১৯৮৮ সালে দূরদর্শনের পর্দায় শুরু হল এক নতুন ধারাবাহিক ‘মির্জা গালিব’। (Nasiruddin Shah) পরিচালনায় গুলজার এবং সংগীতের দায়িত্বে জগজিৎ সিং ও চিত্রা সিং। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করলেন এক মধ্যবয়স্ক অভিনেতা। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয়ের দৌলতে তিনি তখন যথেষ্ট পরিচিত মুখ, তবুও এই ধারাবাহিকে গালিবের চরিত্রে তাঁর অভিনয় বিশেষ ভাবে নজর কাড়ল সকলের! ধর্ম-বর্ণ-ভাষা নির্বিশেষে সক্কলে ভালোবেসে ফেললেন উর্দু সাহিত্যের বিশেষ এই আঙ্গিকটিকে। অভিনেতার নাম নাসিরুদ্দিন শাহ্। থিয়েটারের মঞ্চ বা বড় পর্দা, মূলধারার বলিউড সিনেমা বা অন্যধারার ছবি – তাঁর মাপের অভিনেতা ভারতীয় উপমহাদেশে বিরল।
নাসিরুদ্দিন শাহের (Nasiruddin Shah) জন্ম ১৯৫০ সালের ২০ জুলাই তৎকালীন ভারতের যুক্তপ্রদেশের এক নবাব পরিবারে (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ)। আজমের এবং নৈনিতাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষার পাট সম্পন্ন করে অভিনয়ের খুঁটিনাটি শিখতে তিনি ভর্তি হন দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায়। যদিও, এর আগেই ১৯৬৭ সালে ‘আমন’ ছবিতে জুনিয়র আর্টিস্ট হিসাবে ছোট্ট একটি কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। রাস্তায় ভিড়ের দৃশ্যে একজনের পার্ট দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে নাসিরুদ্দিন বলছেন, ‘কাজ করে পেয়েছিলাম মাত্র সাড়ে সাত টাকা। কিন্তু দিনটা যে কী আনন্দের ছিল, বলে বোঝাতে পারব না। সেই প্রথম সামনে থেকে ক্যামেরা দেখা! যদিও সম্পাদনার সময় আমার দৃশ্যটি পরিচালক বাদ দিয়ে দেন।’
ফলে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও সিনেমার টাইটেল কার্ডে তাঁর নাম যায়নি, তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও ছ’বছর। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পেল শ্যাম বেনেগালের ‘নিশান্ত’, এবং সেখানেই চরিত্রাভিনেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেন নাসিরুদ্দিন। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে, একের পর এক সিনেমায় ডাক আসতে লাগল তাঁর। বলিউডের মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবিতে প্রবেশ করলেন ১৯৮০ সালে ‘হাম পাঁচ’ সিনেমার মাধ্যমে। যদিও, একাধিক বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করলেও, আপামর সিনেপ্রেমীদের কাছে তিনি পরিচিত হলেন ভারতীয় সমান্তরাল সিনেমার অন্যতম স্তম্ভরূপে। ছয় দশকব্যাপী অভিনয় জীবনে কাজ করেছেন একাধিক হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজি চলচ্চিত্রে। কয়েকটি তামিল, কানাড়া, গুজরাটি ছবি, প্রভাত রায় পরিচালিত বাংলা ছবি ‘প্রতিদান’-এও অভিনয়ের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন নাসির (Nasiruddin Shah)। ‘আ হোলি কন্সপিরেসি’ ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে এবং মৃণাল সেন পরিচালিত ‘জেনেসিসি’ ছবিতে তাঁর অভিনয় বিশেষ প্রশংসার দাবী রাখে।
১৯৮৪ সালে গৌতম ঘোষের ‘পার’ ছবিতে বিহারের প্রান্তিক শ্রমিক নওরঙ্গিয়ার চরিত্রে তাঁর অভিনয় রীতিমতো নজর কাড়ে সকলের৷ এই ছবির জন্য ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতার স্বীকৃতি এবং সেরা অভিনেতার রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও জিতে নেন। আবার ‘সারফারোশ’ ছবিতে আমির খানের বিপরীতে সংগীতশিল্পী ও সন্ত্রাসবাদী রূপে তাঁর অনবদ্য অভিনয় প্রশংসনীয়। ‘ইকবাল’ ‘আক্রোশ’, ‘স্পর্শ’, ‘মাসুম’, ‘মির্চ মশলা’, ‘জানে ভি দো ইয়ারো’-র মতো ছবির নাম করলেই আজও চোখের সামনে তাঁর ছবিই ভেসে ওঠে। শুধু বলিউড নয়, কাজ করেছেন বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রযোজনাতেও, যার মধ্যে ‘মনসুন ওয়েডিং’ ও ‘দ্য গ্রেট নিউ ওয়ান্ডারফুল’ ছবির কথা উল্লেখ করাই যায়।
বড় পর্দার পাশাপাশি টেলিভিশনে ‘ভারত এক খোঁজ’ বা ‘মির্জা গালিব’ ধারাবাহিকে অভিনয় এবং ২০০৬ সালে ‘ইয়ুঁ হোতা তো কেয়া হোতা’-র পরিচালনার কাজেও সমান সফল নাসির (Nasiruddin Shah) ! তবে এতকিছুর পরেও ভোলেননি নিজের শিকড়কে, সুযোগ পেলেই ফিরে গেছেন থিয়েটারের কাছে। ১৯৭৭ সালে দুই বন্ধুর সঙ্গে মিলে ‘মোটলে প্রোডাকশন্স’ নামে একটি থিয়েটার দলও গঠন করেন, পৃথ্বী থিয়েটারে তাঁদের প্রথম প্রযোজনা ‘ওয়েটিং ফর গোডো’ বা পরবর্তীকালে মান্টোর মত কালজয়ী সাহিত্যিকের রচনা অবলম্বনে বেশ কিছু নাটক পরিচালনা করেন তিনি এবং তাঁর দল। ভ্রাম্যমাণ থিয়েটার দলের সঙ্গে দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরে নিয়মিত অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন তিনি, মন জয় করেছেন আপামর ভারতবাসীর। তিনবার জাতীয় পুরস্কার, একাধিক ফিল্মফেয়ার, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণসহ দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারই রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। থিয়েটার বা বড় পর্দা, এখনও সমান উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। অভিনয়ের আস্ত পাঠশালা, শিল্পী, সমাজকর্মী এবং সর্বোপরি জীবন্ত কিংবদন্তী নাসিরুদ্দিন শাহের (Nasiruddin Shah) জন্মদিনে তাঁকে আমাদের অভিবাদন (Birthday Tribute video)!
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।