লুকিয়ে ছিল কিছুদিন। আর আশ্চর্যের বিষয় তার পাশেই ছিল শঙ্খ ঘোষের ‘তুমি তো তেমন গৌরী নও’ অনায়াসে। আমাদের তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। (Aalo)

একজন পুড়ুয়া বন্ধু ছিল আমাদের। সর্বগ্রাসী পাঠক। সে মাঝে মাঝে ডায়েরিতে পর্ন গল্প লিখে আমাদের পড়াত এবং বিনা পয়সায় নিজের যৌনতার ব্যবস্থা নিজেই করে নিয়েছিল। চমৎকার লেখার হাত তার। আমরাই তার একটি লেখার নামকরণ করে দিলাম ‘নিরুদ্দেশের ঠাপ’। এমন নামকরণ স্বয়ং প্রেমেন্দ্র মিত্রও করতে পারতেন না। যাদের বাড়িতে রঙিন টিভি ছিল তারা এমটিভির কথা বলত। সে সব কুহক কখনও কখনও দেখা যেত বন্ধুদের সচিত্র স্বপাক ধারাবিবরণীতে। এমন করতে করতে এসে পড়েছে ভিডিওর যুগ। তখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মহালয়ার আগে, অন্যান্য উৎসবে পাড়ায় ভিডিও নিয়ে হাজির হত একজন। সঙ্গে বাক্সের ভেতর ক্যাসেট। সেসব ভিডিও মাঝে মাঝেই ঝিরঝির করে বন্ধ হয়ে যেত। আবার চিৎকার চেঁচামেচি করে ঠিক করা হত। (Aalo)

“হাতের কাছে এত অভাব, সাধ আর সাধ্যের এত বিরোধ, সহজলভ্যতা নেই- তাই বুঝি আমাদের এক গোপন পর্দার ছিদ্র দিয়ে দেখতে হত যৌনতার জগতকে। সহজে মিলত না বলেই তার আকর্ষণ ছিল।”

সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত প্রথমে মা-কাকিমা, ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য বাংলা ছবি। তারপর পরপর দুটি হিন্দি ছবি। মিঠুন অমিতাভ- জিতেন্দ্র- শ্রীদেবী। একদম ভোররাতের দিকে যখন ভিড় কমে এসছে তখন কয়েকজন পাড়ার দাদা চালাত ব্লু-ফিল্ম। আমাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেসব ছবির শেষ দৃশ্য কখনও কখনও আমরা লুকিয়ে দেখেছি। আর আশ্চর্য বেদনায় লক্ষ্য করেছি ভিডিও চালায় যে ছেলেটি, সে দুকুল ছাপানো যৌনদৃশ্যের পরপারে চেয়ারে বসে অকাতরে ঘুমোচ্ছে। এইসব লুকোনো সম্পদের অপ্রত্যাশিত আলো নিয়ে আমরা বড় হয়ে গেলাম। (Aalo)

হাতের কাছে এত অভাব, সাধ আর সাধ্যের এত বিরোধ, সহজলভ্যতা নেই- তাই বুঝি আমাদের এক গোপন পর্দার ছিদ্র দিয়ে দেখতে হত যৌনতার জগতকে। সহজে মিলত না বলেই তার আকর্ষণ ছিল। একটি দুটি চকিত দৃশ্যই তিন মাসের জন্য স্মৃতির সম্পদ হয়ে থাকত। চাহিদার তুলনায় জোগান কম ছিল বলেই আমরা এই অপ্রত্যাশিত আলোকে ছুঁতে পেরেছিলাম আমাদের জীবনে। এক বন্ধুর বাবার ছিল ওষুধের দোকান। তখনও জাপানি তেল বা শিলাজিতের যুগ আসেনি। একদিন সে নিয়ে এল কন্ডোমের প্যাকেট। তেঁতুল গাছের নীচে টিফিন পিরিয়ডে ফুলিয়ে দেখাল। সেই বিস্ময় অনায়াসে হার মানাতে পারে মাইকেল ফ্যারাডেকেও। (Aalo)

এরই ফাঁকে মাঝে মাঝেই আমরা খোঁজ রাখতাম কোন বন্ধুর বাড়িতে কোনদিন মা বাবা কেউ থাকবে না। সেদিন লুকিয়ে লুকিয়ে ভিসিডি ভাড়া করা হত। কারোর কারোর অশীতিপর ঠাকুমার অস্বচ্ছ চোখের সামনে দিয়ে, দুরন্ত কনফিডেন্সে, আমরা এগিয়ে গিয়েছি যৌনতার সেইসব পাঠশালায়। আবার হঠাৎ কারেন্ট  চলে গিয়ে সিডি যখন আর বের করার উপায় নেই, তখনই চলে এসেছে মা কিংবা বাবা। আর তারপর বিশ্বকাপ ফাইনালের চেয়েও বেশি টেনশন কার্ফু জারি করেছে মগজে। আমাদের চোখও ছিল বটে। একটা দীর্ঘ উপন্যাসের মোক্ষম জায়গাটি খুঁজে পেতে দু মিনিটের বেশি লাগত না। আমরা কম বেশি সকলেই বাঘের হালুম হয়ে শিকারের খুব কাছেই ছিলাম সেদিন।

