(Short Story)
প্রথম গরু দেখল কোকো। এত বড় জানোয়ার ওর কাছে বিস্ময়! গরুটা বালির ওপর শুয়ে গড়িয়ে পিঠ চুলকাচ্ছিল। কোকো, কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে, আবার কৌতূহল সামলাতে পারছে না। যতটা পারে, ওর এক সেন্টিমিটার চওড়া নাক কুঁচকে গন্ধ নেওয়ার চেষ্টা করে। উমনো ঝুমনো চুল দিয়ে চোখদুটো ঢাকাই থাকে, আর কান তো মাথার দু’পাশে চুলের ঝাঁকে লতিয়ে থাকে, বোঝার উপায় নেই চোখ কান আছে কিনা? তাই পৃথিবীর সঙ্গে পরিচিত হতে নাকটাই বেশি ব্যবহার করে। (Short Story)
গরুটা আরাম করতে ব্যস্ত, কে কোথায় ওর গন্ধ শুঁকতে চাইছে, সে ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখায় না। হঠাৎই চোখের কোণে কোকো-কে দেখতে পায়। ওইরকম লোম ঢাকা তুলোর বল দেখে, প্রথমে বিড়াল ভেবেছে, তখনই কোকো বলে ওঠে ‘ভৌ!’ (Short Story)
গরু চমকে উঠে ল্যাজ ঝাপটাতে চায়, কিন্তু ল্যাজটা বালিতে চাপা পড়ে আছে বলে তেমন লাগসই প্রতিক্রিয়া হল না। এ পাড়ার কুকুরদের ও চেনে, বেপাড়ার কয়েকজন আছে, ওদিকে কখনও চরতে গেলে, পায়ের কাছে এসে ভৌ ভৌ করে বড্ড উৎপাত করে। তবে কোকো-কে দেখে সে রকম বোম্বেটে মনে হল না। অবশ্য ওইটুকু তুলো চেহারায় কেইইবা পাত্তা দেবে? রোয়াব জমাতে চেহারার একটা ভূমিকা আছে। (Short Story)
কোকো ততক্ষণে সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে এসে বলে, “কী খবর? তোমার নাম কী?” (Short Story)

গরুটা বেশ খুশি হল। এ তো বেশ মিশুকে প্রাণী! এদিককার কুকুরগুলো নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। বালির গাদায় কাত হয়ে থেকেই বলে, “আমায় লক্ষ্মী নামে সবাই ডাকে। তবে খুব ছোটকালে মা ডাকত হাম্মা বলে, তবে সে নামে এখন কেউ ডাকে না আর।” (Short Story)
“কেন? তোমার মা কোথায়?”
“তা কী করে জানব? মানুষের ঘরে থাকি, ওরাই দেখাশুনা করে। তুমি?”
কোকো মোটা ফুলঝাড়ুর মতো ল্যাজ দুলিয়ে বলে, “আমি কোকো। আমিও, দেখাশোনার জন্য একটা মানুষ রেখেছি।”
“তা না হলে, চলাফেরা মুশকিল! রাস্তার ঠিকানাহীন গরু ছাগল কুকুরদের স্বাধীনতা আছে, তবে স্বস্তি নেই।”
“তা ছাড়া, সমাজে স্ট্যাটাস বলেও তো একটা ব্যাপার আছে? আমায় যেমন গা ধুয়ে দেওয়ার, খেতে দেওয়ার ইত্যাদি করার লোক আছে।”
কোকো হাসে, “আমার এসি চালানোর লোকও আছে। যাকগে, তুমি গড়াগড়ি খাও, আমি দেখি আমার কেয়ার-গিভার কোথায় গেল?” (Short Story)
ফল্গু ল্যাপটপ ছেড়ে কোকো-র দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করে, “কী হল? আবার বাইরে যাবি? এই তো একটু আগেই ঘুরে এলাম।”
