মিসক্যারেজ
তোমার গর্ভে এক কাল্পনিক সন্তানের মতো বেড়ে উঠছে আমাদের সম্পর্ক।
বয়স বাড়ছে আঙুল, কান, নাভি, চোখের।
স্পর্ধা চিনছে সে, বুঝতে শিখছে অধিকার তার।
অন্ধকারে অস্থির, আলোর হাতছানিতে মশগুল…
সে যেন বলছে – আমি এসেছি, দরজা খোলো
আমার একটা নাম দিও পারলে
আমার কোনও নাম নেই।
আকাশপাতাল অভিধান তছনছ করেও পছন্দসই কোনও নাম পাইনি আমরা।
পরে বুঝেছি সে জানত, নামকরণ আমাদের কাজ নয়।
আমরা শুধু প্রতিদিন নতুন করে ভালোবাসতে পারি।
ঝগড়া হাসি গান অভিমান এইসব পারি।
তারপর আদরে ভেসে যেতে যেতে ডুবে গিয়ে
আমাদের একটা সম্পূর্ণ নিজস্ব দ্বীপে পৌঁছে যেতে পারি।
তোমার গর্ভের সন্তান আমাদের সম্পর্ক এইসবই শুধু চেয়েছিল।
চেয়েছিল আমাদের নিজস্ব একটা বৃত্ত, একটা ত্রিভুজ, একটা বর্গক্ষেত্র হোক।
তার নিজের নামের চাহিদা নেই।

আবাসনের শহর
অনেক সময় মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে মনে হয় জেগেই থাকি। আলো জ্বলবে না, অন্ধকারের ঘর… বেশ লাগে। ইচ্ছে করে জানলায় যাই। পর্দার কাছে রাস্তার আলো দেখতে চাই। বাস্তবিক চাওয়াটা মিথ্যে নয়। কিন্তু সত্যিও নয় পর্দার বোধে মননে। অবিশ্বাস আপত্তি মানুষই শিখিয়েছে জানলা বন্ধ ক’রে… কখনও চিৎকার ক’রে কখনও দাঁতে দাঁত চিপে।
রাস্তার আলো, আলোর পোকা, ছাতিমের মাস, এসব আসক্তি চেনা মানুষই তো মনে রাখে না। আমরাও মনে করিয়ে দেবার অভ্যেস ভুলে থাকি নির্বিকার।
প্রায়ই ঘুম মাঝরাতে ফুরিয়ে যায়। চারপাশ আবেশ বিষাদ প্রশ্রয় স্পর্ধাদৃশ্য পেরিয়ে মন তোমার কাছে তোমার পাশে চলে যায়। সব পাড়াতেই অন্ধকারের নিজের একটা স্বভাব আছে। বাড়িরও। নিজস্ব একটা রাত। শিহরণ। কোথাও আদর। বা হয়তো অনাদর। মাঝেমাঝে নির্ঘুমটাই প্রিয় মনে হয়। বাধ্যতাও। আর কখনই ঘুম না ভাঙার স্বপ্ন সত্যি হয় না বেঁচে থাকার বাসনায়।
তবে সত্যি বলতে কি মাঝরাতগুলো, জলের বোতলের বাষ্প, ফুরিয়ে আসা শুকনো খাবারের পাত্র, অবাধ্য শরীর, ফ্লাশের শব্দ সব… সবকিছুই চিরকালের জন্য মুছে যাওয়ার আগে তোমায় বাসনা কামনা নিংড়ে ভালোবাসতে চাই। ভালো করে ভালোবাসার একটা সহজপাঠ চাই। চাই চুড়িভাঙা আদরের রক্ত…

শীতঘুম
যে নদীর শুকিয়ে যাওয়া স্বভাব
রোদ্দূর তার নাম রেখেছে
পানকৌড়ি।
নদী ভাবে এবার যদি ডানা হয়
পাড়ি দেবে পাহাড়
মাথা রাখবে কাঁধে
ধুয়ে দেবে উঁচু হবার মনখারাপ।
শীত উজাড় করা শেখেনি
কিংবা শিখেছে
ভালো থাকার হিসেব
মুহূর্তে।
কিছুটা পোশাক ভিজে যায় ঘুম
আর কিছুটা কুয়াশার জলে ডুব,
ভেসেও।
*ছবি সৌজন্য: Artweb, Fizdi
সত্তরের দশকের শেষের দিকে কলকাতায় জন্ম অভিরূপের। স্কুলজীবন থেকেই বাংলা সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক। কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে পড়ার পাশাপাশি পুরোপুরি সাহিত্যে মনোনিবেশ। কিছুদিন ফ্রিলান্স সাংবাদিকতাও করেছেন। এরপরেই ঢুকে পড়া টেলিভিশনের জন্য স্ক্রিপ্ট লেখার আঙিনায়। সম্পূর্ণ আলাদা এক পরিবেশ এবং প্রস্তুতির সঙ্গে পরিচয়। একইসাথে চলতে থাকে গল্প-কবিতার পালা। দেশ, এই সময়, আজকের সম্পূর্ণা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু লেখা।