Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

চল অরুণাচল – অন্তিম পর্ব

শ্রেয়সী লাহিড়ী

এপ্রিল ১৫, ২০২৫

Arunachal Pradesh Travelogue cover Part 3 cover
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

(Arunachal Pradesh) ঝলমলে সকাল। ওপরের ছাদে রোদের লুটোপুটি। রঙিন ছাতার তলায় ব্রেকফাস্ট টেবিল সাজানো হয়েছে। রোদে পিঠ দিয়ে রিলাক্স মুডে আলু পরোটা আর আচার খাওয়া। আজ লম্বা জার্নি নেই। তাই নাকে মুখে গোঁজার তাড়াও নেই। 

আমাদের গেস্ট হাউস থেকে তাওয়াং মনাস্ট্রির দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়। পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায়। তবে আমরা একেবারে চেক আউট করে ধীরে সুস্থে গাড়িতে চেপে সেখানে পৌঁছলাম। (Arunachal Pradesh)


আগের পর্ব পড়ুন: চল অরুণাচল – পর্ব [১] [২]


তাওয়াং অঞ্চলে বসবাসকারী প্রধান জনজাতি হলো মনপা। শহর থেকে সামান্য দূরে পাহাড়ের উপর প্রায় চারশো বছরের পুরনো সুদৃশ্য ও সুবিশাল মঠ তাওয়াংয়ের মূল আকর্ষণ। দোকানপাট, জনবসতি, বাজার, সরকারি দপ্তর নিয়ে এক দিকে ঘনবসতিপূর্ণ তাওয়াং শহর আর উলটো দিকে সুগম্ভীর মঠ। 

Arunachal Pradesh Travelogue photo (1)
তাওয়াং মনাস্ট্রি ভারতের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মঠ

১০,০০০ ফুট উচ্চতায়, তাওয়াং মনাস্ট্রি ভারতের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মঠ। ভুটান ও চিন সীমান্তের এই মঠ ও জনপদ লাসার দখলে ছিল বহু দিন। এখন এখানে প্রায় পাঁচশো আবাসিক লামার বাস। 

গুম্ফা চত্বর থেকে দেখা যাচ্ছে উল্টোদিকের ঘন বসতিপূর্ণ তাওয়াং শহরের দৃশ্য।  প্রবেশ পথের মুখে একটা বড় প্রার্থনা চক্র। আর তারপরেই ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন জিনিসপত্রের পাশাপাশি তাওয়াং লেখা টি-শার্ট, শুকনো খাবার, ঘর সাজানোর টুকিটাকি, ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে।

Arunachal Pradesh Travelogue photo (5)
বিশাল চত্বরটা দেখে মনে হচ্ছে একটা ছোটখাটো শহর

বিশাল চত্বরটা দেখে মনে হচ্ছে একটা ছোটখাটো শহর, অনেকটা দুর্গের মতো। সিঁড়ি ভেঙে ক্রমে উঠছি। ঘরবাড়ি রয়েছে, তিব্বতি বৌদ্ধ স্থাপত্যের আদলে তৈরি। সরু গলির মতো পথ। লামাদের থাকার হোস্টেল প্রভৃতিকে পাশ কাটিয়ে পৌঁছলাম মূল মনাস্ট্রির সামনে। অনেকটা ছড়ানো জায়গা নিয়ে উঠোন।

একনাগাড়ে হেঁটে উঠে একটু দম নিচ্ছি। উপর থেকে তাওয়াং শহরকে আরো স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। মনাস্ট্রির সামনে একধারে বিনামূল্য চা বিতরণ করা হচ্ছে, সাধারণ দুধ চা ও বাটার চা (লাদাখে যাকে বলা হয় গুড়গুড় চা)। হাঁপাতে হাঁপাতে এতটা ওঠার পর নোনতা স্বাদের এই বাটার চা বেশ খানিকটা এনার্জি দিল। এবার মূল মন্দিরের অন্দরে প্রবেশ। একটি বড় প্রার্থনা হল। অন্দরে একটি সোনালী বুদ্ধমূর্তি এবং বৌদ্ধ শিক্ষাবলী। দেওয়াল জুড়ে চিত্রিত হয়েছে জাতকের কাহিনী, প্রাচীন ফ্রেস্কো পেইন্টিং।