কোকো ঘরে ফিরে এসে, সোফার নিচে চিৎপাত হয়ে ঘুমচ্ছিল। হঠাৎই বাইরে চেঁচামেচির আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। হাত দুটো সামনের দিকে মেলে ধরে একটু আড়মোড়া ভেঙে, ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যায়। নিচে বেশ কয়েকজন লোক বলাবলি করছে, “লক্ষ্মীকে নাকি পাওয়া যাচ্ছে না।”
নামটা শুনেই কোকো-র ল্যাজ নড়ে ওঠে। মনে মনে বলে, “লক্ষ্মী মানে সেই বড় জন্তুটা!” (Short Story)
ব্যালকনি থেকে নিজের ঘরে আসে, সেখানে ফল্গু টেবিলে বসে পড়াশুনা করছে। কোকো ওর ডান হাতটা ফল্গুর হাঁটুর ওপর তুলে দেয়। ফল্গু ল্যাপটপ ছেড়ে কোকো-র দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করে, “কী হল? আবার বাইরে যাবি? এই তো একটু আগেই ঘুরে এলাম।” (Short Story)
কোকো কেয়ার-গিভার-দের সঙ্গে এত কথা পছন্দ করে না। শুধু হাত দিয়ে আরও কয়েকবার খামচে দেয়। অগত্যা ফল্গু উঠে দাঁড়ায়, ও জানে কোকো যা চাইছে, তা আদায় করেই নেবে। হাত দিয়ে ডাকাডাকিতে কাজ না হলে, ভৌভৌ করে কানের পোকা নাড়িয়ে দেবে। (Short Story)
লক্ষ্মীর খোঁজে যারা এসেছে, তাদের ডেকে দেখায়। ওদের মধ্যে একজন বলে, “এটা ট্রাকটরের চাকা। ইট-বালি-পাথর তোলা নামা করে।”
লিফ্টে করে আবার দুজনে নিচে নেমে আসে। কোকো এবার ছুটে সেই বালির পাহাড়ের কাছে যায়, ফোঁস ফোঁস করে গন্ধ নিয়ে বোঝার চেষ্টা করে, লক্ষ্মী ঠিক কোনদিকে গেছে।
ওদিকে লক্ষ্মীর খোঁজে যেসব মানুষেরা এসেছিল, তারা ছোট ছোট টর্চ হাতে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়েছে। (Short Story)
রাত হয়ে গেছে। কোকোদের ফ্ল্যাট বাড়ির পাশের জায়গাটা ফাঁকাই আছে। এলাকার কিছু ব্যবসায়ী তাদের ইমারতি কারবারের ইট-বালি-পাথর দিয়ে পাহাড় করে রেখেছে। তেমনই একটা বালির পাহাড়ে লক্ষ্মী সকালে নিজের পিঠ চুলকোচ্ছিল, যখন কোকো-র সঙ্গে তার দেখা হয়। কিন্তু জলজ্যান্ত এত বড় মাপের পশুটা গেল কোথায়? (Short Story)
সবাই যখন এদিক ওদিক খুঁজে দেখার চেষ্টা করছে, কোকো নাক কুঁচকে বালির ওপর ঘষতে থাকে, ঠিক যেখানে সকালে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: টু প্লাস টু: সৌরভ হাওলাদার
লক্ষ্মী আর বালি ছাড়া কোকো আরেকটা গন্ধ পায়, সেটা পেট্রলের। ও এসে ফল্গুর পায়ের ওপর ডান হাত তুলে ঘষে দেয়। ফল্গু বোঝে, কোকো কিছু একটা বলতে চাইছে। কিন্তু সেটা কী? কোকোর পিছনে পিছনে বালির অংশটাতে পোঁছয়। মোবাইল ফোনের টর্চ জ্বেলে বোঝার চেষ্টা করে, কোকো ঠিক কী দেখাতে চাইছে? আরে! এখানে তো চাকার দাগ! বেশ বড়সড় চাকা। (Short Story)

লক্ষ্মীর খোঁজে যারা এসেছে, তাদের ডেকে দেখায়। ওদের মধ্যে একজন বলে, “এটা ট্রাকটরের চাকা। ইট-বালি-পাথর তোলা নামা করে।”
ফল্গু নিজের ফোন থেকে কাউকে ফোন করে, “আজ আমবুনি-র মাঠ থেকে তোমাদের বালি পাথর গেছে বা এসেছে।”
ওপাশ থেকে জবাব আসে, “সে তো রোজই হয়।”
“কোন ট্র্যাকটর আছে?”
