(Short Story)
১
“আমাদের খেয়ে ফেলছে! আকাশ না থাকলে পৃথিবীর বুকে আর কিছু থাকবে? মেঘগুলোকেও নষ্ট করে দিচ্ছে। আকাশছোঁয়া বাড়িগুলো যদি আমাদের এভাবেই খেয়ে ফেলে! মেঘসোনা পাখিপরীরা যাবে কোথায়? তুফান, আমাদের একমাত্র ভরসা তুমি। তুফান! বাঁচাও আমাদের!” (Short Story)
ধড়মড় করে ঘুমটা ভেঙে গেল তুফানের। জানালাটা ঝট করে খুলে দিল ও। এই তো আকাশ আছে। ভয় নেই। উফ শান্তি! গগনপুর রাজ্যে গগন না থাকলে হয়! নীল আকাশ। সুন্দর রোদ! রাজপ্রাসাদের জানলাগুলো দরজার মতো। মনে হয় আকাশ, মেঘ যেন ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে। দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়। তুফানের মনটা কি ভাল হল? নাহ! মায়ের মুখটা মনে পড়লেই কান্না পাচ্ছে। মা আসার সময় খুব চিন্তায় ছিল। আজই রাজামশাইকে জিজ্ঞেস করতে হবে। গগনপুরের বিপদটা ঠিক কোথায় বোঝা যাচ্ছে না। তুফানকে তাহলে আর কতদিন থাকতে হবে এখানে? (Short Story)
গগনপুরের ভারী বিপদ। রাজামশাই-এর শয়নকক্ষে একজন চিঠি রেখে গেছেন। লুকিয়ে লুকিয়ে। “গগনপুরে এবার হবে গগন বিদায়।” তারপরই ডাক পড়েছিল তুফানের। দশটা গ্রাম রয়েছে গগনপুরে। গ্রামগুলোয় সব ছোট ছোট বাড়ি। যে বাড়ি আকাশ ঢেকে দেয় না। এমনকী রাজপ্রাসাদটাও বিশেষ বড় নয়। (Short Story)
গগনপুরের এমনটাই নিয়ম। একটা ছোট্ট সুন্দর বাড়ি ছিল তুফানের। ছিল কেন, আছে এখনও। তুফান আর মায়ের একটা ঘর। একটায় থাকত বাবা। (Short Story)

তুফান তখন পাঠশালায় যাওয়া শুরু করেছে। ছোট থেকেই আকাশ আর মেঘেদের বড্ড ভালবাসে তুফান। প্রথম যখন তুফান আঁকা শুরু করে, মেঘ আর আকাশ এঁকেছিল অবিকল আসল আকাশের মতো। তখন ওর মাত্র দু’বছর বয়স। সেই পাতাটা আকাশের দিকে উড়িয়ে মেঘের কাছে দিয়েছিল তুফান। মায়ের মুখে এসব শোনা। (Short Story)
একদিন ঘুম থেকে উঠে তুফান দেখে ওদের জানালা দিয়ে আকাশটা নেমে এসে তুফানকে জড়িয়ে ধরেছে। ঠান্ডা হাওয়া বইছিল ওর ওপর দিয়ে। তখন ওর মোটে সাত বছর বয়স। (Short Story)
“হ্যাঁচ্চো”!
