আগের পর্ব- ঈশ্বর: পর্ব ১ ঈশ্বর: পর্ব ২ ঈশ্বর: পর্ব ৩ ঈশ্বর: পর্ব ৪
অতুলানন্দ: দরজা বন্ধ করে দাও মৃণাল। আর যেন কেউ ঢুকতে না পারে।
মৃণাল: হ্যাঁ মহারাজ।
ভক্ত ১: আমরা তাহলে আজ চলি মহারাজ।
অতুলানন্দ: কেন? এখনও তো আলোচনা শেষ হয়নি। তুরীয় অবস্থা কি সে বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন।
ভক্ত ২: সত্যি কথা বলতে কি মহারাজ, মনটা বড় বিচলিত হয়ে রয়েছে।
ভক্ত ৩: হ্যাঁ মহারাজ। বড্ড দুশিন্তা হচ্ছে।
অতুলানন্দ : কীসের দুশ্চিন্তা? আমাকে বলুন। আমি চেষ্টা করব আপনাদের দুশ্চিন্তা দূর করবার। (সকলে একটু চুপ করে থাকে) ও, আপনারা ভাবছেন আমিই অমিত মুখার্জি? ভাবছেন আঠার বছর আগে আমিই শাশ্বতী এবং অন্যান্যদের ঠকিয়েছি? ভাবছেন আমি আমার পূর্বাশ্রমের পিতামাতাকে অবহেলা করে, চরম দুর্দশার মধ্যে ফেলে রেখে পালিয়ে এসেছি? কিন্তু এ সব কিছু মিথ্যে। মায়া। বিভ্রম। এখন আপনারা যে আমাকে দেখছেন, এটাই সত্য। আর কিছু নয়।
ভক্ত ১: তা নয় মহারাজ। আসলে ওই পৃথিবী ধ্বংসের খবরটা শোনার পর থেকে মনটা বড্ড উতলা হয়েছে। বাড়িতে স্ত্রী পুত্র পরিবার রয়েছে –
ভক্ত ২: মহারাজ, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলে তো কিছুই থাকবে না। এতদিনের যা কিছু উপার্জন, যা কিছু জ্ঞান সব তো শেষ হয়ে যাবে।
ভক্ত ৩: আপনি একটা কিছু করুন মহারাজ। যে ভাবে হোক, এই ধ্বংসের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচান।
অতুলানন্দ: শুনুন, আমার কথা শুনুন। ধরুন সত্যিই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেল। সব শেষ হয়ে গেল। আমরা সবাই সেই নিরাকার ব্রহ্মে বিলীন হয়ে গেলাম। কেউ রইলাম না। আমরা সবাই একসঙ্গে সুষুপ্তি অবস্থায় চলে গেলাম, যেখানে আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কেই আর আমাদের চেতনা রইল না। তাহলে কার জন্য দুঃখ করবেন? কার জন্য দুশিন্তা করবেন?
ভক্ত ১: দুশিন্তা করব না?
অতুলানন্দ: না করবেন না। মনে করবেন ঘুমোতে যাবেন। গভীর ঘুম। স্বপ্নহীন গভীর সুষুপ্তি। ঘুমোতে যাবার আগে কি আপনি দুশ্চিন্তা করেন?
(হঠাত্ দরজায় টোকা শোনা যায়। কেউ খুব অধৈর্য হয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছেন।)
অতুলানন্দ: আঃ এখন আবার কে এল। মৃণাল দেখ তো? আজে বাজে লোক হলে ফেরত পাঠিয়ে দিও।
(মৃণাল দরজা খুলে দেয়। কালো সুট, কালো চশমা পরিহিত এক ভদ্রলোক প্রবেশ করেন। কোটের পকেট থেকে একটা ব্যাজ বার করে দেখান)
এফবিআই: আমি এফ বি আই থেকে আসছি। আপনি সোয়ামি আতুলানন্দ মহারাজ?
অতুলানন্দ:
হ্যাঁ আমি অতুলানন্দ। আমি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
এফবিয়াই : কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে।
অতুলানন্দ: হ্যাঁ নিশ্চয়ই। (ভক্তদের) আপনাদের কাছে আবার অনুরোধ করছি, আপনারা যদি একটু বাইরে যান। এই অফিসার নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে নিভৃতে আলাপ করতে চাইবেন।
(ভক্তরা সবাই উঠে ভয়ে ভয়ে বেরিয়ে যান)
এফবিআই: ধন্যবাদ।
মৃণাল: (একটা চেয়ার এগিয়ে দেয়)
বসুন স্যার। চা কফি কিছু বলব?
এফবিআই: ধন্যবাদ। ডিউটিতে থাকাকালীন আমি চা কফি কিছু খাই না। আর আপনিও যদি এই ঘরটা কেবল আমাদের ছেড়ে দেন, তাহলে ভাল হয়।
মৃণাল: অবশ্যই। অবশ্যই। আমি বাইরে অপেক্ষা করব। কোনও প্রয়োজন হলেই ডাকবেন।
(মৃণাল বেরিয়ে যায়)
ছবি সৌজন্যে: Pixabay