“আছে তো। তিনটে ট্র্যাকটর রোজ কাজ করে।”
ফল্গু চটপট ট্র্যাকটর তিনটের নম্বর লিখে ফেলে। তারপর খুব দ্রুত ঘরে গিয়ে পোশাক পাল্টে নিজের স্কুটি বার করে। কোকো-কে সামনে বসিয়ে, সোজা থানার উদ্দেশে রওনা দেয়। (Short Story)
ঘোষবাবু থানার বড়বাবু, ফল্গু আর কোকো-কে চেনে। সঙ্গে সঙ্গে ওদের থেকে পাওয়া নম্বরগুলো নিয়ে ওয়াকিটকি দিয়ে সবকটা চেকপোস্টে পাঠিয়ে দেয়, “আমাদের এখান থেকে বেরনোর তিনটে রাস্তা আছে, গুপ্তিনগর, পানিট্যাঙ্কি আর রসপুর। প্রতিদিন বালি পাথর নিয়ে কয়েক হাজার ট্র্যাকটর পার হয়, যদি ইতিমধ্যে বেরিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে কিছু করার নেই। হয়তো বর্ডার পার হয়ে গেছে। তা না হলে, ধরা পড়লেই তোমাদের জানাব।”
ফল্গু থানা থেকে বেরিয়ে ঠিক করে, ঘরে না গিয়ে পানিট্যাঙ্কির রাস্তায় যাবে, কারণ ওদিকে সতেরো কিলেমিটার পরেই সীমান্ত। (Short Story)
ফল্গুও স্কুটি স্টার্ট দেবে, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি থেকে একটা হুমদো মতো লোক বেরিয়ে এসে ফল্গুকে ঘপ করে ধরে ফেলে, “আমার গাড়িতে স্ক্র্যাচ করে পালাচ্ছো কোথায়?”
গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া পিচের রাস্তা। স্ট্রিট লাইট নেই, মাঝে মাঝে যে সব গাড়ি সাঁই সাঁই করে চলে যাচ্ছে, তাদের আলোতে কিছুটা আলোকিত হচ্ছে, পরক্ষণেই নিবিড় অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। দু’পাশে ফসলের ক্ষেত, নয়ানজুলি। টানা ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝি পোকার বাজনা শোনা যাচ্ছে। কোকোর চুল দাড়ি হাওয়াতে উড়ছে। ফল্গুর সঙ্গে স্কুটিতে চড়া ও খুব উপভোগ করে। (Short Story)
ফল্গু হঠাৎ খেয়াল করে, সামনে একটা গাড়ি যাচ্ছে, পিছনে কোনও বাতি নেই। গতি বাড়িয়ে আরেকটু এগোতে বুঝতে পারে, ওটা একটা ট্র্যাকটর। আরও এগিয়ে রাস্তার আগলে দাঁড়িয়ে পড়ে। ট্র্যাকটরটা অনেক আওয়াজ করে থেমে যায়। হেডলাইট নির্লজ্জর মতো ফল্গুদের দিকে তাক করা। ফল্গু নেমে এসে জিজ্ঞেস করে, “গাড়িতে কী আছে?” (Short Story)

চালক ছেলেটা ফল্গুকে দেখে ঠোঁট বেঁকায়, “কে তুমি হরিদাস? তোমায় কেন বলব?”
ফল্গু হেডলাইটের জন্য লোকটার মুখটা পরিস্কার বুঝতে পারে না। আন্দাজে বলে, “তুমি কি আমবুনি থেকে আসছো?”
“তোমায় কেন বলব? তুমি কি পুলিশ?”
