করোনাভাইরাসের কবলে ধুঁকতে থাকা বিশ্ব-অর্থনীতি, দুনিয়াজোড়া মন্দা, লাগাতার কর্মহীনতা এবং তার মোকাবিলা করতে সরকারি পদক্ষেপ — এই নিয়েই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মৈত্রীশ ঘটকের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলালাইভ। একগুচ্ছ প্রশ্ন রাখা হয়েছিল তাঁর সামনে যা প্রতিনিয়ত ভাবাচ্ছে কোভিড-বিধ্বস্ত ভারতের আপামর মধ্যবিত্ত সমাজকে। ভবিষ্যৎ কী, কতটা অন্ধকার, কোথায়ই বা পাওয়া যেতে পারে আলোর দিশা — সবকিছু নিয়ে অকপট মৈত্রীশ। এই অস্থির, রুগণ, অবসন্ন সমাজ ও সময়ে মৈত্রীশ কথা বললেন ভারতের প্রেক্ষাপটে বর্তমান সার্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট ও তার মুক্তির পথ নিয়ে।
বাংলালাইভ – করোনা সংকট এবং লকডাউনের অর্থনীতির ওপর সার্বিক প্রভাব কতটা পড়েছে এবং তা সামলে উঠতে কতদিন লাগবে?
মৈত্রীশ – জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি, দু’দিক থেকেই এ এক অভূতপূর্ব সংকট। তার প্রভাব এই গত তিন মাসে অনেকটাই টের পাওয়া যাচ্ছে। অর্থনীতি বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী সব সময়েই সমস্যাজনক। আর এ রকম সংকটের ক্ষেত্রে আমাদের অভ্যস্ত তাত্ত্বিক বা পরিসংখ্যানের কাঠামো ব্যবহার করে খুব বেশিদূর এগনো যাবে না। নিকট ভবিষ্যতে জাতীয় আয় কমতে বাধ্য, এ নিয়ে সংশয় নেই। আর যেহেতু এই সমস্যা সারা বিশ্বকেই কমবেশি প্রভাবিত করেছে, হঠাৎ বাইরে থেকে আসা কোনও অনুকূল হাওয়া অর্থনীতির পালে এসে লাগবে, তা-ও আশা করা যায় না।
বাংলালাইভ – সরকার দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে,তা কি যথেষ্ট?
মৈত্রীশ – না, কোনও অর্থেই যথেষ্ট বলা যায় না। সরকার থেকে যে অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে দুই কিস্তিতে, মার্চের ২৬ তারিখ এবং তারপর মে মাসের মাঝামাঝি প্রায় এক সপ্তাহ জুড়ে, তার মধ্যে প্রত্যক্ষ সাহায্যের পরিমাণ খুবই সীমিত। মোদ্দা কথা হল, রেশনব্যবস্থা, শ্রম নিরাপত্তা, যোজনা এবং জনধন অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা, সব এক করে ধরলেও গড়ে এই সাহায্য মাথাপিছু এক হাজার টাকার মতো। আর গড়ে মানে, সবাই তো আর পাবেন না – পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা খুব মর্মান্তিকভাবে সে কথা প্রমাণ করেছে। শুধু মানবিক দিক থেকেই নয়, অবস্থা স্বাভাবিক হলে অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনার দিক থেকে দেখলেও, এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কারণ এই অভিজ্ঞতার পরে, অন্তত নিকট ভবিষ্যতে গ্রাম থেকে শহরে কাজ করতে আসার প্রবণতা কমবে, এবং শ্রমশক্তির জোগানে ঘাটতি পড়বে ।
বাংলালাইভ – পিপিএফ, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার মত স্কিমে সুদ কমেছে। চাকরিজীবী মধ্যবিত্তের কি সঞ্চয়ের অন্য কোনও উপায় ভাবা দরকার?
মৈত্রীশ – সারা বিশ্ব জুড়ে মন্দা। সুদের হার কম। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই চাকরিজীবী মধ্যবিত্তের জন্যে আলাদা কোনও পথ খোলা নেই। আর স্টক মার্কেটের যা অবস্থা, সম্ভব হলে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ যদি থাকে, তা না ভাঙাই ভালো। একমাত্র আশার কথা, এখনও পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতির হার লাগামের মধ্যে রয়েছে।
বাংলালাইভ – চাকরির বাজারে বিরাট মন্দা দেখা দিয়েছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রচুর কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। আরও হবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের তরফে এই অবস্থার মোকাবিলা করতে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে তা কি যথেষ্ট?
