(Bengali Novel)
নদীর ধারে কাশবনে খুশির হাওয়া। একদিকে বিস্তৃত চর। তারপর থেকে ঘাসজমি, মাঝে মাঝে বুনো ঝোপঝাড়। খুব খোলামেলা চারদিক। অনেক ওপরে আশ্বিনের ঘন নীল আকাশের গায়ে ক্যালেন্ডারের ছবির মতো তুলোটে মেঘ। পিকনিক চলছে। লিলি, তারকের গ্রামের লোকেরা এসেছে নদীর ধারে হৈ হৈ করে পিকনিক করতে। নদীর পারে, রান্নার জায়গায় দু’টো ক্যামেরা দিয়ে কভার করা হচ্ছে। তাছাড়াও ড্রোন ক্যামেরা থেকে এরিয়াল শট নেওয়া হচ্ছে। লিলির রান্নাঘর বেশ হিট! তার মাটির খোলা রান্নাঘর, ধার দিয়ে দেওয়া আল্পনা, ক্ষেত থেকে তোলা টাটকা সবজি, পেছনের টলটলে পুকুর, কুলো, মাটির বাসন, শিলনোড়ায় বাটা টাটকা মশলা। সমস্ত কিছু হিট। লিলির শান্ত মুখশ্রী, মিষ্টি হাসি, একটু অগোছালো কথা, তাঁত, লিনেনের শাড়ি, সব অর্গানিক জীবনযাত্রার একটি সুন্দর ধারাভাষ্য- ঠিক যেমন মৌমিতা দেব রায় এন্ড টিম ভেবেছিলেন। (Bengali Novel)

ভিউ বাড়ছে আশাতীত। ভিউ, লাইক, সাবস্ক্রাইবিং সবই। আশাতীত। আজ কমিউনিটি উৎসবের দিন। নদীতে কিছু উৎসাহী অল্পবয়সী ছেলে মাছ ধরছে, ছোট ছোট খেপলা জাল, ছিপ দিয়ে। মাটির উনুনে বানানো মাংস থেকে ম ম করছে গন্ধ, সেখানেও কিছু মানুষের ভিড়। (Bengali Novel)
সেখানেই রয়েছে লিলি। তার মুখে ঘাম, কপালে উস্কোখুস্কো চুল, সদ্য শ্যাম্পু করা চুল হাওয়ায় আরও অবস্থা খারাপ, খুব আলুথালু লাগছে। তার পরণে অনেক দিন ধরে সযত্নে তুলে রাখা হলুদ, গোলাপী ফুল ফুল শাড়ি, সারা জমিতে চুমকির কাজ। হাতে সোনালীর সাথে গোলাপী, সবুজ কাঁচের চুড়ি। আজ কুটনো কুটতে কুটতে, রান্নায় খুন্তি নাড়তে নাড়তে নিজের হাতটা ঘুরে ফিরিয়ে দেখছে, আর নিজের মনে হচ্ছে কী সুন্দর লাগছে তার হাতটা। (Bengali Novel)
ওদিকে তারক আর কয়েকজন মিলে ভ্যান রিকশা করে কলাপাতা নিয়ে এসেছে, সেগুলো নামানোর ব্যবস্থা করছে। এরপর কলাপাতাগুলো কাটা এবং ধোয়া হবে। (Bengali Novel)
মাংস নাড়া বন্ধ করে লিলি বলল
‘এবার আস্তে আস্তে গরম জল ঢালতে থাকো মন্টু, কষানো হয়ে গেছে।’
জল ঢালতে ঢালতে মন্টু বলল-
‘ও বৌদি, তারকদা ঐদিকে ডাকছে গো।’
সত্যি তো লোকটা হাত নেড়ে নেড়ে ডাকছে।
‘কি হল গো?’
আঁচলে হাত মুছতে মুছতে একটু দৌড়ে এল লিলি।
‘আরে মিতাদি এসেছেন গো।’
‘কি বলছ? দিদি এসেছে? কোথায়?’
‘বড় রাস্তায় ওঁর গাড়ি এসে গেছে। সারপ্রাইজ দেবেন বলে বলেননি।’
‘শিগগির করে এগিয়ে যাও। নিয়ে এস।’ (Bengali Novel)
খোলা জায়গায় একটাই মাত্র গাছ। তার নীচে চেয়ারে বসেছেন মৌমিতা দেব রায়। একটা ছোট শালপাতার বাটিতে একটু মাংস দিয়েছে লিলি।
খোলা জায়গায় একটাই মাত্র গাছ। তার নীচে চেয়ারে বসেছেন মৌমিতা দেব রায়। একটা ছোট শালপাতার বাটিতে একটু মাংস দিয়েছে লিলি। সূর্য এখন মাথার ওপরে। ঘেমে, লাল হয়ে গেছেন মৌমিতা, কিন্তু বেশ আনন্দিত মুখে চারদিকে তাকাচ্ছেন। (Bengali Novel)
‘এই গ্রুপগুলোকে জড়ো করে খাবার ব্যবস্থা শুরু করো। লিলি, মাংস বাচ্চাদের আর বয়স্কদের তুমি নিজের হাতে পরিবেশন করো।’ বলেই লিলির দিকে না তাকিয়ে বেশ চাপা গলায় লিলিকে বললেন।
‘এটা কি পরেছো লিলি?’
