(Children’s Story)
১
বিল্টুর সঙ্গেই এমন আজব ঘটনা ঘটতে হল! তাও আবার সুন্দরীর বিশ্বাসঘাতকতা! পঞ্চাকাকা মাঝে মাঝেই বলে, “বিড়ালটার চোখমুখ আমার মোটেই ভাল লাগে না, কেমনভাবে যেন তাকায় আমার দিকে। দেখিস একদিন তোকে ঠিক বিপদে ফেলবে বিল্টু। আমি পুকুরের ধারে গেলেই ব্যাটা আমার দিকে তেড়ে আসে।” তখন সুন্দরী ছোট ছিল। বিল্টুর দুটো হাতের মধ্যেই চলে আসত! সেই সুন্দরী যে কাউকে তেড়ে যেতে পারে এসব তো কল্পনার বাইরে। (Children’s Story)
সুন্দরী যখন বিল্টুদের বাড়ি আসে, একেবারে ছোট্ট সাদা পুতুল। ওকে দেখে সুন্দরী নামটাই মনে এসেছিল বিল্টুর। সুন্দরীর মা কোনওদিন ওর খোঁজ করেনি। ও ম্যাও করে ডাকলেই বিল্টু দুধের বাটি মুখের সামনে এনে ধরত। চুকচুক করে চেটে খেত সুন্দরী। বিল্টুদের বাড়ির কাছে কে যেন সুন্দরীকে ফেলে গিয়েছিল। বিল্টুর পায়ের কাছে মাথা ঘষছিল। যেন মখমলের বিছানা। বিল্টু হাতে তুলে নিয়েছিল ওকে। সেই থেকে সুন্দরীর সঙ্গে বন্ধুত্ব বিল্টুর। পড়াশোনার সময়ও দিব্যি টেবিলের নীচে জায়গা করে নিত। (Children’s Story)
এই বাড়িতে ওকে জায়গা পাইয়ে দিতে কম লড়তে হয়নি বিল্টুকে। মা তো বেড়াল দেখে দাঁত মুখ খিচিয়ে বলে উঠেছিল “নিজের বিছানা, বই-খাতা একটাও গুছিয়ে রাখতে পারিস তুই! নোংরা করে রাখিস সব। এখন এই বেড়ালটা সারা বাড়ি নোংরা করবে, তোর পায়ে পায়ে ঘুরবে। তোকে সব দায়িত্ব নিতে হবে।” সুন্দরীর পক্ষ নিয়েছিল বিল্টু “তা কোন বাড়িতে বেড়াল চটি-জুতো পরে ঘুরে বেড়ায় বলো তো মা!” বাবা যদিও কথাগুলো শুনে ঠিক খিক করে হেসে উঠেছিল। কিন্তু সমর্থনের পাল্লা বিল্টুর দিকে ছিল না। বেশ গম্ভীর গলায় বলেছিল বাবা “তুই নিজের ঘরে একটা মাছি পর্যন্ত ঢোকা পছন্দ করিস না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া নিয়ে একেবারে বাতিকগ্রস্ত। (Children’s Story)

নিজে কিছু করবি না অথচ সব ঝকঝকে-তকতকে চাই, আবার বাড়ি মাথায় করে রাখিস। তুই এই বেড়ালটাকে নিজের দায়িত্বে রাখতে পারবি?” যথেষ্ট রাগ হয়েছিল বিল্টুর। দাদুও কিছুটা নাক-মুখ কুঁচকে তাকিয়ে ছিল সুন্দরীর দিকে। বিল্টু তখন একেবারে কোণঠাসা। সুন্দরীকে হয়তো পেছনদিকের জঙ্গলটায় রেখে আসতে হত। (Children’s Story)