মৈত্রীশ – একেবারেই না। ছোট ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে ঋণের কিছু বাড়তি ব্যবস্থা করে দেওয়া, কিছু কর মকুবের ব্যবস্থা করা ছাড়া স্বল্পমেয়াদে ফলপ্রসূ হবে এমন কিছু করা হয়নি সরকারের তরফ থেকে। কিছু দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু রোগী যখন শয্যাশায়ী তখন তাকে সুস্থ করে তোলাটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। তার দীর্ঘমেয়াদী সুষম আহার বা শরীরচর্চার পরিকল্পনা পরেও করা যায়।
বাংলালাইভ – বর্তমান মন্দার বাজারে বিলাস দ্রব্য যেমন বাড়ি, গাড়ি, সোনা এগুলো সাধারণ মানুষ কম কিনবেন। অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর এর কী প্রভাব পড়বে?
মৈত্রীশ – দুর্ঘটনায় গাড়ি যখন ওল্টায় তখন তার ভেতরে বা বাইরে কোনও দিকেই ভালো আর কিছু হয় না। একমাত্র আশা করা যায় সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি যেন যতটা সম্ভব কম হয় এবং গর্ত থেকে বার করে, সারাই করে গাড়ি যেন আবার চলতে পারে। এ-রকম একটা বড় সংকট জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি দু’দিক থেকেই দুর্ঘটনারই মতো। এই সংকটের প্রাথমিক প্রভাব জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর হলেও, লকডাউনের ফলে উৎপাদন ও জোগান ব্যবস্থা ধাক্কা খেয়েছে। এর ফলে সমস্ত ব্যবসা বা শিল্পেই, নানা পণ্য ও কাঁচামাল জোগানের রিলে রেসের মতো যে পারস্পরিক নির্ভরতাভিত্তিক নিয়মিত একটা ব্যবস্থা থাকে (যেটাকে সাপ্লাই চেইন বা জোগানের শৃঙ্খল বলা হয়) তা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। আবার, একজনের যা চাহিদা আর একজনের তা-ই আয়। ফলে বাঁধা মাইনের পাকা চাকরি যাঁদের নেই (যা দেশের শ্রমক্ষম জনসংখ্যার ২-৩% এর বেশি নয়), শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, সবার আয়ে টান পড়ছে। এর থেকে আবার চাহিদা কমছে। ফলে একজনের চাহিদা কমলে আর একজনের আয় কমছে। আর তাই বিষচক্রের মত মোট আয় ও কর্মসংস্থানও কমে যাচ্ছে। এইটাই হল মূল সমস্যা।
বিলাসদ্রব্যের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। তবে এদের উৎপাদনে পুঁজির ভূমিকা শ্রমের তুলনায় বেশি, তাই আয় ও ব্যয়সংকোচের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার সার্বিক প্রভাব কম। তুলনায় খাদ্য বা বস্ত্র বা প্রতিদিনের ব্যবহার্য্য যেসব ভোগদ্রব্য ও পরিষেবার বাজার আপামর জনসাধারণের মধ্যে বিস্তৃত, যাকে mass consumption goods বা গণভোগসামগ্রী বলা হয়, সেগুলির ক্ষেত্রে চাহিদার সংকোচন এবং তার ফলস্বরূপ আয়-ব্যয়সংকোচের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সার্বিক অর্থনীতির ওপরে অনেক বেশি অভিঘাত সৃষ্টি করছে। জাতীয় আয় আপাতভাবে বিমূর্ত ধারণা মনে হলেও,তা নির্ভর করে চাহিদা-জোগানের পারস্পরিক নির্ভরতার ব্যপ্তির ওপর। তা যত বিস্তৃত হবে, জাতীয় আয় তত বাড়বে। আর তা যত সংকুচিত হবে, জাতীয় আয় তত কমবে।

বাংলালাইভ – ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার যা পদক্ষেপ করেছে তা কি যথেষ্ট, না আরও কিছু করা উচিত?