“আমাদের বন্ধু পড়তে লাগল- ‘মহাশয় আমার পুত্র অমুক গতকল্য টিফিনের সময় একটি ভাঙা সাজি লইয়া বন্ধুদের সাথে লোফালুফি খেলিতেছিল। এমন সময় দৈবদূর্বিপাকে একটি সাজি…। স্যার লাফিয়ে উঠলেন -‘কী বললি শুয়ার!”

শুধু যৌনতার সূত্রেই নয়, আমরা অপ্রত্যাশিত আলো পেয়েছিলাম আরও কত প্রসঙ্গে, পালা পার্বণে, মাঠে-ঘাটে জীবনভর বিপুল জীবনের উৎসবে। তখন বাড়ির সবটুকু মাটি সিমেন্ট বা ঘর গিলে নেয়নি। প্রতিবেশী বাড়ির জঙ্গলে লুকনোর অনন্ত সম্ভাবনা ছিল। যাঁর দোতলা বাড়ি তাঁকে অহেতুক সমীহ করার নেশা ছিল। তেমনই কয়েকটি প্রসঙ্গের কথা বলি জীবন থেকে এবং সাহিত্য থেকে। তখন শীতকালে পাশাপাশি দুই স্কুলের ভিতর ক্রিকেট ম্যাচ হত। স্যাররা খেলতেন আর আমরা ছিলাম দর্শক কাম চিয়ার লিডার। একটি ম্যাচের  দিনের কথা বলি। আমাদের ইতিহাস এবং ইংরেজি পড়াতেন তরুণ স্যার। বেঁটে মানুষ। লাফিয়ে সাইকেলে উঠতেন। টিফিনের সময় বাড়িতে যেতেন খেতে। (Aalo)

তেমনই একদিন স্যারের সাইকেলের ক্যারিয়ারে ভাঙা একটি ফুলের সাজি ঝুলিয়ে দিল কেউ। টিফিনের পর ফিরে এসে ক্ষুব্ধ স্যার বললেন, যে ছাত্ররা স্যারের সাইকেলে ফুলের ভাঙা সাজি ঝোলায় তাদের হয়ে আমি খেলব না। সম্মুখে ভারি বিপদ। শেষপর্যন্ত অভিভাবকের থেকে চিঠি নিয়ে আসতে হবে এই শর্তে তিনি রাজি হলেন। পরের দিন ক্লাসে যথারীতি চিঠি হাজির। আমরাই বাবার লেখা ও সই নকল করে লিখে দিলাম সেই চিঠি। নাম ডাকার পর তরুণ স্যার চোখ বুজে বললেন চিঠিতে কী লেখা আছে পড়। (Aalo)

Aalo
তেমনই একদিন স্যারের সাইকেলের ক্যারিয়ারে ভাঙা একটি ফুলের সাজি ঝুলিয়ে দিল কেউ

আমাদের বন্ধু পড়তে লাগল- ‘মহাশয় আমার পুত্র অমুক গতকল্য টিফিনের সময় একটি ভাঙা সাজি লইয়া বন্ধুদের সাথে লোফালুফি খেলিতেছিল। এমন সময় দৈবদূর্বিপাকে একটি সাজি…। স্যার লাফিয়ে উঠলেন -‘কী বললি শুয়ার! দৈবদুর্বিপাকে… আমি জানি তোমরা ইচ্ছে করে করেছ।’ এভাবেই ঘটনার সমাপ্তি। শুধু আজ ভাবতে ইচ্ছে করে তখন অষ্টম শ্রেণির একটি ছাত্রের দখলে দৈবদূর্বিপাকের মতো অপ্রত্যাশিত ভারি শব্দ ছিল। (Aalo)