ঠিক এই সময় ঢাল হয়ে এসে দাঁড়ায় ঠাম্মা “বেড়াল হল ষষ্ঠীর বাহন। তাকে তোরা বাড়ি থেকে তাড়াতে চাইছিস! দাদুভাই ওই মার্জারসুন্দরী তোমার ঘরেই থাকবে। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দিকটা এখন থেকে তোমাকেও দেখতে হবে। বাকিটা আমি দেখে নেব।” ঠাম্মার কথা বাড়ির লোক ফেলতে পারে না। দাদু অল্পবিস্তর আপত্তি করলেও ঠাম্মার এক ধমকে চুপ করে গিয়েছিল সকলে। সেই দিন থেকে সুন্দরী বিল্টুর সঙ্গে। লেপ্টে থাকত বিল্টুর গায়ে। সেদিনের সেই পুঁচকে বেড়ালটা এমনভাবে ধোঁকা দিল! বোকা বানাল বিল্টুকে! (Children’s Story)
“বিল্টু অবাক হয়ে দেখল সুন্দরী ওর পাশে এসে একেবারে ওরই গলায় কানে কানে বলছে, “তুমি বরং আমার দুধের বাটিটা থেকে খেয়ে নাও, আমায় তোমারটা দিয়ে দাও। তুমি তো এটা খেতে ভালোবাসো না।” বিল্টুর সেদিন কান্না পেয়ে গিয়েছিল।”
“দুধ কর্নফ্লেক্সটা তোকে দিই বিল্টু? স্কুল যেতে হবে যে।”
এই সাদা তরলটা মোটেই পছন্দ নয় বিল্টুর। তবুও সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় পাঁচন গেলার মতো করে গিলতে হয়। আজ একেবারেই ইচ্ছে করছিল না। “মা রোজ রোজ সকালে তুমি এই একই খাবার কেন দাও?” বলতে চেষ্টা করেছিল বিল্টু। পারেনি। “ম্যাও ওওওও, ম্যাওওওও।” এটা বেরোচ্ছে বিল্টুর গলা থেকে। অথচ সেই আওয়াজ মায়ের কানে যাচ্ছে না। (Children’s Story)
এদিকে কেউ একটা মোলায়েম গলায় বলছে “দুধে একটু মধু মিশিয়ে দিও তো। আর আজকে সরওঠা দুধ দিও। কর্নফ্লেক্স অল্প দিয়ে দুধটা বেশি দিও।” বিল্টু প্রথম সেদিন দেখেছিল সুন্দরীর মুখ নড়ছে। তার মানে বিল্টুর বদলে সুন্দরী কথা বলছে! তাও নিজের কথা! কারণ কর্নফ্লেক্স তো বিল্টু মোটেই পছন্দ করে না। দুধ একেবারেই না। এদিকে মা বেশ তৃপ্ত হয়ে বলল, “বাহ বিল্টু, তুই কবে থেকে এত ভাল হয়ে গেলি রে! সরপড়া দুধ চাইছিস! আমার বিল্টু সোনা দেখছি সত্যি সত্যি সোনা ছেলে হয়ে গেল! মনে হয় সুন্দরীর সঙ্গে থাকার ফল!” হাসতে হাসতে মা বিল্টু আর সুন্দরীর সামনে দুটো দুধের বাটি বসাল। (Children’s Story)
বিল্টু অবাক হয়ে দেখল সুন্দরী ওর পাশে এসে একেবারে ওরই গলায় কানে কানে বলছে, “তুমি বরং আমার দুধের বাটিটা থেকে খেয়ে নাও, আমায় তোমারটা দিয়ে দাও। তুমি তো এটা খেতে ভালোবাসো না।” বিল্টুর সেদিন কান্না পেয়ে গিয়েছিল। কেঁদে ফেলছিল ও। কিন্তু দেখল ওর গলা দিয়ে একটাই আওয়াজ বের হচ্ছে “ম্যাওওও।” (Children’s Story)
“বিল্টু আর ঠাম্মা ওকে ভালোবেসে বাড়ির সদস্য করে নিল। সুন্দরী শেষে বিল্টুর এমন ক্ষতি করল! ভাগ্যিস পরীক্ষা হয়ে গেছে, এখন স্কুল ছুটি। কিন্তু কিছুদিন পরই তো স্কুল খুলবে। বিল্টু পড়াশোনা করবে কী করে!”
