(Short Story)
শ্যামল নিজের অফিস থেকে বেরিয়ে মাত্র সাত মিনিটে রাধিকার অফিসের সামনে হাজির হল। কপাল ভাল যে ট্র্যাফিক তখনও হাল্কা ছিল। রাস্তার ধারে গাড়ি পার্ক করে ড্যাশবোর্ডের উপরে রাখা মোবাইলটা নিয়ে সে ডায়াল করতে যাচ্ছিল, দেখল দূর থেকে রাধিকা প্রায় ছুটতে ছুটতে তার গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। রাধিকাকে দেখে সে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে খানিকটা এগিয়ে গেল সামনে। হাতে সময় একেবারেই নেই। যতটা সময় বাঁচানো যায়। (Short Story)
হাঁপাচ্ছিল রাধিকা। গাড়িতে উঠে সিট-বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে সে রেগেমেগে জিজ্ঞাসা করল, ‘আর্জেন্ট মিটিং ছেড়ে আসতে হল। সক্কাল সক্কাল এ সব আর ভাল লাগে না, what is this new tamasha now?’ (Short Story)

‘আমি কি জানি?’, শ্যামলও প্রচন্ড ঝাঁঝিয়ে উঠল, ‘বাড়ি না গিয়ে কী করে বলব?’
‘You and your baba… really! কী হয়েছে এবার মনে হয়?’, রাধিকা জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাকে কে খবর দিল?
‘আরে, অফিসে পৌঁছে সবে গাড়ি পার্ক করে নামছি, দেখি আমাদের গ্রাউন্ড ফ্লোরের বান্টির ফোন। বলল, ‘‘আঙ্কল তোমাদের ফ্ল্যাট থেকে প্রচন্ড গোঙানোর শব্দ আসছিল আর ব্ল্যাকি খুব চিৎকার করছিল। আমি গিয়ে বেল বাজিয়েছি কিন্তু কোনও সাড়া পেলাম না। তাই ভাবলাম তোমাকে ফোন করি’’ (Short Story)
সব শুনে রাধিকা বলল, “You should have gone home straight from your office… শুধু শুধু এতটা ঘুরে, আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনও মানে আছে? আমি আলাদা চলে যেতাম। সময়ও বাঁচত!’’ (Short Story)
মাস ছয়েক আগে শ্যামল, বাবাকে কোন্নগর থেকে কলকাতায় নিয়ে আসে। কোন্নগরে ওদের নিজেদের বাড়ি। শ্যামলের ছেলেবেলা কেটেছে কোন্নগরেই। স্কুলের পড়াশোনা নবগ্রাম বিদ্যাপীঠ আর গ্র্যাজুয়েশন কোন্নগর হীরালাল পাল কলেজ থেকে, তারপর আই.আই.এম জোকা। এর পরে মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানির চাকরি। সেই চাকরি সূত্রে কলকাতায় থাকতে হয়, কোন্নগরের পাট শ্যামল অনেক দিন আগেই তুলে দিয়েছিল। ট্রেনে ভিড় ঠেলে রোজ ওর পক্ষে অফিস যাওয়া সম্ভব ছিল না। শ্যামলের বাবা– প্রমথেশ দত্ত, পোর্ট ট্রাস্টে চাকরি করতেন। (Short Story)
অনেক দিন হল রিটায়ার করেছিলেন। কোন্নগরের এই বাড়ি তাঁর কষ্ট করে বানানো। বাড়ি তৈরি করতে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করে তিলেতিলে কোনওরকম পরিবারের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছিলেন।
অনেক দিন হল রিটায়ার করেছিলেন। কোন্নগরের এই বাড়ি তাঁর কষ্ট করে বানানো। বাড়ি তৈরি করতে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করে তিলেতিলে কোনওরকম পরিবারের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছিলেন। এই বাড়ি যে তিনি কখনও ছেড়ে যাবেন সেটা ভাবতেই পারতেন না! (Short Story)