আরেকটি কথা আপনাদের মনে করিয়ে দেওয়া যাক। ষাটেরর শুরুতে ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রিয়তোষ মুখোপাধ্যায়ের একটি ছোটগল্প প্রকাশিত হল। নাম ‘শ্রীকৃষ্ণের পট। ‘সেই ছোটগল্পে উগ্র যৌনতা, অশ্লীলতার সন্ধান পেয়ে তৎকালীন বাম যুব ছাত্রনেতা কয়েকজন ‘পরিচয়’ পত্রিকার সেই সংখ্যা প্রকাশ্যে পোড়ালেন। এই সংবাদ দিয়ে আমার তরুণ লেখক বন্ধু জানালেন, এর উত্তরে একজন অধ্যাপক তাঁকে জানাচ্ছেন- তাঁরা অশ্লীলতার জন্য পত্রিকা পোড়াচ্ছেন, তার চেয়েও বড় বিস্ময় তৎকালীন যুব ছাত্র নেতারা ‘পরিচয়’- এর মতো পত্রিকা পড়তেন। এর চেয়ে অপ্রত্যাশিত আর কী হয়! (Aalo)

“আবারও ফিরি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। আবারও এক ট্রেন। আবারও এক অচেনা ভূগোলের দিকে যাত্রা। আবারও আলোর গল্প।”

এবার বলি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আহ্বান’ গল্পটির কথা।  লেখক নরেশ বাড়ুজ্জের ছেলে। মাঝে মাঝে দেশের বাড়িতে যান। যদিও সেখানে নিজের ঘর নেই। সেখানেই পথে পরিচয় এক হতদরিদ্র মুসলিম বৃদ্ধার সঙ্গে
(লেখকের ভাষায় ভারতচন্দ্র বর্ণিত জরতীবেশিনী অন্নপূর্ণার মতো)। তিন কুলে তাঁর কেউ নেই। স্বামী মারা গেছেন। লেখকের প্রতি তাঁর বড় টান। মাঝে মাঝেই টুকটাক খাবার জোগাড় করে দেন। লেখক যখনই দেশের বাড়িতে ফেরেন দেখা করা চাই। তাঁর গলায় একটাই ডাক ‘অ মোর গোপাল’। লেখকের নাম অবশ্য গোপাল নয়। (Aalo)

এ যেন সব মায়ের স্নেহের ডাক। আত্মার আহ্বান। কোনও দাবি নেই তাঁর। কোনওদিন হাত পাতেননি। শুধু একটাই প্রত্যাশা ‘গোপাল, যদি মরি আমার কাফনের কাপড় তুই কিনে দিস।’ একদিন বৃদ্ধা মারা গেলেন। পাতানো মেয়ের জামাই লেখকের থেকে টাকা নিয়ে কাফনের কাপড় কিনল। তারপর বুড়িকে কবর দেওয়া হল। সেখানে উপস্থিত শুকুর মিঞা, নসর, আবেদালি, গনি। সব মুসলিম প্রতিবেশী কবরে এক কোদাল করে মাটি দেন। তারপর বৃদ্ধ শুকুর মিঞা লেখককে মাটি দিতে বলেন- ‘দ্যাও বাবাঠাকুর, তুমিও দ্যাও- তুমি দিলে মহাপ্রাণী ঠাণ্ডা হবে।’ (Aalo)

Aalo
আমরাও অবশ্য সেসব বই বাড়িতে আনতাম না। দেখতাম আমাদের পূর্বপুরুষ আসল জায়গাগুলিতে আন্ডারলাইন করে রেখেছে আগেই

দেশ কাল ধর্মের সীমানা ডিঙিয়ে এক অপ্রত্যাশিত আলো এসে পড়ে আমাদের বুকে। আজ এই ভারতবর্ষে কিংবা এই রাজ্যে এই অপ্রত্যাশিত আলো কোথাও নেই। বরং মুসলিম রোগী দেখা যাবে না এমন ফতোয়া জারি করে দু’দিন আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এক চিকিৎসকের চেম্বার, কলকাতার নিকটবর্তী অঞ্চলে। আবারও ফিরি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। আবারও এক ট্রেন। আবারও এক অচেনা ভূগোলের দিকে যাত্রা। আবারও আলোর গল্প। ‘ডাকগাড়ি’ বলে বিভূতিভূষণের একটি গল্প আছে। গল্পের মূল  চরিত্র রাধা। অজ পাড়া গাঁয়ের এক অকাল বিধবা নারী। কতদিন সে দুর্গাপ্রতিমার মুখ দেখেনি এমনকি গ্রামে জাঁক করে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোও হয় না। (Aalo)