“আসলে, আমার একপাটি জুতো আমবুনির বালির পাহাড়ে আটকে গিয়েছিল। তোমরা যদি ওখানকার বালি এনে থাকো, একবার দেখতাম।” (Short Story)
ফল্গু এইসব আবোল তাবোল কথা বলে চালককে ব্যস্ত রেখেছে, তখন কোকো পিছনে গিয়ে হাঁচড় পাঁচড় করে বালির ওপরে উঠে সব শুঁকে শুঁকে আবার নেমেও এসেছে। অন্ধকারের আড়াল নিয়ে, ফল্গুর পায়ের ওপর হাত দিয়ে আঁচড় কাটে। ফল্গু বোঝে এই ট্র্যাকটরে লক্ষ্মী নেই, “বেশ তাহলে অন্য গাড়ি দেখি।” (Short Story)
ফল্গু যত বোঝাবার চেষ্টা করে, তেমন লাগেনি, লোকটা তত তড়পাতে থাকে। ওর স্কুটির চাবি কেড়ে নিয়ে বলে, “তোমার গার্জেনকে খবর দাও। আমি ড্যামারেজ নেব।”
ট্র্যাকটরটা আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে গেলেও, ফল্গুকে নিয়ে চালকের অস্বস্তি থেকে যায়। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে চায়, কিন্তু অন্ধকারে ফল্গুকে বোঝা যায় না। আবার স্কুটিতে ওঠে ফল্গু। হঠাৎই মনে হয়, লক্ষ্মীকে যদি ওরা নিয়েই যায়, তবে সোজা পথে কেন যাবে? লক্ষ্মীর কি পাসপোর্ট ভিসা আছে? ব্যাপারটা বুঝতে বুঝতে রেলগেটের কাছে চলে এসেছে। এখন রেলগাড়ি যাওয়ার সময়, তাই গেট বন্ধ। (Short Story)
একটু আস্তে স্কুটি চালাচ্ছিল, এমন সময় আরেকটি ট্র্যাকটর ফল্গুর প্রায় ঘাড়ের ওপর উঠে পড়ে। ফল্গু টাল সামলাতে না পেরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা গাড়ির ওপর পড়ে যায়। স্কুটি কাত হতেই কোকো সুড়ুৎ করে নেমে পড়ে, সকলের চোখ এড়িয়ে আবার ট্র্যাকটরের পিছনে উঠে যায়। কিন্তু এখানেও শুধু বালি, লক্ষ্মী নেই। ততক্ষণে গেট উঠে গেছে। ট্র্যাকটর এগোতে শুরু করে। ফল্গুও স্কুটি স্টার্ট দেবে, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি থেকে একটা হুমদো মতো লোক বেরিয়ে এসে ফল্গুকে ঘপ করে ধরে ফেলে, “আমার গাড়িতে স্ক্র্যাচ করে পালাচ্ছো কোথায়?”
আরও পড়ুন: চুলচেরা: সৌরভ হাওলাদার
ফল্গু থতমত খেয়ে যায়। ওদিকে কোকো-কে নিয়ে ট্র্যাকটরটি রেলগেট ডিঙিয়ে অন্ধকার রাস্তায় এগিয়ে যায়।
ফল্গু যত বোঝাবার চেষ্টা করে, তেমন লাগেনি, লোকটা তত তড়পাতে থাকে। ওর স্কুটির চাবি কেড়ে নিয়ে বলে, “তোমার গার্জেনকে খবর দাও। আমি ড্যামারেজ নেব।”
রেলগেটের সামনে তখন ফাঁকা। ফল্গু ফোন বের করে ঘোষবাবুকে ফোন করে। হুমদো লোকটি ভাবে, ফল্গু বোধহয় ওর বাবাকে ফোন করেছে। (Short Story)
গ্রামের থানা, সেখানে তেমন কোন চুরি ডাকাতির চাপ নেই। ঘোষবাবু অবসর সময়ে ঘি-এর ব্যবসা করে। দুয়েকটা পাইকারি বাজারে ঘি সাপ্লাই করতে কাছাকাছিই ছিল। ফোন পাওয়ার দশ মিনিটের মধ্যে এসে হাজির, পরনে সাধারণ পোশাক। সব শুনে ঘোষবাবু হুমদোকে বলে, “আপনার গাড়ির চাবিটা দিন।” (Short Story)

লোকটা অবাক হয়, “আমি চাবি দেব কেন?”