২
বাড়ির পেছনদিকের এই জায়গাটা খুব প্রিয় বিল্টুর। মাঝে মাঝেই সুন্দরীকে নিয়ে বসে থাকত। আজ মন খারাপ বিল্টুর। একা একাই পুকুর ধারে এসে বসেছে। সুন্দরী কিনা বিল্টুর গলার আওয়াজ কেড়ে নিল! এমন অদ্ভুত কান্ডটা সুন্দরী করল কী করে! ব্যাটা নিশ্চয়ই বেড়াল নয়! কোনও অলৌকিক জীব! কিন্তু এসব কথা কাকে বলবে বিল্টু! একমাত্র ঠাম্মাকেই বলা যেত। সেই ঠাম্মা, দাদুও বেড়াতে গেছে। বাবা-মা, দাদু কেউ ছোটবেলায় সুন্দরীকে মেনেই নিচ্ছিল না। বেড়ালছানা বলে সকলে হ্যাটা করত। (Children’s Story)
বিল্টু আর ঠাম্মা ওকে ভালোবেসে বাড়ির সদস্য করে নিল। সুন্দরী শেষে বিল্টুর এমন ক্ষতি করল! ভাগ্যিস পরীক্ষা হয়ে গেছে, এখন স্কুল ছুটি। কিন্তু কিছুদিন পরই তো স্কুল খুলবে। বিল্টু পড়াশোনা করবে কী করে! একটা ইটের টুকরো হাতে নিয়ে পুকুরের দিকে ছুড়ে দিল বিল্টু। এই পুকুরটা বিল্টুদের। দাদু আর বাবা মাছ চাষ করে। এখন যদিও বাবাই সবটা দেখে। (Children’s Story)

সকলে বলে বিল্টুর হাতে নাকি জাদু আছে। পুকুরে ইট ফেললে ঠিক তিন পা লাফিয়ে যায়। আজ অদ্ভুতভাবে ইটটা কোথাও গেল না। এমন তো হওয়ার কথা নয়। বিল্টু আবার একটা ইটের টুকরো পুকুরে ছুঁড়ল। এরকম করে বারবার। মোট পাঁচবার। ফলাফল একই। এমন হচ্ছে কেন! পুকুরের কাছে এগিয়ে গেল বিল্টু। বাবাকে ডেকে কথাটা বলবে নাকি! তারপর মনে পড়ল, চাইলেই বিল্টু এখন কথা বলতে পারবে না। কথা বলতে গেলে সঙ্গে সুন্দরীকে লাগবে। সকালের খাওয়ার পর থেকে সুন্দরীর আর দেখা নেই। রাগে চিৎকার করে উঠল বিল্টু। গলা দিয়ে একটাই আওয়াজ বেরলো ‘গরররররর’। পুকুর রহস্য উদঘাটনে এগিয়ে যাচ্ছিল বিল্টু। এমন সময় সুন্দরী এগিয়ে এসে বিল্টুর পায়ের কাছে বসে পড়ল। রাগ করে বিল্টু ইটের টুকরা নিয়ে সুন্দরীকে মারতে এগিয়ে যাচ্ছিল। (Children’s Story)
“পঞ্চাকাকা সেদিন পুকুরের মাছেদের খাবার দিতে এসেছিল। সেদিনও জলের রং স্বচ্ছ ছিল। সবই তো ঠিক ছিল। এমনকী তখন সুন্দরী দিব্যি একটা মাছের মাথা চিবিয়ে খেয়ে নিল। হঠাৎ সুন্দরী এসব কী বলছে! বিল্টুর সব গুলিয়ে যাচ্ছে।”