ঠান্ডা হাওয়ায় সেদিন সর্দি লেগে যাচ্ছিল ওর।
“তুফান তোমায় আমি আদর করছিলাম তো! এই দেখো, আমাদের মেঘ-বন্ধুরাও তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।”
তুফান অবাক। কে কথা বলছে! নীল আকাশ! ও কি স্বপ্ন দেখছে! আকাশ যেন তুফানের মনের কথা বুঝে ফেলল। (Short Story)
সেই থেকে আকাশ আর মেঘেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তুফানের। মেঘ বড় ভালবাসে ও। আকাশে মেঘ থাকলেই ইশারায় তুফানকে ডেকে নেয় ওরা। তখন তুফান মাঠে গিয়ে বসে। এক যে মেঘ আছে, তার নাম বুড়িমা মেঘ। সাদা, সাদা ঝাঁকড়া চুল।
“গগনপুরে তোমার মতো আকাশ, মেঘ, পাখি এদের কেউ ভালোবাসে না তুফান। তাই আমরা মাঝে মাঝেই তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসব। ভয় পেয়ো না, তোমায় ভালোবাসি বলেই দেখা করতে এসেছি।” (Short Story)
সেই থেকে আকাশ আর মেঘেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তুফানের। মেঘ বড় ভালবাসে ও। আকাশে মেঘ থাকলেই ইশারায় তুফানকে ডেকে নেয় ওরা। তখন তুফান মাঠে গিয়ে বসে। এক যে মেঘ আছে, তার নাম বুড়িমা মেঘ। সাদা, সাদা ঝাঁকড়া চুল। চোখগুলো কোটরে ঢুকে গেছে। বিকেলবেলা তুফানকে গল্প শোনায়। আর একজন মেঘ, বন্ধু মেঘ। মাঠে গিয়ে বসলেই তুফানের সঙ্গে হেসে হেসে গল্প করে। আর এক মেঘ আছে ছিঁচকাঁদুনে মেঘ। শুধু কাঁদে। তার নাকি শুধু কান্না পায়। তুফানকে কতবার বৃষ্টি করে ভিজিয়ে দিয়েছে! আর একজন আছে রাগী মেঘ। রেগে গেলেই শুধু গর্জন করে। তুফান ছাড়া ওদের গ্রামে সকলেই এই মেঘের ডাক শুনলে ভয় পায়। (Short Story)
মা-বাবা, পড়াশোনা আর মেঘবন্ধুরা এই ছিল তুফানের জগত। তুফান আর মেঘের বন্ধুত্বের কথা গগনপুরে সকলেই জানে। এই কারণে তুফানকে গগনপুর রাজ্যের সকলে কত ভালবাসে। (Short Story)
রাজামশাই তো তুফানকে মাঝে মাঝে ডেকে ওর সঙ্গে মেঘ আর আকাশের কী গল্প হয় শুনতে চাইতেন। কিন্তু এবারের ডাক তেমন নয়। (Short Story)
একদিন হঠাৎ করেই রাজামশাই তুফানকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। রাজার পেয়াদা তুফানকে নিয়ে যেতে এসেছিল। মা ভয় পেয়ে একসা।
“মেঘ, আকাশের সঙ্গে তুই কেন কথা বলতে যাস তুফান? নিশ্চয়ই রাজা তোর ওপর রেগে গেছে। তোকে যদি কোনও শাস্তি দেয়!”
“মা রাজামশাই কতবার আমায় ডেকে মেঘ-বন্ধুদের গল্প শুনেছে! তুমি তো সব জানো। ভয় পেয়ো না।”
তুফান মায়ের কোলে বসে পিঠে খেতে খেতে বলেছিল। (Short Story)
বাবা, মাকে শান্ত করতে করতে বলেছিল। তুফান দেখেছিল কথা বলতে বলতে বাবার বুকটা গর্বে ফুলে উঠছে। কী যে আনন্দ হয়েছিল তুফানের! রাজার পেয়াদার সঙ্গে বাবাও এসেছিল। তুফানকে রাজপ্রাসাদে দিয়ে গিয়েছিল।
“আমাদের গগনপুরের রাজা মোটেই তেমন মানুষ নন, আর আমাদের তুফান কি, যে সে ছেলে! এই গগনপুরের আকাশ, মেঘেদের বন্ধু ও। আমাদের রাজ্যে তুফানের মতো কজন আছে! ওকে রাজা নিশ্চয়ই কোনও ভাল কাজের জন্য ডেকে পাঠিয়েছেন।” (Short Story)
বাবা, মাকে শান্ত করতে করতে বলেছিল। তুফান দেখেছিল কথা বলতে বলতে বাবার বুকটা গর্বে ফুলে উঠছে। কী যে আনন্দ হয়েছিল তুফানের! রাজার পেয়াদার সঙ্গে বাবাও এসেছিল। তুফানকে রাজপ্রাসাদে দিয়ে গিয়েছিল।
রাজার সঙ্গে দেখাও করেছিল। কিন্তু এই রাজপ্রাসাদে আসার পর থেকেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করেছে তুফান। (Short Story)
২
“এ তুমি কী বলছো মন্ত্রী? শুধু আমাদের গগনপুরে বৃষ্টি হচ্ছে! টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে মাঠের সব ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন এই বৃষ্টি যদি না থামে! আমি যে কী করব?”
