মা’র ডাকে ঘুম ভেঙে দেখে নটা বাজে। রিভু তাড়াতাড়ি মুখহাত ধুয়ে খাবার জায়গায় এসে দেখে সবাই অপেক্ষা করছে।
“কী হে ফিজিসিস্ট! ঘুমোলেই হবে, টুকুন টুকুন ভাইবতেও তো হবে!” পল্টু লোকাল পুরুলিয়ার ডায়লেক্টে রিভুর লেগপুল করে।
“আজ আমাদের ডেস্টিনেশন ডিমনা লেক। যারা যারা যেতে চাও, রেডি হয়ে নাও। দুপুরে ওখানেই কোথাও খেয়ে নেব।” পল্টু জানিয়ে দেয়।
আবার সেই ওরা চারজন, পল্টু, কাজল, বিল্টু আর রিভু। (Bengali Story)
আগে কী হয়েছিল জানতে ক্লিক করুন
গাড়িতে সুবর্ণরেখার গা দিয়ে মেরিন ড্রাইভ ধরে ডিমনা রোড দিয়ে পড়ে ওরা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ডিমনা পৌঁছে যায়। ডিমনার জলাধারটা টাটা কোম্পানি তৈরি করে ১৯৩০ থেকে চল্লিশের মধ্যে যার সাইজ আনুমানিক ৫.৫ স্কোয়ার কিলোমিটার। দলমা পাহাড়ের কোলে খড়কাই নদীর উপর তৈরি এই জলাধার মূলত জামশেদপুর শহরকে জল সরবরাহ করে। ডিমনার থেকে ফেরার পথে অঙ্গন নামের এক ধাবা স্টাইল রেস্টুরেন্টে পল্টুরা খেতে ঢোকে। ক্রিস্পি তন্দুরী রুটি বাটার দেওয়া, সাথে তন্দুরী চিকেন বাটার মশালা আর ইয়েলো ডাল তরকা এই অর্ডার করা হল।
“আচ্ছা পল্টুমামা তাহলে যখন এই ডার্ক ম্যাটার আর এনার্জির ব্যাপারে জানা যাবে তখন তো আমাদের জানা সব ফিজিক্সের ল নতুন করে লিখতে হবে।” রিভু জিজ্ঞাসা করল। (Bengali Story)
আরও পড়ুন: অদৃশ্য জগৎ: পর্ব – ১
“হয়তো হবে। এখন তো জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মাল্টিভার্সের কথাও বলতে শুরু করেছেন। অর্থাৎ আমাদের ইউনিভার্স একা নয় আমাদের মতো আরও ইউনিভার্স আছে, আর সেখানকার ফিজিক্স বা ফিজিক্যাল ল’ও হয়তো সম্পূর্ণ আলাদা। আসলে এই ডার্ক এনার্জি আর ম্যাটার কী এবং এরা কীভাবে কাজ করে না জানা পর্যন্ত আমরা বুঝতেই পারব না যে আমাদের ইউনিভার্স একা নাকি আমরা অনেক ইউনিভার্স বা মাল্টিভার্সের মধ্যে একটা ইউনিভার্স। তবে আমি অন্তত মানি ১৩৮০ কোটি আলোকবর্ষই শেষ নয়, তারপরেও আরও আছে। তার কারণ ডার্ক এনার্জি আর গ্র্যাভিটেশনাল এনার্জির দাপটে সব গ্যালাক্সি তাদের ছানাপোনাদের নিয়ে ওই ১৩৮০ কোটি আলোকবর্ষ রেডিয়াসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন দেখা যাচ্ছে ডার্ক এনার্জির প্রভাবে স্পেস-টাইম ফ্যাব্রিকের প্রসারণ হচ্ছে, আর তাও এ্যাক্সিলারেটেড।” পল্টু থামল। (Bengali Story)
গাড়িতে সুবর্ণরেখার গা দিয়ে মেরিন ড্রাইভ ধরে ডিমনা রোড দিয়ে পড়ে ওরা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ডিমনা পৌঁছে যায়।
“তাই তো এই ১৩৮০ কোটি আলোকবর্ষের কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন এখন ৪৫ বিলিয়ান আলোকবর্ষ দূর থেকে আসছে। তাই নয় কি পল্টু মামা?”

