(Short Story)
সান্ধ্যকালীন আপিস ফেরতা ভিড় ঠাসা সরকারি বাস। হঠাৎই এক মহিলা কণ্ঠের আর্তনাদ সবাইকে চমকে দেয়, ‘আমার ফোওওওওন?’
সহযাত্রীদের মধ্যে মুহূর্তে সাড়া পড়ে যায়, ‘পকেটমার?’
‘সাবধান!’
কেউ বলল, ‘আমার ফোনটা কোথায় গেল?’
তার সঙ্গিনী বলে ওঠে, ‘এই তো এখানে, চিৎকার করছ কেন? শুধু প্যানিক করা স্বভাব!’
বাসের পিছনের সিট থেকে একজন বলে ওঠে, ‘আই ফোন নাকি?’ (Short Story)
আরও পড়ুন: টু প্লাস টু: সৌরভ হাওলাদার
ইত্যাদি নানা উত্তর প্রত্যুত্তর ভেসে আসতে শুরু করল। এই হট্টগোলের মধ্যেও কিছু কিছু যাত্রী নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে, আবার অনেকেই নিজের নিজের মোবাইল ফোনের ভেতর মগ্ন। চারপাশে কী শোরগোল চলেছে, তার বিন্দুমাত্র আভাসও যেন এদের স্পর্শ করতে পারে না। (Short Story)

ফোন হারিয়ে আর্তনাদ করেছিল উমা, মাঝবয়সী গৃহবধূ, দীর্ঘ ভ্রমণের পর ফিরছে, আলুথালু অবিন্যস্ত পোশাক, চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। উমার সমস্যা অনেক গভীর! বেশ কিছুদিন সিমলা–কুলু মানালি ঘুরে উমা, ভবদেব বাড়ি ফিরছে। সঙ্গে তাদের ছেলে, মেয়ে, মা সহ, ভাই বনদেবের স্ত্রী ও কন্যাও আছে। বনদেব সীমান্ত রক্ষীর কাজ করে, মানালিতে ছুটি কাটিয়ে আবার নিজের কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছে। (Short Story)
বেড়ানোর রেশ কাটেনি, তার মধ্যে এই ফোন হারানো! উমা নিজে নিজেই গজগজ করতে থাকে, ‘সবাই মিলে বেড়াতে এসেছি, শুধু আমাকেই খাটতে হয়। সকলে কী খাবে? কী পরবে? কী নেবে? কী গায়ে দেবে? সব আমাকেই ভাবতে হবে? কেন? দাসী বাঁদি আমি একাই?’ (Short Story)
কথাগুলো স্বগতোক্তি হলেও, বোঝা যায় ভবদেবের উদ্দেশ্যে বলা। ভবদেবও চুপ করে থাকার মানুষ নয়, ‘মূল্যবান জিনিস, একটু সাবধানে রাখতে হয়।’ (Short Story)
গরম তেল-এ ফোড়ন পড়ল যেন, ‘সারাদিন ধরে এটা চাই, ওটা চাই, জামা কোথায়? জাঙিয়া কোথায়? এসব বলে বলে মাথা খেয়ে ফেললে সাবধান হওয়া যায়?’ উমা ঘাড় ঘুরিয়ে জা-এর সমর্থনের জন্য তাকায়। কতকটা বাসের ভিড়ের আড়াল ডিঙিয়ে বনদেবের স্ত্রী শান্তি, চোখের ইশারায় ওকে চুপ করতে বলে, ‘বাসের মধ্যে এসব বলে কী লাভ? বাড়ি ফিরে দেখা যাবে।’ (Short Story)
“বাসের যাত্রীরা কেউ কেউ ফোন থেকে চোখ সরিয়ে, জীবনের রঙ্গমঞ্চে সরাসরি ঘটে যাওয়া নাটকটি উপভোগ করছে।”
উমা আবার আর্তনাদ করে ওঠে, ‘আমার হাত থেকে কখনও কিছু হারায়? বল? গত কয়েকদিন ধরে আমায় কীভাবে পাগল করেছে, দেখেছিস তো। আমার কি মাথার ঠিক আছে?’ (Short Story)
ভবদেব আবার ফিসফিস করে বলে, ‘নগদ পনেরো হাজারের ফোন।’