রাজামশাই চিন্তিত গলায় বলেন।
“আমি নিজের চোখে দেখেছি, গগনপুরের আকাশেই কেবল মেঘ। আমাদের রাজ্যের সীমানা পেরোলে আর কোথাও বৃষ্টি নেই। কালো মেঘ নেই। ঝাঁ-ঝাঁ রোদ্দুর চারদিকে।” (Short Story)
মন্ত্রীমশাই কথা বলতে বলতে চিন্তায় নিজের নখ খুঁটছেন। মাঝে-মাঝে তুফানকে দেখে নিচ্ছেন।
“তুফান, তুমি বলো আমাদের কী করা উচিত?”
মন্ত্রীমশাই কথা বলতে বলতে চিন্তায় নিজের নখ খুঁটছেন। মাঝে-মাঝে তুফানকে দেখে নিচ্ছেন।
“তুফান, তুমি বলো আমাদের কী করা উচিত?”
রাজামশাই সরাসরি তুফানকে প্রশ্ন করেন।
“পাঁচ দিন হল আমি এই রাজপ্রাসাদে এসেছি। কোথাও বেরোইনি। আমার মেঘ-বন্ধুদের সঙ্গে কথাও হয়নি। আমি একবার এই গগনপুর রাজ্যের সবকটা সীমানা ঘুরে দেখতে চাই রাজামশাই। আপনি যদি একটু ব্যবস্থা করে দেন ভাল হয়।” (Short Story)
রাজসভায় তেমন কথা বলে না তুফান। পাঁচ দিনে বলেনি। আজ বলতেই হল।
“এই ছেলে নাকি মেঘ, আকাশ, পাখিদের সঙ্গে কথা বলতে পারে! তা গগনপুরের আকাশে কেন ক’দিন ধরে শুধু কালো মেঘ রয়েছে তার কিনারা করুক এই ছেলেটা!”
মন্ত্রীমশাই তুফানের দিকে আঙুল উঁচিয়ে কথাগুলো বললেন। (Short Story)

ভরা রাজসভায় মন্ত্রীমশাই এভাবে অপমান করলেন তুফানকে! চোখ ফেটে জল আসছে ওর। আরেকটু হলে কেঁদেই ফেলত। কিন্তু সামলে নিল নিজেকে। বাবার বলা কথাটা মনে পড়ল, “তোমার ওপর গগনপুরের আকাশ বাঁচানোর দায়িত্ব রয়েছে তুফান। গুরু দায়িত্ব। কখনও দুর্বল হবে না। ভেঙে পড়বে না।”
সকলের আড়ালে দু’ফোঁটা চোখের জল জামা দিয়ে মুছে নেয় তুফান। (Short Story)
রাজামশাই নিজের পালকির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তুফানের জন্য। রাজপ্রাসাদের বাইরে বেরিয়েছে তুফান। বৃষ্টি পড়ছে। তিন দিন হয়ে গেল। অস্বস্তি হচ্ছে ওর। এই রাজপ্রাসাদে আসার পর থেকে একবারও মেঘবন্ধুদের সঙ্গে কথা হয়নি। রাজবাড়ির ছাদে গিয়ে তুফান কত করে ডেকেছে ওদের। কেউ সাড়া দেয়নি। এমনকী নীল আকাশের ফাঁক থেকে মুখ বাড়ায়নি। ওরা কি ইচ্ছে করেই আড়ি করে দিলে তুফানের সঙ্গে! সেদিন কত করে ডাকল তুফান। “ও বন্ধু মেঘ, বুড়িমা মেঘ, রাগী মেঘ, কোথায় গেলে তোমরা।” এখানে আসার পর থেকেই তুফান দেখেছে আকাশের মুখ ভার। রোদ নেই। তারপর থেকেই শুরু হল বৃষ্টি। (Short Story)