“ঠিক! বোঝাই যাচ্ছে ১৩৮০ কোটি আলোকবর্ষের বাউন্ডারির কথা ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন তো উঠবেই যে ১৩৮০ কোটি আলোকবর্ষের ওপারে আগে কী ছিল? বা আমাদের মহাবিশ্বের ওপারে কী আছে? সেখানেও কি স্পেস-টাইম ফ্যাব্রিকের চাদর বিছানো? নাকি একজিস্টিং স্পেস-টাইম ফ্যাব্রিকই স্ট্রেচড হয়ে নতুন জায়গার দখল নিচ্ছে? তাহলে কি স্পেস-টাইম ফ্যাব্রিকের জিওমেট্রিক্যাল প্রপার্টি বদলে যাচ্ছে? তাহলে কি আবার নতুন করে ফিজিক্স লিখতে হবে? অনেক অনেক প্রশ্ন রে! আমরা কিছুই জানি না। এর উত্তর প্রেডিক্ট করা গেলেও প্রমাণ করা বেশ মুশকিল। তাই এসব নিয়ে আর ভাবিস না। ভাবতে গেলে অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।” পল্টু উত্তর দিল।
“আজকাল কজনই বা আর ফান্ডামেন্ট্যাল বা থিওরেটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে কাজ করে। সবাই ডাটা দেখে অনুমান করে। মানুষের ইমাজিনেশন পাওয়ার ক্রমশই কমে আসছে। দেখিস না! ডাক্তাররাও ক্লিনিক্যালি কোনও রোগ কনফিডেন্টলি প্রেডিক্ট করতে পারে না! (Bengali Story)
আরও পড়ুন: অদৃশ্য জগৎ: পর্ব – ২
আর মহাবিশ্বের ব্যাপারে এর ব্যাপ্তির কথা ভাবলে পরীক্ষামূলকভাবেও কিছু প্রমাণিত হওয়ার সম্ভবনা কম। মানুষের চোখে বিশ্বাসযোগ্য না হলে কিছুই গ্রহনযোগ্য হবে না। সত্যি মিথ্যা সব মানুষের চোখে। প্রশ্নও মানুষ করে উত্তরও মানুষ দেয়। মানুষের জগতে মানুষই শেষ কথা। আর যা মানুষ জানে না বা বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারে না তাকে ভ্যালিডেট করার জন্য কাল্পনিক কোনও শক্তি বা ভগবানকে সামনে নিয়ে আসে। যদি ধরেওনি বিগব্যাং থেকেই মহাবিশ্বের জন্ম তাহলে বিগব্যাং-এর আগে কী ছিল না জানলে ভগবানকেও তো জানা যাবে না। কারণ সেই নাকি মহাবিশ্ব তৈরি করেছেন! তাই বিজ্ঞানেরও কতটা ঠিক কতটা ভুল বলা মুশকিল।” কাজল একটু ব্যাঙ্গাত্বক স্বরেই বলল। (Bengali Story)
সেক্ষেত্রে প্রশ্ন তো উঠবেই যে ১৩৮০ কোটি আলোকবর্ষের ওপারে আগে কী ছিল? বা আমাদের মহাবিশ্বের ওপারে কী আছে? সেখানেও কি স্পেস-টাইম ফ্যাব্রিকের চাদর বিছানো?
“তাহলে তো পল্টুমামা আমরা যা দেখি বা অনুভব করি তাও খুবই সাসপিসিয়াস্। যদি আমাদের অবসার্ভেবল ইউনিভার্সের সব ম্যাটার আর এনার্জির মধ্যে ডার্ক ম্যাটার আর এনার্জির পরিমান ৯৫.৩% হয় তাহলে ব্যাপারটা এমন নয় তো যে বিগ ব্যাংয়ের সময় ডার্ক ম্যাটার আর এনার্জিই সবচেয়ে বেশি রেডিয়েট করেছিল বা সবটাই ডার্ক ম্যাটার আর এনার্জি ছিল মানে ১০০%। আর ১৩৮০ কোটি বছর আগে আস্তে আস্তে কিছু ডার্ক ম্যাটার আর এনার্জি অবজার্ভেবল ম্যাটার আর এনার্জিতে কনভার্ট হয়েছে আর সেই রেডিয়েশনই আজ আমরা দেখছি! হয়তো বিগ ব্যাং ঘটেছে আরও অনেক বিলিয়ান বছর আগে। (Bengali Story)