“খুব রাগ হচ্ছে বিল্টু! নিজেদের অসুবিধার কথা বলতে না পারলে কতটা রাগ হয় দেখেছ, ওই পুকুরের মাছ, শ্যাওলা সকলের ঠিক এমনি রাগ হচ্ছে।” (Children’s Story)
বিল্টু অবাক। সুন্দরীর এসব কথার মানে ও বুঝতে পারছিল না। তবে পুকুরের দিকে তাকিয়ে দেখল পুকুরের জলটা অদ্ভুত সবুজ। যেন শ্যাওলা জমেছে। মাত্র কদিনে এত শ্যাওলা জমতে পারে! পঞ্চাকাকা সেদিন পুকুরের মাছেদের খাবার দিতে এসেছিল। সেদিনও জলের রং স্বচ্ছ ছিল। সবই তো ঠিক ছিল। এমনকী তখন সুন্দরী দিব্যি একটা মাছের মাথা চিবিয়ে খেয়ে নিল। হঠাৎ সুন্দরী এসব কী বলছে! বিল্টুর সব গুলিয়ে যাচ্ছে। (Children’s Story)
-“আমি জানি তুমি কিছুই বুঝতে পারছ না।”
সুন্দরী কথা বলছে। এই জাদু-বেড়ালটা মনের কথা বুঝতে শিখে গেল নাকি!
“পুকুরে বিষ দিয়ে সব মাছ, শ্যাওলা নষ্ট করেছে তোমার পঞ্চাকাকা। তোমার ইটের টুকরো তাই লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে পারেনি। পুকুর নষ্ট হলে, এই গ্রামের ক্ষতি হবে। কিন্তু আমাদের কথা বুঝবে কে? আমাদের সব কথা তোমায়ই বুঝতে হবে।”
“শোনো বিল্টু, এই পুকুরটা তোমার বাবা বুজিয়ে দিতে চাইছে। পঞ্চাকাকা আসলে তোমার বাবার সাগরেদ। ওরা দুজনে মিলে এই গ্রামের অনেকগুলো পুকুর বুজিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। তোমার এই গ্রামটাকে একটা শহর বানাবে। কিন্তু আমাদের কী হবে? পুকুরপাড়ে বটগাছটা ওরা কেটে ফেলবে বলছে। এই বটগাছে কতগুলো পাখির বাসা আছে তুমি জানো? পুকুরে বিষ দিয়ে সব মাছ, শ্যাওলা নষ্ট করেছে তোমার পঞ্চাকাকা। তোমার ইটের টুকরো তাই লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে পারেনি। পুকুর নষ্ট হলে, এই গ্রামের ক্ষতি হবে। কিন্তু আমাদের কথা বুঝবে কে? আমাদের সব কথা তোমায়ই বুঝতে হবে। তাই আমি তোমার গলার আওয়াজটা ধার নিয়েছি। সব পশু-পাখিদের হয়ে আমি তোমায় বলছি বিল্টু, পুকুর বোজানো তুমি আটকাও। নইলে অনেক পশু-পাখি মারা যাবে। গাছেদের ক্ষতি হবে।” (Children’s Story)
সুন্দরী একটানে কথাগুলো বলে গেল। শেষে বিল্টু দেখল সুন্দরীর চোখে জল। এই প্রথম বেড়ালকে কাঁদতে দেখছে বিল্টু।
৩
“আমার মুখে মুখে কথা বলার সাহস কী করে হয় তোমার? আর এসব বড়দের বিষয়ে তুমি কেন কথা বলছ!”