একঘেয়ে জীবন তার। কোনও নতুনত্ব নেই। সংসারের কাজ, গরুর সেবা, বাবার হাতে পায়ে তেল মালিশ করা, মায়ের দোক্তার পাতা পুড়িয়ে তামাক তৈরি, রান্না করা। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। মাঝে মাঝে সে ভাবে কোথাও বেড়িয়ে আসবে। একদিন ভাই নবুকে নিয়ে সে বাসুদেবপুর শ্বশুরবাড়িতে যায়। দু’দিন পর গয়না ফেরত চাইলে জোটে গলা ধাক্কা, অপমান। সারাদিন অনাহারে ক্লান্ত আর অপমানে বিধ্বস্ত দু’জন এসে পৌঁছয় রানাঘাট স্টেশনে। হঠাৎ স্টেশনে ঢোকে ডাকগাড়ি, ঝকঝকে দার্জিলিং মেল। রাধার চোখে যেন নতুন দৃষ্টিপথ খুলে গেল। বিভূতিভূষণ লিখছেন- (Aalo)

আরও পড়ুন: রক্তকরবী আর টুকরো মানুষের কথা

‘রাধা কি দেখিল, কি পাইল জানি না কিন্তু ডাকগাড়ীখানা তার সুশ্রী সুবেশ আরোহীদল ও সুসজ্জিত ঝকঝকে তকতকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরাগুলি লইয়া তাহার মনে একটি অপূর্ব্ব আনন্দ, উৎসাহ ও উত্তেজনার সৃষ্টি করিল। সমস্ত দার্জিলিং মেলখানা যেন একটি উদ্দীপনাময়ী কবিতা-কিংবা কোনও প্রতিভাবান গায়কের মুখে শোনা সঙ্গীত। রাধার মনে হইল, এই ভালো কাপড়-চোপড়-পরা সুন্দর চেহারার মেয়ে-পুরুষ, বালক-বালিকাদের সে দেখিতে পাইতে পারে-যদি মাত্র ছ’আনা পয়সা খরচ করিয়া রাণাঘাট স্টেশনে আসে। (Aalo)

যে পৃথিবীতে এরা আছে, সেখানে তার বাবার বাতের বেদনা, সুবির হৃদয়হীনতা, মায়ের খিটখিটে মেজাজ, বাবা-মায়ের ঝগড়া, শাশুড়ীর নিষ্ঠুর ব্যবহার সব ভুলিয়া যাইতে হয়, এমন কি তার ছ’ভরির হারছড়ার লোকসানের ব্যথাও যেন মন হইতে মুছিয়া যায়। কি চমৎকার! দেখিলে জীবন সার্থক হয় বটে, মন ভরিয়া ওঠে বটে। সংসারে এত সুখ, এত রূপ, এত আনন্দও আছে!’ (Aalo)

হয়তো আত্মছলনা, তবু এই বিস্ময়ের মূল্য কিছু কম নয়। রাধা পেরেছে কারণ তার হাতে টাইমটেবিল ছিল না। ভ্রমণসঙ্গী এমন কোনও গাইড ছিল না। ভৌগোলিক অজ্ঞতাই তার সম্পদ। বাঙালির বুকের ভেতর যে নাবালক বিস্ময় ছিল সে হয়তো তার শেষ প্রতিনিধি। আজ সেই অপ্রত্যাশিত আলো দেখার চোখ নেই। (Aalo)

“আমরা সেই সব ভিডিও পার্লার থেকে একটি লোক দেখানো সিনেমার সিডি নিতাম আর সঙ্গে ব্লু ফিল্মের সিডি। যা ছিল অক্ষর এবং বইয়ের পাতায় দ্রষ্টব্য তার দিন গেল। এবার প্রায় প্র্যাকটিক্যাল। এবার প্রত্যক্ষ হাতের মুঠোয় নিষিদ্ধ যৌবন।”

তখনও হরেকরকম কেবল চ্যানেলের যুগ আসেনি। ফলে মফস্বলে অনেক জায়গায় মাঠে পর্দা টাঙিয়ে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করা হত। দশদিন আগে থেকে সিনেমার বড় বড় পোস্টার পড়ত। আমরা হাঁ করে নায়িকার মুখের দিকে তাকাতাম আর আগামী বাথরুমের সম্পদ নিয়ে ফিরতাম। মূলত পাঁচদিন সিনেমা চলত। প্রথম দু’দিন বাংলা সিনেমা। পরের দু’দিন হিন্দি সিনেমা। এবং শেষের দিন বয়স্কদের জন্য পৌরাণিক সিনেমা। টিকিট জমি- ৫ টাকা, চেয়ার -১০ টাকা, সিজন -৩০ টাকা। আমাদের ছাড় ছিল শুধু বাংলা সিনেমা দেখায়। আমরা যারা বাবা মার বাধ্য সন্তান তারা পৌরাণিক সিনেমা দেখে ভাল ছেলে সাজতাম। আর বন্ধুদের ভাগ্যকে ঈর্ষা করতাম। (Aalo)