গগনপুরের সীমানায় একটা বিরাট উঁচু বাড়ি উঠতে দেখা গেছে। তার ছাদ একেবারে আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে। গগনপুরের আকাশে ঢুকে পড়ছে বাড়িটি। এই রাজ্যের গুপ্তচর রাজামশাইকে খবরটা দিয়েছে।
গগনপুরের সীমানায় একটা বিরাট উঁচু বাড়ি উঠতে দেখা গেছে। তার ছাদ একেবারে আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে। গগনপুরের আকাশে ঢুকে পড়ছে বাড়িটি। এই রাজ্যের গুপ্তচর রাজামশাইকে খবরটা দিয়েছে। (Short Story)
রাজামশাই নিজের শয়নকক্ষ থেকে ওই চিঠিটাও পান। চিন্তায় পড়েন। তখনই তুফানের ডাক পড়ে। দশতলা, ন’তলা বড় বড় বাড়িগুলো যদি গগনপুরের আকাশ ছুঁয়ে দেয়! গিলে ফেলে আকাশটাকে! রাজামশাই চিন্তায় দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। তুফানও মেঘেদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে। কোনও ফল হচ্ছে না। তুফান তো আকাশ, মেঘ বাঁচাতেই চাইছে। মেঘেরা কি রেগে গেল তুফানের ওপর?” (Short Story)
৩
মন্ত্রীমশাই ভুল বলেননি। গগনপুরের সীমানায় এসে দেখল তুফান। পালকি করে এসেছে ও। গগনপুরের সীমানার বাইরে সুন্দর রোদ। বৃষ্টি শুধুই গগনপুরে হচ্ছে। গগনপুর রাজ্যের সীমানা বিরাট উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। সেই পাঁচিলের কাছে যাওয়ারও উপায় নেই। লোহার কাঁটা দিয়ে ঘেরা একটা জায়গা রয়েছে পাঁচিলের সামনে। অন্য রাজ্য থেকে যাতে চোর, ডাকাত বা দুষ্টু লোকেরা, না ঢুকতে পারে তার জন্যেই এই ব্যবস্থা। এই রাজ্যে ঢুকতে হলে রাজামশাই-এর অনুমতি নিয়ে পাঁচিলের একটা দরজা খুলে দেওয়া হয়। তখন রাজ-অতিথিরা আসতে পারেন। (Short Story)
নাহ! পালকি থেকে না নামলে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তবে একটা বিরাট উঁচু বাড়ি, প্রায় দশতলা, পাঁচিলের বাইরে দেখা যাচ্ছে। রাজমিস্ত্রিরা কাজ করছে। বাড়িটা এত উঁচু, দেখে মনে হচ্ছে আরেকটু হলেই আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। মেঘেদের কাছে পৌঁছে যাবে। পালকি থেকে নামতে যাচ্ছিল তুফান। (Short Story)
“তুমি যে বৃষ্টিতে ভিজে যাবে!”