মৈত্রীশ – না, যথেষ্ট তো নয়ই। মূলত স্বল্পমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমস্যা যেখানে চাহিদার এবং বিক্রয়লব্ধ আয়ের, সেখানে বাড়তি ঋণের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। বড়োজোর কিছুদিন টিকে থাকতে সাহায্য করতে পারে। সেখানেও শোনা যাচ্ছে কিছু ব্যাংক এই বাড়তি ঋণ ব্যবহার করে পুরনো দেনা চুকিয়ে নিচ্ছে।
বাংলালাইভ – করোনা লকডাউনের আগে থেকেই ভারতের টেলিকম সেক্টর ধুঁকছে। এই মন্দার বাজারে এই সেক্টরের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে?
মৈত্রীশ – মন্দার প্রভাব সব ক্ষেত্রেই পড়বে। টেলিকম সেক্টরের কথা এমনিতে আলাদা করে কিছু বলার নেই। তবে এই ক্ষেত্রে কিছু সংস্থার একচেটিয়া ক্ষমতার বিস্তার এই ক্ষেত্রের স্বাভাবিক প্রসার ও উদ্যমকে স্তিমিত করেছে। তার সুরাহা না হলে আশার আলো খুব একটা দেখছি না।
বাংলালাইভ – তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের ওপরে কী প্রভাব আসতে চলেছে?
মৈত্রীশ – লকডাউন ঘোষণা হবার পর প্রায় তিন মাস হয়ে গিয়েছে। ছাঁটাই চলছে সর্বত্ৰ। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র তার ব্যতিক্রম নয়। সারা পৃথিবী জুড়ে মন্দা চলছে। তাই তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা এবং দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানি, যা এই ক্ষেত্রে চাহিদার একটা বড় রাস্তা, তার ওপরেও ভরসা করে থাকার উপায় নেই। স্বল্পমেয়াদে এই অবস্থার কোনও পরিবর্তন হবে বলে আমি দেখতে পাচ্ছি না। তবে আর একটু দীর্ঘমেয়াদে যদি ভাবি, সারা বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়বে বৈ কমবে না। সবাই সর্বত্র গৃহবন্দি হয়ে থাকার ফলে মোবাইল ফোনের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। আর যেখানে যতদূর সম্ভব মিটিং, আলোচনা সভা, স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস সবই অনলাইন হচ্ছে। অবস্থা যখন স্বাভাবিক হবে, তখন কি আমরা পুরোপুরি আগের ব্যবস্থায় ফিরে যাব? আমার মনে হয় না। অফিস বা ক্যাম্পাস বা ক্লিনিক ব্যাপারগুলো উঠে যাবে না, কারণ মুখোমুখি পারস্পরিক স্বতঃস্ফূর্ত আদানপ্রদানের কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু কিছু কিছু কাজ, যা সহজে যাত্রার ধকল ও খরচ এড়িয়ে করা যায়, সেগুলির ভার্চুয়াল পরিষেবার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তাই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের পরিষেবা এবং নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগের চাহিদা বাড়বে বৈ কমবে না।
বাংলালাইভ – আমদানি রপ্তানি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে?