মনে পড়ে একবার হিন্দি সিনেমা এল ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’। পোস্টারে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য। মফস্বলে ছিঃ ছিঃ কার পরে গেল অভিভাবকদের মধ্যে। সিনেমার দুদিন আগে পর্যন্ত মাঠের সামনে ঘোরাঘুরি বন্ধ হয়ে গেল আমাদের। আমরা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালাম। পরদিন সকালে দাঁত মাজতে মাজতে ,আগুন পোহাতে পোহাতে মন্দাকিনীর রূপ যৌবনের সন্ধান পেলাম। আর ঢুকে পড়লাম না- দেখা এক আদিম গুহায়। এরই মধ্যে পাড়ায় পাড়ায় স্টেশনের কাছের বাজারে গজিয়ে উঠল ক্যাসেটের দোকান, ভিডিও পার্লার। ততদিনে আমাদের অনেকের বাড়িতেই ডিভিডি প্লেয়ার উঠে এসেছে। দু’একজন বন্ধুর নিজস্ব ঘর হয়েছে। খানিকটা লায়েক হওয়ায় দোতালায় কয়েক ঘণ্টা কাটাবার স্বাধীনতা ছিল। বন্ধুর মা নীচ থেকে ডেকে চা দিতেন। উপরে আসতেন না। (Aalo)

Aalo
সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত প্রথমে মা-কাকিমা, ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য বাংলা ছবি। তারপর পরপর দুটি হিন্দি ছবি

আমরা সেই সব ভিডিও পার্লার থেকে একটি লোক দেখানো সিনেমার সিডি নিতাম আর সঙ্গে ব্লু ফিল্মের সিডি। যা ছিল অক্ষর এবং বইয়ের পাতায় দ্রষ্টব্য তার দিন গেল। এবার প্রায় প্র্যাকটিক্যাল। এবার প্রত্যক্ষ হাতের মুঠোয় নিষিদ্ধ যৌবন। অবশ্য বিশ্বস্ত সূত্রে সেইদিন আমরা জেনেছিলাম সেই সব ভিডিও পার্লারের মূল খরিদ্দার ছিলেন মধ্যবয়স্ক বা সদ্য সিনিয়র সিটিজেন কাকুরা, মামারা। যৌবন যায় যৌবন বেদনা যায় না। (Aalo)

পাড়ার যে লোকটাকে মনে হয়েছিল সন্ন্যাসীর মতো জীবন, পাড়ায় সকল কাজের আদর্শ, রবীন্দ্রজয়ন্তীর হোতা, তিনিও ব্লু ফিল্মের সেরা খরিদ্দার ভেবে কিছুদিন যৌনতা সংক্রান্ত অলৌকিক  বিভ্রান্তিতে ভুগলাম আমরা। এরই সমান্তরাল বিশ্বায়নের হাত ধরে এসে পড়ল কেবল চ্যানেল। সিনেমা এখন আর শনি কিংবা রবিবারের বিষয় নয়। প্রায় প্রতিদিন অজস্র চ্যানেলে অজস্র সিনেমা। যে রাম তেরি গঙ্গা ম্ইলি, জুলি, পরমা দেখে মনে হয়েছিল প্রবল যৌনতা, এখন অন্যান্য ছবির যৌনতার পাশে সেসব নেহাতই নিরামিষ এবং পানসে। এর চেয়ে অনেক কম যৌনতায় এমটিভি আমাদের যে সমীহ আদায় করে নিয়েছিল এ যুগে তা অচল হয়ে গেল। (Aalo)

“নব্বই দশকের পর থেকে বাঙালির জীবনে আর অপ্রত্যাশিত আলো নেই। যৌনতার তীব্রতা আছে, রহস্য নেই। দীপাবলীর চোদ্দবাতি, মোমবাতির আলোর বদলে টুনির আলোর রোশনাই।”

দুই একটি বিদেশি চ্যানেল স্টার মুভিজ, এইচবিও রাতে অ্যাডাল্ট সিনেমা দেখায়। মফস্বলের আশেপাশে কয়েকটি অখ্যাত সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল তখনও টিকে ছিল। বারোটা নাগাদ নুন শো। স্কুল পালানো কয়েকটি ছেলে ছিল তাদের খরিদ্দার। প্রত্যেকেরই ব্যাগের ভেতর স্কুল ড্রেসের পরিবর্তে একটা রঙিন জামা থাকত। এরপর লোকাল কেবল চ্যানেল। তারা মূলত দর্শকের দাবি মেনে সিনেমা চালাত এবং প্রতি শনিবার রাত্রি গভীর হলে বারবার চ্যানেল সার্ফ করার পর সরাসরি একঘণ্টা ব্লু ফিল্ম দেখানো হত। কিন্তু কখনও সে দেখা এত অনিশ্চিত, এমনও হয়েছে অপেক্ষা করতে করতে যখন ঘুমিয়ে পড়েছি, তখন আমার ঘুমন্ত মুখের উপর দিয়ে চলে গেছে রহস্যময় যৌনমুহূর্ত। এতক্ষণ ধরে যে যৌন রূপকথার কথা বললাম তা সবই ছিল সতর্কতামূলক। (Aalo)