কিন্তু গত বছর স্ত্রী বাণীর মৃত্যু তাঁর সমস্ত ভাবনা, পরিকল্পনা উলটে পালটে ছারখার করে দিয়েছিল। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের সংসার শুধু ভাঙলই না, তার ভোল পুরোপুরি পালটে গেল। যে মানুষটা এই বাড়ির সমস্ত কিছুই একটু একটু করে নিজের মতন করে সাজিয়েছিলেন, সেই মানুষটির অবর্তমানে বাড়িটার চেহারা কয়েকদিনেই বদলে গিয়েছিল। (Short Story)
স্ত্রীর অভাব প্রমথেশ প্রতি মুহূর্তে অনুভব করছিলেন। নিজে একটু ভাবুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন এবং তাই তাঁকে সামলাতেন বাণী। স্ত্রীকে ছাড়া তিনিও এক পা চলতে পারতেন না। আর সেই জন্যই প্রায়শই তাঁকে শুনতে হত, ‘‘আমি না থাকলে তো তুমি এ বাড়ি দু’দিনে আস্তাকুঁড় বানিয়ে দেবে!’’ (Short Story)
“নিঃসঙ্গতা আর একাকিত্বের মধ্যে খুব সূক্ষ্ম তফাৎ— সেটা অনেকে বোঝে না, কিংবা বুঝলেও সেটা জাগতিক নানা রসদ সামগ্রী দিয়ে দু’টিকেই ভরে দিতে চায়।”
অনেকটা তাই হয়েছিল। তবুও শ্যামল আর রাধিকা এসে সব ব্যবস্থা করে গিয়েছিল। রোজের প্রয়োজনে যা যা ব্যবস্থা করার করে দিয়েছিল। রান্নার একজন মাসি, কাপড় কাচা আর ঘর পরিষ্কার করতে আরেকজন। পাশের বাড়ির একটি ছেলে রোজ রাতে এসে শুত। এ ছাড়া ছাদের উপর বাণী যে বিরাট জায়গা জুড়ে বাগান করে গিয়েছেন, সেটার নিয়মিত দেখভাল করতে একজন মালিও রাখা হয়েছিল। কিন্তু এত সব হলে কী হবে। লোক রাখলেই তো সংসার ছন্দে ফিরে আসে না। নিঃসঙ্গতা আর একাকিত্বের মধ্যে খুব সূক্ষ্ম তফাৎ— সেটা অনেকে বোঝে না, কিংবা বুঝলেও সেটা জাগতিক নানা রসদ সামগ্রী দিয়ে দু’টিকেই ভরে দিতে চায়। (Short Story)
শ্যামল আর রাধিকার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। অজস্র টাকা উজাড় করে অনেক কিছু দিয়ে বাবার ভাঙা সংসার ভরে দিতে চাইলেও, তাঁর একাকিত্ব দূর করার রসদ কেনার ক্ষমতা তো তাঁদের ছিল না। তা ছাড়া ওদিকটা নিয়ে ভাবার সময়ও ওদের হয়তো ছিল না। (Short Story)
বাড়িতে তিন-চারজন লোক সংসারের কাজকর্ম করছে, অথচ একজন একদিন কামাই করলেই তাল কেটে যায়। বিশেষ করে রান্নার মাসি কামাই করলে তো কথাই নেই। এ ছাড়াও অন্যান্য অনেক সমস্যা ছিল।
বাড়িতে নানা ব্যবস্থা করে দিলেও, সমস্যার আর সমাধান হয় না ওভাবে। বাড়িতে তিন-চারজন লোক সংসারের কাজকর্ম করছে, অথচ একজন একদিন কামাই করলেই তাল কেটে যায়। বিশেষ করে রান্নার মাসি কামাই করলে তো কথাই নেই। এ ছাড়াও অন্যান্য অনেক সমস্যা ছিল। শুধু যে রান্নাবান্না বা বাড়ির কাজকর্ম নিয়ে সমস্যা তা তো নয়! কখনও প্রমথেশ ফোন করে জানান, বাড়ির ইলেক্ট্রিকের ফিউজ উড়ে গিয়েছে, কখনও আবার রান্নার মাসির বিকেলে ফোন আসে— ‘‘দাদাবাবু, কাকু আজ সারাদিন কিচ্ছুটি মুখে দেয়নি। ধুম জ্বর দুপুর থেকে।’’ ওমনি শ্যামলকে ছুটতে হত। মাস দু’য়েক গড়াবার পরে শ্যামল বুঝতে পারছিল এভাবে ঠিক চলবে না। এইরকম কয়েকদিন পরে পরে ছুটে আসাটা এক সমস্যা হয়ে উঠেছিল। নিউটাউন থেকে কোন্নগর— হুটহাট যাতায়াত করাও তো এক ঝামেলা। এতটা রাস্তা ড্রাইভ করাও বেশ সমস্যার। তাছাড়া রাতেবিরেতে কখনও যেতে হলে কোনা হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে যাওয়াটাও খুব একটা সুবিধের নয়। জিটি রোডও তথৈবচ। সেটা শ্যামল বুঝেছিল বেশ কিছুদিন আগে, একটা উইকেন্ড কাটাতে শান্তিনিকেতন যাওয়ার সময়। (Short Story)