ইনফ্যাক্ট এখন তো এও মনে হচ্ছে যে আমরা আমাদের নিজেদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের গঠন নিয়ে যা যা ধারণা পোষন করি সবটাই কাল্পনিক। কেন না আমরা দূরের গ্যালাক্সি দূরবিনে দেখতে পেলেও নিজেদেরটা সম্পূর্নভাবে দেখতে পাই না, যতটুকু দেখি সেটা ভেতর থেকে আর তাকে এক্সট্রাপোলেট করে একটা ছবি তৈরি করি। আর আমাদের পক্ষে মিল্কিওয়ের বাইরে গিয়ে তাকে দেখাও সম্ভব না।” রিভু বেশ জোর গলাতেই বলল।
আরও পড়ুন: কুট্টিদাদুর মিস্ট্রি : অরূপ দাশগুপ্ত
খাবার আসতে একটু সময় লাগছে দেখে কাজল সবাইকে লস্যি দিতে বলল।
“আচ্ছা বাবা, তুমি যে অবসার্ভেবল ইউনিভার্সের কথা বললে সেখানে যদি প্রায় দুই ট্রিলিয়ান গ্যালাক্সি থাকে আর এক একটা গ্যালাক্সিতে অ্যাভারেজ্ প্রায় দুশো থেকে চারশো বিলিয়ান নক্ষত্র থাকে, তাহলে এটা কী করে সম্ভব যে এমন আর একটাও গ্রহ বা নক্ষত্র নেই যেখানে মানুষ বা অন্য কোনও উন্নত প্রাণ নেই! আমরাই ইউনিক!” বিল্টু জিজ্ঞাসা করল। (Bengali Story)
“এমন কিছু জোর দিয়ে বলা যায় না যে এই প্রাণের সম্ভাবনা আর কোথাও নেই। থাকার সম্ভাবনাই বেশি এবং আমার তো মনে হয় আলবৎ আছে। কিন্তু সেটা সম্পর্কে কিছু জানার সম্ভাবনা ভীষণ কম।” পল্টু উত্তর দেয়। ততক্ষণে খাবার দিয়ে যায়। এক টুকরো রুটিতে একটু ডাল নিয়ে মুখে পুরে পল্টু আবার বলতে শুরু করল,
“ভেবে দেখ আমাদের মিল্কিওয়েতে আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র হচ্ছে প্রক্সিমা সেনটৌরি, যার নিজের তিনটে মাত্র গ্রহ আছে, তার দূরত্ব আমাদের সৌরমণ্ডল থেকে ৪.২ আলোকবর্ষ বা ৫.৮৮ ট্রিলিয়ন মাইল। সেখান থেকে এখনও এমন কোনও সিগন্যাল পাওয়া যায়নি যা থেকে বোঝা যায় সেখানে কোনও সভ্যতা আছে। (Bengali Story)
ব্যাপারটা এমন নয় তো যে বিগ ব্যাংয়ের সময় ডার্ক ম্যাটার আর এনার্জিই সবচেয়ে বেশি রেডিয়েট করেছিল বা সবটাই ডার্ক ম্যাটার আর এনার্জি ছিল মানে ১০০%।
যদি মানুষ সেখানে যেতেও চায় তাহলেও নাসার ভয়েজার-২’র এই পাশের গ্যালাক্সি প্রক্সিমাতে পৌঁছাতেই অন্তত আশি হাজার বছর লেগে যাবে। আমরা যতই লাফালাফি করি না কেন একটা ব্যাপার আমাদের মানতেই হবে যে আমরা মহাবিশ্বের তুলানায় অতি অতি ক্ষুদ্র। এমনকি লাইটের ভেলোসিটিও মহাবিশ্বে ট্র্যাভেল করার জন্যে যথেষ্ট নয়। একটা গ্যালাক্সি থেকে অন্যটায় যেতে আলোরই যদি কুড়ি পঁচিশ লক্ষ বছর লেগে যায় তাহলে আমরা দুই ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সির কোনটাতে প্রাণ আছে তার খবর পাবো কীভাবে! তাই মানব সভ্যতার বয়সের নিরিখে অন্য কোথাও প্রাণ আছে কী না জানাটা প্রায় অসম্ভব। (Bengali Story)