Arunachal Pradesh Travelogue photo (4)
উপর থেকে তাওয়াং শহরকে আরো স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে

তাওয়াং মনাস্ট্রি থেকে বেরিয়ে মিনিট পাঁচেক। উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝে জায়েন্ট বুদ্ধ স্ট্যাচু। ২৮ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বুদ্ধ মূর্তিটি বসে আছে মন্দিরের মাথায়। এখান থেকে তাওয়াং মনাস্ট্রির সুন্দর ভিউ। ৪০০ বছরের প্রাচীনত্বের অনুভূতির রেশ তখনও কাটেনি। বুড়ি ছোঁয়া সাইট সিয়িং – এর চক্করে এমন ঝাঁ চকচকে বুদ্ধমূর্তি দেখতে এলাম বটে, কিন্তু মন কাড়ল না । 

কোলাহল মুখর শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে উর্গেলিং মনাস্ট্রি। ১৫ শতকে তৈরি এই মনাস্ট্রির দেওয়ালে কান পাতলে যেন ইতিহাসের ফিসফিসানি শোনা যায়। এই গুম্ফা ষষ্ঠ দলাই লামা স্যাঙ্গ্যাং গ্যাৎসোর ( Tsangyang Gyatso ) জন্মস্থান। দোতলা গুম্ফা। অপার শান্তি, স্নিগ্ধতা যেন চারপাশ থেকে জাপটে ধরে রেখেছে।

Arunachal Pradesh Travelogue photo (3)
তাওয়াং গুম্ফা

তাওয়াং শহরের এটাই ছিল আমাদের শেষ দ্রষ্টব্য। একটা ওয়ার মেমোরিয়াল আছে বটে, তবে সেটা দেখতে যেতে আর বিশেষ ইচ্ছে করলো না, হয়তো একঘেয়েমি। 

তাওয়াং শহরকে পিছনে ফেলে জং-এর দিকে চলেছি। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। চলার পথে নজরে এলো বেশ কিছু জায়গায় লোকজন নববর্ষের উল্লাসে পিকনিকে মেতেছে। বেলা গড়িয়েছে। খাওয়ার জায়গা খুঁজতে হবে। এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে অবশেষে একটা রোডসাইড রেস্তোরাঁ পাওয়া গেল, জমিয়ে ফ্রাইড রাইস আর চিলি চিকেনে নিউ ইয়ার উদ্‌যাপন। 

Arunachal Pradesh Travelogue photo (6)
উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝে জায়েন্ট বুদ্ধ স্ট্যাচু

সেখানে বিক্রি হচ্ছে কিউয়ি ফল। রেস্তোরাঁর মালকিন কথায় কথায় জানতে চাইলেন, আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি। নুরানাং-এ রাতে থাকবো শুনে উনি বললেন, “ওখানে তো কেউ থাকে না! ওখানে খুব শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়! তাছাড়া থাকার কোনও জায়গা নেই”। বললাম, “আমাদের বুকিং আছে”। একই সঙ্গে অবাক হলাম মাত্র ৬ হাজার ফিট উচ্চতায় শ্বাসকষ্ট হতে যাবে কেন! যুক্তিতর্কে না গিয়ে কিছু কিউয়ি কিনে নিয়ে এগিয়ে চললাম নুরানাং-এর পথে। 

মাত্র পাঁচ কিলোমিটার, গাড়ি এসে থামল খাদের ধারে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে নুরানাং জলপ্রপাত। অনেক নীচে নদী। এর আরও দুটো নাম আছে। ‘জং ফলস’ ও ‘বং বং ফলস’। চারিদিকে শুধুই সবুজ। নুরানাং নদী সেলা পাস প্রবাহিত হয়ে ১০০ মিটার উঁচু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলপ্রপাতের রূপ নিয়েছে, পরে তাওয়াং নদীতে মিশেছে। 