শ্যামলের মনে হচ্ছিল বাবাকে নিজেদের কাছে নিয়ে এসে রাখা প্রয়োজন। ওর ঝামেলাটাও কমে। রাধিকা’র সঙ্গে সমস্যাটা নিয়ে কথা বলেছিল।
‘‘তুমি যে বাবাকে এনে এখানে তুলবে বলছ, কোথায় থাকবেন?’ রাধিকা জিজ্ঞেস করেছিল, ‘দুটো তো মাত্র বেডরুম। একটা আমাদের আর একটা পিঙ্কির।’’ (Short Story)
‘Pinki could share the room with her Dadu, অসুবিধে কোথায়?’, শ্যামল বলেছিল।
‘Have you lost it?’, চমকে উঠেছিল রাধিকা, ‘একটি একুশ বছরের মেয়ে… she would always need some privacy… তার প্রাইভেসি বলে কিছু থাকতে পারে, সেটা বোঝো তো?’ (Short Story)

‘‘পিঙ্কির দেশে ফিরতে ফিরতে আরও চার বছর, সেটা জানো তো?’’ একই সুরে শ্যামলও উত্তর দিয়েছিল, ‘‘ভুলে গেলে, এমনিতেই তো নেক্সট ছুটিতে ঘুরতে আসবে দেড় বছর পরে? ততদিন তো ঘরটা খালিই থাকছে।’’ (Short Story)
‘‘ঠিক আছে, তবে পিঙ্কি এলে কিছুদিনের জন্য বাবাকে আবার কোন্নগরে গিয়ে থাকতে হবে খেয়াল রেখো।’’ রাধিকা তাঁর মতন করে সমস্যার সমাধান করে দিয়েছিল। (Short Story)
‘‘হ্যাঁ, সেটা ছাড়া আর তো উপায় নেই, কী বলো? ২২০০ স্কোয়্যার ফিটের ফ্ল্যাট, দুটো বেডরুমেও বাবার জায়গা হবে না। গেস্ট রুম থাকা সত্তেও কিছু করা যাবে না। সেটা তো মোটামুটি তোমার জিম আর ফিটনেস সেন্টার। সত্যিই তো বাবা থাকবেনই বা কোথায়।’’, মুখ ব্যাজার করে বিদ্রুপের সুরে শ্যামল বলেছিল। (Short Story)
শ্যামলের গাড়ি পাড়ায় ঢুকতেই একটা চাপা গুঞ্জন উঠল। বাড়ির সামনে মানুষের জটলা, গাড়িটি এগিয়ে আসতে দেখে সরে দাঁড়াল। গাড়ি থেকে নামতেই, বান্টির বাবা বোসবাবু, শ্যামলের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘যাক এসে গিয়েছ। খুব চিন্তা হচ্ছে। দশ মিনিট আগেও মেসোমশাইয়ের ঘর থেকে একটা চাপা গোঙানোর শব্দ আসছিল। এখন তাও শোনা যাচ্ছে না। তোমাদের ফ্ল্যাটের বেল বাজিয়েও কোনও সাড়া পাইনি আমরা। শুধু ব্ল্যাকিটা চিৎকার করে চলেছে।’’ (Short Story)
ফ্ল্যাটের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে শ্যামল আর রাধিকা সিঁড়ির দিকে ছুটল। দোতলায় উঠে ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই ব্ল্যাকি রাধিকার গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। রাধিকা তার প্রিয় গ্রেট ডেনটিকে আগলে ধরাতে, শ্যামলের সঙ্গে বাকিরা ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকল। ড্রয়িংরুম ডিঙিয়ে একটা ছোট্ট করিডোর, যার শেষ প্রান্তে শ্যামল আর রাধিকার বেডরুম। আর তার ঠিক উলটো দিকেই আরেকটা বেডরুম, যার দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। (Short Story)
‘বাবা… বাবা…’, জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দিয়ে শ্যামল চিৎকার করে ডাকল, ‘‘বাবা দরজা খোলো!’’