মৈত্রীশ – এই সমস্যা সব দেশেই। আমাদের দেশেও তাই। তবে প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে ভারতের সার্বিক অর্থনীতির দিক থেকে দেখলে, আমদানি-রপ্তানি অতটাও গুরুত্বপূর্ণ না। আমদানি মোট জাতীয় আয়ের এক-চতুর্থাংশের কম আর রপ্তানি এক-পঞ্চমাংশের কম। আর সাধারণ মানুষ বলতে কাকে ধরা হচ্ছে সেটাও ভাবতে হবে। যদি মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ ধরা হয়, তার মধ্যে আবার আয়করদাতাদের যদি ধরা হয়, যাঁদের বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার কম বলে আয়কর দিতে হয় না, তাঁদের সংখ্যা ৪.৩ কোটি। আমাদের মোট শ্রমজীবী জনসংখ্যা আন্দাজ ৫০ কোটি। অর্থাৎ আয়করের আওতায় যাঁরা আছেন তাঁদের সংখ্যা মোট শ্রমজীবীদের একটা সামান্য অংশ। আর কর্মসংস্থানের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, সমস্ত শ্রমজীবী ও চাকুরিজীবি মানুষের (যার মধ্যে সরকারি, বেসরকারি চাকরি থেকে দিনমজুরি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবাই আছেন) ১০%-এর কম বাঁধা মাইনের চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেন (formally employed)।
এদিকে, জাতীয় নমুনা সমীক্ষার রিপোর্ট (National Sample Survey বা NSS) অনুযায়ী, গড় বাৎসরিক মাথাপিছু ব্যয় গ্রামাঞ্চলে ২৫০০০ টাকা আর নগরাঞ্চলে ৪৫০০০ টাকা। একবার ভাবুন, তাহলে মাসিক বা দৈনিক ব্যয় কত? আসলে সাধারণ মানুষ বলতে অনেক সময় আমরা নিজেদের গন্ডীর মধ্যে যাঁরা আছেন তাঁদের কথা ভাবি। কিন্তু সারা দেশের প্রেক্ষিতে দেখলে, একটা বিশাল অংশ তার থেকে অনেক কম আয়-ব্যয়ের গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ। এই লকডাউনের পরে নগরাঞ্চলের অস্থায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা খানিকটা আমাদের এই বিশাল কিন্তু আপাত-অদৃশ্য দরিদ্র শ্রেণীর জীবন কতটা নড়বড়ে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এঁরা প্রত্যক্ষভাবে কতটা আমদানি করা জিনিসের ওপর নির্ভর তা পরিষ্কার নয়। তবে পেট্রল বা জ্বালানির আমদানির ওপর পরিবহণব্যবস্থা নির্ভরশীল। আর তার দাম বাড়তে শুরু করেছে।

বাংলালাইভ – অর্থনীতির হাল ফেরাতে কোন কোন দিকে জোর দেওয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়?
মৈত্রীশ – জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল না ফেরালে অর্থনীতির হাল ফেরানো যাবে না। সেখানে প্রথমে লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়া হল অস্থায়ী শ্রমিকদের কথা না ভেবে। তারপর এখন যখন সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বাড়ছে, তখন লকডাউন আলগা করার ঘোষণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে পরিকল্পনার অভাব বড়ই প্রকট। দেশ থেকে যা খবর আসছে, তাতে মনে হচ্ছে ভাগ্যের হাতে যেন সবকিছু সঁপে দেওয়া হয়েছে। যে ভাবেই হোক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিসর বাড়াতেই হবে এই সংকটের মোকাবিলা করতে হলে। আর অর্থনীতির হাল ফেরাতে গেলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যে মৌলিক উপাদান, অর্থাৎ মানুষ, তাদের স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সুরাহা না করে জাতীয় আয়ের নিম্নগামী প্রবণতা এড়ানো যাবে না। সংকটটা যেমন উভয়তঃ, জনস্বাস্থ্য-বিষয়ক এবং অর্থনৈতিক, তার মোকাবিলার পথও এই দুই দিকের পারস্পরিক সম্পর্ক মাথায় রেখেই বার করতে হবে। যেমন, জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কর্মীনিয়োগ এবং তার সার্বিক সামর্থ্য বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ বাড়লে, তার থেকে বৃহত্তর অর্থনীতির পরিসরে চাহিদা বাড়বে। আর, দীর্ঘমেয়াদে ভাবলে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি দেশের মানবসম্পদে বিনিয়োগ, যার ফল সার্বিক উৎপাদনশীলতার ওপরে পড়তে বাধ্য।