পালকির এক বেয়ারা তুফানকে বারণ করে।
“আমার মেঘ-বন্ধুদের নিশ্চয়ই কোনও বিপদ হয়েছে। আমায় জানতেই হবে।”
তুফান নেমে পড়ে। (Short Story)
“আপনারা পালকির ভেতরেই বসুন। কেউ নামবেন না। গগনপুরের আকাশ বাঁচানোর দায়িত্ব আমায় দিয়েছেন রাজামশাই। আমি একাই নামব।” (Short Story)
পালকির আরেক বেয়ারা তুফানকে ছাতা এগিয়ে দিয়ে ওর সঙ্গে আসতে যাচ্ছিল। তুফান বারণ করে। (Short Story)
লোহার কাঁটা বসানো রয়েছে পাঁচিলের ধার বরাবর। এক চিলতে সরু ফাঁক দুটো কাঁটার মধ্যে। আকাশে কালো মেঘ। বৃষ্টি থামার কোনও নাম নেই। বৃষ্টিতে চারিদিক ধোঁয়া-ধোঁয়া।
লোহার কাঁটা বসানো রয়েছে পাঁচিলের ধার বরাবর। এক চিলতে সরু ফাঁক দুটো কাঁটার মধ্যে। আকাশে কালো মেঘ। বৃষ্টি থামার কোনও নাম নেই। বৃষ্টিতে চারিদিক ধোঁয়া-ধোঁয়া। একটা জিনিসে নজর আটকে যায় তুফানের। পাঁচিলের গায়ে যে দরজাটা রয়েছে তাতে একটা নতুন তালা। অথচ রাজামশাই বলেছেন গত ছ’মাসে বাইরের কোনও মানুষ গগনপুরে ঢোকেনি। কদিন ধরে বৃষ্টিও হচ্ছে। তালায় জং ধরে যাওয়ার কথা। অথচ তালা একেবারে নতুন! তার মানে এই তালা নিয়মিত খোলা হয়। কিন্তু কে খোলে? (Short Story)

পাঁচিলের গায়ে একটা ইয়া বড় গর্ত। চোখ রাখে তুফান। কষ্ট করে দেখতে হয়। একটা আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা লোক রাজমিস্ত্রিগুলোকে কিছু নির্দেশ দিচ্ছে। গগনপুরের দিকে আঙুল উঁচু করে কিছু দেখাচ্ছে। গগনপুরের আকাশের দিকেই আঙুল লোকটার। কে লোকটা? গগনপুরের শত্রু! গগনপুরেই থাকে! আর তালা খুলে রোজ অন্য রাজ্যে যাতায়াত করে। গগনপুরের আকাশ নষ্ট করে দিতে চাইছে সে! হঠাৎ তুফান দেখল একটা পাখি উড়তে উড়তে সেই কালো কাপড়ে ঢাকা লোকটার গায়ে বিষ্ঠা ত্যাগ করল। লোকটা বিরক্ত হয়ে কালো কাপড়টা খুলে ফেলে। এ কি! এ যে গগনপুরের কোতোয়াল! গগনপুরের সীমানা পার করে গগনপুরের ক্ষতি করছে! রাজামশাই-এর সারল্যের সুযোগে নিশ্চয়ই এই রাজ্যের সীমানার চাবি নকল করেছে লোকটা! তারপর অমন আকাশছোঁয়া বাড়ি তৈরিতে সাহায্য করছে! একটা সাদা পাথর পড়েছিল তুফানের পায়ের কাছে। ওটা তুলে লোকটার দিকে ছুড়ে দিতে গেল তুফান! (Short Story)
“আমাদের মুক্ত কর তুফান! আমরা তোমার মেঘ-বন্ধু। একজন দুষ্টু লোক আমাদের একটা পুঁটলিতে ভরে রেখেছে। শুধু দুঃখী মেঘকে ছেড়ে। ওরাই তোমাদের আকাশে এমন বৃষ্টি এঁকে দিয়েছে। আমাদের বাঁচাও তুফান। ওরা গগনপুরের আকাশ নষ্ট করে দেবে।”
তুফান দেখে ওর হাতের সাদা পাথরটা একটা ভিজে পুঁটুলি। মেঘবন্ধুরা ওটা থেকে কথা বলছে। (Short Story)
৪
“আপনারা গগনপুরের আকাশ বিক্রি করে দিচ্ছিলেন! পুরোহিতমশাই, কোতোয়াল, মন্ত্রী তোমরা সকলে মিলে এমন একটা জঘন্য কাজ করছিলে!”