সবাই চুপ করে শোনার চেষ্টা করছিল, দরজার ওপাশে কোনও সাড়া শব্দ হচ্ছে কী না। এক রহস্যময় নিস্তব্ধতা গোটা ফ্ল্যাটটিকে গিলে খাচ্ছিল।
‘‘ব্যাপারটা সুবিধের লাগছে না শ্যামল’’, বোসবাবু গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘‘দরজা ভাঙার ব্যবস্থা করতে হবে তোমাকে।’’
অবশেষে দরজা ভেঙে ঢুকতে হল। ঢুকেই চমকে উঠলেন সকলে। মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল প্রমথেশের নিথর শরীর। বিছানার সাইডে রাখা টেবিলে ঢাকা দেওয়া দুপুরের খাবার। জলের গেলাস মেঝেতে পড়ে। মেঝের খানিকটা জায়গা জলে ভিজে। সম্ভবত জল খেতে গিয়েছিলেন আর কোনও ভাবে বেসামাল হয়ে পড়ে যান। ঘরের জানালাগুলোও বন্ধ। (Short Story)
এক এক করে ফ্ল্যাটের আর পাড়ার কিছু কিছু মানুষ এসে ফ্ল্যাটে জড়ো হলেন। মুহূর্তের মধ্যে পাড়ায় এবং আশেপাশে রাষ্ট্র হয়ে যায় খবরটা।
এক এক করে ফ্ল্যাটের আর পাড়ার কিছু কিছু মানুষ এসে ফ্ল্যাটে জড়ো হলেন। মুহূর্তের মধ্যে পাড়ায় এবং আশেপাশে রাষ্ট্র হয়ে যায় খবরটা। যার ফলে শুধুমাত্র ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য একজন ডাক্তার নয়, থানাতেও ফোন করে জানাতে হয়েছিল শ্যামলকে। (Short Story)
থানার ওসি খাতায় কিছু নোট করতে করতে শ্যামলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘ওঁর কি কোনও অসুখ ছিল? ওষুধ-টষুধ খেতেন কোনও?’’ (Short Story)
‘‘না, অসুখ তেমন কিছু ছিল না’’, শ্যামল উত্তর দিল।
‘‘বাড়িতে কে কে থাকেন?’’
‘‘বাড়িতে মেম্বার বলতে তো আমি, আমার স্ত্রী আর বাবা।’’
‘‘এবং আমাদের মেয়ে আর ছেলে’’, রাধিকা তার সঙ্গে যোগ করল, ‘‘মেয়ে যদিও বিদেশে থাকে।’’
‘‘আর ছেলে? সে কোথায়?’’, ওসি আবার জিজ্ঞেস করলেন।
‘‘ছেলে মানে, ওই… আমাদের গ্রেট ডেন… ব্ল্যাকি’’ শ্যামল উত্তর দিল।
‘ওহ!’, ওসি সাহেব কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন শ্যামলের দিকে, তারপর বললেন, ‘আপনার বাবার ঘর এই দিনের বেলাতে ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। জানেন কি, কেন?’ (Short Story)
‘‘এটা ওঁর বরাবরের অভ্যেস”, শ্যামল উত্তর দিল, “রিটায়ার করার পর থেকেই – বিশেষ করে আমার মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই উনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। আপন মনে নিজের চিন্তার জগতে থাকতেন। প্রায় সময়েই দরজা বন্ধ করে রাখতেন।’’ (Short Story)
অফিসার ঘরটা ভাল করে দেখলেন। টেবিলের ওপর রাখা খাবার অনেকক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন তারপর প্রশ্ন করলেন।
‘‘But that’s not the answer to his question Shyamal’’, রাধিকা ওঁদের দু’জনের কথার মাঝে বলে উঠল, ‘আসলে কী জানেন অফিসার, উনি ব্ল্যাকিকে একদম পছন্দ করতেন না। যার ফলে ব্ল্যাকি আর ওঁর মধ্যে সম্পর্কটা ভাল ছিল না… Which is why he preferred to keep himself locked in his room when he was alone in the house.’’ (Short Story)
অফিসার ঘরটা ভাল করে দেখলেন। টেবিলের ওপর রাখা খাবার অনেকক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন তারপর প্রশ্ন করলেন, ‘‘আপনারা দু’জনেই তো সকাল সকাল বেরিয়ে যান। ফিরতে নিশ্চই অনেক দেরিও হয়?’’ (Short Story)
‘‘আজ্ঞে হ্যাঁ’’, শ্যামল উত্তর দিল।
‘‘তাহলে, প্রতিদিনই কি তিনি এই ঠান্ডা হয়ে যাওয়া খাবার খেতেন? নিজেকে এই দশ বাই বারো ঘরে বন্ধ রেখে দিতেন!’’