‘তুমি এখন টাকা নিয়ে খোঁটা দেবে?’ গলার জোরে পারিবারিক আব্রু ভেঙে পড়ছে। ‘আমার বাবা গরীব! তাই তোমার এত লম্বা বুকনি। নিয়ে গেছো তো স্লিপারে, কত করে বললাম, এসি-তে টিকিট কর। এসি-তে হলে তো এত ভিড় হত না। ঠেলাঠেলিতে হাতিয়ে তো নিয়ে যাবেই।’ (Short Story)
উমা যতটা চড়ায় ওঠে, ভবদেব গলা খাদে নামিয়ে বলে, ‘স্লিপারে সব চোরেরা যায়, কে বলল তোমায়? জিনিসপত্র গুছিয়ে না রাখতে পারলে, এসি কেন? প্লেন থেকেও তোমার ফোন হারাত। সারাদিন তো ফোন নিয়ে খুটুর খুটুর! তাও হারায় কী করে?’ (Short Story)
ইদানিং সমাজমাধ্যমে এক বন্ধু হয়েছে। লোকটির আসল নাম জানে না। প্রোফাইলের নাম ‘খড়ের গাদায় সূঁচ’, নিজের কোনও ছবি দেয়নি। খুব মজার কথা লেখে, ওর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে ভালই লাগে উমার।
ইদানিং সমাজমাধ্যমে এক বন্ধু হয়েছে। লোকটির আসল নাম জানে না। প্রোফাইলের নাম ‘খড়ের গাদায় সূঁচ’, নিজের কোনও ছবি দেয়নি। খুব মজার কথা লেখে, ওর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে ভালই লাগে উমার। ভবদেব এই সুযোগে সেই কথাও হাটের মাঝে বলবে, ভাবতে পারেনি। উমার দু’চোখ দিয়ে জলের ধারা বইতে থাকে। ওদের মেয়ে বীণা বারো ক্লাস দিয়েছে। যুযুধান মা বাবাকে দেখে, কাকিমা শান্তির ফোন থেকে কাকা বনদেবকে ফোন করে। (Short Story)
বনদেব সারাদিনের ডিউটি সেরে নিজের ব্যারাকে এসেছে। শান্তির ফোন দেখে উৎসাহ নিয়ে ধরে, ‘পৌঁছৈ গেছো?’
উল্টোদিকে বীণার গলা, ‘না কাকু, আমি বলছি, বীণা। এখনও বাসে আছি।’
‘আচ্ছা পৌঁছে একটা মেসেজ করে দিস। অত রাতে হয়তো ফোন বন্ধ থাকবে।’
“বাসের যাত্রীরা কেউ কেউ ফোন থেকে চোখ সরিয়ে, জীবনের রঙ্গমঞ্চে সরাসরি ঘটে যাওয়া নাটকটি উপভোগ করছে। একজন টিপ্পনী কাটে, ‘ট্রেন-এ চুরি হয়েছে, জি-ডি করতে হলে হাওড়া আর-পি-এফ থেকে করতে হবে।”
‘কাকু একটা কথা জানার ছিল।’
বীণা মায়ের ফোন হারনোর ঘটনা জানিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, জানতে চায়। বনদেব নিয়ম-কানুন সম্পর্কে কিছু তথ্য জানে, ‘প্রথমেই ফোন কোম্পানিকে বলে, সিম লক করতে হবে। তারপর থানায় একটা জি-ডি অর্থাৎ জেনেরাল ডাইরি করতে হবে, তারপর সেই জি-ডি-র কপি নিয়ে ডুপ্লিকেট সিম নিতে হবে। নতুন সিম নেওয়ার প্রায় পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর ওটা অ্যাকটিভেট হবে।’ (Short Story)
বনদেবের কাছ থেকে পদ্ধতি শুনে মা-কাকিমাকে বলে। থানা পুলিশের গল্প শুনে উমা আবার উচ্চস্বরে কেঁদে ওঠে। ভবদেব পুলিশের নাম শুনে একটু বিরক্ত হয়ে বলে, ‘নাও এবার ঠেলা সামলাও, চোদ্দবার থানা পুলিশ কর।’ (Short Story)
বাসের যাত্রীরা কেউ কেউ ফোন থেকে চোখ সরিয়ে, জীবনের রঙ্গমঞ্চে সরাসরি ঘটে যাওয়া নাটকটি উপভোগ করছে। একজন টিপ্পনী কাটে, ‘ট্রেন-এ চুরি হয়েছে, জি-ডি করতে হলে হাওড়া আর-পি-এফ থেকে করতে হবে।’ (Short Story)

