বুড়ো বয়সে এই এক ঠ্যালা, সবেতেই অসৈরণ। ঠাণ্ডা পড়ল কী পড়ল না, হু হু শীতে মরে গেলাম! অন্যদিকে আবার গরম পড়তে না পড়তেই জ্বলে গেলাম, জ্বলে গেলাম (Buri thuri thuri)। এ বয়সটা এমনই যে সব সময় মনে হয়, সঙ্কট কী গভীর এবং ষড়যন্ত্রও কী ভীষণ! তবে, আমরা জনা পঁচিশ অবশ্য রৈ রৈ করে জেগে উঠেছি ইস্কুল বন্ধুদের একটা দল গড়ে; কী আশ্চর্য ভাবেই না ধরে রেখেছি এক টুকরো কিশোরীবেলা! আর সেটা ক্রমেই আনন্দের সঙ্গে মেনে নিচ্ছে ছেলে- মেয়ে- জামাই- বউমা এবং জাঁদরেল বা উপহাস মুখর বরেরাও ।
শুনলাম, ইস্কুলবেলার বন্ধু জয়শ্রীর মামার বাড়িটা বিক্রি হয়ে গেল। আর ক’দিন পরেই বোসপাড়া লেনের সেই ১৯ নম্বর বাড়ির দরজাটা শুধু বন্ধই হবে না, ভাঙাও পড়বে। জয়শ্রীর মামাতো দাদা আর তাঁর বউ অকোদা-মালুদি এবং তাঁদের মেয়ে সোনাকে নিয়ে কত যে গল্প জমে আছে ওই বাড়ির গাছপালার মজবুত শিকড়ে! কয়েকশো বছর ধরে ‘বসু’দের বসত। পশ্চিমদিকে বাগানের দরজাটা খুললেই নীল আলো জ্বলা গিরিশ ঘোষের বাড়ি, আর ডানদিকের পাশের বাড়িতেই থাকতেন নিবেদিতা। গিরিশ ঘোষের বাড়ির দিকে পিঠ ফিরিয়ে বাঁ দিকের গলিতে যতটা ঢুকেছি, বাড়ির মধ্যে এসে বুঝলাম, এ বাড়ি পশ্চিম থেকে পূবেও অতটাই লম্বা। আর, উত্তর-দক্ষিণের আড়ও প্রায় একটা বল খেলার মাঠ। শহুরে ঘরগুলোকে ঘিরে রেখেছে এক নিবিড় বনস্থলী। গাছ আর পাখিদের আলপনা। জয়শ্রী এসেছে দিল্লী থেকে তার বর সুব্রতদাকে নিয়ে। চার বন্ধু মিলে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমরা।

পড়ন্ত বিকেলে চারিদিকে বাঁধা-ছাঁদা চলছে। দেওয়ালে টাঙানো অকোদার ফটোটাও নামানো; তারই মধ্যে নকুড়ের মনোহরার সঙ্গে মালুদির বানানো ক্লাব স্যান্ডুইচ ও ডিমের ডেভিল। সংসারটা এবার চলে যাবে পাততাড়ি গুটিয়ে নতুন আস্তানায়, শৌখিন এবং মাপসই হয়ে। বাতিল হয়ে যাবে আয়েসি সোফা, ঘরজোড়া খাট, আয়না, দেরাজ এবং অসংখ্য টবে সবুজ বাহার। আর ওই আকাশ ছুঁতে চাওয়া কামিনী গাছটা! কোকিল, বুলবুল, টুনটুনির জম্পেশ সংসার! এ উঠোন ও উঠোন জুড়ে কুমিরডাঙা খেলা বাড়িটার এখন কেমন লাগছে কে জানে! কেমন লাগছে ষাট পার করা জয়শ্রীকে দেখে! ও তো ওখানেই জন্মেছে, ওই পশ্চিমের ঘরে। ওই বাড়ি থেকেই তার বিয়ে হয়েছে। একদিন তার বাবাও তো এসেছেন বরবেশে জয়শ্রীর মা-কে বিয়ে করতে। কেমন লাগছে বাড়িটার, যখন সকলে মিলে এদিক ওদিক দেখিয়ে বলছে- এখানে ফাটল, ওখানে নোনা বা সেখানে ঝুরঝুরে! বলছে, অসম্ভব এর দেখভাল! যেন, অঙ্কে একশো পেয়েও সেলাইতে শূন্য পাওয়ার মতো।
দেওয়ালে টাঙানো দাগ ধরা একটা পুরনো আয়নার সামনে লুটিয়ে পড়ে হৈ হৈ করে ফটো তুললাম পাঁচ বন্ধুতে মিলে। ছায়ামাখা আলোতে দেখলাম, সদরের গ্রিলে কামিনী পাতার উজ্জ্বল জাফরি। মনে হল, ওই মস্ত বাড়িটা যেন নিজেকে মাপসই আর সরু করতে করতে পাকানো দড়ির মতো ঢুকে যাচ্ছে একটা নতুন আস্তানায়। কে যে কাকে বাতিল করল কে জানে! এখন ওটা সত্যিই একটা বাউন্ডারি দেওয়া চত্বর। Sister Nivedita Museum -এর প্রসারিত ইমারৎ ওঠার অপেক্ষায়। ভাগ্যিস আমরা গিয়েছিলাম সেদিন!