Arunachal Pradesh Travelogue photo (9)
নুরানাং জলপ্রপাত

ঢালু উতরাই পথ ধরে নামতে লাগলাম। এখানে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। আশপাশের অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এই পর্যন্ত এসে রাস্তা শেষ। ঝরনার কাছে পৌঁছতে বেশ কয়েক ধাপ নামতে হবে। নদীর ধারে চড়ুইভাতির আসর জমজমাট। উনানে বড় ডেকচি। মাংস কষানোর সুবাস ভেসে আসছে। (Arunachal Pradesh)

বড় বড় বোল্ডার পেরিয়ে ঝরনার কাছে পৌঁছলাম। শুষ্ক শীতেও সে লাস্যময়ী। ভরা বর্ষায় তার যৌবনবতী রূপ কতটা সুন্দর হতে পারে তা খানিক আন্দাজ করতে পারছি। একটু দূরে নদীর ধারে একটা বোল্ডারের উপর এসে বসলাম। জল কাচের মতো স্বচ্ছ। এখান থেকে ঝরনা পুরোপুরিভাবে লম্বা ফ্রেমে ধরা দিয়েছে। কিছু কিছু সৌন্দর্য থাকে যা দূর থেকে দেখতে বেশি ভালো লাগে, গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে নয়। পর্যটক কোলাহলকে পাত্তা না দিয়ে অকৃত্রিম বন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম।। (Arunachal Pradesh)

Arunachal Pradesh Travelogue photo (8)
নদীর জল কাচের মতো স্বচ্ছ

সূর্য পাহাড়ের আড়ালে চলে গেছে। অন্ধকার নামার আগে স্যাঁতস্যাঁতে পিছল সিঁড়িগুলো পেরিয়ে উপরে উঠতে হবে। ওঠার সময় প্রতিমুহূর্তে দমের কষ্ট অনুভব করছিলাম। রেস্তোরাঁর সেই মালকিনের কথা মনে হলো। তবে রাত্রিবাসের জন্য নয়, শ্বাসকষ্ট এখানে হতে পারে নুরানাং ফলস দেখে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে আসার সময়। (Arunachal Pradesh)

নগ্যামজার রিসর্ট। পাহাড়ের কোলে এখানেই আজ নিশিযাপন। চারপাশে শুধুই সবুজের ঠাসবুনট। ছাদে বসে একদৃষ্টে চেয়েছিলাম নুরানাং-এর দিকে। উপরে উঠে আসা মানুষের কণ্ঠস্বর তখনও শোনা যাচ্ছে। সন্ধ্যে ঘন হয়েছে। কালো আঁধার ছেয়ে গেছে।অনেক দূরে পাহাড়ে কোথাও আকাশের নক্ষত্রের মতো টিমটিম করে আলো জ্বলছে। এ নির্জনতা ভুলিয়ে দেয় শহুরে ক্লান্তিকে। (Arunachal Pradesh)

Arunachal Pradesh Travelogue photo (7)
তাওয়াং নদী

এখানকার বাঙালি কেয়ারটেকার রাজু শীল একইসঙ্গে রিসেপশনের রেজিস্টার আর রান্নাঘরের হাতাখুন্তি, দুটোই সামলাচ্ছে। খোলা ছাদে শীত জাপটে ধরেছে। কাঠ জ্বালিয়ে হাত পা সেঁকার ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছে, সঙ্গে চা পাকোড়া। ছাদের একপাশে কিছুটা অংশ ঘিরে ডাইনিং হল। ডাল, আলুভাজা আর মুরগির মাংসে আজ বাংলার স্বাদ। (Arunachal Pradesh)