“আপনি নো-পার্কিং-এ গাড়ি রেখেছেন কেন? রেলগেট-এর সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বিপজ্জনক!” এই বলে, নিজেই হাত বাড়িয়ে স্টিয়ারিং-এর নিচ থেকে চাবিটা খুলে নেয়।
লোকটা চিৎকার করে ওঠে, “আমি পুলিশ ডাকছি! আপনি এভাবে চাবি নিতে পারেন না।”
ঘোষবাবু হাসে, “ডাকুন, গাড়িটাকে থানায় নিয়ে যেতে হবে। আপনাকে সিজার লিস্ট দেওয়া হবে। অবশ্য গাড়ি যদি আপনার নামে হয়।”
তালেগোলে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ফল্গু বলে, “আমি এগোই? কোকো কোথায় চলে গেল? খুঁজে দেখি।”
ঘোষবাবু বলে, “পরের চেকপোস্টে বলে দিচ্ছি, ট্র্যাকটর দাঁড় করাবে।” (Short Story)
ওদিকে ফল্গুকে ছাড়া কোকো-র মজাই লাগছে। চলন্ত ট্র্যাকটরের পিছনে আটকানো বালির গাড়ির ওপর শুয়ে বসে কসরত করতে করতে চলেছে। কিছুক্ষণ রাস্তা ধরে যাওয়ার পর, ট্রাকটর-টা ডান দিকে জমিতে নেমে পড়ে। তারপর এবড়ো খেবড়ো চষা মাঠের ওপর দিয়ে ঝাঁকুনি দিতে দিতে এগিয়ে চলে। ঝাঁকুনির চোটে কোকো উপর থেকে লাফিয়ে নিচে নেমে পড়ে। (Short Story)
গরুগুলোর সঙ্গে দু’তিনটে লোক আছে। ওরাই পুরো দলটাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তার মধ্যে একজন বলে, “বস কোথায় গেল? তার তো গাড়ি নিয়ে রেলগেট-এর কাছেই অপেক্ষা করার কথা।”
মাটিতে ঘাসের গন্ধ, আকন্দ পাতা, সজনে ডাল আরও রকমারি ডালপালার মিলিত গন্ধ। কোকো মনের সুখে গন্ধ নিতে থাকে। অনেক্ষণ গাড়ি চড়ে হিসি করা হয়নি। শুঁকে শুঁকে একটা জায়গা পছন্দ করে হাল্কা হয়ে নেয়। তখনই পূব দিক থেকে আরেকটা গন্ধ ভেসে আসে। এই গন্ধটা আজ সকালেই চিনেছিল, গোবরের। সেদিকে চেয়ে দেখে অন্ধকারের মধ্যে কালো মেঘের মতো কারা যেন আসছে। ভয় পেয়ে একটু ঝোপের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। ওরে বাপরে! প্রায় হাজার খানেক গরু এদিকেই আসছে। তাদের সম্মিলিত গলায় হাম্বা ডাক, পায়ের খুর থেকে ওড়া ধুলো, লেজ-র সপাসপ আওয়াজ সব মিলিয়ে বেশ ভয় ভয় আবহ তৈরি হয়েছে। কোকো ওদের এড়িয়ে বড় রাস্তার ধারে গিয়ে বসে। আঁধার চিরে হুশহুশ করে গাড়ি চলে যাচ্ছে। অন্ধকারের ভেতর ফল্গু স্কুটি নিয়ে আসবে, সে বুঝবে কী করে? (Short Story)

কোকো আবার রাস্তা ছেড়ে জমিতে ফিরে আসে। সব গরুগুলোকে সার দিয়ে বসিয়ে রাখা আছে। কোকো মনে করার চেষ্টা করে লক্ষ্মীর গন্ধটা কেমন ছিল? এত অজস্র গরুর ভেতর, তাকে খুঁজবেইবা কেমন করে? তবু চেষ্টা তো করতেই হবে। (Short Story)
গরুগুলোর সঙ্গে দু’তিনটে লোক আছে। ওরাই পুরো দলটাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তার মধ্যে একজন বলে, “বস কোথায় গেল? তার তো গাড়ি নিয়ে রেলগেট-এর কাছেই অপেক্ষা করার কথা।”