আরও পড়ুন: বুড়ি! থুড়ি থুড়ি: এবারের নববর্ষ – ১৪৩১
এবার আর কারও বাড়ি নয়। দল জুটিয়ে গিরিশ মঞ্চে নাটক দেখা। ভাবলাম বন্ধুদের বলি, গিরিশ মঞ্চ শুনে বাগবাজারের ইস্কুল কন্যারা যদি যায়। আমাদের ইস্কুল বেলায় এসব ছিল না। ১৯৭৫ সালে পাশ করে যাওয়ার প্রায় দশ বছর পরে এই মঞ্চ তৈরি। তখন এই সব এলাকা জুড়ে অজস্র বন্ধুদের বাড়ি ছিল, এখন যেগুলো তাদের বাপের বাড়ি হয়ে গেছে। বেশ কিছু বদল হলেও, এ অঞ্চলের লোকজনের মেজাজটা কিন্তু একই আছে। অটুট আছে ফুল আর ফুলুরির গন্ধ। জনা আঠাশের দলে তবু তো ছ’জন হাত তুলেছে। শ্রাবন্তীর বর সোমেশ্বরদা যোগ দেওয়ায় মোট সাত হয়ে আমরা অন্তত আঠাশের এক ভাগ হতে পারলাম। অনলাইনে টিকিট কেটে, তাতা পোড়া থেকে বাঁচাল সোমেশ্বরদা। এদিকে, একদিন পর বীণার টনক নড়ে টিকিট কাটা হয়ে গেছে। নাতনীর পুতুলের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ততায় হোয়াটসঅ্যাপ দেখেনি। তাকে ষাট ষাট বলে শ্রাবন্তী জানালো, ওই এক সারিতেই বীণার টিকিটও হয়ে গেছে। মেসেজে তখন খুশির তুফান।

গ্রুপে তোলপাড় উত্তেজনা। এক ঘন্টা আগে জড়ো হবো ‘ভোলানাথ কেবিনে’। ফুটপাতেই দু’সারি বেঞ্চিপাতা কেবিন! যারা চেনে না, তারা আসলে ফ্যা ফ্যা প্রেম করে বাগবাজার চষেনি। জয়শ্রী আবার স্মৃতি উস্কে লিখল, উল্টোদিকের মামারবাড়ি থেকেই তো তার বিয়ে হয়। বাসি বিয়ের ভোরে সে আর সুব্রতদা নাকি চা খেতে এসেছিল ওই ভোলানাথ কেবিনেই! আর তখনও নাকি ভয়, মা যদি বকে? রাস্তা ফাঁকা থাকায় আমি একটু আগেই পৌঁছে সবে চা নিয়ে বসেছি, দেখি বীণা। তারপর একে একে গীতা, অদিতি, প্রতিমা, শ্রাবন্তী এবং ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ সোমেশ্বরদা। বেঞ্চিতে বসে ডেভিল, চা টোস্ট অর্ডার দিতে দিতেই সোমেশ্বরদা চলে গেল অনলাইনে কাটা টিকিট গুলোকে ভার্চুয়াল থেকে অ্যাকচুয়াল বা কাগুজে করে আনতে। ‘ভোলানাথ কেবিন’-অবশ্য সেই প্রাচীন ক্যাশ পদ্ধতিতেই কেনাবেচা করছে। বলল- ‘পিন দিয়ে পে’ ওসব ওখানে চলবে না। বদলেছে শুধু উল্টো ফুটের পাঁচিলের ভেতর জেগে থাকা বাগান দিয়ে ঘেরা জয়শ্রীর মামার বাড়ি। গাছপালা সমেত লোপাট হয়ে গেছে বাড়িটা। অক্ষত শুধু গেট ও পাঁচিল।
১৯৭৫ সালে পাশ করে যাওয়ার প্রায় দশ বছর পরে এই মঞ্চ তৈরি। তখন এই সব এলাকা জুড়ে অজস্র বন্ধুদের বাড়ি ছিল, এখন যেগুলো তাদের বাপের বাড়ি হয়ে গেছে। বেশ কিছু বদল হলেও, এ অঞ্চলের লোকজনের মেজাজটা কিন্তু একই আছে। অটুট আছে ফুল আর ফুলুরির গন্ধ। জনা আঠাশের দলে তবু তো ছ’জন হাত তুলেছে। শ্রাবন্তীর বর সোমেশ্বরদা যোগ দেওয়ায় মোট সাত হয়ে আমরা অন্তত আঠাশের এক ভাগ হতে পারলাম।