নিজেদের কথার ভিতর বাইরের লোক ঢুকে পড়ায় উমা অপ্রস্তুত, ভবদেব ভ্রূ কুঞ্চন করে, ‘আমাকেই ছুটতে হবে।’
উমা বলে ওঠে, ‘না, আমি হারিয়েছি। আমিই যাব।’
বাসযাত্রীটি সম্ভবতঃ সব জানে। আবার আগবাড়িয়ে বলে ওঠে, ‘ফোন যার নামে কেনা হয়েছিল, তাকেই রিপোর্ট করতে হবে।’
দর্শকদের কথা বলতে দেখে, আরও উৎসাহী পরামর্শদাতা এগিয়ে আসে, ‘ফোনের বিল, বাক্স আছে তো? ওগুলো ছাড়া রিপোর্ট নেবে না।’ (Short Story)
আরেক যাত্রী বলে, ‘আই-এম-ই-আই নম্বর লাগবে। ওটা পেলে, পুলিশ ফোন ট্র্যাক করে ফেলবে। ওই নম্বর ছাড়া রিপোর্ট নিতে চায় না। একবার আমার ভগ্নীপতির ফোন চুরি যায়, তাই নিয়ে কী কান্ড! সেই সিম চলে যায় এক ডাকাত দলের কাছে…’ (Short Story)
“কেউ একজন জিজ্ঞাসা করে, ‘কোনও বোম ব্লাস্ট কেস-এ আপনার ভগ্নীপতিকে কি পুলিশ ধরেছিল?”
রহস্যের গন্ধ পেয়ে সহযাত্রীদের উৎসাহ বেড়ে যায়। ‘এই চোরাই ফোন শুনেছি রিমোট বোমা ফাটানোর কাজে ব্যবহার হয়। তখন আসল মালিককে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়।’
কেউ একজন জিজ্ঞাসা করে, ‘কোনও বোম ব্লাস্ট কেস-এ আপনার ভগ্নীপতিকে কি পুলিশ ধরেছিল?’
সবজান্তা মানুষটি একটু চাপে পড়ে যায়, জ্ঞান দিতে গিয়ে যে, বুমেরাং নিজেরই দিকে ফিরে আসবে, বুঝতে পারেনি, ‘না না, ওর কাছে তো ডকুমেন্ট ছিল। ও সবসময় বিলের ছবি তুলে ফোনে রেখে দিত।’ (Short Story)
‘কিন্তু ফোনটাই যখন নেই, তখন ছবি কি চোর পাঠিয়ে দিয়েছিল?’
বাসের মধ্যে একটা হাসির হাওয়া ঘুরে যায়। চাপে পড়া লোকটি হারানো জমি ফিরে পেতে, আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে, ‘ফোন সিঙ্ক করা থাকলে, গুগুল থেকে সব ছবি ফেরত পাওয়া যায়।’
এসবের ভেতর কন্ডাকটর এসে ভবদেবের কাছে টিকিট চায়। ভবদেব উদ্বেগের মুখ নিয়ে বলে, ‘দেখছেন, ফোন হারিয়ে
গেছে!’
‘তার সঙ্গে টিকিটের কী সম্পর্ক? ইউ-পি-আই লাগবে না, ক্যাশ-এ দিন।’
‘আমরা সাত জন আছি, প্রায় শেষ অবধি যাব।’
‘সেই জন্যই বলছি, ঝামেলাটা মিটিয়ে নিন।’ (Short Story)
ভবদেবের হাতে একটা ঠান্ডা পানীয়র বোতল ছিল। অনেকক্ষণ ধরে একটু একটু করে খাচ্ছিল। কন্ডাকটরের কথায় কী হল, হঠাৎ করে ফাঁকা বোতলটা মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে। কন্ডাকটর দেখে, ঝাঁজিয়ে ওঠে, ‘এটা নোংরা ফেলার জায়গা? তুলুন। পাবলিক প্লেস-এ চলাফেরা করার সভ্যতা শেখেননি।’
আরও কয়েকজন সহযাত্রী সায় দিয়ে ওঠে, ‘ফোন হারিয়ে মাথার ঠিক নেই।’ (Short Story)
আরও পড়ুন: চুলচেরা: সৌরভ হাওলাদার
‘সারা পৃথিবী একদিন প্লাস্টিকের তলায় ডুবে যাবে।’
‘রাস্তাঘাটগুলো যেন আবর্জনার স্তূপ!’