‘‘কী আর করা যাবে বলুন অফিসার’’, রাধিকা ভুরু কুঁচকে উত্তর দিল, ‘‘ওঁকে দেখলেই ব্ল্যাকি তেড়ে যেত… it was better for him to stay under lock & key.’’
কথাটা শুনে ওসি সাহেব মুচকি হাসলেন, ‘আশ্চর্য! আপনারা তাও অন্তত কুকুরটাকে বেঁধে রাখতে পারতেন?’

‘‘Excuse me Officer’’, রাধিকা রীতিমত রেগে গিয়ে বলল, ‘‘I’m sorry to say but please mind your language. Blacky is our family member… বাড়ির আর পাঁচজনের মতনই ও বাড়িতে ঘোরাফেরা করে। বেঁধে রাখার প্রশ্নই ওঠে না। তা ছাড়া ওরা বলতে পারে না। বেঁধে রাখলে ওরা কষ্ট পায়, হাঁপিয়ে ওঠে!’’ (Short Story)
হাঁপিয়ে? না কষ্ট পেয়ে? শ্যামলের বাবা কী ভাবে মারা গিয়েছিলেন সেটা আর জানা যায়নি। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে তার উল্লেখ ছিল না। (Short Story)
শ্যামলের, এই নতুন ফ্ল্যাটে আর ভাল লাগছিল না। মন উঠে গিয়েছিল। অনেকদিন ধরেই এই ফ্ল্যাট বিক্রি করে আরেকটা কোনও ফ্ল্যাটে শিফট করার কথা সে ভাবছিল। রাধিকাও তেমনটা চাইছিল। মাসকয়েকের মধ্যে ওরা পাশের ব্লকের একটা ফ্ল্যাটে শিফট করে যায়। প্রায় ৬০০০ স্কোয়্যার ফিটের ফ্ল্যাট। চারটে বেডরুম, হল, কিচেন আর সেপারেট পার্কিং-সহ সাউথ ফেসিং ফ্ল্যাটে জীবনটা আরও যেন আনন্দে ভরে উঠেছিল। (Short Story)
শ্যামলের পক্ষে হয়তো অত তাড়াতাড়ি এই ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হত না, কিন্তু কোন্নগরের বাড়িটার জন্য ভাল দামে খদ্দের পেয়ে গিয়েছিল। বিক্রি করে বেশ ভাল টাকা হাতে এসেছিল। তাছাড়া আগের ফ্ল্যাটটাও খুব ভাল দামে বিক্রি হয়। (Short Story)
এক দিন সকালে নতুন ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে চা খেতে খেতে রাধিকা বলেছিল, ‘‘এত সুন্দর ফ্ল্যাট, সবাই প্রশংসা করেছে। শুধু বাবা’ই দেখে যেতে পারলেন না।’’ (Short Story)
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
সুতীর্থ দাশ জন্ম হরিয়ানার শিল্পনগরী ফরিদাবাদে। পিতার কর্মসূত্রে বাল্য-কৈশোর কেটেছে উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাধিক শহরে। কলকাতায় এসে সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে শিল্পশিক্ষার পাঠ নেওয়ার পর বিজ্ঞাপন সংস্থায় চাকরি। দীর্ঘ ১২ বছর বিজ্ঞাপনের পেশায় থাকার পর, পেশা বদল করে আসেন বেসরকারি রেডিও প্রোগ্রামিং’য়ের চাকরিতে। সেখানে আরও ১৮ বছর কাটিয়ে বর্তমানে ভারতের এক স্বনামধন্য মিউজিক কম্পানিতে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের কাজে যুক্ত।
পেশাগত কাজকর্মের পাশাপাশি ভালোবাসেন ছবি আঁকতে এবং লিখতেও। নিজের শিল্পীমন দিয়ে তিনি লেখেন গ্রাম-শহরের নানা কাহিনি। ছোট ছোট গল্পের জাল বুনে তিনি লিখে চলেন আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা কাহিনি।
অজস্র প্রবন্ধ-নিবন্ধের পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই তিনি লিখে ফেলেছেন বেশ কয়েকটি বইও। সেগুলোর মধ্যে শহর কলকাতার বিভিন্ন আখ্যান নিয়ে লেখা ‘তিলোত্তমার গর্ভজাত’ পাঠকদের মধ্যে বেশ সাড়াও জাগিয়েছে। রেডিয়ো নিয়ে তাঁর প্রথম বই ‘তরঙ্গে অন্তরঙ্গে – কলকাতা বেতারের উপকথা’ ইতিমধ্যে খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।