প্রতিমার দেওয়া বেলফুলের মালা লাগিয়ে আমরা এবার হলের দিকে পা বাড়ালাম। এমন ঝলমলে সাজ আর অমন কলকলানি উচ্ছ্বাসের অভ্যর্থনা নিয়ে আর কেউ তো আসেনি। প্রতিমার মেয়ে তিতলি এবং সোমেশ্বরদার ক্লিক ছাড়াও, যাকে পাওয়া যায় তাকে ধরে- একটুস ছবি তুলে দেবেন! ও দাদা, ও ভাই….। এই নাটক দেখা ঘিরে আমাদের ইস্কুলবেলা যাপনেরও ভিন্ন এক জন্মান্তর হলো। হুট করে কেমন ফিরে গেলাম সেই ফুরফুরে দিনগুলোতে! জয়তু আমাদের উচ্ছ্বাস, চা, চপ এবং বেলমালায়।
সম্প্রতি আমাদের টনক নড়িয়েছে শ্রাবন্তী। যেহেতু আমাদের ইস্কুল পাশের সালটা হল ১৯৭৫, তাই ২০২৪ থেকে শুরু হয়ে ২০২৫- এই সময়টা হবে আমাদের ইস্কুল যাপনের পঞ্চাশ বছর। ফলে নিজেদের শতবর্ষ পালনের মতোই আমরা লেগে পড়েছি বছর জুড়ে নানা কিছুর আয়োজনে। বাঁধভাঙা স্মৃতি সাঁতরে আমরা সবাই লিখতে বসেছি, কারণ স্মরণিকা বের হবে।ফান্ড বানাচ্ছি, যেহেতু খরচ করতে মন চাইছে। ইস্কুল ড্রেসের সেই ঢালা মভ রঙের শাড়িও অর্ডার দিচ্ছি, এক রকম সাজব বলে। কানপুর, নয়ডা, মুম্বাই বা নিউইয়র্কবাসী বন্ধুরা কলকাতায় আসার জন্য আগাম সময় গোছাচ্ছে। দেহের বেড়, মনের শূন্যতা এবং ভয়ানক ভাবে বদলে যাওয়া পরিস্থিতি সত্ত্বেও, থেকে থেকেই অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছি আমরা। যেন আবার সরস্বতী পুজো, যেন আবার সেই জল ছপছপ রেনি ডে!

শুধু তো ভাবলে হবে না, দুম করে ঝাঁপাতে হবে। ভাবাটা শুরু হয়েছিল শীতের শেষে। কিন্তু গড়িমসি করে এসে গেল দুর্জয় গরম । আর গরম বলে গরম! একেবারে কলকাতা দাপানো মরু তাপ। ঠিক হল, পঁচিশে বৈশাখের আগের দিন আমাদের জমায়েত হবে। কিন্তু সেটা হবে কোথায়? পঁচিশজন না হোক পনেরো থেকে কুড়িজন তো আসবেই। ধাঁ করে ফোন করে ফেললাম উল্টোডাঙ্গার ‘বিধান শিশুউদ্যানে’। এককালে যুক্ত ছিলাম ওখানে। বলতে গেলে ওটাই ছিল ঘরবাড়ি, তবে সে প্রায় বছর চব্বিশ আগে। এখনকার সেক্রেটারি গৌতম আমার খুবই স্নেহভাজন, যোগাযোগটাও যে পুরো ছিন্ন হয়ে গেছে তা নয়। সাদর আমন্ত্রণ জানাল আমাদের বন্ধুদলকে। আব্দারের যেন শেষ নেই আমাদের- বিকেলের গরম কাটিয়ে রোদ পড়লে আসি? বসবার চেয়ার পাব তো? ঝিলের ধারে সেই মুক্তমঞ্চের ধারে বসা যাবে রে?