লিলি চমকে উঠল। ওঁর হাসিমাখা মুখ থেকে কী খনখনে আওয়াজ! কী বেমানান! মৌমিতার গলা থেকে এরকম আওয়াজ তিনি কোনওদিন শোনেননি।
লিলির মুখের হাসি দপ করে নিভে গেল।
‘কী দিদি?’
‘এই শাড়িটা?’ (Bengali Novel)
‘ও এটা নতুন। আমার দিদি দু’বছর আগে কলকাতা থেকে এনে দিয়েছিল। আমার খুব পছন্দের শাড়ি, ভাঙা হয়নি ভাবলাম আজ পরি… আজকে একটা ভাল দিন।’ (Bengali Novel)

তার কথা থেমে যাচ্ছে। কারণ মিতাদি চুপ।
‘লিলি এই চুমকি দেওয়া শাড়ি, কাঁচের চুড়ি এসব আর কখনও পরো না, খুব খারাপ দেখাচ্ছে তোমাকে।’
তারপর একটু থামলেন।
‘তোমার জা তো পরেনি? কী সুন্দর লাগছে ধনেখালি শাড়ীটাতে।’
দূরে ওর জা ঝুমুর খাবার দিতে শুরু করেছে।
লিলি কিছু বলার আগে ওরকম নীচু গলাতেই বললেন-
‘নিশ্চই পরবে, যখন শুটিং নেই তখন। কেমন? এখন যাও। পরিবেশন করো গিয়ে। দাঁড়াও চুলগুলো যা করেছ!’
বলে তিনি গুছিয়ে লিলির মাথায় ঘোমটা টেনে দিলেন।
‘বাহ্ এবার সুন্দর লাগছে’। তারপর হেঁকে ক্যামেরা হাতে একটি ছেলেকে বললেন
‘এবার দিদিকে ফলো করো।’ (Bengali Novel)
দূরে, সারি সারি কলাপাতার সামনে বসে গ্রামের মানুষরা। তাদের পাতে ভাত, গরম ডাল, আলুভাজা, বেগুনভাজা। হাসিখুশি বাচ্চারা, বয়স্ক মানুষেরা বসে খাচ্ছেন।
আধঘণ্টা বাদে কড়া রোদ থেকে বাঁচতে মৌমিতা মাথায় আঁচল ঢেকে, শাড়ির কুঁচি একটু তুলে ধরে উঠে এসে দাঁড়ালেন উঁচু পাড়ের মতো জায়গায়। তার পায়ে সম্পূর্ণ বেমানান একজোড়া মহার্ঘ্য স্নিকার। (Bengali Novel)
দূরে, সারি সারি কলাপাতার সামনে বসে গ্রামের মানুষরা। তাদের পাতে ভাত, গরম ডাল, আলুভাজা, বেগুনভাজা। হাসিখুশি বাচ্চারা, বয়স্ক মানুষেরা বসে খাচ্ছেন। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে ওদের দাদু যিনি প্রত্যেক এপিসোডে মজার মজার কথা বলে, সে খুব জনপ্রিয় মুখ -এখন ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কী যেন বলছেন, সবাই হাসছে। ওপরে ড্রোন ক্যামেরা এরিয়াল অ্যাঙ্গেলে ধরে রাখছে লিলির রান্নাঘরের একশোতম এপিসোড। (Bengali Novel)
সাবস্ক্রাইবার তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। (Bengali Novel)
(ক্রমশ)
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় বস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মূলতঃ ছোট গল্প এবং আর্টিকেল লেখেন। ছোট গল্প সংকলন ক্যালাইডোস্কোপ এবং অপরাজিতা প্রকাশিত হয়েছে, কমলিনী,দেজ পাবলিকেশন থেকে।একটি ছোট গল্পের অনুবাদ শর্টলিস্টেড হয়েছে, ‘Armory Square Prize for women writers in South Asian literature’ এ। অনুদিত গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত Words Without Borders এর পাতায় ।আনন্দবাজারের বিদেশ পাতার নিয়মিত লেখেন তাছাড়া রোববার-সংবাদ প্রতিদিন, বাংলা লাইভ, গুরুচণ্ডালী এবং আরো কিছু ম্যাগাজিনে গল্প এবং ছোট বড় প্রবন্ধ নিয়মিত লেখেন।