রাজসভায় পাঁচজন মাত্র লোক। রাজা, মন্ত্রী, কোতোয়াল, পুরোহিতমশাই আর তুফান। সেদিন ফিরে গিয়ে রাজাকে সবটা জানিয়েছিল তুফান। রাজার লোকেরা কোতোয়ালকে ধরে নিয়ে আসে। মেঘেদের মুক্তি দিয়েছে তুফান। গগনপুরের আকাশে ঝলমল করছে রোদ। (Short Story)
আরও পড়ুন: লীলা মজুমদারের গল্প: পেয়ারা গাছের নীচে
“কেন এমন বিশ্বাসঘাতকতা করলে তোমরা?”
রাজামশাই রাগে রক্তবর্ণ।
“আমাদের ক্ষমা করে দিন রাজামশাই। গগনপুরের বাইরে আঁধারপুর। ওখানকার রাজা আমাদের দিয়ে জোর করে এই কাজ করিয়েছে। ওখানে বিরাট বিরাট বাড়ি তৈরি হচ্ছে। আমরা যদি গগনপুরের আকাশে ওদের বাড়িগুলো না ছুঁতে দিতাম, ওরা আমাদের গগনপুর রাজ্য ধ্বংস করে দিত।” (Short Story)
“এই গগনপুরে আমি রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত একতলা রেখেছি, আমি আজই আঁধারপুরের সব উঁচু বাড়ি যা গগনপুরের আকাশ ছুঁয়েছে, ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করব। আর তোমাদের ও গর্দান নেব। তোমার মেঘবন্ধুদের তুমি মুক্ত করেছো তো তুফান?”
রাজামশাইয়ের রাগ আর থামে না। (Short Story)

“করেছি। আপনি শান্ত হোন রাজামশাই। ওদের ছেড়ে দিন। ওই বাড়িগুলো আপনি ধ্বংস করতে পারবেন না। কারণ ওই বাড়িগুলো শুধু আকাশের সীমানা ছুঁয়েছে। ওরা কিন্তু আঁধারপুরের মাটিতেই আছে। চারিদিকে যদি আকাশছোঁয়া বাড়ি হয়, কতদিন আপনি গগনপুরকে বাঁচিয়ে রাখবেন এসবের থেকে? এভাবে ধ্বংস করে নয়, আপনি আঁধারপুরের রাজার সঙ্গে কথা বলে তাকে বুঝিয়ে বলুন, আকাশ না থাকলে পৃথিবীর কোনও রাজ্য বাঁচবে না। আর আমি আজই বাড়ি যেতে চাই।” (Short Story)
রাজামশাই তুফানের প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেন না। তুফান বেরিয়ে আসে রাজপ্রাসাদ থেকে। আজ সকাল থেকে অনেক বার মেঘবন্ধুদের ডেকেছে ও। ওরা আকাশ থেকে মুখ বাড়াচ্ছে। কিছুতেই মাটিতে নামছে না। তুফান বুঝেছে ওরা ভয় পেয়েছে। আর হয়তো কোনওদিন আসবে না পৃথিবীর বুকে। তুফানের কান্না পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আবার ওদের ডাকবে তুফান। বাড়ির দিকে রীতিমতো দৌড়তে শুরু করে ও। (Short Story)
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বসত্ব সংরক্ষিত
আকাশবাণী কলকাতার ট্রান্সমিশন এক্সিকিউটিভ। পেশাগত সূত্রে দীর্ঘদিন লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। পরিবার আর কাজের বাইরে অক্ষর আর প্রকৃতি অবসরের সঙ্গী।