বুড়িদের তো মাতনের শেষ নেই। ঠিক হল ওখানকার আড্ডা-মিটিং সেরে আমরা যাব উদ্যান লাগোয়া ‘ঈশ্বর নিবাস’ হাউসিং’-এ, সদ্য উদ্বোধন হওয়া ‘শঙ্খ-প্রতিমা’ বই সংগ্রহ দেখতে। শ্রাবন্তী মনে করিয়ে দিল, তাঁর বাবা শঙ্খ ঘোষের প্রিয় রং নীল। তাই আমরাও খুঁজে বার করলাম নীল শাড়ি আর কামিজ, সঙ্গে জুঁই ফুলের মালা। উদ্যানের গেটে বসা দারোয়ানদেরও আর চিনতে অসুবিধে হল না তাদের কাছে আসা ওই হুজ্জুতে নীল অতিথিদের। সুইমিং পুলে যাওয়ার আগে, ঝিলের ধারে শেড দেওয়া যে এক পা উঁচু বাঁধানো চাতাল, সেখানেই লাল চেয়ার সাজানো। হুড়মুড়িয়ে ছুটে ওঠার বদলে, এর ওর হাত ধরে ধীরে ধীরে অথবা বেঁকেচুরেও কিন্তু উঠে এলাম সকলে। আগের দিনই হয়ে গেছে ফেসবুক কাঁপানো, সেই সাড়া জাগানো বৃষ্টি; যার অভাবে গরমে ভেপসে উঠেছিলাম আমরা।
আজ এখানে বৃষ্টি এলেও গা ভিজবে না। প্রথম বর্ষার জল পেয়ে টলমল করছে দীঘি। বাঁধানো রাস্তার রেলিঙে ঝুঁকে এসেছে নানা গাছের ডালপালা। বিকেলের আলোয় পাখির ডাক আর আমাদের আড্ডা। শুধু কি গান! নাচও হল। বাচ্চাকে সাঁতার শেখাতে নিয়ে আসা বাবা-মায়েরা দর্শক হয়ে দেখতে লাগল নীল বুড়িদের আহ্লাদ। ‘দারুণ অগ্নিবাণে’, ‘আজি হৃদয় আমার…’ সে কী আর শেষ হয়! আর এও এক আশ্চর্য যে আগের দিন অত বৃষ্টি হলেও, পরদিন আকাশ জুড়ে শুধু মেঘ ছেঁড়া আলো! সেই সঙ্গে আমাদের জুড়িয়ে দিতে দীঘি ছুঁয়ে উড়ে আসা, গাছপালার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া এক স্নেহার্দ্র বাতাস।
সেই কোন কালে, রাজনীতি থেকে সরে এসে অতুল্য ঘোষ এই উদ্যান তৈরি করেছিলেন ১৯৭৫ সালে, এবং বারে বারে বলে গিয়েছিলেন যে, বড় হয়ে একদিন এই উদ্যান চালাবে এখানকার সদস্যরাই। সেদিনের সেই ক্ষুদে গৌতম তালুকদার আজ সেক্রেটারি, আর শ্যাম ও তার অন্য বন্ধুরাই তাঁর সহযোগী। যে গাছগুলি অতুল্য ঘোষ ‘দাদু’ এবং তাঁর সহযোগী সুবুদ্ধিদা লাগিয়ে গিয়েছিলেন, আজ তারই ছায়ায় বসে নাচ-গান করে এলাম আমরা। চারিদিকে এত যে ‘নেই’, ‘নেই’, তার মধ্যেই কত যে ‘আছে’, ‘আছে’, ‘আছে …’ !
এখান থেকে বেরিয়ে এবার আমরা চললাম ‘শঙ্খ- প্রতিমার’ আবাসে। ইস্কুলবেলায় লটারিতে ফার্স্ট প্রাইজ পাওয়ার মতোই আমরা পেয়েছিলাম ‘শঙ্খ- প্রতিমা’-কে। সহপাঠী বন্ধু, শ্রাবন্তীর বাবা-মা হিসেবে। তাঁদের অবর্তমানে মস্ত এক সাংস্কৃতিক দায়ও স্বেচ্ছায় কাঁধে নিয়েছে তারা দুই বোন মিঠি-টিয়া এবং তাদের গোটা পরিবার। মৃত্যুর পরেও বাবা-মাকে ওঁদের ওই ভালবাসার ঘরে, তাঁদেরই শর্তে ধরে রেখে। তাঁদেরও তাই আবাসচ্যুত হতে হল না। বাবা-মায়ের প্রতি গভীর ভালবাসা এবং শ্রদ্ধাবোধ ছাড়াও, তাঁদের প্রতিটি মুহূর্ত যাপন ও আদর্শকে নিজেদের সম্মানবোধের সঙ্গে জড়িয়ে নিলে তবে না এমনটা হয়!