‘ঘেন্না ধরে গেল।’
এসবের মধ্যে কন্ডাকটর আবার বলে, ‘বোতলটা তুলে নিন। আবার জানালা দিয়ে বাইরে ফেলবেন না।‘
উমা পাশ থেকে স্বামীকে খোঁচায়, “যাও না, বোতলটা তুলে আনো। সব জায়গায় তেজ দেখানো স্বভাব হয়ে গেছে।”
“হয়েছে তো তোমার জন্য” ভবদেব জবাব দিয়ে, আসন থেকে উঠে পড়ে। ততক্ষণে বোতলটা অনেকটা দূরে গড়িয়ে গেছে।
উমা নিজের মনে বলে চলে, ‘সারা জীবন এমনি করে জ্বালিয়ে এল। কোথাও একটুও শান্তিতে থাকতে দেবে না। আমিই একদিন যেদিকে দুচোখ যায়, চলে যাব। নিজের তেজ নিয়ে তখন থাকবে!’ (Short Story)
ফাঁকা আসন দেখে, অন্য একটি লোক টুপ করে সেখানে বসে পড়ে। লোকটিকে বসতে দেখে, উমা চুপ করে যায়। (Short Story)
“পাশের লোকটি বলে, ‘খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজা! আপনার ফোনে, একবার কল করে দেখেছেন?’”
ভবদেব বোতল কুড়িয়ে ফিরে এসে দেখে আসন দখল হয়ে গেছে। বসে থাকা লোকটি বলে, “অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি, একটু বসলাম। কেমন?” (Short Story)
ভবদেব নির্বিকার মুখে ফাঁকা বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। উমার আবার খুব কান্না পেতে থেকে। পাশে বসা একজন অপরিচিত মানুষের সামনে ভাল করে কাঁদতেও পারছে না, জোর করে জানালার বাইরে মুখ ঘুরিয়ে রাখে। (Short Story)
মাঝেমাঝে বাসস্টপ আসছে কন্ডাকটর যাত্রীদের ওঠানামা তদারক করছে, আবার অন্য যাত্রীদের টিকিট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। কিছু যাত্রী নামছে, নতুন করে উঠছেও কিছু। বাসে থেকে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী দায়িত্ব নিয়ে, নতুন সহযাত্রীদের মোবাইল হারানোর গল্পের আপডেট দিয়ে দিচ্ছে। ঘটনার ধারাবিবরণীতে প্রতিবার কিছু বদল হচ্ছে। শুরুতে ছিল ট্রেনে লুঠ হয়েছে, তারপর হাওড়া স্টেশনে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে। কেউ বলল, ‘দেখুন বাসেই হয়তো পকেটমার ছিল।’ (Short Story)

এতক্ষণ উমা ফোনের শোকে বিহ্বল ছিল, পাশে অন্য একটি লোক বসাতে, নিজের বেশ সম্পর্কে একটু সচেতন হয়। কামিজ টেনে ওড়না ঠিক করে, চুলগুলো একটু গুছিয়ে নেয়। পাশের লোকটি বলে, ‘খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজা! আপনার ফোনে, একবার কল করে দেখেছেন?’ (Short Story)
দাঁড়িয়ে থাকা অন্য এক সহযাত্রী উত্তর দেয়, ‘ব্যাটারা নেওয়ার পরেই সিম ফেলে দেয়।’
‘তাও একবার ফোন করে দেখুন।’
ভবদেব দাঁড়িয়ে থেকে, নিজের ফোন হাতে নিয়ে, ডায়াল করে, তারপর বেশ উজ্জ্বল হয়ে বলে, ‘রিঙ হচ্ছে।’
ফোনের অন্যপাশে কেউ ‘হ্যালো’ বলাতে, ভবদেব ফোনটা উমার হাতে তুলে দেয়।
“উমার হঠাৎ মনে পড়ে লোকটি ঠিক কী বলল? ‘খড়ের গাদায় সূঁচ?’ এই নামই তো সেই সমাজ মাধ্যমের বন্ধুটির, যে ইদানিং ওকে সঙ্গ দেয়!”