রুম হিটারের উষ্ণতা রাত কাবার। সকালের জলখাবারে ফুলকো লুচি আর সাদা আলুর তরকারি, যাকে কোনোভাবেই পুরি সবজি বলা যাবে না। ভেবেছিলাম সকালের দিকে একবার নীচে নামবো, ঝরনার কাছে যাব। কিন্তু সৈয়দের তাড়া দেওয়ায় তা আর সম্ভব হলো না। রওনা দিলাম শেষ গন্তব্যের উদ্দেশে। পথে দেখে নেবো মান্ডালা টপ। (Arunachal Pradesh)

Arunachal Pradesh Travelogue photo (10)
মান্ডালা টপ থেকে হিমানী শৃঙ্গের দৃশ্য

জং পেরিয়ে একটু এগিয়েই ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় দেড় কিলোমিটার লম্বা সেলা টানেল। আবার কিছুক্ষণ হাড় কাঁপানো শীতের অনুভূতি। এরপর দিরাং শহরকে বাইপাস করে এগিয়ে চললাম মান্ডালা টপ-এর পথে। দিরাং থেকে দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। একনাগাড়ে চড়াই পাকদন্ডী পথ আর রাস্তার করুণ দুর্দশা, পৌঁছতে ঢের সময় লাগলো। (Arunachal Pradesh)

চারপাশ পাহাড় ঘেরা অনেকটা সমতল। কুলকুল শব্দে বয়ে যাচ্ছে চুসকার নদী। শেরগাঁও উপত্যকা যেন এক রূপকথা। স্থানীয় গুম্ফা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রাইমারি স্কুল – এক উন্নত গ্রাম। পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে, বেশ কিছু হোমস্টে আর রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। দু কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে আছে চসকোরং ঝোরা। 

দশ হাজার ফিট উচ্চতায় হওয়ার দাপট। প্রার্থনা পতাকা উড়ছে। অনেক দূরে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে হিমানী শৃঙ্গগুলো। ১০৮ টা চোর্তেন চক্রাকারে ঘিরে আছে সুবিশাল বুদ্ধমূর্তিকে। এ যেন এক চক্রব্যূহ রচনা করেছে। আশপাশের জঙ্গল থেকে ভেসে আসছে অচেনা পাখির ডাক। 

দুপুর দুটো গড়িয়েছে। পরিপাকতন্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। ছোট্ট একটা ক্যাফেটেরিয়া। ম্যাগি আর কফি ছাড়া কিছু বানিয়ে দিতে পারবে না। জামবাটিতে ধোঁয়া ওঠা স্যুপে ডুবে থাকা ম্যাগি তখন বড়ই উপদেয়। কফির কাপটা নিয়ে বাইরে চলে এলাম। যতটুকু সময় পাওয়া যায় প্রাণ ভরে দেখি ওই বরফ ঢাকা পাহাড়কে। (Arunachal Pradesh)

Arunachal Pradesh Travelogue photo  (16)
ঘরোয়া পরিবেশে চিমনির পাশে বসে থাকতে বেশ মজা লাগছিল

উতরাই পথ ধরে চলেছি। আজকের শেষ গন্তব্য শেরগাঁও। সেখানেই শেষ দুটো রাত। দূরত্ব কম বেশি ৬০ কিলোমিটার। ঘন্টাদুয়েক সময় লাগলো। ফুটং পেরিয়ে বিকেলের দিকে শেরগাঁও পৌঁছলাম। 

গ্রামে ঢোকার মুখেই ‘টিউলিপ ভ্যালি হোমস্টে’। খুঁজে পেতে খুব বেশি অসুবিধা হয়নি। পাঁচটা বাজতে না বাজতেই সন্ধ্যে। টিম টিম করে জ্বলছে কয়েকটা স্ট্রিট লাইট। টর্চ জ্বেলে গ্রামের পথে একটু হাঁটার ইচ্ছে থাকলেও, ক্লান্ত শরীর সায় দিল না। (Arunachal Pradesh)