বন্ধুদের মধ্যে আজ যেমন অনেকেই আসতে পারেনি, তেমন অনেকেই তো এসেছে! কবির প্রিয় রং নীল। আমরা সবাই তাই নীল শাড়ি ও কামিজ পরে শ্রাবন্তীর সঙ্গে গিয়ে ওঁদের ওই ঘরেদোরে ঘুরে বেড়ালাম। কেক কেটে গান গাইলাম, তাঁরই লেখা কবিতা পড়লাম, মালা পরিয়ে দিলাম দু’জনের ছবিতে।আর কাঁসার পাত্রে সাজিয়ে দিলাম এক মুঠো কনকচাঁপা। ভিডিও কলে জুড়ে নিলাম না আসতে পারা বন্ধুদেরও। অমরাবতী নিজের গলায় যে গানটির অডিও পাঠিয়েছিল সেটাও বড় প্রাসঙ্গিক – ‘ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি’! এ বাড়ির রীতি অনুযায়ী শ্রাবন্তী আমাদের খাওয়াল চায়ের সঙ্গে নোনতা এবং মিষ্টি দুরকমই। আজ এখানে এসে উপলব্ধি করলাম, আমরা বড় হয়ে উঠেছি সম্ভাব্য এক ইতিহাসের অধিকারে। আরও অনেক মানুষ এখানে আসবেন। আসবেন গবেষক ও সাহিত্য প্রেমিকেরা। তাঁদের সঙ্গে থেকে যাব আমরাও। শরণ্য অধিকারে জুড়ে রইল আমাদের নাম-ধাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর। ‘মিঠি- টিয়া’ লেখা ওই দরজাটাই উত্তরাধিকারে তাঁদের দেওয়া, আসল মোহর। শঙ্খ -প্রতিমার প্রেমের ফসল।
এই দুর্বহ গরম শেষে যেমন বৃষ্টি নামল, তেমনই শুভ সূচনা হল আমাদের ইস্কুল জীবনের পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে নানা পরিকল্পনা এবং জল্পনারও। শুভেচ্ছার যে উত্তরাধিকার আমরা পেয়েছি, এবার যেন তাকেই খুঁজে বেড়াব নিরন্তর। ফলে আর বুড়ি কই! একেবারে শুরুর শুরু সেই কিশোরীবেলা। ব্যস্ততা এমন হবে, যে আশপাশে থাকা সকলেই চমকে উঠবে যখন তখন ফোন করে আমাদের সাড়া না পেয়ে। ‘বিরক্ত’ এবং অসুস্থ-র বদলে, এই ‘ব্যস্ত‘ শব্দটা কত সুন্দর !
‘বুড়ি! থুড়ি থুড়ি’ পর্বের আপাতত তাই এখানেই ইতি। জানি বাকি রয়ে গেল, ‘বইয়ের মলাট’, ‘প্রথম প্রেম’, ‘সাজুগুজু’, ‘হারানো-প্রাপ্তি’, ‘আন্দোলন’, ‘গ্রেফতার’ এমন কত কী! জীবন জুড়েই তো ঘর-গেরস্থালির টুকিটাকি; না হয় তার কিছুটা অগোছালোই থাক। আর বাকিটুকু থাক মনের সিন্দুকে। চাবিটা না হারালেই হল। লেখা তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না!
ছবি সৌজন্য: লেখক
আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।
One Response
শ্রাবন্তীদি আর সোমেশ্বর বাবুর নাম তো আমরা “আমন ধানের ছড়া ” তে পড়েছি।”আমন আমন আমনটি
আমনের মা শ্রাবন্তী,আমনের বাবা সোমেশ্বর, আমন খাবে দুধের সর”
সেই বইটা অবশ্য আমার মেয়ের হাতে পড়ে হাল্কা পাল্টেছে “আমনের মা শ্রাবন্তীর শ্রাবন্তী কেটে লিখে দিয়েছে ‘চন্দ্রামাসি”।ওর মাও তো শ্রাবন্তী।সে আবার কী করে আমনের মা হয়!