কখনও মলাটের ভেতর, কখনও বন্ধুর ফাঁকা বাড়ি এভাবেই চলেছে। এমনকি শনিবার ব্লু ফিল্ম দেখার সময় রিমোটে অল্টারনেট করা থাকত ডিডি বাংলা। মা বাথরুম করতে উঠে কতবার দেখেছে আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছি। আর ডিডি বাংলায় তখন চলছে পল্লীকথার আসর। আজ সেই সব অপ্রত্যাশিত আলো নেই। অহেতুক সতর্কতা নেই। এখন হাতের মুঠোয় প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে সরাসরি পর্ন সাইট। দেখতে দেখতে ক্লান্ত। সব এক ধাঁচ, সব এক রং। আজ কাব্য করে বলতে হয় ‘হে যৌনতার অপ্রত্যাশিত আলো, তুমি কোথায় থাকো অনন্য।’ (Aalo)

নব্বই দশকের পর থেকে বাঙালির জীবনে আর অপ্রত্যাশিত আলো নেই। যৌনতার তীব্রতা আছে, রহস্য নেই। দীপাবলীর চোদ্দবাতি, মোমবাতির আলোর বদলে টুনির আলোর রোশনাই। পাড়ার মোমবাতির দোকান থেকে বাণিজ্য সরে গেছে ইলেকট্রিকের দোকানে। জীবনে উৎসব মাঝে মাঝে আসে বলে আমরা অপ্রত্যাশিত আলোর সন্ধান পাই। কিন্তু আজ জীবনে, অন্তত বাঙালির জীবনে উৎসবের অপ্রত্যাশিত আলো নেই। দিকে দিকে অপ্রত্যাশিত উৎসব। (Aalo)

“যে বিভূতিভূষণের অপু একদিন ট্রেন দেখে বিস্মিত হয়েছে, যে বিভূতিভূষণের অপু এ মার্কা ভিডিও দেখে পরবর্তীকালে অপ্রত্যাশিত রহস্যে প্রবেশ করেছে, আজ সেই বিভূতিভূষণের হাত ধরে দেখব উৎসবে আর এক প্রত্যাশিত আলো ছিল।”

যেকোনও ছুঁতোয় একদিনের উৎসব দশ দিনের কার্নিভালে ছুটে যাচ্ছে। আজ বাঙালির ভ্রমণ নেই। প্যাকেজ ট্যুর আছে। পাহাড়ি উপত্যকার আলো ছায়ার খেলা না দেখে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। কখন স্পট এলে জেগে উঠে সেলফি তুলবে। যে বিভূতিভূষণের অপু একদিন ট্রেন দেখে বিস্মিত হয়েছে, যে বিভূতিভূষণের অপু এ মার্কা ভিডিও দেখে পরবর্তীকালে অপ্রত্যাশিত রহস্যে প্রবেশ করেছে, আজ সেই বিভূতিভূষণের হাত ধরে দেখব উৎসবে আর এক প্রত্যাশিত আলো ছিল। (Aalo)

Aalo
কলকাতাবাসী দুই বন্ধু গোপীকৃষ্ণবাবু এবং শম্ভু ডাক্তার

সেই আলো কোনও রোশনাই নয়, শত অভাবে, শত দুঃখে হৃদয়ের ভিতরকার বেদনা থেকে উৎসারিত অবুঝ এক আলো। আসুন ফেরা যাক তাঁর ‘একটি ভ্রমণ-কাহিনী’ গল্পে। যুদ্ধের বাজারে এই ভ্রমণকাহিনি নিছক দুই সামান্য মানুষের পুজোর দিনে কাছেপিঠে ঘুরে আসা। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো নয়। ঘোলের ভিতর থেকে দুধ নিংড়ে নেওয়া। তেমন কথা কে আর বলবেন যদি না তিনি বিভূতিভূষণ হন! কলকাতাবাসী দুই বন্ধু গোপীকৃষ্ণবাবু এবং শম্ভু ডাক্তার। গোপীকৃষ্ণবাবু পঞ্চাশ টাকা মাইনের সামান্য কর্মচারি। উপরি নেই। মাসে কয়েক দিনের ওভারটাইম হলে দৈনিক এক টাকা পান। অফিস থেকে রেশন দেয় তাই যুদ্ধের বাজারে সংসার নিয়ে না খেয়ে মরছেন না। শম্ভু চক্রবর্তী ওরফে ট্যারা শম্ভু হোমিওপ্যাথি (স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত) ডাক্তার। রোগীর চেয়ে মাছি তাড়ান বেশি। (Aalo)