এই প্রথম বাবার রাগ দেখল বিল্টু।
“বড়রা যদি ভুল করে ছোটরা তাহলে সেই ভুল ধরিয়ে দিতে পারে বাবা। তুমিই তো বলো, যে ছোটদের কাছ থেকেও বড়দের অনেক কিছু শেখার থাকে। পঞ্চাকাকা একটা বাজে লোক। ওর সঙ্গে মিশে তুমি গ্রামের সব পুকুর বোজাচ্ছ!” (Children’s Story)
বিল্টুর কথায় কোনও গুরুত্ব না দিয়ে বাবা খাবার টেবিল থেকে নিঃশব্দে উঠে গেল। যাওয়ার আগে বলল “ভবিষ্যতে কোনওদিন তোমার মুখ থেকে আমি এইসব কথা শুনতে চাই না, তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো।” (Children’s Story)
বিল্টু সুন্দরীর পাশে এসে বসে। বাবার সঙ্গে যে সুন্দরীই কথা বলছিল, তা বাবা বোঝেনি। বিল্টু সুন্দরীকে বলতে চাইল “ও কিছু একটা ব্যবস্থা ঠিক করবে।” কিন্তু চারবার “ম্যাওওও” ছাড়া আর কোনও শব্দই বেরোল না। আর মা বেড়ালের ডাক শুনে সুন্দরীর সামনে খাবার বাটি বসিয়ে দিয়ে গেল। (Children’s Story)
“তোমার এত সাহস! আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে তুমি পুকুর বোজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছ!” এই পুকুরপাড়ের বটগাছটা আমাদের বাড়ির থেকেও পুরনো। তুমি নাকি এটা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছ! এসব একেবারে হবে না।”
”ঠাম্মা, তুমি আর দাদুই এটা আটকাতে পারবে। বাবা ভুল করছে। সুন্দরী, অন্য অনেক পশু-পাখিদের ক্ষতি হবে সব পুকুর বুজিয়ে দিলে। তোমরা বাবাকে আটকাও।” ছোট চিঠিটাতে এইটুকু লিখেই ঠাকুমার ঘরে রেখে এলো বিল্টু। কাল সকালেই দাদু-ঠাকুমার ফেরার কথা। “হে ঠাকুর তুমি দেখো, এই চিঠিটা যেন ঠাকুমাই হাতে পায়। কাল সকালে বিল্টুকে ফুটবল প্র্যাকটিসে যেতে হবে। তার মধ্যেই দাদু ঠাকুমা এসে পড়বে। চিঠিটা ঠাকুমার বালিশের তলায় রেখে ঠাকুরঘরে একবার প্রণাম করে বিল্টু শুতে গেল। (Children’s Story)
৪
“তোমার এত সাহস! আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে তুমি পুকুর বোজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছ!” এই পুকুরপাড়ের বটগাছটা আমাদের বাড়ির থেকেও পুরনো। তুমি নাকি এটা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছ! এসব একেবারে হবে না।” (Children’s Story)

আমার কথায় বাবা রীতিমতো অবাক। দাদুকে না জানিয়েই বাবা সবটা করছিল! আর সুন্দরী এতদিন বাবা আর পঞ্চাকাকাকে চোখে চোখে রেখেছে। সব খেয়াল রেখেছে। বিল্টু, আড় চোখে সুন্দরীকে দেখছিল। যদিও দাদু-ঠাকুমা আর বাবার কথার মাঝে বিল্টু আর সুন্দরীর ঢোকা নিষেধ। জানলার কাছে একটা টুল সুন্দরী এনে দিয়েছে। সেটার উপর উঠে দাঁড়িয়ে বিল্টু ওদের কথা শুনছিল। এমনিতেই বড়দের কথা শোনা একেবারে পছন্দ নয় ওর। কিন্তু এটা তো সুন্দরীর বিষয়! মার্জারসুন্দরী বলে কথা। ঠাকুমা বলে মার্জারসুন্দরী। দাদু-ঠাম্মার কথায় বাবা কী বলছে তা বিল্টুর কানে আসেনি। কিন্তু বুঝতে পেরেছে আপাতত এই পুকুর বোজানোটা ক্যান্সেল। কারণ একটু আগেই বাবা-মুখ কালো করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বিল্টুকে দেখতে পায়নি। (Children’s Story)