Arunachal Pradesh Travelogue photo (14)
স্থানীয় গুম্ফা, শেরগাঁও

ডাইনিং হলে একটা উনান আছে। যারা একদিকের পাইপে কাঠ গোঁজার জায়গা উল্টোদিকের পাইপ দিয়ে ধোঁয়া বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। উনানে ডেচকি চেপেছে, একইসঙ্গে রুম হিটারের কাজ করছে। এখানকার ঠান্ডা তেমন গায়ে লাগছে না। কিন্তু পাহাড়ি ঘরোয়া পরিবেশে চিমনির পাশে বসে থাকতে বেশ মজা লাগছিল। (Arunachal Pradesh)

বাড়ির মালকিন পাকোড়া ভাজছে। আমরা অধৈর্য লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে আছি। দুপুরের এক বাটি ম্যাগি পাকস্থলীর এক কোণে পড়ে আছে। রান্নাঘরের জানালা থেকে উঁকি মেরে বললেন, “সকালে ব্রেকফাস্ট পাওয়া যাবে আর রাতের ডিনার। আগামীকাল লাঞ্চ বাইরেই কোথাও সারতে হবে”। জিজ্ঞেস করলাম, “গ্রামে কোন খাওয়ার জায়গা বা রেস্তোরাঁ নেই?” উনি বললেন, “সারাদিন এখানে থেকে কি করবে? বমডিলা চলে যাও! শপিং করো! ওখানেই খাওয়া দাওয়া করো”। (Arunachal Pradesh)

Arunachal Pradesh Travelogue photo (11)
জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে আছে চসকোরং ঝোরা

তাঁর কথা আমরা অবশ্য শুনিনি। সফরসূচির একেবারে শেষ পর্যায়ে বিশ্রাম আর আলসেমি পেয়ে বসেছে। একেবারে ঘরে বসে থাকবো এমনটাও নয়। গ্রামের মধ্যে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াবো, সেরকমই প্ল্যান। প্রাতরাশ সেরে বেশ বেলা করেই বেরোলাম। সৈয়দ এই গ্রামের কোথায় কী আছে, কিছুই জানে না। বাড়ির সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটা সেসব বুঝিয়ে দিয়েছেন। 

চারপাশ পাহাড় ঘেরা অনেকটা সমতল। কুলকুল শব্দে বয়ে যাচ্ছে চুসকার নদী। শেরগাঁও উপত্যকা যেন এক রূপকথা। স্থানীয় গুম্ফা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রাইমারি স্কুল – এক উন্নত গ্রাম। পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে, বেশ কিছু হোমস্টে আর রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। দু কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে আছে চসকোরং ঝোরা। (Arunachal Pradesh)

Arunachal Pradesh Travelogue photo (12)
গ্রামের পথে

গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে লাগলাম। স্থানীয় এক বৃদ্ধ আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন। নদীর ধার ঘেঁষে তিনটে কটেজ। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে জলধারাকে।

পাথরের খাঁজে খাঁজে পা দিয়ে একটু নীচে নামলাম। ঝোরাকে আরও কাছ থেকে স্পষ্টভাবে দেখতে হলে ওপারে যেতে হবে। বড় বড় পাথর আর বোল্ডারগুলো শ্যাওলা জমে পিছল। খুব সন্তর্পণে পা ফেলে এগোতে লাগলাম। একটু অসাবধানতায় পা হড়কে যাওয়ার সম্ভাবনা। জলের ওপর সরু কাঠের পাটাতন রাখা আছে, পারাপারের একমাত্র মাধ্যম। (Arunachal Pradesh)

পাতা ঝরার দিনে মরা কাঠের মতো দাঁড়িয়ে আছে

জলপ্রবাহের একটা লয় আছে, ছন্দ আছে। পখির ডাক আর নদীর গানের মাঝে একটা নিশ্চুপ সময় বয়ে যায়। বাকি দিনটা গ্রামের মধ্যে এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো। পাতা ঝরার দিনে মরা কাঠের মতো দাঁড়িয়ে আছে গাছ। কাঁচা পথ ধরে জঙ্গল থেকে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে মাথায় করে বয়ে আনছে কোনও বৃদ্ধা। চুসকার নদীর পারে হাওয়ায় উড়ছে প্রার্থনা পতাকা। কাঠের সাঁকোর ওপর বসে ছেলের দল ছিপ ফেলেছে নদীতে। (Arunachal Pradesh)