বৌবাজারের মোড়ে ডিসপেনসারী আছে। কাছেই গোপীকৃষ্ণবাবুর অফিস। তিনি মাঝে মাঝে বন্ধুর চেম্বারে বসে চা খান। আড্ডা দেন। ডাক্তারবাবুরও যথেষ্ট অবসর। প্রতি বছর দু’জন বন্ধু বিদেশ ভ্রমণের প্ল্যান করেন। তখন মধ্যবিত্ত বাঙালির বিদেশ মানে বড়জোর গিরিডি বা সাঁওতাল পরগণা। যাওয়া হয় না। অর্থে কুলোয় না। কিন্তু আলোচনার সুখ থেকে তারা নিজেদের বঞ্চিত করেন না। (Aalo)

“পাঠক হয়তো খেয়াল করবেন এখানে আত্মছলনা নেই, আলোর উৎসব নেই কিন্তু উৎসবের সহজ, সহজাত এক আলো আছে। দিবসের অন্ধকার আঁধার রাতে আলো হয়ে দেখা দেয়। আমরাই পারি না একলা পাগল হতে।”

এভাবেই টাইমটেবিল ঘেঁটে উঠে আসে পেশোয়ার, কাশ্মীর, দিল্লী, জয়পুর, বৃন্দাবন, শিলং এমনকি বীরভূমের নলহাটি পর্যন্ত। শেষপর্যন্ত যাওয়া হয় না কোথাও। আবার আরেক পুজো এসে পড়ে। বহু বছর এমনই চলেছে। এঁরা তবু দমবার পাত্র নন। সেবার পুজোর একমাস আগে আবার শুরু হল আলোচনা নতুন উদ্যমে। প্রায় প্রতিদিন। এবার এসে পড়ে চিত্রকূট পাহাড়, পরেশনাথ পাহাড় কিংবা সস্তায় লুপ লাইনে কাজরা স্টেশনে নেমে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির আশ্রম। কিন্তু তাও হল না। (Aalo)

গোপীকৃষ্ণবাবু পুজোয় বোনাস পেলেন না। কিছু টাকা পাঠাতে হল গ্রামের বাড়িতে পিসিমাকে চৌকিদারের ট্যাক্সের জন্য। আরও কিছু টাকা স্ত্রীর পরামর্শে ভাইঝি জামাইয়ের ইলিশের দাম দিতে। শম্ভু ডাক্তারের টাকা গেল পুজোর জামাকাপড় কিনতে। রোগীর আকাল। দুই বন্ধু শেষপর্যন্ত হতাশ হলেন। এবারও তাহলে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। হঠাৎ গোপীকৃষ্ণবাবু উসখুস্ করতে করতে পকেট থেকে একখানা রঙিন কার্ড বের করে বললেন-হ্যাঁ-এই বলছিলাম কি, আমাদের আপিসের বঙ্কু সরকার কাল আপিসে বন্ধের দিন এখানা দিয়ে গেল। (Aalo)

ওদের গ্রাম লাঙলপোতায় সর্বজনীন দুর্গোৎসব হবে তারই নেমন্তন্ন। রামায়ণ-গান হবে, চণ্ডী হবে দু’রাত। যাবে? বেশি দূর নয়, বারাসত স্টেশনে নেমে দু’মাইল। চলো, পুজোর ছুটিটা তবুও কলকাতার বাইরে-আর সে বেশ জায়গা, ছেলেছোকরাদের দল মিলে রাস্তা করেচে, ঘাট করেচে, জঙ্গল কেটেচে। একটা পুরনো শিবমন্দির আছে নাকি অনেককালের। তাহলে কাল সকাল সাতটায় শেয়ালদ’ থেকে দত্তপুকুর লোক্যাল ছাড়বে- ওতেই চলো যাওয়া যাক। দেখবার মতো জায়গা। (Aalo)