অন্যজন বলে, “বস না এলে ডিল পুরো হবে না। রাতের মধ্যে চালান করতে হবে। সকাল হয়ে গেলে সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাবে।” (Short Story)
এই কথার মধ্যেই দূরে রাস্তায় অনেকগুলো গাড়ির হেডলাইট দেখা যায়। ওরা সব এদিকেই আসছে। দেখতে দেখতে জমির সম্পূর্ণ জায়গাটা বন্দুকধারী পুলিশে ঘিরে ফেলে। সবার সামনে হাত-কড়া পরা সেই হুমদোকে নিয়ে ঘোষবাবু নিজে বসে আছে। নিজের স্কুটি পার্ক করে, ফল্গুও মাঠে নেমে আসে। ঘোষবাবু এগিয়ে এসে বলে, “এসো ফল্গু, তোমার জন্যেই এই কুখ্যাত হুমদো গ্যাংকে আমরা ধরতে পারলাম। এই হুমদোই হাজার হাজার গরু সীমান্তর ওপারে পাচার করত। কিছুতেই ওর নাগাল পেতাম না। আজ তোমার জন্য বামাল ধরা পড়েছে।” (Short Story)
ফল্গু বলে, “আমার জন্য নয়।”
“তবে কার জন্য?”
“তাকেই তো খুঁজে পাচ্ছি না।” এই বলে, ‘কোকো’ ‘কোকো’ বলে ডাক দেয়।
একটু পরেই রাশিরাশি গরুদের মধ্যে থেকে ভৌ করে কে যেন সাড়া দিল। সবাই চমকে ওই দিকে তাকায়।
তখন অজস্র গরুদের ঠেলে সরিয়ে একটি গরুকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। আর পিঠের ওপর চড়ে বসে আছে, স্বয়ং কোকো।
সামনে এসে ভৌ-গলায় বলে, “ইনি হলেন লক্ষ্মী।”
ভাষা না বুঝলেও সেই খবর কারও কাছে অজানা রইল না।
ঘোষবাবু বলে, “তোমাদের জন্য বিরাট পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। আমি ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেব।”
অতঃপর সবাই ড্যাং ড্যাং করতে করতে বাড়ির পথ ধরে। হুমদো আর তার সাগরেদরা অবশ্য জেলখানার দিকে এগোয়।
রাত প্রায় শেষ হতে চলল, ফল্গুর এখনও অনেক হোম-ওয়ার্ক বাকি আছে। কোকো-কে নিয়ে স্কুটিতে স্টার্ট দেয়। (Short Story)
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
এক সর্বগ্রাসী হাঁ-করা চোখ নিয়ে, কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌরভের। যা দেখেন, তাই মনে হয় ছুঁয়ে দেখলে ভালো হয়। কিছুটা প্রকৌশল, কিছুটা ছবি আঁকা, ভাষা শিক্ষা, থিয়েটার এমন আরও অনেক কিছু। এভাবেই ভেসে চলা। শৈশবে স্কুল পত্রিকায় হাত পাকিয়ে রেল স্টেশনে দেওয়াল পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনের পাতা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্যিক পত্রিকায় পৌঁছনো। জীবিকার তাগিদে কম্পিউটারের সাথে সখ্য। পাশাপাশি কয়েক মাইল ‘কোড’লেখা চলে সমান্তরাল। কর্পোরেটের হাত ধরে পৃথিবীর কয়েক প্রান্ত দেখে ফেলার অভিজ্ঞতা। সবই উঠে আসে লেখায়। আপাততঃ কলকাতা ও ঢাকা মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা নয়।