যদি না আইনস্টাইনের বলা ওয়র্মহোল দিয়ে দূরে কোথাও সহজে পৌঁছানো যায়। ওয়র্মহোল হচ্ছে- স্পেস-টাইম চাদরের ভাঁজের মধ্যের ফুটো যা দিয়ে চাদরের এক সারফেস থেকে অন্য সারফেসে যাওয়া যায় পুরো চাদর না ঘুরে। যেমন ধর লবঙ্গলতিকা। খুললে একটা লম্বা বড় সারফেস কিন্তু ভাঁজ করে করে ছোট করে তার মধ্যিখান দিয়ে কাঠি গুঁজে ফুটো করে দিলে সেই ফুটো দিয়ে একপ্রান্ত বা এক পিঠ থেকে অন্যপ্রান্তের অন্য পিঠে অনায়াসেই যাওয়া যায়। (Bengali Story)
আরও পড়ুন: ফেসবুকের বেড়াল : সৌরভ হাওলাদার
একটু ভেবে দেখ-:
আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি অ্যান্ড্রোমেডা বা মেসিয়ার-৩১’এর দূরত্বই ২.৫ মিলিয়ান আলোকবর্ষ মানে ২৫ লক্ষ আলোকবর্ষ, সেক্ষেত্রে আমরা কী করে ভাবি যে অন্য কোনও সভ্যতা অন্য কোনওো গ্যালাক্সির অন্য গ্রহে আছে কী না তা জানতে পারব আর তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হবে! আরেকটা কথা বোঝার চেষ্টা কর, আমাদের অবসার্ভেবল ইউনিভার্সের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর হলেও আমাদের সৌরমণ্ডলের বয়স কিন্তু মাত্র ৪৫০ কোটি বছর। পৃথিবীতে সিঙ্গল সেল অরগানিজমের জন্ম হয় ৪১০ কোটি বছর আগে। সেখান থেকে বিবর্তন হতে হতে আনুমানিক তিন লক্ষ বছর আগে হোমো সেপিয়ানের জন্ম হয়। আর আমাদের এই মানব সভ্যতার বয়স মাত্র ৬০০০ বছর। তাই বুঝতেই পারছিস একটা নক্ষত্রের জন্ম থেকে সেখানে উন্নত মানের জীবের আবির্ভাব ঘটতে কত সময় লাগে। তাই অন্য গ্রহে প্রাণ খুঁজে পাওয়াটা মোটামুটি অসম্ভবই ধরা যায়। (Bengali Story)

তাই আমার অন্তত মনে হয় জোতির্বিজ্ঞানীদের এই পরীক্ষা নিরীক্ষা অহেতুক। আমরা এই মহাবিশ্বে একটা অতি ক্ষুদ্র এনটিটি আর সেটা মেনে নিয়ে আমাদের নিজেদেরকে নিয়েই বেঁচে থাকাটা উচিত। কী হবে অন্য গ্রহে প্রাণ আছে বা ছিল কী না জেনে, কী হবে জেনে শনির চাঁদ এনসেলেডাসের ভেতরে নোনা জলের সমুদ্র লুকিয়ে আছে কীনা যাতে আমাদের পৃথিবীর থেকেও বেশি জল আছে! এসব না করে মানুষ গবেষণা করুক না কীভাবে এই পৃথিবীটাকে রোগমুক্ত করা যায় বা ক্ষুধামুক্ত করা যায়! মঙ্গলে জল থেকে আমাদের কী হবে যেখানে তথ্য বলছে ২০২৫ সালের মধ্যে শুধু আফ্রিকাতেই ৪৬ কোটি মানুষ সাধারণ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হবে। যার ইঙ্গিত অলরেডি সাউথ আফ্রিকাতে দেখা যাচ্ছে। (Bengali Story)
যদি মানুষ সেখানে যেতেও চায় তাহলেও নাসার ভয়েজার-২’র এই পাশের গ্যালাক্সি প্রক্সিমাতে পৌঁছাতেই অন্তত আশি হাজার বছর লেগে যাবে।
মানুষের যে এই নিজেকে আরও শক্তিমান করার অদম্য ইচ্ছা, সে পারমানবিক শক্তিতেই হোক, অর্থনৈতিক শক্তিতেই হোক অথবা যুদ্ধাস্ত্রের সম্ভারেই হোক, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ আগে তার ঘর সামলাক না! এই যে লক্ষ লক্ষ কোটি ডলার দেশগুলো খরচা করে মহাবিশ্বের রহস্য জানার চেষ্টা করছে সেটা না করে যদি আমাদের পৃথিবীটাকে আরও সুন্দর আর সুস্থ করে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে সেটা ভালো হয় না কী!