ভারতের প্রথম সারির অর্থনীতিবিদদের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে যাঁর নাম থাকবে, তিনি মৈত্রীশ ঘটক। বর্তমানে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সে অধ্যাপনারত। মৈত্রীশের জন্ম ১৯৬৮-তে কলকাতায়। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক। দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিক্সে স্নাতকোত্তর শেষ করেই বিলেত পাড়ি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা। শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বর্তমানে অ্যাপ্লায়েড মাইক্রোইকনমিক থিওরি নিয়েই তাঁর প্রধান কাজ। যুক্ত আছেন বহু অর্থনৈতিক সংস্থার সঙ্গে। ২০১৮ সালে ব্রিটিশ অ্যাকাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন মৈত্রীশ।
2 Responses
আমি দীর্ঘ ৪৭ বছর একটা ক্ষুদ্র শিল্প পরিচালনা করছি। ক্ষুদ্র বলতে সরকারি ভাষয় সুক্ষ (মাইক্র)। আমাদের দেশের অর্থনীতিবিদরা যাই বলুন , আমরা আসল তথ্য সবসময়ে গোপন রাখি। যে তথ্য সরকার এবং সাধারণ মানুষ দেয় কোনটাই বাস্তবের সঙ্গে মেলেনা।আমি তৃণমূলস্তরে প্রতিনিয়ত দেখছি ব্যাপারটা। নেতা-মন্ত্রীরা যেমন তথ্য দেওযার সময়ে যাচাই করছেন না, সাধারণ মানুষ ভয থেকে বা নিজেকে গুটিয়ে রাখার জন্যে হতে পারে। সত্য কথা বলছে না।ফলে এদেশে উন্নতি হওয়াটা খুব মুশকিল।মৈত্রীশবাবু আপনার ইমেইল আইডি যদি দয়া করে দেন, আমি কয়েকটা তথ্য দেখাতে পারি।chiranjoy333c@gmail.com শুভকামনা।
যদিও interviewটি “জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক যুগ্মসঙ্কট এবং মোকাবিলার” কথা নিয়ে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যুগ্মসঙ্কটের কথা বলা হলেও তার মোকাবিলার কোনো সন্ধান অর্থনীতিবিদ দিতে পারেননি বা দেননি। উনি যেসব সমস্যার কথা বলেছেন তা সর্বজনবিদিত। কিন্তু এর থেকে উত্তরণের কোনো পথও বাতলাননি বা কোনো দিশাও দেখাননি।
প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদদের কাছে আমরা নতুন করে একই সমস্যার কথা না শুনে তার থেকে বেরোনোর পথের সন্ধান পেতে চাই।
উনি শুধু সমস্যার কথাই বলেছেন কিন্তু দেশের রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রেখে বা আয়ত্তের মধ্যে রেখে কি ভাবে চাহিদা আর যোগান দুটোই বাড়ানো যায় তার সন্ধান কিছুই দেননি।
আমার এই অল্প শিক্ষার বুদ্ধিতে বারে বারে মনে হয়েছে ভারতবর্ষের মত দেশে যে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার সম্পত্তি আছে যা জাতীয় সম্পদ হিসেবে ধরা হয় না, যেমন ধর্মস্থানে গচ্ছিত বিপুল পরিমাণ সোনা, তা কেন সরকার বাজেয়াপ্ত করে এই সময় ব্যবহার করবে না; কেনই বা অর্ডিন্যান্স জারি করে দেশের প্রথম দশটি সংস্থা বা প্রথম পাঁচজন ধনীকে বাধ্য করবে না তাদের সঞ্চিত অর্থের কিছু অংশ দেশের এই বিপদের সময় সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে দেওয়ার জন্যে! এগুলো করলে দেশের যেমন রাজস্ব ঘাটতিও আয়ত্তের মধ্যে থাকবে, নতুন টাকাও ছাপতে হবে না, তেমনি এই বিপদের পর তরী ঘাটেও ভিড়বে।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে উনি যা বলেছেন তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। যে নতুন চাহিদার কথা এখানে অর্থনীতিবিদ বলেছেন তা গত বছরের শেষ কোয়ার্টারের সমগ্র চাহিদার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র। আর তাতে যা কর্মসংস্থান তৈরী হবে তাও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় চাহিদার থেকে অনেক অনেক কম।
আরো একটা জিনিষ মনে হয়, আজকাল হয়তো পড়াশোনাটা বড্ড ল্যাবরেটরি/ক্লাসরুম বা নোটবুক ওরিয়েন্টেড হয়ে গেছে! মানুষ বা সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ ভিত্তিক নেই।
মনে রাখতে হবে আমরা যা করি তার ফল তো শেষমেষ মানুষই ভোগ করে, খারাপই হোক আর ভালই হোক। তাই মানুষের থেকে বা সমাজের থেকে দূরে সরে শুধুই অঙ্ক কষে এই পৃথিবীর সমস্যার সমাধান করা হয়তো সম্ভব না।
অঙ্ককে যদি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বোঝানো না যায় তাহলে সেই অঙ্কর আমার মতে মানব সভ্যতায় কোন মূল্য পাওয়া উচিত নয়।