আরও পড়ুন: রক্তকরবী ও গগনেন্দ্রনাথ

শম্ভু ডাক্তার উৎসাহের সঙ্গে বল্লেন-বেশ, বেশ, সে বেশ বেড়ানো হবে এখন। চলো তাই, আমি ঠিক সময়ে রেডি হয়ে স্টেশনে হাজির হব কাল। পরবর্তী তিনদিন দুই বন্ধুর পরম আনন্দে লাঙলপোতায় কাটে। সত্যি বেশ জায়গা। অনেক কিছু দেখবার আছে। একটা পুরনো শিবমন্দির। চৌধুরীদের বড় মজা দীঘি। গাঁয়ের ছেলে-ছোকরাদের নিজেদের তৈরি মেটে রাস্তা। শনিবারে-সোমবারে হাট বসে-বেগুন-কুমড়ো-ঝিঙে-রাঙাআলু বিক্রি হয়। রামায়ণ-গান হল নবমীর রাত্রে। পরদিন হল গ্রামের দলের কেষ্টযাত্রা। খাওয়া-দাওয়া কদিন বেশ হল। বন্ধু সরকার অতিথিবৎসল লোক। খুব খুশি গোপীকৃষ্ণবাবু ও শম্ভু ডাক্তার। (Aalo)

পাঠক হয়তো খেয়াল করবেন এখানে আত্মছলনা নেই, আলোর উৎসব নেই কিন্তু উৎসবের সহজ, সহজাত এক আলো আছে। দিবসের অন্ধকার আঁধার রাতে আলো হয়ে দেখা দেয়। আমরাই পারি না একলা পাগল হতে। যা নেই তার বিরহও নেই। আমরাই হয়তো অপ্রত্যাশিত আলোয় স্নাত পৃথিবীর শেষ কুশীলব। কোনও এক মফস্বলী বিকেলের সূর্যাস্তের নীচে সেই আলো নিরুদ্দেশ, একথা জানাতেই এতদূর এসে পড়েছি। (Aalo)

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ – আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

Author Pankaj Chakraborty

জন্ম ১৯৭৭। লেখা শুরু নব্বইয়ের দশকে। পঞ্চাশের বাংলা কবিতার আতিশয্যর বিরুদ্ধে এযাবৎ কিছু কথা বলেছেন। ভ্রমণে তীব্র অনীহা। কিংবদন্তি কবির বৈঠকখানা এড়িয়ে চলেন। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - বিষণ্ণ দূরের মাঠ চার ফর্মার সামান্য জীবন, উদাসীন পাঠকের ঘর, লালার বিগ্রহ, নিরক্ষর ছায়ার পেনসিল, নাবালক খিদের প্রতিভা।  গদ্যের বই- নিজের ছায়ার দিকে, মধ্যম পুরুষের ঠোঁট। মঞ্চ সফলতা কিংবা নির্জন সাধনাকে সন্দেহ করার মতো নাবালক আজও।

Picture of পঙ্কজ চক্রবর্তী

পঙ্কজ চক্রবর্তী

জন্ম ১৯৭৭। লেখা শুরু নব্বইয়ের দশকে। পঞ্চাশের বাংলা কবিতার আতিশয্যর বিরুদ্ধে এযাবৎ কিছু কথা বলেছেন। ভ্রমণে তীব্র অনীহা। কিংবদন্তি কবির বৈঠকখানা এড়িয়ে চলেন। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - বিষণ্ণ দূরের মাঠ চার ফর্মার সামান্য জীবন, উদাসীন পাঠকের ঘর, লালার বিগ্রহ, নিরক্ষর ছায়ার পেনসিল, নাবালক খিদের প্রতিভা।  গদ্যের বই- নিজের ছায়ার দিকে, মধ্যম পুরুষের ঠোঁট। মঞ্চ সফলতা কিংবা নির্জন সাধনাকে সন্দেহ করার মতো নাবালক আজও।
Picture of পঙ্কজ চক্রবর্তী

পঙ্কজ চক্রবর্তী

জন্ম ১৯৭৭। লেখা শুরু নব্বইয়ের দশকে। পঞ্চাশের বাংলা কবিতার আতিশয্যর বিরুদ্ধে এযাবৎ কিছু কথা বলেছেন। ভ্রমণে তীব্র অনীহা। কিংবদন্তি কবির বৈঠকখানা এড়িয়ে চলেন। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - বিষণ্ণ দূরের মাঠ চার ফর্মার সামান্য জীবন, উদাসীন পাঠকের ঘর, লালার বিগ্রহ, নিরক্ষর ছায়ার পেনসিল, নাবালক খিদের প্রতিভা।  গদ্যের বই- নিজের ছায়ার দিকে, মধ্যম পুরুষের ঠোঁট। মঞ্চ সফলতা কিংবা নির্জন সাধনাকে সন্দেহ করার মতো নাবালক আজও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

দীনবন্ধু মিত্র
বিতস্তা ঘোষাল

সংস্কৃতি

আহার

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য
শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়

বিহার

মণিদীপা ব্যানার্জী
মণিদীপা ব্যানার্জী
প্রদীপ্ত চক্রবর্তী

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

মাধবেন্দু হেঁস
নির্মাল্য চ্যাটার্জি
মাধবেন্দু হেঁস

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com