এবার চলো। আর এসব নিয়ে আলোচনা নয়। বিকেলে আবার জুবিলি পার্কে যেতে হবে।
যাওয়ার পথে গৌরিশঙ্কর থেকে একটু দই রসগোল্লা নিয়ে যাব।” (Bengali Story)
বাড়িতে ফিরে চা-টা খেয়ে সবাই মিলে খাবার টেবিলে বসে গল্প করছিল। রিভু যেন কিছুতেই আর পার্টিসিপেট করতে পারছে না। শুধুই মাথার মধ্যে পল্টুমামার কথাগুলো ঘুড়ছে। ডার্ক এনার্জি, ডার্ক ম্যাটার, মাল্টিভার্স সব মিলিয়ে কেমন মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে রিভুর। রিভুই পল্টুকে বলল যদি জুবিলি পার্কের দর্শনটা পরেরদিন করা যায়। সবাই মোটামুটি একবাক্যে রাজি হয়ে গেল। (Bengali Story)
আরও পড়ুন: লীলা মজুমদারের গল্প: পেয়ারা গাছের নীচে
বিল্টু তো ক্লান্ত বলে আগেই শুয়ে পড়ল। রিভু, পল্টু আর ছোটমামার সাথে ছাদে গিয়ে বসল। রিভুর মা, দিদা আর কুট্টিপিসি-দিদারা নীচে বাড়ির সামনে বসে গল্প করছিল। শম্পামামী আর ছোটমামী ভিতরে বসে গল্প করছিল।
সেদিন একটু গরম পড়াতে সন্ধ্যার পর বাড়ির সামনের রাস্তায় অনেকেই হাঁটাহাঁটি করছিল। হঠাৎ রিভু শুনতে পেল নীচে কয়েকজন মহিলা দিদাদের সঙ্গে বিল্টুকে নিয়ে কিছু একটা বলছে আর কুট্টিপিসি-দিদা দুর্বোধ্য হিন্দিতে তাদেরকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে। ঘটনাটা বোঝার জন্যে রিভুরা নীচে নামতে নামতেই শম্পামামী পৌঁছে সব শান্ত করে দিয়েছে। (Bengali Story)
ঘটনার সারবত্তা হচ্ছে বিল্টুদের পিছনের রাস্তায় একটা পাঞ্জাবী ফ্যামিলি থাকে। তাদের বড়মেয়ে মধুদিদি বিল্টুকে ছোটবেলা থেকেই ভীষণ ভালোবাসে। ইনফ্যাক্ট বিল্টু ছোটবেলাটা অলমোস্ট মধুদিদির সাথেই কাটিয়েছে। মধুদিদি তার ছোট্ট মেয়ে রিন্টিকে নিয়ে বিল্টুদের বাড়ির সামনেই হাঁটছিল। কুট্টিপিসি-দিদাকে দেখে জিজ্ঞাসা করে বিল্টু কী করছে। কুট্টিপিসি-দিদা তার নিজের হিন্দিতে জানায় “বিল্টু তো ঘুম গয়া।” আর তাতেই যত বিভ্রান্তি। মধুদিদি জিজ্ঞাসা করতে থাকে কেমন করে হলো, বিল্টুকে শেষ কোথায় দেখা গিয়েছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব দেখে কুট্টিপিসি-দিদা ঘাবড়ে গিয়ে শম্পামামীকে ডাকে। (Bengali Story)
শম্পামামী সব শুনে মধুদিদিকে বুঝিয়ে বলে “কুট্টিপিসি-দিদার ঘুম গয়া বলার অর্থ “সো গয়া” কারণ বাংলায় ঘুম মানে ঘুমানো বা শুয়ে পড়া। এতে মধুদিদিরা আশ্বস্ত হয়। এইসব শুনে পল্টুমামা কুট্টিপিসি-দিদাকে নিয়ে একটু হাসাহাসি করাতে দিদার স্পষ্ট উত্তর “রাখ তোদের হিন্দি! আমি যা বলেছি সেটাই ঠিক। ও যতটুকু বাংলা বলতে পারে তার থেকে অনেক বেশি হিন্দি আমি বলেছি। ঘুম’এর মতন একটা নিস্পাপ শব্দের হিন্দি মানে কী না হারিয়ে যাওয়া! আর ওই ভাষা শুদ্ধভাবে না বলাতে তোরা আমায় নিয়ে হাসছিস? ছ্যাঁ ছ্যাঁছ্যাঁ ছ্যাঁ। তোদের লজ্জা করা উচিত।” এই বলে নিজের বিএফএফ (বেস্ট ফ্রেন্ড ফরএভার) পারুল, মানে রিভুর দিদার সঙ্গে আবার গল্প শুরু করে দিল কুট্টিপিসি-দিদা। (Bengali Story)
পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়ো ফিজিক্স বিভাগে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তিকে। প্রায় এগারো বছর নানা বহুজাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত থাকার পর উনিশশো সাতানব্বইতে তৈরি করেন নিজের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বর্তমানেও যুক্ত রয়েছেন সেই সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে। কাজের জগতের ব্যস্ততার ফাঁকে ভালবাসেন গান-বাজনা শুনতে এবং নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে। সুযোগ পেলেই বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন আর সেই অভিজ্ঞতা ধরে রাখেন ক্যামেরায়।