Arunachal Pradesh Travelogue photo (13)
চুসকার নদীর পারে হাওয়ায় উড়ছে প্রার্থনা পতাকা

ভ্রমণ মানেই কি শুধুই সাইট সিয়িং? কী দেখা হলো আর কী দেখা হলো না, তার হিসেব নিকেশ? নদীর পারে বসে নরম রোদে পিঠ দিয়ে কমলালেবু খেতে খেতে কোনও পথচারীর সঙ্গে গল্প করা, সেটা ভ্রমণ নয়? ভ্রমণ মানে উপলব্ধি। সেটুকু নিয়েই তো ঘরে ফেরা। আবার নতুন উদ্যমে নতুন পথে বেরিয়ে পড়া। (Arunachal Pradesh)


প্রয়োজনীয় তথ্য:

অরুণাচল প্রদেশ ভ্রমণে ইনারলাইন পারমিট লাগে। অনলাইনে পারমিট পেতে ওয়েবসাইট দেখুন – https://eilp.arunachal.gov.in/

থাকা:  নুরানাং-এ থাকার একটাই রিসর্ট আছে। যোগাযোগ – নগ্যামজার রিসর্ট (৮৭৬১০-৯০০৯৯, ৯০৮৫১-৯৮৫৮৪)

শেরগাঁও-এ থাকার জন্য অনেক হোমস্টে আছে। যোগাযোগ করতে পারেন – টিউলিপ ভ্যালি হোমস্টে (৮৭৩১৯-৭১১৭৯)

যাতায়াত: ট্রেনে বা বিমানে গুয়াহাটি পৌঁছে সেখান থেকে ভাড়াগাড়িতে অরুণাচল বেড়ানো সুবিধাজনক। তেজপুর থেকেও ভ্রমণ শুরু করা যেতে পারে। গাড়ির জন্য যোগাযোগ – সৈয়দ ইসলাম (৬০২৬৫ ৭২৬০৬, ৯৯৫৭০ ৫৭৫১৬) 

ছবি: লেখক

Shreyoshi Lahiri

দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। ভ্রমণ, আনন্দবাজার ই-পেপার, ভ্রমী পত্রিকার নিয়মিত লেখক। এছাড়া যারা-যাযাবর, তথ্যকেন্দ্র, লেটস্‌-গো, আজকাল, প্রতিদিন, গণশক্তি প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত। ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরাম ইন্ডিয়ার সদস্য। প্রধান শখ ও নেশা বেড়ানো আর ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফি।

Picture of শ্রেয়সী লাহিড়ী

শ্রেয়সী লাহিড়ী

দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। ভ্রমণ, আনন্দবাজার ই-পেপার, ভ্রমী পত্রিকার নিয়মিত লেখক। এছাড়া যারা-যাযাবর, তথ্যকেন্দ্র, লেটস্‌-গো, আজকাল, প্রতিদিন, গণশক্তি প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত। ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরাম ইন্ডিয়ার সদস্য। প্রধান শখ ও নেশা বেড়ানো আর ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফি।
Picture of শ্রেয়সী লাহিড়ী

শ্রেয়সী লাহিড়ী

দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। ভ্রমণ, আনন্দবাজার ই-পেপার, ভ্রমী পত্রিকার নিয়মিত লেখক। এছাড়া যারা-যাযাবর, তথ্যকেন্দ্র, লেটস্‌-গো, আজকাল, প্রতিদিন, গণশক্তি প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত। ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরাম ইন্ডিয়ার সদস্য। প্রধান শখ ও নেশা বেড়ানো আর ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com