সুন্দরী কি তবে সত্যিই কোনও জাদু বেড়াল! “কী রে বিল্টু, কার সঙ্গে কথা বলছিস?” ও লক্ষ্য করেনি কখন পেছনে ঠাম্মা এসে দাঁড়িয়েছে। বিল্টু কিছু বলার আগেই সুন্দরী ডেকে ওঠে “ম্যাওওও।”
“ঠাম্মা, দাদু, তোমরা যদি আমার কথা না বুঝতে তাহলে কী হত বলত সকলের? সুন্দরী, সব ছোট-ছোট গাছপালা, পাখি, আর অন্য পশু পাখিদের কী হত!” (Children’s Story)
বিল্টু কথাগুলো শেষ করেই দাদু-ঠাম্মাকে জড়িয়ে ধরল। আজ ওর ভারি আনন্দ। এতদিন পর ও নিজে কথা বলছে। নিজের গলায় নিজের কথা। কোনও কষ্ট হচ্ছে না। তবে সুন্দরী যদি আবার কখনও বিল্টুর গলার আওয়াজ ধার চায় নিজের সমস্যা বোঝাতে, বিল্টু ওকে ধার দেবে। সেদিন বাবার সঙ্গে কথা হওয়ার পরই বিল্টু নিজের গলার আওয়াজ ফেরত পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেদিন একটুও আনন্দ হয়নি ওর। সুন্দরীর জন্য কষ্ট হচ্ছিল। (Children’s Story)

দাদু-ঠাম্মা বাবার কান্ড দেখে একেবারে অবাক। বাবা যে এমনটা করতে পারে ওরাও ভাবেনি। বিল্টু দেখেছে ঠাম্মা বাবাকে বকাবকি করার পর লুকিয়ে কাঁদছিল। কিন্তু দাদু-ঠাম্মা যদি বাবাকে না বকত, তাহলে আরও বড় ভুল হয়ে যেত। তবে বিল্টুর চিঠিটা পাওয়ার পরদিনই ঠাম্মা বাবার সঙ্গে কথা বলনি। দু’দিন সময় নিয়েছিল। “বিল্টুর বাবাকে ডাকার আগে এই বিষয়ে পঞ্চার কীর্তিটাও খুঁজতে হবে। গ্রামের বাকি পুকুরগুলো যাতে না বোজানো হয়, সেটাও দেখতে হবে। দরকার হলে গ্রামের বাকি লোকেদের ডেকে আমরা কথা বলব।” বিল্টু সেদিন বুঝেছিল ঠাম্মার খুব বুদ্ধি। অনেকদিন পর বিল্টুর মজা হচ্ছিল। পঞ্চাকাকার এ বাড়িতে আসা চিরতরে আটকেছে ঠাম্মা। (Children’s Story)
“বিল্টু তুমি আমাদের জন্য যা করলে আমরা খুব খুশি হয়েছি।” সুন্দরী অবিকল মানুষের মতো গলায় বিল্টুকে বলল। ওরা এখন পুকুরের ধারে বসে। বিল্টু অবাক। এখন তো বিল্টু কথা বলতে পারছে! তাহলে সুন্দরীর শুধু ম্যাও করে ডাকার কথা! (Children’s Story)
সুন্দরী কি তবে সত্যিই কোনও জাদু বেড়াল! “কী রে বিল্টু, কার সঙ্গে কথা বলছিস?” ও লক্ষ্য করেনি কখন পেছনে ঠাম্মা এসে দাঁড়িয়েছে। বিল্টু কিছু বলার আগেই সুন্দরী ডেকে ওঠে “ম্যাওওও।” (Children’s Story)
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বসত্ব সংরক্ষিত
আকাশবাণী কলকাতার ট্রান্সমিশন এক্সিকিউটিভ। পেশাগত সূত্রে দীর্ঘদিন লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। পরিবার আর কাজের বাইরে অক্ষর আর প্রকৃতি অবসরের সঙ্গী।