উমা কান্না ধরা গলাতে কথা বলতে থাকে। ওদের ট্রেনের কামরায় এক সহযাত্রী ফোনটা কুড়িয়ে পেয়েছে। সে এখন তার বাড়ি পৌঁছে গেছে। ওরা পরদিন সকালে, যদি ওর বাড়িতে আসে, ফোন নিয়ে যেতে পারে। (Short Story)
ফোনটা রেখে উমা, হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে, দুই হাত কপালে ঠেকিয়ে বলে, ‘আমি তখন থেকে মা-কে ডাকছি। কাল সকালেই যাব।’ (Short Story)
ভবদেব বলে, ‘তোমায় যেতে হবে না। আমি গিয়ে নিয়ে আসব।’
উমা বলে, ‘না আমরা দু’জনেই যাব।’
অন্য দিক থেকে বীণা, শান্তি, ভবদেবের মা খুশিতে হইহই করে ওঠে।
বাসের অন্যান্য যাত্রীদের আর কথা বলার আগ্রহ থাকে না, প্রত্যেকে নিজের মতো মোবাইল ঘাঁটতে শুরু করেছে। উমার পাশে বসা লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে ভবদেবকে বসতে বলে, ‘আপনি বসুন, আমার স্টপ এসে গেছে।’ (Short Story)
বাস গন্তব্যের কাছে চলে আসছে, ভিড় এখন অনেকটাই কম। উমার হঠাৎ মনে পড়ে লোকটি ঠিক কী বলল? ‘খড়ের গাদায় সূঁচ?’ এই নামই তো সেই সমাজ মাধ্যমের বন্ধুটির, যে ইদানিং ওকে সঙ্গ দেয়! এই কি সে?
বাস গন্তব্যের কাছে চলে আসছে, ভিড় এখন অনেকটাই কম। উমার হঠাৎ মনে পড়ে লোকটি ঠিক কী বলল? ‘খড়ের গাদায় সূঁচ?’ এই নামই তো সেই সমাজ মাধ্যমের বন্ধুটির, যে ইদানিং ওকে সঙ্গ দেয়! এই কি সে? ঠিক ভাবে দেখাই হল না। ভবদেব বসার পর, উমা ওর দিকে একটু ঘেঁষে আসে। ‘ওই ভদ্রলোককে ধন্যবাদ জানানো হল না।’ (Short Story)
ভবদেব কোনও জবাব দিতে পারে না।
কন্ডাকটর এগিয়ে এসে বলে, ‘এবার সাতটা টিকিট করে ফেলুন। আপনাদের স্টপ-ও এসে গেল।’
ভবদেব পার্স বার করে।
পরিবারসহ বাসের যাত্রীদের মধ্যেও যেন একটা স্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাজপথের বুক চিরে বাসটি এগিয়ে যেতে থাকে। কিছুক্ষণ আগে বিভ্রান্ত অসহায় মানুষগুলোকে অত্যাধিক উত্তেজিত হতে দেখা গিয়েছিল, তারাই এখন অনেক নিশ্চিন্ত হয়ে একমনে ফোন ঘেঁটে চলেছে। শুধু ফোন-হারা উমা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে। (Short Story)
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
এক সর্বগ্রাসী হাঁ-করা চোখ নিয়ে, কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌরভের। যা দেখেন, তাই মনে হয় ছুঁয়ে দেখলে ভালো হয়। কিছুটা প্রকৌশল, কিছুটা ছবি আঁকা, ভাষা শিক্ষা, থিয়েটার এমন আরও অনেক কিছু। এভাবেই ভেসে চলা। শৈশবে স্কুল পত্রিকায় হাত পাকিয়ে রেল স্টেশনে দেওয়াল পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনের পাতা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্যিক পত্রিকায় পৌঁছনো। জীবিকার তাগিদে কম্পিউটারের সাথে সখ্য। পাশাপাশি কয়েক মাইল ‘কোড’লেখা চলে সমান্তরাল। কর্পোরেটের হাত ধরে পৃথিবীর কয়েক প্রান্ত দেখে ফেলার অভিজ্ঞতা। সবই উঠে আসে লেখায়। আপাততঃ কলকাতা ও ঢাকা মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা সাত।